Ajker Patrika

প্রতিদিন কতটুকু কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত

প্রতিদিনের কোলেস্টেরল গ্রহণের পরিমাণ ৩০০ মিলিগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
ভেগান খাবারে কোনো কোলেস্টেরল থাকে না। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ছবি: পেক্সেলস
ভেগান খাবারে কোনো কোলেস্টেরল থাকে না। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ছবি: পেক্সেলস

পুষ্টি সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতিদিনের কোলেস্টেরল গ্রহণের পরিমাণ ৩০০ মিলিগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা ও পুষ্টি বিষয়ক নির্দেশনা বলছে, কোলেস্টেরলের সরাসরি প্রভাবের চেয়ে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট এবং অতিরিক্ত চিনি আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।

pexels-artempodrez-4728861
pexels-artempodrez-4728861

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খাবারের কোলেস্টেরল এবং হৃদ্‌রোগের সম্পর্ক সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। আধুনিক নির্দেশনায় সরাসরি কোলেস্টেরল কমানোর কথা না বলে, সেই সব খাবার এড়িয়ে চলার কথা বলা হচ্ছে যেগুলোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট ও চিনি বেশি থাকে। সেগুলো পরোক্ষভাবে কোলেস্টেরল ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

কোলেস্টেরল কী

কোলেস্টেরল হলো একটি মোমের মতো চর্বিযুক্ত পদার্থ, যা মানবদেহের লিভারে তৈরি হয়। শরীর প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ কোলেস্টেরল নিজেই তৈরি করে। এই কোলেস্টেরল শরীরের সব কোষেই থাকে এবং এটি হরমোন, ভিটামিন ডি ও হজমে সহায়তাকারী পদার্থ তৈরিতে সাহায্য করে। বাইরে থেকে আমরা যেটুকু কোলেস্টেরল আমরা গ্রহণ করি, তা আসে প্রাণিজ উৎস থেকে। গরু, খাসি ও মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, মাখন ও চিজে কোলেস্টেরল থাকে। কিন্তু উদ্ভিজ্জ উৎস, যেমন শাকসবজি, ফল, ডাল ও শস্যজাতীয় খাবারে কোনো কোলেস্টেরল থাকে না।

কেন কোলেস্টেরল নিয়ে এত আলোচনা

যেসব খাবারে কোলেস্টেরল বেশি থাকে, সেগুলোতে সাধারণত স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট ও অতিরিক্ত চিনিও থাকে। সেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে হৃদ্‌রোগ ও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিশেষ করে, এসব উপাদান খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিয়ে রক্তনালিতে চর্বি জমিয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণে আধুনিক নির্দেশিকা অনুযায়ী, স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট কমানো এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি বেছে নেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

pexels-mart-production-8165389
pexels-mart-production-8165389

যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত

উচ্চ কোলেস্টেরল বা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রক্রিয়াজাত ও উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে,

⦁ প্রক্রিয়াজাত মাংস

⦁ ফাস্ট ফুড ও ভাজা খাবার

⦁ পিৎজা

⦁ আইসক্রিম

⦁ বেকড পণ্য (ডোনাট, কুকি, কেক)

⦁ লাল মাংস (গরু, খাসি)

⦁ চিজ ও মাখন

প্রাণিজ উৎসের সব খাবারে কোলেস্টেরল থাকলেও, সবগুলোতেই স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে না। কিন্তু উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার, যেমন রেড মিট, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কোলেস্টেরল মুক্ত ও স্বাস্থ্যকর খাবার

LEEM3519
LEEM3519

নিচের খাবারগুলো কোলেস্টেরল মুক্ত এবং শরীরের জন্য উপকারী,

⦁ সব ধরের ফলমূল, শাকসবজি ও শস্য

⦁ লবণ ছাড়া কাঁচা বা শুকনো ভাজা বাদাম ও বীজ

⦁ উদ্ভিজ্জ তেল

সম্পূর্ণ কোলেস্টেরলমুক্ত খাদ্য পরিকল্পনা হলো ভেগান ডায়েট। ভেগানেরা প্রাণিজ কোনো খাবার খান না। ফলে তারা খাদ্য থেকে কোনো কোলেস্টেরল গ্রহণ করেন না। তবে শরীরের লিভার তখনো প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল তৈরি করে।

উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ ও ঝুঁকি

উচ্চ কোলেস্টেরলের সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। এটি ধীরে ধীরে ধমনি বন্ধ করে দেয় এবং একপর্যায়ে হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় প্রথম লক্ষণ হিসেবে বড় ধরনের হৃদ্‌রোগ দেখা দেয়। তাই সময়মতো রক্ত পরীক্ষা করে কোলেস্টেরলের মাত্রা জানা জরুরি। চিকিৎসকেরা সাধারণত প্রতি ৪ থেকে ৬ বছর অন্তর কোলেস্টেরল পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ঘন ঘন চেক করা উচিত। যেসব কারণে ঘন ঘন কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা জরুরি সেগুলো হলো,

⦁ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা

⦁ ডায়াবেটিস

⦁ ধূমপান

⦁ উচ্চ রক্তচাপ

⦁ হৃদ্‌রোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরলের পারিবারিক ইতিহাস

⦁ অতীতে উচ্চ কোলেস্টেরলের ইতিহাস থাকলে

বর্তমান গবেষণা অনুযায়ী, খাবারের কোলেস্টেরল শরীরের কোলেস্টেরলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে না। বরং যেসব খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট এবং অতিরিক্ত চিনি থাকে—সেগুলোই হৃদ্‌রোগ ও অন্যান্য সমস্যার মূল কারণ।

তাই সুস্থ থাকতে করণীয় হলো,

⦁ প্রতিদিনের ক্যালরির ১০ শতাংশের কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে গ্রহণ করা।

⦁ ট্রান্স ফ্যাট পুরোপুরি পরিহার করা।

⦁ আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেছে নেওয়া।

⦁ প্রাকৃতিক খাবার বেশি খাওয়া—যেমন ফল, শাকসবজি, বাদাম, শস্য।

সুস্থ থাকতে হলে শুধু কোলেস্টেরল নয়, পুরো খাদ্যাভ্যাসেই স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা জরুরি।

সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত