Ajker Patrika

ওকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: মাচাদোর সঙ্গে ফোনালাপ শেষে বললেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৫৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ছবি: সংগৃহীত

মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর নোবেল কমিটিকে নিন্দা জানায় মার্কিন প্রশাসন। সে সময় কোনো মন্তব্য করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে মাচাদো ও ট্রাম্প দুজনেই জানান, গতকাল শুক্রবার তাঁদের ফোনালাপ হয়েছে।

বহুবার প্রকাশ্যে এই পুরস্কার জেতার আকাঙ্ক্ষা জানিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই পুরস্কার পাওয়া উচিত বলে সম্প্রতি বিশ্বনেতাদের অনেকে মতও দিয়েছেন। বিশেষ করে তাঁর গাজা শান্তি পরিকল্পনা গতিশীল হওয়ায় সেই দাবিগুলো আরও জোরালো হয়েছে। তবে নোবেল পুরস্কারের নিয়ম অনুযায়ী, বছরের জন্য মনোনয়নের সময়সীমা জানুয়ারি পর্যন্ত।

গতকাল শুক্রবার ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় কাজ এবং ‘একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে ন্যায়সংগত ও শান্তিপূর্ণ উত্তরণে সংগ্রামের জন্য’ ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে মারিয়া কোরিনা মাচাদোর নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি।

স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মারিয়া কোরিনা মাচাদো জানান, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন, তবে তাঁদের কথোপকথনের বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান। পুরস্কার পাওয়া নিয়ে বক্তব্যের মতোই তিনি ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প নিজেই মাচাদোর সঙ্গে কথা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘যিনি আসলে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি আজ আমাকে ফোন করে বললেন, আমি এ পুরস্কারটি আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি। কারণ, আসলে আপনিই এটি পাওয়ার যোগ্য।’

ট্রাম্প মজার ছলে যোগ করেন, ‘এটা খুবই সুন্দর একটা ব্যাপার। আমি কিন্তু বলিনি তাহলে আমাকেই দাও। যদিও আমার মনে হয়, উনি হয়তো দিতেও পারতেন। উনি খুবই ভালো।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি ওকে অনেকভাবে সাহায্য করে আসছি। ভেনেজুয়েলায় এখন ভয়াবহ পরিস্থিতি। সম্পূর্ণ বিপর্যয় বলা যায়। তাই আপনি এটাও বলতে পারেন, পুরস্কারটি ২০২৪ সালের জন্য দেওয়া হয়েছে। আর আমি ২০২৪ সালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলাম।’

নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা আসার পরপরই ট্রাম্প প্রশাসন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চুং লেখেন, ‘নোবেল কমিটি প্রমাণ করল, তারা শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।’

মাচাদো বহু বছর ধরে ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে আসছেন এবং নিজের আজীবন লক্ষ্যকে বর্ণনা করেছেন ‘গুলির চেয়ে ব্যালটের জয়’ হিসেবে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ভিন্নমতের ওপর কঠোর দমননীতির সময় তিনি আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন।

অতীতে ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক সদস্য মাচাদোর কাজের প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে প্রশাসন বারবার মাদুরোর সরকারকে নিন্দা করেছে এবং ‘মাদকবিরোধী অভিযান’ চালানোর অজুহাতে ওই অঞ্চলে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে, যা অনেকের মতে মাদুরোকে দুর্বল করে ক্ষমতা থেকে সরানোর কৌশলেরই অংশ।

২০২৪ সালে মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া আইনপ্রণেতাদের একটি দলের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং বর্তমান জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ।

২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁরা এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমরা যাঁরা পশ্চিমাসহ বিশ্বের বিভিন্ন একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে নীতি নির্ধারণে কাজ করি, মারিয়া কোরিনা মাচাদোর মতো এমন সাহস, নিঃস্বার্থতা ও নৈতিক দৃঢ়তা আমরা খুব কমই দেখেছি।’

তাঁরা আরও লিখেছিলেন, ‘আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস মারিয়া কোরিনা মাচাদোর সাহসী ও নিঃস্বার্থ নেতৃত্ব এবং শান্তি ও গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি তাঁর অটল নিষ্ঠা, তাঁকে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী করে তুলেছে।’

গত এপ্রিল মাসে মার্কো রুবিও ‘অদম্য সাহস, দৃঢ়তা ও দেশপ্রেমের প্রতীক’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন, যিনি ‘একটি স্বাধীন, ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক ভেনেজুয়েলার জন্য লড়াই থেকে কখনো পিছপা হননি’।

গত জানুয়ারিতে নিজের অভিষেকের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘মাচাদো একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁর অবশ্যই নিরাপদে ও জীবিত থাকতে হবে!’

গত শুক্রবার মাচাদো তাঁর নোবেল পুরস্কারটি ‘ভেনেজুয়েলার ভুক্তভোগী জনগণের এবং আমাদের লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে’ উৎসর্গ করেছেন।

তবে তাঁর বিজয়ের পর ট্রাম্পকে যেন উপেক্ষা করা হয়েছে এমন ধারণা তৈরি হওয়ায় প্রেসিডেন্টের মিত্রদের কোনো উষ্ণ মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভেনেজুয়েলার জন্য ট্রাম্পের দূত রিচার্ড গ্রেনেল ঘোষণা করেন, ‘নোবেল পুরস্কার বহু বছর আগেই মরে গেছে।’

ওবামা প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ভেনেজুয়েলাবিষয়ক পরিচালক বেনিয়ামিন গেডান বলেছেন, মাচাদোকে পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে নোবেল কমিটি যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার বিরোধী পক্ষ উভয়ের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা পাঠাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

গেডান সিএনএনকে বলেন, ‘হোয়াইট হাউস এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা সামরিক শক্তি ব্যবহার করে এই সরকারকে উৎখাত করতে পারে এবং মারিয়া কোরিনার সমর্থনও রয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, নোবেল কমিটি চায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার বিরোধী পক্ষ উভয়েই শান্তিপূর্ণভাবে পরিবর্তনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাক।’

যদিও ট্রাম্প মাচাদোর বিজয় সম্পর্কে শুক্রবার সন্ধ্যার আগপর্যন্ত প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক বক্তব্যের পর তাঁকে ধন্যবাদ জানান।

শুক্রবার তাজিকিস্তানে দেওয়া বক্তব্যে পুতিন বলেন, ‘এ রকম উদাহরণ রয়েছে যেখানে কমিটি এমন ব্যক্তিদের নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়েছে যারা শান্তির জন্য কিছু করেনি। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই পুরস্কারের যোগ্য কি না, তা জানি না। কিন্তু তিনি বছরের পর বছর এমনকি দশক ধরে চলা জটিল সংকট সমাধানে অনেক কাজ করছেন।’

ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত