অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক বললেন, ‘আপনার বাচ্চা আর কখনোই ভালো হবে না!’ বাবা জানতে চাইলেন, ‘কখনোই না? বিদেশে নিয়ে গেলে?’ চিকিৎসক এক পলক বাবার বিস্ফারিত চোখের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই মাথা নিচু করলেন। আবার বাবার দিকে তাকিয়ে করে করলেন, ‘আমাদের আর কিছুই করার নেই, বাড়ি নিয়ে যান। এটা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মেয়ে হলেও প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসা নেই, আপনার মেয়ে হলেও চিকিৎসা নেই!’
মা মরিয়া হলে জানতে চাইলেন, ‘এরপর কী হবে?’ নার্স বললেন, ‘ওর অবস্থা আরও খারাপ হবে, আল্লাহ! আল্লাহ! করেন!’
চিকিৎসক, নার্স তো ‘বাড়ি নিয়ে যান’ বলেই খালাস! কিন্তু অভিভাবক বাচ্চাটিকে বাসায় এনে কী করবেন? কীভাবে এরপর শিশুটির কষ্ট একটু কমানোর উপায় বের করবেন। চোখের সামনে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার শিশুকে দেখে নিজেদেরই বা কীভাবে সামলাবেন তাঁরা? স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজকর্মী কেউই শিশুটিকে বা পরিবারটিকে তা শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার গরজ করছেন না।
জাতীয় শিশু দিবস
এ বছর জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে’। শিশুদের প্রতি পরিবার সব সময় অধিক সচেতন থাকে। শিশুর মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমরা কি নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুগুলোকে দেখেও দেখছি না?
প্যালিয়েটিভ কেয়ার কী?
নিরাময় অযোগ্য, মৃত্যু সন্নিকটে এমন রোগে আক্রান্ত রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ যত্নই প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা। যেটা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে— আর কিছু করার নেই বাড়িতে নিয়ে যান— এই পর্যন্ত! শুধু রোগী নয়, রোগীর পরিবারের যত্নের বিষয়টিও এই চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই শাখার সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রস আধানম ঘেব্রিয়েসুস বলেছেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে সবচেয়ে যত্ন করে গোপন করে রাখা হয়েছে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের বিষয়টিকে!’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞায় শিশুদের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার
শিশুদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি বিশেষ ক্ষেত্র যা অনেকটা বড়দের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মতোই। শিশু এবং তার পরিবারের জন্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিম্নরূপ একটি সংজ্ঞা দিয়েছে যা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্যও প্রযোজ্য:
*প্যালিয়েটিভ কেয়ার হচ্ছে শিশুর শরীর ও মনের জন্য একটি সক্রিয় সামগ্রিক সেবা এবং একই সঙ্গে শিশুর পরিবারকে সহায়তা প্রদান করাও এই সেবার অন্তর্ভুক্ত।
*সেবা প্রদানকারীকে অবশ্যই শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কষ্টগুলোর মূল্যায়ন করা শিখতে হবে এবং তা উপশমের ব্যবস্থা করতে হবে।
*একটি কার্যকর প্যালিয়েটিভ সেবার জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত উদ্যোগ, যেখানে থাকবে পরিবার এবং সমাজের সহজলভ্য সম্পদের যথার্থ ব্যবহার। (সম্পদের অপ্রতুলতা থাকলেও এই সেবার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব।)
*বিশেষায়িত হাসপাতাল, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এমনকি শিশুর বাড়িতেও এই সেবা দেওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশের অবস্থান
‘বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস, ২০২১’–এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রশমন সেবা প্রয়োজন প্রায় ৮ লাখ ১৫ হাজার ৫১২ জনের। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার ৭১২ এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮০ জন। ২০০৮ সালে সারা বিশ্বে প্যালিয়েটিভ কেয়ার উন্নয়ন শ্রেণীকরণে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয় স্তরে।
অর্থাৎ আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন, ঠিক সেই এই মুহূর্তে খুব রক্ষণশীল হিসাবেও ৭০ হাজারের বেশি শিশু বাংলাদেশে এই সেবার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এর প্রাপ্যতা অধিকাংশই রাজধানী–কেন্দ্রিক।
শেষ কথা
তাই স্বাস্থ্যকর্মীর বৃত্ত পেরিয়ে আপামর জনসাধারণের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি সামাজিক আন্দোলন! কারণ, সবাইকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। আজ আপনি সমাজকে যা দিচ্ছেন, সমাজ একদিন সেটাই বহুগুণে আপনাকে ফিরিয়ে দেবে! খেয়াল করুন, একক আপনি একটি সংখ্যা মাত্র, আর সমষ্টিগত আপনি একটি সম্পূর্ণ সমাজ। রুমি এক কথায় এই তত্ত্ব চমৎকারভাবে বুঝিয়েছেন, ‘গতকাল আমি বুদ্ধিমান ছিলাম, তাই পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি জ্ঞানী, তাই নিজেকে বদলে ফেলতে চাই।’
প্রতিবছরই জাতীয় শিশু দিবস বাংলাদেশে আসে এবং চলেও যায়; কিন্তু এই নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের কি আমরা এই শিশু দিবসে মনে রেখেছি? যদি মনে রাখি, তাহলে এদের এবং এদের পরিবারের ভোগান্তি কমাতে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছি? কারণ এ রকম একটি নিরাময় অযোগ্য শিশু আজ এবং আগামীতে যেকোনো সময় আপনার, আমার, যে কারও পরিবারেই আসতে পারে!
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সিলার, সাইকোথেরাপি প্র্যাক্টিশনার
চিকিৎসক বললেন, ‘আপনার বাচ্চা আর কখনোই ভালো হবে না!’ বাবা জানতে চাইলেন, ‘কখনোই না? বিদেশে নিয়ে গেলে?’ চিকিৎসক এক পলক বাবার বিস্ফারিত চোখের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই মাথা নিচু করলেন। আবার বাবার দিকে তাকিয়ে করে করলেন, ‘আমাদের আর কিছুই করার নেই, বাড়ি নিয়ে যান। এটা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মেয়ে হলেও প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসা নেই, আপনার মেয়ে হলেও চিকিৎসা নেই!’
মা মরিয়া হলে জানতে চাইলেন, ‘এরপর কী হবে?’ নার্স বললেন, ‘ওর অবস্থা আরও খারাপ হবে, আল্লাহ! আল্লাহ! করেন!’
চিকিৎসক, নার্স তো ‘বাড়ি নিয়ে যান’ বলেই খালাস! কিন্তু অভিভাবক বাচ্চাটিকে বাসায় এনে কী করবেন? কীভাবে এরপর শিশুটির কষ্ট একটু কমানোর উপায় বের করবেন। চোখের সামনে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার শিশুকে দেখে নিজেদেরই বা কীভাবে সামলাবেন তাঁরা? স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজকর্মী কেউই শিশুটিকে বা পরিবারটিকে তা শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার গরজ করছেন না।
জাতীয় শিশু দিবস
এ বছর জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে’। শিশুদের প্রতি পরিবার সব সময় অধিক সচেতন থাকে। শিশুর মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমরা কি নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুগুলোকে দেখেও দেখছি না?
প্যালিয়েটিভ কেয়ার কী?
নিরাময় অযোগ্য, মৃত্যু সন্নিকটে এমন রোগে আক্রান্ত রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ যত্নই প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা। যেটা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে— আর কিছু করার নেই বাড়িতে নিয়ে যান— এই পর্যন্ত! শুধু রোগী নয়, রোগীর পরিবারের যত্নের বিষয়টিও এই চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই শাখার সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রস আধানম ঘেব্রিয়েসুস বলেছেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে সবচেয়ে যত্ন করে গোপন করে রাখা হয়েছে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের বিষয়টিকে!’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞায় শিশুদের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার
শিশুদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি বিশেষ ক্ষেত্র যা অনেকটা বড়দের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মতোই। শিশু এবং তার পরিবারের জন্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিম্নরূপ একটি সংজ্ঞা দিয়েছে যা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্যও প্রযোজ্য:
*প্যালিয়েটিভ কেয়ার হচ্ছে শিশুর শরীর ও মনের জন্য একটি সক্রিয় সামগ্রিক সেবা এবং একই সঙ্গে শিশুর পরিবারকে সহায়তা প্রদান করাও এই সেবার অন্তর্ভুক্ত।
*সেবা প্রদানকারীকে অবশ্যই শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কষ্টগুলোর মূল্যায়ন করা শিখতে হবে এবং তা উপশমের ব্যবস্থা করতে হবে।
*একটি কার্যকর প্যালিয়েটিভ সেবার জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত উদ্যোগ, যেখানে থাকবে পরিবার এবং সমাজের সহজলভ্য সম্পদের যথার্থ ব্যবহার। (সম্পদের অপ্রতুলতা থাকলেও এই সেবার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব।)
*বিশেষায়িত হাসপাতাল, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এমনকি শিশুর বাড়িতেও এই সেবা দেওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশের অবস্থান
‘বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস, ২০২১’–এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রশমন সেবা প্রয়োজন প্রায় ৮ লাখ ১৫ হাজার ৫১২ জনের। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার ৭১২ এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮০ জন। ২০০৮ সালে সারা বিশ্বে প্যালিয়েটিভ কেয়ার উন্নয়ন শ্রেণীকরণে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয় স্তরে।
অর্থাৎ আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন, ঠিক সেই এই মুহূর্তে খুব রক্ষণশীল হিসাবেও ৭০ হাজারের বেশি শিশু বাংলাদেশে এই সেবার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এর প্রাপ্যতা অধিকাংশই রাজধানী–কেন্দ্রিক।
শেষ কথা
তাই স্বাস্থ্যকর্মীর বৃত্ত পেরিয়ে আপামর জনসাধারণের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি সামাজিক আন্দোলন! কারণ, সবাইকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। আজ আপনি সমাজকে যা দিচ্ছেন, সমাজ একদিন সেটাই বহুগুণে আপনাকে ফিরিয়ে দেবে! খেয়াল করুন, একক আপনি একটি সংখ্যা মাত্র, আর সমষ্টিগত আপনি একটি সম্পূর্ণ সমাজ। রুমি এক কথায় এই তত্ত্ব চমৎকারভাবে বুঝিয়েছেন, ‘গতকাল আমি বুদ্ধিমান ছিলাম, তাই পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি জ্ঞানী, তাই নিজেকে বদলে ফেলতে চাই।’
প্রতিবছরই জাতীয় শিশু দিবস বাংলাদেশে আসে এবং চলেও যায়; কিন্তু এই নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের কি আমরা এই শিশু দিবসে মনে রেখেছি? যদি মনে রাখি, তাহলে এদের এবং এদের পরিবারের ভোগান্তি কমাতে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছি? কারণ এ রকম একটি নিরাময় অযোগ্য শিশু আজ এবং আগামীতে যেকোনো সময় আপনার, আমার, যে কারও পরিবারেই আসতে পারে!
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সিলার, সাইকোথেরাপি প্র্যাক্টিশনার
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে মুসলিম ভ্রমণকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৪৫ মিলিয়ন। তখন মুসলিম পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৫ সালের ‘টপ মুসলিম-ফ্রেন্ডলি ডেস্টিনেশন অব দ্য ইয়ার’ খেতাব পেয়েছে মালয়েশিয়া।
৬ ঘণ্টা আগেতিব্বত অঞ্চলের খাবার হলেও মোমো এখন আমাদের দেশে পাওয়া যায়। রাস্তার মোড়ে কিংবা গলির দোকানে এখন হরেক স্বাদের মোমোর দেখা মেলে। একেবারে তিব্বতি বা নেপালি মোমো এখানে তৈরি হওয়া সম্ভব নয় উপকরণের স্বল্পতার কারণে। তাই নিজের মতো করে তৈরি করে নিতে পারেন এ খাবার।
১১ ঘণ্টা আগেশখ ডিপ্রেশনের লক্ষণ কমাতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এটি মানসিক রোগ হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। একই সঙ্গে ইতিমধ্যে ডিপ্রেশনে ভোগা রোগীদের মধ্যে যাঁরা অন্তত একটি শখ পূরণে কাজ শুরু করেছেন, তাঁদের সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ২৭২ শতাংশ বেশি।
১২ ঘণ্টা আগেপ্রতিদিন কিছু না কিছু ভুলে যাওয়ার অভ্যাস আমাদের সবারই আছে। কখনো কোনো শব্দ জিভের ডগায় এসে আটকে যায়, আবার কখনো ঘরে ঢুকে ভুলে যাই কেন এসেছিলাম। কিংবা চাবি, মোবাইল ফোন বা চশমা কোথায় রাখলাম, তা মনেই পড়ে না।
১ দিন আগে