Ajker Patrika

যেভাবে ৭২ কেজি ওজন কমালেন এমা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৫
নানা রোগ থাকা সত্ত্বেও ৭২ কেজি ওজন কমিয়েছেন এমা হুকার। ছবি: এমা হুকারের ইস্টাগ্রাম থেকে সংগৃহীত
নানা রোগ থাকা সত্ত্বেও ৭২ কেজি ওজন কমিয়েছেন এমা হুকার। ছবি: এমা হুকারের ইস্টাগ্রাম থেকে সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে থাইয়রেড, পিসিওএস, পিসিওডি, এডিএইচডি, ইটিং ডিসঅর্ডারসহ বাহারি সব রোগ। যেগুলো ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার এই যাত্রাকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। তবে, এসবের পরেও দৃঢ় সংকল্প আর ইচ্ছার মাধ্যমে যে ওজনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় সম্ভব, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন এমা হুকার নামে এক নারী। তিনি এখন একজন সফল নিউট্রিশনিস্ট ও ফিটনেস কোচ।

তিনি একই সঙ্গে এডিএইচডি (অ্যাটেনশন ডিফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার) ও ইটিং ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। এর পরও তিনি স্থূলতার সঙ্গে লড়াই করে ৭২ কেজি ওজন কমিয়েছেন।

ইনস্টাগ্রামে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এমা লিখেছেন, এডিএইচডির কারণে তাঁর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস ছিল একেবারেই অনিয়মিত। কখনো এক খাবারে অতিরিক্ত আসক্তি, আবার কিছুদিন পরই সেই খাবারের প্রতি সম্পূর্ণ অনীহা—এমন এক চক্রে তিনি আটকে যেতেন। এর ফলে একদিকে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, অন্যদিকে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক খাওয়ার প্রবণতা দেখা দিত।

এমার ভাষায়, ‘আমি ভেবেই নিতাম আমার ইচ্ছাশক্তির অভাব। আমি অলস। আসলে আমি চাই না বলেই কিছুতে টিকতে পারি না। কিন্তু দীর্ঘদিন পর বুঝতে পারি, আমার এডিএইচডিই বিষয়গুলোকে জটিল করে তুলছিল।’

এই চক্র ভাঙতে তিনি খাবার পরিকল্পনার নতুন কৌশল শুরু করেন। প্রতিদিনের জন্য নির্দিষ্ট দু-তিনটি খাবারের বিকল্প রাখেন, যাতে বৈচিত্র্যও থাকে আবার মস্তিষ্কে চাপও না পড়ে। খাবারের সময় ঠিক রাখতে ব্যবহার করেন টাইমার। একই সঙ্গে তিনি ক্ষুধার সংকেতগুলোও বুঝতে শেখেন। বুঝতে পারেন, বিরক্ত হলে তিনি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন।

ইটিং ডিসঅর্ডার থাকায় মন খারাপ, রাগ বা দুঃখ হলেই ক্ষুধা না থাকলেও আগে খেতেন এমা। কিন্তু এখন খাবারের দিকে হাত বাড়ানোর আগে তিনি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন যে আসলেই এখন খাওয়ার কোনো দরকার আছে কি না। নাকি তাঁর এখন অন্য কিছু দরকার! যেমন—হাঁটা, গান শোনা, পানি খাওয়া বা একটু বিশ্রাম। এমা বলেন, কোনো কিছু খাওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করার এই প্রবণতা এখন তাঁকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে সব সময় খাবার চাই না তাঁর।

তাঁর আরেকটি উপলব্ধি—খাবারকে ‘ভালো’ আর ‘খারাপ’ হিসেবে ভাগ করলে সেটি অপরাধবোধকে বাড়িয়ে দেয়। বরং পছন্দের খাবারসহ সুষম আহার গ্রহণ করলে বঞ্চনার অনুভূতি থাকে না। এমা বলেন, ‘আমি সারা দিন ভালো খেতাম, তারপর রাতে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলতাম। মনে হতো, সব অগ্রগতি একসঙ্গে নষ্ট করে দিলাম। এখন আর নিজেকে শাস্তি দিই না। নতুন করে শুরু করি।’

রেস্তোরাঁয় যাওয়ার আগেই মেন্যু দেখে রাখার অভ্যাস করেছেন তিনি। এতে বিকল্পের চাপ কমে, সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ হয়। ধীরে ধীরে তিনি খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

তাঁর এই পরিবর্তন কেবল ওজন কমানোতেই সীমাবদ্ধ নয়। ৭২ কেজি ওজন কমলেও এখনো অনেক পথ বাকি বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখনো মাঝে মাঝে রোগগুলো আমাকে হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এখন আমি জানি কীভাবে নিজেকে থামাতে হয়, সহানুভূতি দেখাতে হয়। ব্যর্থতার দিনগুলোতেও আর নিজেকে দোষ দিই না, শুধু আবার উঠে দাঁড়াই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত