Ajker Patrika

টয়লেটে বসে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন? বাড়ছে হেমোরয়েড হওয়ার ঝুঁকি

ফিচার ডেস্ক 
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ১৫
টয়লেটে বসে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন? বাড়ছে হেমোরয়েড হওয়ার ঝুঁকি

টয়লেটে একবার ঢুকে বের হওয়ার নাম নেই! এমন ঘটনা অনেকের বেলায়ই ঘটে। এই বিলম্বের কারণ কি মোবাইল ফোন?

এটা শুধু আপনার বাসার সদস্যদের সমস্যা নয়, বর্তমানে টয়লেটে বসে মোবাইল ফোন স্ক্রল করেন এমন মানুষের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে অনেকটাই। বয়সটা আসলে শুধু সময়ের নয়, অনেকটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রিকও। গবেষকেরা বলছেন, টয়লেটে মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়ে বেশি সময় বসে থাকা হেমোরয়েড হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষত পাঁচ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে বসে থাকা এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

হেমোরয়েডের ঝুঁকি কেবল টয়লেটে বসে মোবাইল ফোন স্ক্রল করার জন্যই বাড়ে না; অনেক কারণেই সেটা হতে পারে। তবে মোবাইল ফোন স্ক্রলিং বিষয়টিকেও এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। আর তাই এ বিষয়ে সতর্ক করছেন গবেষকেরা। খানিকটা সচেতনতার মাধ্যমে মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করলে, আঁশজাতীয় খাবার ও পানি বেশি খেলে এবং শরীরচর্চা করলে এসব ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

কেন এমন বলছেন গবেষকেরা

৩ সেপ্টেম্বর পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সে (পিএলওএস) একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একটি মেডিকেল সেন্টারে কোলনোস্কোপি করতে আসা প্রাপ্তবয়স্ক ১২৫ ব্যক্তির টয়লেটে বসা ও অন্যান্য অভ্যাস বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাঁদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী স্বীকার করেছেন, তাঁরা টয়লেটে থাকাকালীন মোবাইল ফোন স্ক্রল করেন। দেখা গেছে, যাঁরা স্ক্রল করেন, তাঁদের মধ্যে হেমোরয়েড হওয়ার ঝুঁকি ৪৬ শতাংশ বেশি। গবেষকেরা দেখেছেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের প্রত্যেকে টয়লেটে ৫ মিনিট বা তার বেশি সময় কাটান। এই অভ্যাস যাঁদের থাকে, তাঁরা সাধারণত সামগ্রিকভাবে শরীর কম সক্রিয় রাখেন।

টয়লেটে মোবাইল ফোন ব্যবহারে চিকিৎসকের দৃষ্টিভঙ্গি

হিউস্টন মেথোডিস্ট ক্লিয়ার লেক হাসপাতালের চিকিৎসক মাইকেল জে. অ্যালেন বলেন, ‘টয়লেটে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে মলদ্বারের রক্তনালিগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।’ তিনি স্বাস্থ্যবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল ‘হেলথলাইন’কে বলেন, ‘রক্ত সেখানে জমতে থাকে। এই ফুলে যাওয়া রক্তনালিগুলোর কারণে হেমোরয়েড হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এটা অনেকটা বাগানে পানি দেওয়ার পাইপ বাঁকিয়ে রাখার মতো। যত বেশি সময় বাঁকানো থাকবে, ভেতরের চাপ তত বাড়বে।’ ইট’স মি অ্যান্ড ইউ ক্লিনিকের একজন চিকিৎসক স্নিগুয়েলে গেইগে বলেন, ‘টয়লেটে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে অনেকে নিজের অজান্তেই অনেকক্ষণ ধরে একভাবে বসে থাকেন, যা মলদ্বারের রক্তনালিগুলোর ওপর ধারাবাহিক চাপ সৃষ্টি করে।’ তিনি বলেন, ‘এই অবস্থাটা সাধারণ চেয়ারে বসার মতো নয়। চেয়ারে পেলভিস বা কোমর কিছুটা চাপমুক্ত করার উপায় আছে। টয়লেটে এমনভাবে বসে থেকে একটানা চাপ পড়লে ওই রক্তনালিগুলো ফুলে গিয়ে হেমোরয়েড হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’

pexels-shvetsa-3943951

ঝুঁকি কমানোর উপায়

⦁ বাথরুমে মোবাইল ফোন নিয়ে না যাওয়া।

⦁ টয়লেটে বসে থাকার সময় সীমিত রাখা।

⦁ ১০ মিনিটের বেশি বসে থাকা উচিত নয়। আদর্শ সময় হতে পারে ৩ থেকে ৫ মিনিট।

⦁ খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য কমানো।

⦁ পর্যাপ্ত পানি পান ও হালকা ব্যায়াম করা।

হেমোরয়েডের উপসর্গ

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এবং জেনারেল ও কলোরেকটাল সার্জন মো. নাজমুল হক মাসুম এ বিষয়ে জানান, হেমোরয়েডের চিকিৎসা তার ধরনের ওপর নির্ভর করে। তিনি হেমোরয়েডের সাধারণ উপসর্গ সম্পর্কে ধারণা দেন।

⦁ মলত্যাগের পর রক্ত পড়া। তবে এর সঙ্গে সাধারণত কোনো ব্যথা হয় না। পাইলস বা হেমোরয়েড যদি প্রথম ধাপে থাকে, সে ক্ষেত্রে মলদ্বারে বাড়তি মাংসের মতো কোনো কিছুই থাকে না। শুধু মলত্যাগের পর তাজা রক্তপাত হয়।

⦁ দ্বিতীয় ধাপের হেমোরয়েড হলে মলত্যাগের পর তাজা রক্তপাত হয়। তবে সাধারণত ব্যথা হয় না এবং মলত্যাগের পর মনে হয় ভেতর থেকে কী যেন বাইরের দিকে বের হয়ে আসে। সেটি এমনিতেই ভেতরে ঢুকে যায়।

⦁ তৃতীয় ধাপের হেমোরয়েড হলে, মলত্যাগের পর বাড়তি মাংসের মতো বের হয়। সেটিকে চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়।

⦁ চতুর্থ ধাপের হেমোরয়েড হলে মলত্যাগের পর বাড়তি যে মাংসপিণ্ড বের হতো, সেটি আর ঢুকবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যথা হবে। এটি থ্রববোসড হেমোরয়েড।

চিকিৎসা

ডা. মো. নাজমুল হক মাসুম জানান, প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে গেলে, অর্থাৎ প্রথম ধাপের হেমোরয়েড হলে তার চিকিৎসায় কোনো অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয় এবং পায়খানা স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রচুর শাকসবজি খেতে ও পানি পান করতে বলা হয়। কারও যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তাহলে মল নরম করার জন্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। তাতে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী ভালো থাকে।

দ্বিতীয় ধাপের হেমোরয়েড হয়ে থাকলেও অপারেশন করা হয় না। ইনজেকশনের মতো এর কিছু আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। একে বলা হয় স্কলেরো থেরাপি। আবার কারও ক্ষেত্রে রিং লাইগেশন করা হয়। যেটিকে বলা হয়, রাবার রিং লাইগেশন। পাইলসের তৃতীয় ও চতুর্থ হেমোরয়েডের ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আজকাল সেই অপারেশন একেবারেই কষ্টদায়ক নয়। আধুনিক পদ্ধতিতে লেজারের মাধ্যমে অথবা স্টেপল হেমোরয়ডোপেক্সির মাধ্যমে অপারেশন করা হয়। এর মধ্যে বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া হয় না।

সূত্র: হেলথ লাইন, সিএনএন

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জনপ্রিয় প্রোটিন পাউডারে উচ্চমাত্রায় সিসা, ঝুঁকিতে অন্তঃসত্ত্বারা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গর্ভাবস্থায়, ডায়েট মেইনটেইন এবং শিশুদেরও অনেক সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রোটিন খেতে বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত
গর্ভাবস্থায়, ডায়েট মেইনটেইন এবং শিশুদেরও অনেক সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রোটিন খেতে বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বেশ কিছু জনপ্রিয় প্রোটিন সাপ্লিমেন্টে এমন মাত্রায় সিসা পাওয়া গেছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কনজিউমার রিপোর্টস নামের একটি সংস্থা।

অলাভজনক ওই প্রতিষ্ঠানটি ২৩ ধরনের প্রোটিন পাউডার ও শেকের নমুনা পরীক্ষা করে জানিয়েছে, এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি পণ্যে প্রতিদিনের নিরাপদ গ্রহণমাত্রার চেয়ে বেশি সিসা রয়েছে।

কনজিউমার রিপোর্টসের ফুড সেফটি রিসার্চ অ্যান্ড টেস্টিং বিভাগের ম্যানেজার সানা মুজাহিদ বলেন, ‘এই পণ্যগুলো থেকে তাৎক্ষণিক কোনো ক্ষতির ঝুঁকি নেই, বিশেষ করে যদি এগুলো কোনো সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি গ্রহণ করেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

যেহেতু মানুষ অন্যান্য খাবার থেকেও সিসার সংস্পর্শে আসে, তাই এর মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।

যে প্রোটিন সাপ্লিমেন্টগুলোকে কনজিউমার রিপোর্টস ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর প্রত্যেক পরিবেশনে ০.৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা রয়েছে। যা ক্যালিফোর্নিয়ার কঠোর দৈনিক গ্রহণমাত্রার মানদণ্ডের ভিত্তিতে নির্ধারিত। তবে কিছু স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আরও উচ্চমাত্রার সীমা নির্ধারণ করেছে।

২০২২ সাল থেকে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) জানিয়েছে, শিশুদের জন্য দৈনিক ২.২ মাইক্রোগ্রামের বেশি এবং সন্তান ধারণক্ষম নারীদের জন্য ৮.৮ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

তবুও, সিসা গ্রহণের কোনো মাত্রাকেই সম্পূর্ণ নিরাপদ বলা যায় না। সিসা অত্যন্ত বিষাক্ত এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে জমতে থাকে। অল্প পরিমাণ সংস্পর্শেও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায়, ডায়েট মেইনটেইন এবং শিশুদেরও অনেক সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রোটিন খেতে বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত
গর্ভাবস্থায়, ডায়েট মেইনটেইন এবং শিশুদেরও অনেক সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রোটিন খেতে বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত

অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও এই প্রতিবেদনের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. স্টিফেন লুবি বলেন, এই ফলাফল ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক ড. পিটার কোহেন সতর্ক করে বলেন, এই প্রতিবেদনটিকে ‘ক্রয় নির্দেশিকা’ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।

তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সাপ্লিমেন্টে সিসা এবং অন্যান্য ভারী ধাতু পণ্য তৈরির প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়তে পারে। অথচ স্বাস্থ্য ভালো রাখার উদ্দেশ্যে আমরা এগুলো গ্রহণ করি।’

যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য বা ওষুধের মতো সাপ্লিমেন্ট পণ্যগুলোও নিয়মিত কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে যায় না। ড. কোহেন পরামর্শ দেন, মানুষ যেন এমন কোম্পানির তৈরি সাপ্লিমেন্ট বেছে নেয় যারা গুণমান যাচাইকরণ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

কনজিউমার রিপোর্টস জানিয়েছে, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে নেইকেড নিউট্রিশন কোম্পানির ভেগান মাস গেইনার (Vegan Mass Gainer) প্রোটিন পাউডারে, প্রতি সার্ভিংয়ে ৭.৭ মাইক্রোগ্রাম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে হুয়েল কোম্পানির ব্ল্যাক এডিশন পাউডারে, ৬. ৩ মাইক্রোগ্রাম। অন্য যেসব পণ্যে নির্ধারিত ০.৫ মাইক্রোগ্রামের সীমা অতিক্রম করেছে, সেগুলোর বেশিরভাগে প্রতি সার্ভিংয়ে তিন মাইক্রোগ্রামের কম সিসা ছিল।

নেইকেড নিউট্রিশনের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা জেমস ক্লার্ক এক বিবৃতিতে জানান, প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় তারা একটি স্বতন্ত্র পরীক্ষা করিয়েছেন, যা নিশ্চিত করেছে যে তাদের কোনো পণ্যের ভারী ধাতুর মাত্রা এফডিএ-এর রেফারেন্স সীমা অতিক্রম করেনি।

তিনি আরও বলেন, ভেগান মাস গেইনার ওজন বাড়ানোর জন্য তৈরি। এর সার্ভিং সাইজ অন্যান্য উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন পাউডারের তুলনায় বড়। এ কারণে এতে সিসার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি দেখা যেতে পারে।

অন্যদিকে, হুয়েলের পুষ্টিবিষয়ক প্রধান রেবেকা উইলিয়ামস দাবি করেন, তাদের পণ্যে সিসার মাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপত্তা মানের মধ্যেই রয়েছে এবং কোম্পানির সব পণ্যই ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’।

পরীক্ষায় পাওয়া সিসার মাত্রা ‘তাৎক্ষণিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করার মতো উচ্চ নয়’ বলে স্বীকার করেছে কনজিউমার রিপোর্টস। তবে তারা এটিও উল্লেখ করেছে, পরীক্ষার ফলাফল সব সার্ভিং বা ব্যাচে একই থাকবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।

তবে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্টিফেন লুবি বলেন, কোম্পানিগুলো তাদের সরবরাহ চেইন যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ না করায় তিনি ‘বিস্মিত ও হতাশ’।

গর্ভাবস্থায়, ডায়েট মেইনটেইন এবং শিশুদেরও অনেক সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রোটিন খেতে বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত
গর্ভাবস্থায়, ডায়েট মেইনটেইন এবং শিশুদেরও অনেক সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রোটিন খেতে বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত

উল্লেখ্য, সিসার মতো ভারী ধাতু দূষিত মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানি, কিংবা উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেসহ বিভিন্ন উপায়ে খাদ্য সরবরাহে প্রবেশ করতে পারে।

কনজিউমার রিপোর্টস আরও জানায়, উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন সাপ্লিমেন্টগুলোতে দুগ্ধ বা মাংসজাত উৎসের তুলনায় বেশি সিসা পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত করে যে দূষিত ফসলই সমস্যার একটি বড় উৎস হতে পারে।

তবে ড. লুবি বলেন, প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে যে মাত্রার সিসা পাওয়া গেছে, তা উৎপাদনের আরও অন্যান্য ধাপেও দূষণ ঘটতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি করছে।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিটার কোহেন বলেন, একবার সিসা শরীরে প্রবেশ করলে তা হাড়ে জমা হতে পারে এবং খুব ধীরে বের হয়। তাই দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শ বিপজ্জনক। এতে স্নায়বিক সমস্যা ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও জানান, শিশুরা সিসা বিষক্রিয়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে থাকে। তাদের মধ্যে বিলম্বিত বিকাশ, শেখার অসুবিধা এবং খিঁচুনির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্ট আনলেডেড নামের গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক জেনা ফোরসাইথ বলেন, এই ফলাফল বিশেষভাবে গর্ভবতী নারীদের জন্য উদ্বেগজনক। কারণ গর্ভাবস্থায় প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, গর্ভবতী নারী বা যাঁরা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের উচ্চ সিসাযুক্ত প্রোটিন পাউডার এড়িয়ে চলা উচিত। আর অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদেরও প্রতিদিন এমন সাপ্লিমেন্ট না খেয়ে বিকল্প উৎস বেছে নেওয়া ভালো।

ড. স্টিফেন লুবি বলেন, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করার আগে ভোক্তাদের উচিত এর ঝুঁকি বিবেচনা করা। তিনি বলেন, ‘প্রোটিন পাউডার খাওয়া কি উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি ডেকে আনছে? আমাদের ভাবা উচিত।’

এর আগেও জনপ্রিয় খাদ্যপণ্যে সিসা পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালে দারুচিনি-স্বাদযুক্ত আপেল সসের লাখ লাখ পাউচ বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়, কারণ তাতে অত্যধিক মাত্রায় সিসা পাওয়া গিয়েছিল। গত বছর কনজিউমার রিপোর্টসের আরেকটি গবেষণায়ও এক ডজন দারুচিনি দিয়ে তৈরি পণ্যে সিসার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেশি ধরা পড়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চুল পড়া ঠেকাতে পারে রান্নাঘরের ৫ উপাদান

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ১৫
চুল পড়া ঠেকাতে পারে রান্নাঘরের ৫ উপাদান

আগেকার দিনে ঘরের লম্বা চুলকে নারীর গৌরব বলে মনে করা হতো। চুল দেখেই বোঝা যায় আপনি নিজের প্রতি কতটা যত্নশীল। তবে কাজের চাপে অনেকেই পারলারে গিয়ে সময় নিয়ে চুলের যথাযথ যত্ন নিতে পারেন না। এর ওপর ধুলোবালি ও দূষণের প্রকোপ তো রয়েছেই। ফলে যত্নের অভাবে চুল ঝরতে থাকে। গোসলের আগে যদি আধাঘণ্টা সময় থাকে, তাহলে রান্নাঘরের কয়েকটি উপাদান দিয়েই চুল পড়ার সমস্যা ঠেকানো সম্ভব।

জেনে নিন রান্নাঘরে থাকা কোন কোন উপাদান চুল পড়ারোধে সহায়তা করে।

আদা

আদা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। অতিরিক্ত খুশকির কারণে যাঁদের চুল ঝরছে তাঁরা মাথার ত্বকে আদার রস ব্যবহার করতে পারেন। আদা কুচি করে কেটে নিন এবং এতে এক কাপ পানি যোগ করুন। এবার একটা হাঁড়িতে আদা মেশানো পানি ফুটতে দিন। পানির রং পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত জ্বাল দিন। রং পরিবর্তন হলে মিশ্রণটি ছেঁকে ঠান্ডা করে একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। আপনার মাথার ত্বকে ও চুলের গোড়ায় এই মিশ্রণ ভালো করে স্প্রে করুন। এরপর ভালো করে ম্যাসাজ করে ৫ ঘণ্টা রাখুন। তারপর অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে ২ দিন পর পর এই নিয়মে স্প্রে করুন।

লেবু

লেবুতে আছে ভিটামিন সি। এ ভিটামিন কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল স্বাস্থ্য়োজ্জ্বল রাখে ও চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে। লেবু মাথার ত্বকের ময়লা ও জমে থাকা তেল পরিষ্কার করতে এবং খুশকি কমাতে কার্যকর। একটি তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে তাতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার চামচ দিয়ে নেড়ে একটি পাতলা পেস্ট তৈরি করুন। মাস্কটি আপনার চুলের গোড়ায় ও পুরো চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর একটি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি অতিরিক্ত তেল, খুশকি, ময়লা দূর করবে এবং আপনার চুলের আর্দ্রতা ফেরাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি চুল পড়াও কমবে। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করুন।

চুল পড়া রোধে প্রতি মাসে দুবার প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে হবে। ডিম ও টক দইয়ের মিশ্রণ দিয়ে ঘরেই প্রোটিন প্যাক তৈরি করে নেওয়া যায়। সেই সঙ্গে ভিটামিন ই ও ভিটামিন সিযুক্ত খাবার খেতে হবে। তিন মাস এভাবে চললে চুল পড়ার সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। শারমিন কচি রূপবিশেষজ্ঞ এবং স্বতাধিকারী, বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ কেয়ার

পেঁয়াজের রস

চুল পড়া রোধে পেঁয়াজের রস খুব ভালো কাজ করে। শুধু তাই নয়, চুল গজাতেও পেঁয়াজের রসের জুড়ি নেই। পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকে যা চুল ভাঙারোধ করে ও ঝরে যাওয়া প্রতিরোধ করে। পেঁয়াজের রস এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় চুলের অকাল ধূসরতাও বন্ধ করে। পেঁয়াজের রস ও জলপাই তেলের মিশ্রণ চুলে ব্যবহার করেও চুল পড়া রোধ করা যেতে পারে। ১ ভাগ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে দুই ভাগ জলপাই তেল মিশিয়ে মাথার ত্বক ও পুরো চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। তারপর আধাঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি, চুল পড়া এবং চুলের অকাল ধূসর হয়ে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে এটি খুব ভালো কাজ করে।

pexels-alex-pereyra-473897803-32074404

ডিম

ডিম আপনার চুলের খুব ভালো বন্ধু। এটি বায়োটিন ও ফোলেটের মতো প্রোটিনের ভালো উৎস, যা চুল মেরামত করে এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। ডিমের কুসুম সরাসরি চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে নতুন চুল গজাবে। একটি বাটিতে দুই-তিনটি ডিমের কুসুম নিন এবং ২ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা মধু যোগ করুন। পেস্টটি ভালো করে মিশিয়ে সরাসরি চুলে লাগান, গোড়ায় ব্যবহারের কথাও ভুলে যাবেন না। ৩০ মিনিট রেখে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

pexels-sunquan83-28039173

কারি পাতা

কারি পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থের ভাণ্ডার, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুব জরুরি। কারিপাতা ব্যবহারে চুল পড়া রোধ হয়। সরিষার তেল, কাঁচা নারকেল তেল ও কারি পাতার মিশ্রণ চুল পড়া রোধে দুর্দান্ত চিকিৎসা হতে পারে। এই তিনটি উপাদানের মিশ্রণ চুলের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে ও চুল সিল্কি রেখে মাথার ত্বকে পুষ্টির জোগান দিতে সাহায্য করবে। ভালো ফলাফলের জন্য এই মিশ্রণ রাতে চুলে লাগিয়ে রেখে সকালে ধুয়ে নিতে হবে।

সোর্স কী?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রান্নাঘরের ৪ সরঞ্জাম থেকেই খাবারে ঢুকছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রান্নাঘরেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের বিপদ। ছবি: সংগৃহীত
রান্নাঘরেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের বিপদ। ছবি: সংগৃহীত

দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে প্লাস্টিক। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো জানাচ্ছে, প্লাস্টিকের পাত্র, চামচ এবং এমনকি টি-ব্যাগও নীরবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করাচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা। এসব প্লাস্টিক কণা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।

গবেষকদের অনুমান, একজন আমেরিকান বছরে প্রায় ৩৯ হাজার থেকে ৫২ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করে। এই কণাগুলো পানীয় জল, খাবার এবং খাবার তৈরির সরঞ্জাম—সবকিছু থেকেই আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। যদিও আরও গবেষণার প্রয়োজন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এই কণাগুলো কোষের ক্ষতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এবং নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

রান্নাঘরে অদৃশ্য বিপদ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রান্নাঘরের কয়েকটি সাধারণ জিনিস মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণের প্রধান উৎস:

১. প্লাস্টিক ফুড স্টোরেজ কন্টেইনার

গত সেপ্টেম্বরের একটি গবেষণা অনুযায়ী, খাদ্য প্যাকেজিং-এ ব্যবহৃত ১৪ হাজার পরিচিত রাসায়নিকের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ (অর্থাৎ ৩,৬০৭ টি) মানুষের শরীরে শনাক্ত হয়েছে।

২০২৩ সালের জুনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিকের পাত্র মাইক্রোওয়েভে গরম করলে খাদ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিকের সর্বোচ্চ নিঃসরণ ঘটে। ন্যানোপ্লাস্টিকগুলো ১ মাইক্রনের চেয়ে ছোট হওয়ায় তা আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি ফ্রিজে রাখা বা সাধারণ তাপমাত্রায় রাখলেও ছয় মাসে কোটি কোটি কণা নিঃসৃত হতে পারে।

বিপিএ-মুক্ত (BPA-free) পাত্রও নিরাপদ নয়। দাবি করা হয়, এই ধরনের পাত্রে শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক বাইস্ফেনল-এ থাকে না। এ ধরনের পাত্র সাধারণ প্লাস্টিকের চেয়ে কিছুটা ভালো, তবুও ওভেনে কাচের পাত্র বা সিলিকন ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প। কাচের পাত্র ওভেনে, ফ্রিজে বা মাইক্রোওয়েভে ব্যবহার করা নিরাপদ।

২. রান্নাঘরের প্লাস্টিকের সরঞ্জাম

গত জুনে প্রকাশিত একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা অনুসারে, প্লাস্টিকের চামচ বা স্প্যাচুলার মতো সরঞ্জামও রান্নার সময় খাদ্যদ্রব্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা অবমুক্ত করে। কারণে রান্নার কাজে কাঠ বা স্টেইনলেস স্টিলের সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত। মাছ ভাজার জন্য স্টেইনলেস স্টিলের ‘ফিশ টার্নার’ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

৩. নন-স্টিক এয়ার ফ্রায়ার

নন-স্টিক এয়ার ফ্রায়ারের ভেতরের আস্তরণে সাধারণত পিটিইই (এক ধরনের প্লাস্টিক) কোটিং থাকে। ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শক্ত বা ধারালো সরঞ্জাম ব্যবহার করলে বা খুব উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করলে পিটিইই কোটিং থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিক বা ন্যানোপ্লাস্টিক নিঃসৃত হতে পারে।

বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক এবং পিটিইই মুক্ত ন্যানো-সিরামিক কোটিংসহ এয়ার ফ্রায়ার এখন বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।

৪. টি-ব্যাগ

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনা দেখায়, টি-ব্যাগ গরম চায়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা যোগ করার অন্যতম প্রধান উৎস। একটি টি-ব্যাগ থেকে ১০০ কোটিরও বেশি কণা নিঃসৃত হতে পারে। এমনকি ‘কম্পোস্টেবল’ লেবেল দেওয়া টি-ব্যাগও অনেক সময় উদ্ভিজ্জ উপাদানের আড়ালে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হতে পারে।

এ কারণে গরম পানীয়ের জন্য খোলা চা পাতা এবং স্টেইনলেস স্টিলের টি-ইনফিউজার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। পানি গরম করার জন্য কাচের বৈদ্যুতিক কেটলি ব্যবহার করাও নিরাপদ।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে ধীরে ধীরে রান্নাঘর থেকে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলার অভ্যাস করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যে প্লাস্টিক সামগ্রীগুলো ঘন ঘন গরম করা হয়, ফ্রিজে রাখা হয় বা ডিশওয়াশারে ধোয়া হয়, সেগুলোর পরিবর্তে সিলিকন, কাঠ, ধাতু বা কাচের জিনিস ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্পোর্টস শু কেনার আগে যে বিষয়গুলো দেখা জরুরি

ফিচার ডেস্ক
স্পোর্টস শু কেনার আগে যে বিষয়গুলো দেখা জরুরি

দৌড়ানোর জন্য কিংবা নিয়মিত হাঁটতেও সঠিক জুতা নির্বাচন করা জরুরি। কারণ, জুতার কারণে কখনো ফোসকা, আঙুলে আঘাত বা অস্বস্তি হতে পারে। তাই জুতা কেনার আগে স্থায়িত্ব, গ্রিপ এবং আবহাওয়া সহনশীলতার বিষয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। আপনার জুতা এমন হওয়া চাই, যেন পাথরের রাস্তা, কাদামাটি বা ভেজা জায়গায়ও টিকে থাকতে পারে।

নিজের জন্য সঠিক এক জোড়া জুতা বেছে নিতে গিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। তাই জুতা কেনার আগে কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিলে আপনিও বেছে নিতে পারবেন টেকসই জুতা।

যা দেখবেন

উপকরণ

জুতার ওপরের অংশ, যেটাকে ‘আপার’ বলা হয়, সেটা যেন মজবুত ও বায়ু চলাচলের উপযোগী হয়। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গরম বা শুকনো আবহাওয়ায় মেশ কাপড়ের তৈরি জুতা ভালো। কারণ, এতে বাতাস ঢোকে এবং বেরিয়ে যায়। ফলে পা ঠান্ডা থাকে এবং ঘামে না। অন্যদিকে, যদি বর্ষার দিনে, কাদা মাটি বা বরফের মধ্যে চলেন, তাহলে শক্ত সিনথেটিক কাপড়ের জুতা বেশি উপযোগী। এগুলোতে পানি ঢোকে না। তবে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, ওয়াটারপ্রুফ জুতায় বাতাস কম ঢোকে, তাই বেশি সময় দৌড়ালে পা গরম হয়ে ঘেমে যেতে পারে।

আউটসোল

দৌড়ানোর সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জুতার গ্রিপ। যদি দৌড়ানো বা হাঁটার রাস্তা কাদা কিংবা পিচ্ছিল হয়, তাহলে ৪–৬ মিলিমিটার গভীর রাবার সোলের জুতা সবচেয়ে ভালো কাজে দেয়। এগুলো পা পিছলে যাওয়া থেকে বাঁচায় এবং ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর যদি রাস্তা তুলনামূলক সমান বা পাকা হয়, তাহলে কম গভীর সোল যথেষ্ট।

লেসিং সিস্টেম

ভাবতে পারেন, টেকসই জুতার জন্য ফিতার অবদান কীভাবে। কিন্তু একটু ভালো মানের জুতার সঙ্গে ফিতার সম্পর্কও আছে। যদি আপনি দ্রুত জুতা পরতে চান বা পায়ে আরও শক্তভাবে ও নিরাপদ ফিট চান, তাহলে এমন ফিতা দেখে কিনুন, যেগুলো সহজে খোলা যায়। এতে ফিতা বাঁধতে বা খুলতে সময় লাগে না। মনে রাখবেন, ফিতার কারণে চলতে গিয়ে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই আগে ফিতা বাঁধা ঠিক আছে কি না নিশ্চিত করে নেওয়াই নিরাপদ।

sport-shoes-trunk-photo-freepik

দাম

ভালো মানের জুতা কিনতে সব সময় বেশি টাকা খরচ করতে হয় না। সাধারণত দামি জুতায় পাওয়া যায় উন্নত মানের উপাদান, টেকসই সোল এবং নতুন প্রযুক্তি। যেমন কার্বন প্লেট বা হালকা ফোম, যা চলতে গিয়ে বেশি আরাম দেয়। তবে আপনি মাঝারি দামের জুতা দিয়েও দারুণ অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। বাজারে অনেক জুতা আছে, যেগুলোর পারফরম্যান্স দামি জুতার কাছাকাছি হয়, শুধু অতিরিক্ত ফিচার থাকে না।

টেকসই

দৌড়ানো জুতা সাধারণত হাঁটার জুতার তুলনায় দ্রুত ক্ষয় হয়। কারণ, অনেক সময় জুতার ওপরের অংশ চাপ খায়। এ ক্ষেত্রে রিইনফোর্সড টো-ক্যাপ পা রক্ষা করে এবং আঘাত কমায়। জুতার আগের অংশে থাকা শক্ত অংশকে রিইনফোর্সড টো-ক্যাপ বলে। এটি পায়ের আঙুল এবং হালকা আঘাত থেকে রক্ষা করে।

যদি নিয়মিত ট্রেইল দৌড়ান, দীর্ঘ দূরত্বের রুটে চলেন বা পাথুরে ও কাদা-ঢাকা পথের ট্রেইল অনুশীলন করেন, তাহলে জুতার টেকসইতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক জুতা নির্বাচন না করলে দ্রুত ক্ষয়, আরামহীনতা এবং আঘাতের ঝুঁকি বাড়ে।

জুতা কেনার কয়েকটি অতিরিক্ত টিপস

  • পায়ের আকার বুঝে জুতা কিনুন। না হলে দীর্ঘ সময় দৌড়ালে বা হাঁটলে পায়ের অসুবিধা হতে পারে।
  • কেনার আগে দোকানে জুতা পরে হেঁটে দেখুন।
  • আবহাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে জুতা বাছাই করুন।
  • শক্ত টো-ক্যাপ, মজবুত আপার এবং ভালো মিডসোল দেখে কিনুন।
  • অনলাইন রিভিউ দেখুন
  • নতুন জুতা পরে বেশি দূর প্রথমেই হাঁটবেন না। পা সামান্য মানিয়ে পরে হাঁটতে আরাম পাবেন।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত