ফিচার ডেস্ক, ঢাকা
রোদ ঝলমলে দিনেও ছাতা নিয়ে হাঁটে জাপানের অনেক মানুষ। টোকিওর ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে কিংবা কিয়োটোর প্রাচীন অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে এই দৃশ্য দেখা যাবে। বিদেশি হিসেবে আপনার চোখে বিষয়টি অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু জাপানের মানুষদের কাছে এটি যে শুধু রোদ বা বৃষ্টি থেকে বাঁচার কৌশল, তা নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার একাগ্রতা।
বেপ্পু বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববিদ্যার ইমেরিটাস অধ্যাপক তাতসুও দানজো জানান, জাপানি ঐতিহ্যে ছাতাকে ধরা হয় ইওরিশিরো, মানে এমন এক বিশেষ বস্তু; যেখানে দেবতা বা আত্মা এসে অবস্থান করতে পারে। সহজভাবে বললে, ইওরিশিরো হলো আত্মা বা দেবতার জন্য একধরনের ‘অস্থায়ী আসন’। তাই প্রাচীনকাল থেকে ছাতা জাপানিদের কাছে আধ্যাত্মিকতার প্রতীক।
আধুনিক যুগের সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছানোর আগে, নবম থেকে এগারো শতকের জাপানে ছাতা ছিল কেবল ক্ষমতাবানদের ব্যবহার্য জিনিস। তখন শাসক বা ধর্মীয় নেতাদের মাথার ওপর সম্মান ও আধ্যাত্মিক ছায়ার প্রতীক হিসেবে দীর্ঘ হাতলযুক্ত বড় ছাতা ধরা হতো। বারো শতকের পর সাধারণ মানুষও ছাতা ব্যবহার শুরু করে। এ কারণে ছাতার প্রতি সাধারণ জাপানিদের যে সম্মান ছিল, সেটি এখনো রয়ে গেছে।
ছাতা ব্যবহারের বিভিন্ন উপলক্ষ
কিয়োটোর ইয়াসুরাই মাতসুরি উৎসব: প্রতিবছর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এখানে অংশগ্রহণকারীরা ফুলে সাজানো ছাতা হাতে অংশ নেন। বিশ্বাস করা হয়, এই বিশেষ ছাতাগুলো মানুষের শরীর থেকে রোগব্যাধি শোষণ করে নিয়ে যায়। এসব ছাতার নিচে দাঁড়ালে সুস্থতা ফিরে আসে।
ফুকুওকার হাকাতা দন্তাকু উৎসব: ৩ থেকে ৪ মে রং আর আনন্দের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে ফুকুওকা। এ সময় শহরের রাস্তায় নেমে আসে বিশাল আকারের বর্ণিল ছাতা কাসাবোকো। স্থানীয় লোকদের বিশ্বাস, এই ছাতার নিচ দিয়ে হাঁটতে পারলে সুস্বাস্থ্য ও সৌভাগ্য—দুটোই মেলে। তাই শোভাযাত্রার সময় ভিড় ঠেলে অনেকে চেষ্টা করে অন্তত একবার হলেও এর ছায়ায় দাঁড়াতে।
কোচি প্রিফেকচারের ওকিনোশিমা দ্বীপে ওবন উৎসব: প্রতিবছরের ১৩ থেকে ১৬ আগস্ট জাপানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান এটি। এ সময় স্থানীয় লোকেরা সদ্য প্রয়াত মানুষের আত্মার স্মরণে রঙিন ও সজ্জিত ছাতার বড় বড় কাঠামো তৈরি করেন; বিশেষ করে, দুই বছর পরপর ১৬ আগস্ট রাতে এই ছাতার কাঠামোগুলো নিয়ে নৃত্যানুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠান আত্মাদের নিরাপদে আত্মিক জগতে ফিরে যাওয়ার প্রতীক। উৎসবটি একদিকে শোকের, অন্যদিকে পুনর্জন্ম ও শান্তির বার্তা দেয়।
ছাতা ও জাপানি লোককথা
জাপানের লোককথায় ছাতার বেশ প্রভাব দেখা যায়। তাদের লোককথার বিভিন্ন গল্পে ছাতার প্রতীকও দেখা যায়। তাদের সেই গল্পের বেশ পরিচিত চরিত্র ‘কাসা ইয়োকাই’। ভৌতিক এই চরিত্র মূলত পরিত্যক্ত এক ছাতা। যেটি কখনো কখনো জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন রূপ ধরে। শুধু লোককথা নয়, জাপানে বর্তমান যুগের চলচ্চিত্র বা সংস্কৃতিচর্চাতেও ছাতার ব্যবহার দেখা যায়।
ঐতিহ্যবাহী ছাতার শিল্প ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
আজও জাপানের বিভিন্ন প্রান্তে ঐতিহ্যবাহী ছাতার কারিগরি ও আধ্যাত্মিক ইতিহাসের নমুনা পাওয়া যায়। তোত্তোরির ইওদোয়ে আমব্রেলা ফোকলোর মিউজিয়ামে ওয়াগাসা বা ছাতার সংগ্রহশালা রয়েছে। সেখানে ছাতা বানানোর কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। শুধু জাপানিরাই নয়, অনেক পর্যটকও সেই কর্মশালায় যোগ দেন।
১৬৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত জাপানের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ছাতার দোকান তসুজিকুরা। সেখানে যাওয়া মানুষ নিজ হাতে বিভিন্ন ধরনের ছাতা নিজেরাই তৈরি করার সুযোগ পান। এর কারণে লোকজন সেই প্রাচীন শিল্পকে নতুন করে অনুভব করতে পারেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রং ও নকশার ছাতাও কিনতে পারেন।
এসব কারণে জাপানের সংস্কৃতিতে ছাতা কেবল দৈনন্দিন ব্যবহার্য বস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আজও জাপানের মানুষ নিজেদের সংস্কৃতি বয়ে নিয়ে চলেছে।
সূত্র: বিবিসি
রোদ ঝলমলে দিনেও ছাতা নিয়ে হাঁটে জাপানের অনেক মানুষ। টোকিওর ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে কিংবা কিয়োটোর প্রাচীন অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে এই দৃশ্য দেখা যাবে। বিদেশি হিসেবে আপনার চোখে বিষয়টি অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু জাপানের মানুষদের কাছে এটি যে শুধু রোদ বা বৃষ্টি থেকে বাঁচার কৌশল, তা নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার একাগ্রতা।
বেপ্পু বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববিদ্যার ইমেরিটাস অধ্যাপক তাতসুও দানজো জানান, জাপানি ঐতিহ্যে ছাতাকে ধরা হয় ইওরিশিরো, মানে এমন এক বিশেষ বস্তু; যেখানে দেবতা বা আত্মা এসে অবস্থান করতে পারে। সহজভাবে বললে, ইওরিশিরো হলো আত্মা বা দেবতার জন্য একধরনের ‘অস্থায়ী আসন’। তাই প্রাচীনকাল থেকে ছাতা জাপানিদের কাছে আধ্যাত্মিকতার প্রতীক।
আধুনিক যুগের সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছানোর আগে, নবম থেকে এগারো শতকের জাপানে ছাতা ছিল কেবল ক্ষমতাবানদের ব্যবহার্য জিনিস। তখন শাসক বা ধর্মীয় নেতাদের মাথার ওপর সম্মান ও আধ্যাত্মিক ছায়ার প্রতীক হিসেবে দীর্ঘ হাতলযুক্ত বড় ছাতা ধরা হতো। বারো শতকের পর সাধারণ মানুষও ছাতা ব্যবহার শুরু করে। এ কারণে ছাতার প্রতি সাধারণ জাপানিদের যে সম্মান ছিল, সেটি এখনো রয়ে গেছে।
ছাতা ব্যবহারের বিভিন্ন উপলক্ষ
কিয়োটোর ইয়াসুরাই মাতসুরি উৎসব: প্রতিবছর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এখানে অংশগ্রহণকারীরা ফুলে সাজানো ছাতা হাতে অংশ নেন। বিশ্বাস করা হয়, এই বিশেষ ছাতাগুলো মানুষের শরীর থেকে রোগব্যাধি শোষণ করে নিয়ে যায়। এসব ছাতার নিচে দাঁড়ালে সুস্থতা ফিরে আসে।
ফুকুওকার হাকাতা দন্তাকু উৎসব: ৩ থেকে ৪ মে রং আর আনন্দের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে ফুকুওকা। এ সময় শহরের রাস্তায় নেমে আসে বিশাল আকারের বর্ণিল ছাতা কাসাবোকো। স্থানীয় লোকদের বিশ্বাস, এই ছাতার নিচ দিয়ে হাঁটতে পারলে সুস্বাস্থ্য ও সৌভাগ্য—দুটোই মেলে। তাই শোভাযাত্রার সময় ভিড় ঠেলে অনেকে চেষ্টা করে অন্তত একবার হলেও এর ছায়ায় দাঁড়াতে।
কোচি প্রিফেকচারের ওকিনোশিমা দ্বীপে ওবন উৎসব: প্রতিবছরের ১৩ থেকে ১৬ আগস্ট জাপানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান এটি। এ সময় স্থানীয় লোকেরা সদ্য প্রয়াত মানুষের আত্মার স্মরণে রঙিন ও সজ্জিত ছাতার বড় বড় কাঠামো তৈরি করেন; বিশেষ করে, দুই বছর পরপর ১৬ আগস্ট রাতে এই ছাতার কাঠামোগুলো নিয়ে নৃত্যানুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠান আত্মাদের নিরাপদে আত্মিক জগতে ফিরে যাওয়ার প্রতীক। উৎসবটি একদিকে শোকের, অন্যদিকে পুনর্জন্ম ও শান্তির বার্তা দেয়।
ছাতা ও জাপানি লোককথা
জাপানের লোককথায় ছাতার বেশ প্রভাব দেখা যায়। তাদের লোককথার বিভিন্ন গল্পে ছাতার প্রতীকও দেখা যায়। তাদের সেই গল্পের বেশ পরিচিত চরিত্র ‘কাসা ইয়োকাই’। ভৌতিক এই চরিত্র মূলত পরিত্যক্ত এক ছাতা। যেটি কখনো কখনো জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন রূপ ধরে। শুধু লোককথা নয়, জাপানে বর্তমান যুগের চলচ্চিত্র বা সংস্কৃতিচর্চাতেও ছাতার ব্যবহার দেখা যায়।
ঐতিহ্যবাহী ছাতার শিল্প ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
আজও জাপানের বিভিন্ন প্রান্তে ঐতিহ্যবাহী ছাতার কারিগরি ও আধ্যাত্মিক ইতিহাসের নমুনা পাওয়া যায়। তোত্তোরির ইওদোয়ে আমব্রেলা ফোকলোর মিউজিয়ামে ওয়াগাসা বা ছাতার সংগ্রহশালা রয়েছে। সেখানে ছাতা বানানোর কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। শুধু জাপানিরাই নয়, অনেক পর্যটকও সেই কর্মশালায় যোগ দেন।
১৬৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত জাপানের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ছাতার দোকান তসুজিকুরা। সেখানে যাওয়া মানুষ নিজ হাতে বিভিন্ন ধরনের ছাতা নিজেরাই তৈরি করার সুযোগ পান। এর কারণে লোকজন সেই প্রাচীন শিল্পকে নতুন করে অনুভব করতে পারেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রং ও নকশার ছাতাও কিনতে পারেন।
এসব কারণে জাপানের সংস্কৃতিতে ছাতা কেবল দৈনন্দিন ব্যবহার্য বস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আজও জাপানের মানুষ নিজেদের সংস্কৃতি বয়ে নিয়ে চলেছে।
সূত্র: বিবিসি
দুধ দিয়ে সেমাই তো আছেই, তা ছাড়াও সেমাই দিয়ে কত ধরনের খাবারই না রান্না করা যায়! সবগুলোই অবশ্য ডেজার্ট। বাড়িতে কোনো আয়োজন থাকলে এবার সেমাই দিয়েই তাতে আনুন ভিন্ন স্বাদ। আপনাদের জন্য সে ধরনের একটি ডেজার্টের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
২ ঘণ্টা আগেওমিয়াকন অ্যান্টার্কটিকার বাইরে পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত। ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সেখানে প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস। এই জায়গায় তাপমাত্রা মাইনাস ৬৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে, যা উত্তর গোলার্ধে রেকর্ড।
৫ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং প্রায় ৩ হাজার মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশেও খাদ্যে বিষক্রিয়া একটি সাধারণ সমস্যা। কিছু অসচেতন অভ্যাস বাদ দিলে দীর্ঘ মেয়াদে জীবাণু সংক্রমণ থেকে সুস্থ থাকা সম্ভব।
৭ ঘণ্টা আগেরোড ট্রিপের জন্য গাড়িতে ভ্রমণ নিঃসন্দেহে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। কিন্তু এই আনন্দ মাঝেমধ্যে কিছুটা মানসিক চাপের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন চালকেরা অযথা হর্ন বাজান কিংবা ঘন ঘন হেডলাইট জ্বালান আর বন্ধ করেন। বিশ্বে এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেগুলোতে ‘বন্ধুসুলভ চালক’ পাওয়া যায়।
১ দিন আগে