Ajker Patrika

কোন যুগে মানুষ কত সময় কাজ করতেন, জানালেন গবেষকেরা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ৪০
একটা সময় মানুষ বছরে ১৮৫ দিন কাজ করতেন। সে কাজ হতো দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। আর এখন এখন দিনে কর্মঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হয়েছে সাধারণত ৮ ঘণ্টা। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
একটা সময় মানুষ বছরে ১৮৫ দিন কাজ করতেন। সে কাজ হতো দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। আর এখন এখন দিনে কর্মঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হয়েছে সাধারণত ৮ ঘণ্টা। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

বছরে কাজ করতে হবে মোট ১৮৫ দিন! বিষয়টি ধারণা করতে পারেন এই একুশ শতকে এসে? কিন্তু বাস্তবে একটা সময় মানুষ বছরে ১৮৫ দিনই কাজ করতেন। সে কাজ হতো দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। আর এখন?

পুরো পৃথিবীতে এখন দিনে কর্মঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হয়েছে সাধারণত আট ঘণ্টা। কোনো কোনো অফিসে বা কারখানায় তা আরও বেশি। রয়েছে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা বা ওভারটাইমের ব্যবস্থা। এ কাজের পর দুই বা এক দিন সাপ্তাহিক ছুটি। এর বাইরে আরও কিছু সরকারি ছুটি থাকে। আমাদের দেশে বছরে সাধারণত ১৫টি সাধারণ ছুটি এবং ১৪টি নির্বাহী আদেশের ছুটি মিলিয়ে ২৯ দিনের ছুটি থাকে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ছুটির সংখ্যা বেশি, বছরে ৭৬ দিন।

ভাবছেন, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইত মানুষ—তাই তো? আসলেও তাই। সম্প্রতি একটি গবেষণা হয়েছে, কোন সময় মানুষ কত ঘণ্টা কাজ করতেন, সেটা নিয়ে। গবেষকেরা বেশ চিত্তাকর্ষক তথ্য তুলে এনেছেন সে গবেষণার মাধ্যমে।

পাথর যুগের ইউরোপীয় শিকারি-সংগ্রাহক

শিকারি-সংগ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদেরা সে সময়ে মানুষের কর্মঘণ্টার একটা অনুমান দাঁড় করিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ মার্শাল সালিন্স তাঁর ‘দ্য অরিজিনাল অ্যাফ্লুয়েন্ট সোসাইটি’ বইয়ে লিখেছিলেন, শিকারি-সংগ্রাহক সমাজ সাধারণত আধুনিক শিল্পকারখানার শ্রমিকদের তুলনায় কম সময় কাজ করত। দিনে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা জীবিকা নির্বাহের কাজে ব্যয় হতো। খাবার সহজলভ্য থাকলে তারা আরও কম কাজ করত। যেমন ফলের প্রাচুর্য বা বড় কোনো প্রাণী শিকারের পর তাদের হয়তো আরও কম কাজ করতে হতো। উদ্বৃত্ত কর্মঘণ্টা তারা ব্যয় করত ধর্মীয় আচার, মরদেহ সৎকার/দাফন, গুহাচিত্র আঁকার মতো বিভিন্ন কাজে।

প্রাচীন মিসরের শ্রমিক ও রোমের কারিগর

ডিয়ের এল-মেদিনা গ্রামে বসবাসরত কারিগরদের কাজের রেকর্ডে দেখা যায়, রাজপরিবারের সমাধিতে কাজ করা কারিগরেরা প্রতি ১০ দিনের ৮ দিন কাজ করতেন। অন্য দুই দিন তাঁরা বিশ্রাম নিতেন। বাস্তবে ৫০ দিনের মধ্যে মাত্র ১৮ দিন তাঁরা কাজ করতেন। বাকি সময়টা ব্যয় হতো ধর্মীয় উৎসব ও পরিবারের বিভিন্ন কাজে। এ ছাড়া কিছু সময় তাঁরা ব্যয় করতেন হস্তশিল্প তৈরিতে। এদিকে প্রাচীন রোমানরা প্রচুর অবসর সময় পেতেন। সে সময় তাঁরা কাটাতেন গোসলখানায় কিংবা সার্কাস ম্যাক্সিমাসে ঘোড়দৌড় দেখে। গ্ল্যাডিয়েটরের যুদ্ধ কিংবা থিয়েটারে অভিনয় দেখেও অবসর সময় কাটত রোমানদের। এসব ছিল তাঁদের বিনোদনের অংশ।

অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের কারিগর

চৌদ্দ শতকের অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের কারিগরেরা দিনে ৯ ঘণ্টা কাজ করতেন। সপ্তাহে চার দিন। পঞ্চম দিন ছিল বাজার করার জন্য নির্দিষ্ট। বছরে ১৮টি উৎসবের দিনসহ মোট ৯১ দিন কাজ থেকে বিরত থাকতেন অ্যাজটেকের কারিগরেরা। এ ৯১ দিনের মধ্যে ধর্মীয় উৎসব এবং মাসের শুরুতে বিশেষ উৎসব উদ্‌যাপিত হতো।

সতেরো থেকে বিশ শতকের ইউরোপের শ্রমিক

সতেরো শতকের মাঝামাঝি ফ্রান্সে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে। এ কারখানাগুলোতে শ্রমিকেরা যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কাজ করতেন এবং তাঁদের জীবনযাত্রা সাধারণত কারিগরদের চেয়ে তুলনামূলক কঠিন ছিল। সে সময় ফ্রান্সের শ্রমিকদের কাজের সময় ছিল ১২ ঘণ্টা। এর মধ্যে দুই ঘণ্টা খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ। এ ছাড়া তাঁদের জন্য বছরে ৫২টি রোববার, বিশ্রামের জন্য ৯০ দিন ও ৩৮টি ধর্মীয় ছুটির দিন বরাদ্দ ছিল। সব মিলিয়ে তাঁরা ১৮৫ দিন কাজ করতেন।

ইতিহাসবিদ হ্যান্স-জোয়াকিম বোথের গবেষণায় দেখা যায়, লন্ডনের শ্রমিকেরা ১১ ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করতেন। সোমবার সেখানে ‘সেন্ট মানডে’ নামে পরিচিত ছিল। এ দিন অনেক শ্রমিক ছুটি কাটাতেন। সব মিলিয়ে তাঁদের মোট ৫৩টি ধর্মীয় ছুটি ছিল। শিল্পবিপ্লবের সময় শ্রমিকেরা ছিলেন সবচেয়ে পরিশ্রমী। উনিশ শতকের ইংল্যান্ডের কারখানাগুলোতে শ্রমিকেরা সপ্তাহে ছয় দিন ১৬ ঘণ্টা করে কাজ করতেন। কেবল রোববার, বড়দিন ও গুড ফ্রাইডে ছিল ছুটি। ১৯৪০ সালে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের আইন পাস হয়। তখন বছরে ৮টি জাতীয় ছুটি, ১০ দিনের বেতনসহ ছুটি জনপ্রিয়তা পায়।

একুশ শতকের নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নেদারল্যান্ডসের প্রাপ্তবয়স্কদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা বিশ্বে সবচেয়ে কম—মাত্র ২৯ ঘণ্টা। অর্থাৎ দেশটিতে একজন মানুষ গড়ে দৈনিক ৫ দশমিক ৮ ঘণ্টা কাজ করেন। নেদারল্যান্ডসের সরকার অনুমোদিত ছুটি বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, মাত্র সাত দিন। সরকার অনুমোদিত বার্ষিক বেতনসহ ছুটি ২০ দিন।

নেদারল্যান্ডসে মানুষের দৈনিক গড় কর্মঘণ্টা ও সরকারি ছুটি দুটিই কম। দেশটিতে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে কাজ করেন ৫ দশমিক ৮ ঘণ্টা। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
নেদারল্যান্ডসে মানুষের দৈনিক গড় কর্মঘণ্টা ও সরকারি ছুটি দুটিই কম। দেশটিতে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে কাজ করেন ৫ দশমিক ৮ ঘণ্টা। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

অন্যদিকে ‘ইউএস ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকস’-এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ কর্মসপ্তাহ ৩৪ দশমিক ৫ ঘণ্টা। এটি বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশের গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। তবে অনেক মার্কিন কর্মী আরও বেশি সময় কাজ করেন। ইউরোপীয় কর্মীরা যেখানে নিশ্চিত প্রচুর বেতনসহ ছুটি কাটান, সেখানে মার্কিন কর্মীরা বছরে গড়ে ১২ দিন ছুটি পান। এর সঙ্গে যোগ হয় মাত্র ১০টি সরকারি ছুটির দিন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মার্কিন আইনে কোনো ধরনের বেতনসহ ছুটি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।

করোনা মহামারির সময় হোম অফিস

করোনাভাইরাসের অতিমারির কালে বাড়ি থেকে কাজ করলেও কর্মীরা আগের চেয়ে বেশি সময় কম্পিউটারে লগ ইন থাকতেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কর্মীরা আগে গড়ে ৯ ঘণ্টা কাজ করলেও করোনাকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ ঘণ্টায়। বাসা থেকে কাজ করার সময় কর্মীরা গড়ে অতিরিক্ত ২ ঘণ্টা বেশি কাজ করতেন। আর সে জন্যই কর্মঘণ্টা ৯ ঘণ্টা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১১ ঘণ্টায়।

সূত্র: লাভ মানি, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত