ইসলাম ডেস্ক

যদি বলা হয়, সমাজের কিছু ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরতে, তাহলে ডিভোর্স হবে তার মধ্যে অন্যতম। খোঁজ নিলে দেখতে পাবেন, সুখ-সংসারের এ জগতে ডিভোর্স ঘটা পরিবারগুলো একেকটা জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড। বড় আফসোস ও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিষয়টা যত গুরুতর ও গুরুত্বপূর্ণ, আমরা ততই হালকা চোখে দেখছি।
এমন না যে আমাদের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা নেই, বরং আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সঙ্গে বিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অথচ আমাদের সমাজে না আছে এর আলোচনা, না আছে সমালোচনা। না লেখকেরা এ বিষয়ে স্বতন্ত্র আকারে কলম ধরেন, না আলোচকেরা এ বিষয়ে কথা বলেন। আর না খতিবেরা মসজিদের মিম্বারে এ ধরনের শব্দ মুখে আনেন। যেন এ নিয়ে আলোচনা করা দোষের।
ডিভোর্সের পরিমাণ
অবক্ষয় ধরা আমাদের এ সমাজে প্রতিদিন কী পরিমাণ ডিভোর্স হচ্ছে শুনবেন? জানি না, আপনি শুনতে প্রস্তুত কি না, তবে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য যে, শুধু ঢাকায় প্রতি ৪০ ঘণ্টায় একটি করে ডিভোর্সের আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগের কথা বাদ দিলাম। পুরো বিশ্বের তো প্রশ্নই আসে না। প্রথম আলোর একটি জরিপ বলছে, ঢাকার দুই সিটির মেয়রের কার্যালয়ে ২০২২ সালে তালাকের আবেদন এসেছিল মোট ১৩ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭ হাজার ৬৯৮টি, উত্তর সিটিতে ৫ হাজার ৫৯০টি।
এ হিসাবে রাজধানীতে প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে প্রায় ৩৭টি দাম্পত্যসম্পর্ক, অর্থাৎ তালাকের ঘটনা ঘটছে ৪০ মিনিটে একটি করে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদনের সংখ্যা ২ হাজার ৪৮৮টি। (প্রথম আলো, ১৩ জুন ২০২৩)। অথচ আবেদন কি সবাই করে? তাহলে আবেদন করার সংখ্যা যদি এ পরিমাণ হয়ে থাকে, তাহলে অন্যদের সংখ্যা কী পরিমাণ হতে পারে! তবুও কি এটাকে সমাজের অবক্ষয় মনে হচ্ছে না আপনার কাছে?
ডিভোর্সের ভয়াবহতা
ডিভোর্সের ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এই একটি শব্দ নিজেদের অজ্ঞতার কারণে শত শত পরিবারকে নিমেষে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই একটি শব্দ দীর্ঘ পরিশ্রমে সাজানো সুখের সংসারটা মুহূর্তে ভেঙে ছারখার করে দিচ্ছে।
তিন অক্ষরবিশিষ্ট শব্দটি চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিচ্ছে দুই দম্পতির। অন্ধকার করে ফেলছে নিরপরাধ সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। যেসব দম্পতি এ অগ্নিকুণ্ডে জ্বলছে, তাঁদের অবস্থা দেখে আপনি ডিভোর্সের ভয়াবহতা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারবেন। প্রায় প্রতিদিনই তো আমাদের কাছে ডিভোর্সের ঘটনা আসে।
একেক দম্পতির কী যে আর্তচিৎকার, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একেকজন যে কতভাবে অনুনয়-বিনয় করে আমাদের কাছে আবেদন করেন, হুজুর কোনোভাবে যদি আমাদের সম্পর্কটা রক্ষা পায়! হুজুর, আমাদের এত বছরের সন্তান রয়েছে। আমরা আলাদা কীভাবে থাকব!
ডিভোর্স সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা
নিত্যনতুন ডিভোর্স ঘটছে আমাদের সমাজে। তারপরও কী পরিমাণ অজ্ঞ এ সম্পর্কে সমাজের মানুষগুলো, তার কিছু হাস্যকর ও দুঃখজনক চিত্র দেখুন। সেদিন এক ভাই বললেন, তালাক, এটা তো স্রেফ একটা গালি। যা রাগের মাথায় স্বামীর মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়।
আরও এক ভাই বললেন, তালাক এত ছোট একটা শব্দ। এটা দিয়ে বুঝি এত বছরের সংসার ছিন্ন হয়ে যায়! এমনও শুনতে হয়েছে, তালাক না দিলে নাকি ঝগড়া পূর্ণাঙ্গ হয় না। এটা ঝগড়ারই একটা অংশ। এক বোন বললেন, তালাক দিতে হলে তিন তালাকই দিতে হয়।
এক তালাক কোনো তালাকই না। এ হচ্ছে কোনো জরিপ ছাড়াই আমাদের সমাজের কিছু চিত্র। জরিপ চালালে আরও কত ভয়ংকর তথ্য বের হবে, বুঝতেই পারছেন। অথচ এ বিষয়ে জ্ঞান রাখা কি শুধু হুজুরদের ওপর ফরজ ছিল? নাকি প্রত্যেক বিবাহিত ব্যক্তির ওপর বিবাহের আগে এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ? আজ এসব না জানার কারণে সমাজে ডিভোর্সের এত ছড়াছড়ি।
হাতছাড়া হওয়ার আগে হাত সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করুন
আপনার হাত যেন সামনে ছাড়া না হয়ে যায়, সে জন্য এখনই পদক্ষেপ নিন। আপনার পাত্রের পানি যেন গড়িয়ে না যায়, সে লক্ষে এখনই নেমে পড়ুন। সে জন্য একমাত্র সমাধান হলো জ্ঞানার্জন। সামনে যেন আপনাকে হা-হুতাশ করতে না হয়, তাই এখনই ডিভোর্সের বিধানগুলো জানুন। বিবাহিতরা তো বটেই, এমনকি যাঁরা অবিবাহিত, তাঁরাও। আপনি হয়তো ভাববেন, আমাদের অনেক সুখের সংসার। সামান্য কোনো রেষারেষিও হয় না।
জি, এবার আপনাকে একটি সুখের সংসারের গল্প শোনাই। আমাদের কাছে তালাকসংক্রান্ত যেসব প্রশ্ন আসে, তার সাড়ে নিরানব্বই ভাগের ভাষ্য এমন, ‘হুজুর, আমরা কয়েক বছর অনেক সুখে-শান্তিতে ছিলাম। খুব সুন্দরভাবে চলছিল আমাদের সংসার। কিন্তু সেদিন আমাদের মাঝে ছোট একটা বিষয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাগের বশে আমি তিন তালাক দিয়ে দিই। হুজুর, আমার কোনো চিন্তাও ছিল না। কিন্তু কেমনে বের হয়ে গেছে, সেটাও জানি না।
অল্প সময়ের ভেতরে আমাদের মাঝে সমাধান হয়ে যায়। এখন আমরা আবার আগের মতো সংসার করতে চাচ্ছি; হুজুর...।’ এ হচ্ছে আমাদের তথাকথিত সুখের সংসার। তাই বলছি, নিজের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অল্প সময়ের ব্যবধানেই উভয়ের সম্পর্ক আর দশজন সাধারণ মানুষের সম্পর্ক পরিবর্তিত হবে। তাই এখনো যাঁদের এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি, তাঁরা এখনই আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিন।
মোটাদাগে কিছু বিষয়
এখানে তালাকসংক্রান্ত কিছু বিষয় মোটাদাগে উল্লেখ করছি, যার প্রতিটি বিষয় বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। এ বিষয়গুলো প্রত্যেকের জানা ও মুখস্থ রাখা আবশ্যক।
১. ডিভোর্সের আগে চার ধাপ
ভালো করে বুঝুন, ডিভোর্স কোনো সস্তা বা সহজলভ্য জিনিস নয় যে, যখন-তখন চাইলেই পাওয়া যায়। ইচ্ছে হলেই খরচ করা যায়। এটি একটি স্রেফ সুযোগ। বের হওয়ার রাস্তা। কখনো যদি বৈবাহিক সম্পর্কে জটিলতা দেখা দেয়, তখন ইসলাম স্বামীকে প্রাথমিকভাবে চারটি পর্যায় অবলম্বন করতে বলেছে। প্রথমে স্বামীকে আলোচনার মাধ্যমে স্ত্রীকে বোঝাতে বলেছে। কাজ না হলে বিছানা পৃথক করতে বলেছে। তারপরও কাজ না হলে স্থান-কাল-পাত্র হিসেবে মৃদু প্রহার করতে বলেছে। এসবেও সমাধান না হলে উভয় পক্ষ থেকে সালিস ডাকতে বলেছে।
তারা যেন উভয়ের মাঝে মেলানোর চেষ্টা করে। এত কিছুর পরও যদি বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিক না করা যায়, তখন ইসলাম ডিভোর্সের মাধ্যমে বৈবাহিক বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার একটি সুযোগ করে দিয়েছে এবং সে সুযোগটি তিন ধাপে করার সুযোগ দিয়েছে। যেন প্রথমবার সুযোগটির যথাযথ ব্যবহার না হলে আবার বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা যায়। তাহলে কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে, তিন ধাপে করার সুযোগটিকে এক ধাপে সংকুচিত করে দেওয়ার মাঝে? অতএব পানি যদি ফেলতেই হয়, তাহলে সামান্যই ফেলুন।
যেন আরও কিছু অবশিষ্ট থাকে। প্রয়োজন হলে আবার যেন ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য—‘তালাক দেওয়া ভালো নয়; তালাক যদি দিতেই হয়, এক তালাকের বেশি নয়।’ স্লোগানটি মুখস্থ করুন। এটাকে আন্দোলনের একটা স্লোগান হিসেবে নিন। সমাজকে যততত্র ডিভোর্স অবক্ষয়মুক্ত করার আন্দোলন। আচ্ছা বলুন তো, কেউ যদি এতগুলো ধাপ অবলম্বন করে, তারপর একবার করে তালাক দেয়, তাহলে কি এত দ্রুত বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়? এ জন্য শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই তালাক দেওয়া অনুচিত। নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে অপছন্দের বৈধ জিনিস হচ্ছে তালাক।’ (সুনানে আবু দাউদ)
২. তিন তালাক দিলেন তো পাত্রের পানি ঢেলে দিলেন
একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়াকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ইসলাম বলে, তালাক যদি দিতেই হয়, তাহলে শুরুতে এক তালাক। এর বেশি দেওয়া সুন্নাহ সম্মত নয়। এতে মারাত্মক গুনাহ হয়ে থাকে। কিন্তু যখন আপনি তিন তালাক দিয়েই দিলেন, তখন বর্ডার ক্রস হয়ে গেছে। পাত্রের পানি পড়ে গেছে। শত চেষ্টাতেও আগের সম্পর্কে ফিরে আসার সুযোগ আর নেই। খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? মেনে নিন। এটাই ইসলামের বিধান। আজকে একটু কষ্ট করুন। কালকে এর ফল ভোগ করতে পারবেন। হয়তো এতে আপনাদের কল্যাণ।
দোষ তো আপনাদেরই। ইসলাম তো আর আপনাকে বাধ্য করেনি তিন তালাক দিতে। বরং আরও নিষেধ করেছে। সে সঙ্গে আরও প্রাথমিক ধাপগুলো অনুসরণের কথা বলেছে। কিন্তু তবু আপনি সেদিকে কর্ণপাত করেননি। কিন্তু খুব আফসোস হয় সেসব তথাকথিত আলেমদের দেখে, যাঁরা সামান্য কিছু নর্দমা কামানোর জন্য তিন তালাককে এক তালাক বলে চালিয়ে দেন। নিজের জীবন তো বরবাদ করলেন, অন্যের জীবনকেও অবৈধ সম্পর্কে ফেললেন। সাফ জেনে রাখুন। তিন তালাক তিন তালাকই।
তিন কী করে এক হবে? দুনিয়ার কোনো হিসাবে এর নজির দেখেছেন? কোরআন-সুন্নাহ তো তিন তালাকই হয়ে যাওয়ার কথা বলে। সালাফের যুগ থেকে এ পর্যন্ত এ মতই চলে আসছে। কেউ ভিন্নমত পোষণ করেননি। চার মাজহাবের চারও ইমামের মত এটাই।
সেখানে ১ হাজার ৩০০ বছর পর গুটি কয়েকজন ভিন্নমত পোষণ করেন, তিন তালাক দিলে এক তালাকই হবে। এত সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের বিপরীতে যদি আপনার কাছে সে গুটি কয়েকজনের মতকে অগ্রাধিকার মনে হয়, তাহলে আপনার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলাম। তবে তার আগে দুটি কথা শুনুন। দুনিয়ার আর কোথাও কিন্তু আপনি নিজেও তিনকে এক বলে চালিয়ে দেন না।
আপনার কাছ থেকে কেউ তিন লাখ টাকা নিলে এক লাখ টাকা পরিশোধ করলে মেনে নেবেন না। মাগরিবের নামাজ তিন রাকাতের পরিবর্তে এক রাকাত আদায় করেন না। ধরে নিলাম। তিন তালাক মানে এক তালাক। যদি এ মত সঠিক হয়, তাহলে আপনি অবৈধ সম্পর্ক থেকে বেঁচে গেলেন। কিন্তু যদি ঘটনাক্রমে তিন তালাক তিন তালাক হয়ে যাওয়ার মত (ইসলামি শরিয়তে) অগ্রাধিকার হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু আখিরাতের জালে আপনি আটকা পড়ে গেলেন। আপনাদের সম্পর্কটা শেষপর্যন্ত হারাম রিলেশনের মতো হলো।
এখন বিবেচনা আপনার হাতে। নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলবেন কি না, সেটার দায়ও আপনার। সুতরাং, বিবেকের আদালতে প্রশ্ন করুন। সে-ই আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে। একান্তে নিজের সঙ্গে মতবিনিময় করুন। সঙ্গে আগের বলা কথাগুলোও মাথায় রাখুন। আর হ্যাঁ, যেসব হুজুর তিন তালককে তিন তালাকই বলেন, আপনাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁদের কোনো স্বার্থ নেই। আপনাদের বিবাহ ভাঙলে যে তাঁদের খুব ভালো লাগে, তা-ও না।
একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, শরিয়ত অনুযায়ী যেন আমাদের জীবন-কর্ম পরিচালনা হয়। স্রেফ এতটুকুই, আর কিছু নয়।
৩. পানি বালুতে গড়িয়ে যাওয়ার পর সে পানি ওঠাতে যাবেন না
তিন তালাক দিয়ে যখন পানি ফেলেই দিয়েছেন, তখন আর সে পানি ওঠাতে যাবেন না। তখন হাতে শুধু কাদাই স্পর্শ হবে। পানি পাওয়া তো দূরের কথা। প্রিয় ভাই, একটু কষ্ট করুন। অন্যত্র সন্ধান করুন। হয়তো এতেই কল্যাণ। কিন্তু তবু যদি আপনি আগের সম্পর্কে যুক্ত থাকেন, তাহলে জেনে রাখুন, এটা হারাম রিলেশনের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
আপনি যত দিন অবস্থান করবেন, হারাম অবস্থান করবেন। এমনকি আপনার থেকে যে সন্তান জন্ম নেবে, তাকেও হারাম হয়ে জন্ম নিতে হবে। অতএব, একটু ভাবুন হারাম সম্পর্কে জড়িত হওয়ার আগে। অন্তত আপনার সন্তানের কথা ভাবুন। শুধু আপনাদের ভোগের কারণেই এ নিষ্পাপ শিশুকে হারাম পরিচয় ধারণ করতে হচ্ছে। এর দায়ভার আপনারা এড়াতে পারবেন?
সারকথা, যে মেসেজটা দিতে চেয়েছি পাঠককে, তা হলো, ডিভোর্স সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান। ডিভোর্সের কঠিন বিধান সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। তিন তালাকের পর যেকোনোভাবেই পুনঃসম্পর্কের সুযোগ নেই, তা-ও ভালোভাবে জানুন। আর যদি দিতেই হয়, তাহলে এক তালাকের বেশি নয়। এটুকু কথা সুরা ফাতিহার মতো মুখস্থ করুন। নিজে করুন, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করুন।
লেখক: জাহিদ বিন জোবায়ের, অনুবাদক, গবেষণাকর্মী

যদি বলা হয়, সমাজের কিছু ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরতে, তাহলে ডিভোর্স হবে তার মধ্যে অন্যতম। খোঁজ নিলে দেখতে পাবেন, সুখ-সংসারের এ জগতে ডিভোর্স ঘটা পরিবারগুলো একেকটা জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড। বড় আফসোস ও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিষয়টা যত গুরুতর ও গুরুত্বপূর্ণ, আমরা ততই হালকা চোখে দেখছি।
এমন না যে আমাদের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা নেই, বরং আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সঙ্গে বিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অথচ আমাদের সমাজে না আছে এর আলোচনা, না আছে সমালোচনা। না লেখকেরা এ বিষয়ে স্বতন্ত্র আকারে কলম ধরেন, না আলোচকেরা এ বিষয়ে কথা বলেন। আর না খতিবেরা মসজিদের মিম্বারে এ ধরনের শব্দ মুখে আনেন। যেন এ নিয়ে আলোচনা করা দোষের।
ডিভোর্সের পরিমাণ
অবক্ষয় ধরা আমাদের এ সমাজে প্রতিদিন কী পরিমাণ ডিভোর্স হচ্ছে শুনবেন? জানি না, আপনি শুনতে প্রস্তুত কি না, তবে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য যে, শুধু ঢাকায় প্রতি ৪০ ঘণ্টায় একটি করে ডিভোর্সের আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগের কথা বাদ দিলাম। পুরো বিশ্বের তো প্রশ্নই আসে না। প্রথম আলোর একটি জরিপ বলছে, ঢাকার দুই সিটির মেয়রের কার্যালয়ে ২০২২ সালে তালাকের আবেদন এসেছিল মোট ১৩ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭ হাজার ৬৯৮টি, উত্তর সিটিতে ৫ হাজার ৫৯০টি।
এ হিসাবে রাজধানীতে প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে প্রায় ৩৭টি দাম্পত্যসম্পর্ক, অর্থাৎ তালাকের ঘটনা ঘটছে ৪০ মিনিটে একটি করে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদনের সংখ্যা ২ হাজার ৪৮৮টি। (প্রথম আলো, ১৩ জুন ২০২৩)। অথচ আবেদন কি সবাই করে? তাহলে আবেদন করার সংখ্যা যদি এ পরিমাণ হয়ে থাকে, তাহলে অন্যদের সংখ্যা কী পরিমাণ হতে পারে! তবুও কি এটাকে সমাজের অবক্ষয় মনে হচ্ছে না আপনার কাছে?
ডিভোর্সের ভয়াবহতা
ডিভোর্সের ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এই একটি শব্দ নিজেদের অজ্ঞতার কারণে শত শত পরিবারকে নিমেষে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই একটি শব্দ দীর্ঘ পরিশ্রমে সাজানো সুখের সংসারটা মুহূর্তে ভেঙে ছারখার করে দিচ্ছে।
তিন অক্ষরবিশিষ্ট শব্দটি চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিচ্ছে দুই দম্পতির। অন্ধকার করে ফেলছে নিরপরাধ সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। যেসব দম্পতি এ অগ্নিকুণ্ডে জ্বলছে, তাঁদের অবস্থা দেখে আপনি ডিভোর্সের ভয়াবহতা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারবেন। প্রায় প্রতিদিনই তো আমাদের কাছে ডিভোর্সের ঘটনা আসে।
একেক দম্পতির কী যে আর্তচিৎকার, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একেকজন যে কতভাবে অনুনয়-বিনয় করে আমাদের কাছে আবেদন করেন, হুজুর কোনোভাবে যদি আমাদের সম্পর্কটা রক্ষা পায়! হুজুর, আমাদের এত বছরের সন্তান রয়েছে। আমরা আলাদা কীভাবে থাকব!
ডিভোর্স সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা
নিত্যনতুন ডিভোর্স ঘটছে আমাদের সমাজে। তারপরও কী পরিমাণ অজ্ঞ এ সম্পর্কে সমাজের মানুষগুলো, তার কিছু হাস্যকর ও দুঃখজনক চিত্র দেখুন। সেদিন এক ভাই বললেন, তালাক, এটা তো স্রেফ একটা গালি। যা রাগের মাথায় স্বামীর মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়।
আরও এক ভাই বললেন, তালাক এত ছোট একটা শব্দ। এটা দিয়ে বুঝি এত বছরের সংসার ছিন্ন হয়ে যায়! এমনও শুনতে হয়েছে, তালাক না দিলে নাকি ঝগড়া পূর্ণাঙ্গ হয় না। এটা ঝগড়ারই একটা অংশ। এক বোন বললেন, তালাক দিতে হলে তিন তালাকই দিতে হয়।
এক তালাক কোনো তালাকই না। এ হচ্ছে কোনো জরিপ ছাড়াই আমাদের সমাজের কিছু চিত্র। জরিপ চালালে আরও কত ভয়ংকর তথ্য বের হবে, বুঝতেই পারছেন। অথচ এ বিষয়ে জ্ঞান রাখা কি শুধু হুজুরদের ওপর ফরজ ছিল? নাকি প্রত্যেক বিবাহিত ব্যক্তির ওপর বিবাহের আগে এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ? আজ এসব না জানার কারণে সমাজে ডিভোর্সের এত ছড়াছড়ি।
হাতছাড়া হওয়ার আগে হাত সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করুন
আপনার হাত যেন সামনে ছাড়া না হয়ে যায়, সে জন্য এখনই পদক্ষেপ নিন। আপনার পাত্রের পানি যেন গড়িয়ে না যায়, সে লক্ষে এখনই নেমে পড়ুন। সে জন্য একমাত্র সমাধান হলো জ্ঞানার্জন। সামনে যেন আপনাকে হা-হুতাশ করতে না হয়, তাই এখনই ডিভোর্সের বিধানগুলো জানুন। বিবাহিতরা তো বটেই, এমনকি যাঁরা অবিবাহিত, তাঁরাও। আপনি হয়তো ভাববেন, আমাদের অনেক সুখের সংসার। সামান্য কোনো রেষারেষিও হয় না।
জি, এবার আপনাকে একটি সুখের সংসারের গল্প শোনাই। আমাদের কাছে তালাকসংক্রান্ত যেসব প্রশ্ন আসে, তার সাড়ে নিরানব্বই ভাগের ভাষ্য এমন, ‘হুজুর, আমরা কয়েক বছর অনেক সুখে-শান্তিতে ছিলাম। খুব সুন্দরভাবে চলছিল আমাদের সংসার। কিন্তু সেদিন আমাদের মাঝে ছোট একটা বিষয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাগের বশে আমি তিন তালাক দিয়ে দিই। হুজুর, আমার কোনো চিন্তাও ছিল না। কিন্তু কেমনে বের হয়ে গেছে, সেটাও জানি না।
অল্প সময়ের ভেতরে আমাদের মাঝে সমাধান হয়ে যায়। এখন আমরা আবার আগের মতো সংসার করতে চাচ্ছি; হুজুর...।’ এ হচ্ছে আমাদের তথাকথিত সুখের সংসার। তাই বলছি, নিজের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অল্প সময়ের ব্যবধানেই উভয়ের সম্পর্ক আর দশজন সাধারণ মানুষের সম্পর্ক পরিবর্তিত হবে। তাই এখনো যাঁদের এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি, তাঁরা এখনই আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিন।
মোটাদাগে কিছু বিষয়
এখানে তালাকসংক্রান্ত কিছু বিষয় মোটাদাগে উল্লেখ করছি, যার প্রতিটি বিষয় বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। এ বিষয়গুলো প্রত্যেকের জানা ও মুখস্থ রাখা আবশ্যক।
১. ডিভোর্সের আগে চার ধাপ
ভালো করে বুঝুন, ডিভোর্স কোনো সস্তা বা সহজলভ্য জিনিস নয় যে, যখন-তখন চাইলেই পাওয়া যায়। ইচ্ছে হলেই খরচ করা যায়। এটি একটি স্রেফ সুযোগ। বের হওয়ার রাস্তা। কখনো যদি বৈবাহিক সম্পর্কে জটিলতা দেখা দেয়, তখন ইসলাম স্বামীকে প্রাথমিকভাবে চারটি পর্যায় অবলম্বন করতে বলেছে। প্রথমে স্বামীকে আলোচনার মাধ্যমে স্ত্রীকে বোঝাতে বলেছে। কাজ না হলে বিছানা পৃথক করতে বলেছে। তারপরও কাজ না হলে স্থান-কাল-পাত্র হিসেবে মৃদু প্রহার করতে বলেছে। এসবেও সমাধান না হলে উভয় পক্ষ থেকে সালিস ডাকতে বলেছে।
তারা যেন উভয়ের মাঝে মেলানোর চেষ্টা করে। এত কিছুর পরও যদি বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিক না করা যায়, তখন ইসলাম ডিভোর্সের মাধ্যমে বৈবাহিক বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার একটি সুযোগ করে দিয়েছে এবং সে সুযোগটি তিন ধাপে করার সুযোগ দিয়েছে। যেন প্রথমবার সুযোগটির যথাযথ ব্যবহার না হলে আবার বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা যায়। তাহলে কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে, তিন ধাপে করার সুযোগটিকে এক ধাপে সংকুচিত করে দেওয়ার মাঝে? অতএব পানি যদি ফেলতেই হয়, তাহলে সামান্যই ফেলুন।
যেন আরও কিছু অবশিষ্ট থাকে। প্রয়োজন হলে আবার যেন ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য—‘তালাক দেওয়া ভালো নয়; তালাক যদি দিতেই হয়, এক তালাকের বেশি নয়।’ স্লোগানটি মুখস্থ করুন। এটাকে আন্দোলনের একটা স্লোগান হিসেবে নিন। সমাজকে যততত্র ডিভোর্স অবক্ষয়মুক্ত করার আন্দোলন। আচ্ছা বলুন তো, কেউ যদি এতগুলো ধাপ অবলম্বন করে, তারপর একবার করে তালাক দেয়, তাহলে কি এত দ্রুত বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়? এ জন্য শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই তালাক দেওয়া অনুচিত। নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে অপছন্দের বৈধ জিনিস হচ্ছে তালাক।’ (সুনানে আবু দাউদ)
২. তিন তালাক দিলেন তো পাত্রের পানি ঢেলে দিলেন
একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়াকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ইসলাম বলে, তালাক যদি দিতেই হয়, তাহলে শুরুতে এক তালাক। এর বেশি দেওয়া সুন্নাহ সম্মত নয়। এতে মারাত্মক গুনাহ হয়ে থাকে। কিন্তু যখন আপনি তিন তালাক দিয়েই দিলেন, তখন বর্ডার ক্রস হয়ে গেছে। পাত্রের পানি পড়ে গেছে। শত চেষ্টাতেও আগের সম্পর্কে ফিরে আসার সুযোগ আর নেই। খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? মেনে নিন। এটাই ইসলামের বিধান। আজকে একটু কষ্ট করুন। কালকে এর ফল ভোগ করতে পারবেন। হয়তো এতে আপনাদের কল্যাণ।
দোষ তো আপনাদেরই। ইসলাম তো আর আপনাকে বাধ্য করেনি তিন তালাক দিতে। বরং আরও নিষেধ করেছে। সে সঙ্গে আরও প্রাথমিক ধাপগুলো অনুসরণের কথা বলেছে। কিন্তু তবু আপনি সেদিকে কর্ণপাত করেননি। কিন্তু খুব আফসোস হয় সেসব তথাকথিত আলেমদের দেখে, যাঁরা সামান্য কিছু নর্দমা কামানোর জন্য তিন তালাককে এক তালাক বলে চালিয়ে দেন। নিজের জীবন তো বরবাদ করলেন, অন্যের জীবনকেও অবৈধ সম্পর্কে ফেললেন। সাফ জেনে রাখুন। তিন তালাক তিন তালাকই।
তিন কী করে এক হবে? দুনিয়ার কোনো হিসাবে এর নজির দেখেছেন? কোরআন-সুন্নাহ তো তিন তালাকই হয়ে যাওয়ার কথা বলে। সালাফের যুগ থেকে এ পর্যন্ত এ মতই চলে আসছে। কেউ ভিন্নমত পোষণ করেননি। চার মাজহাবের চারও ইমামের মত এটাই।
সেখানে ১ হাজার ৩০০ বছর পর গুটি কয়েকজন ভিন্নমত পোষণ করেন, তিন তালাক দিলে এক তালাকই হবে। এত সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের বিপরীতে যদি আপনার কাছে সে গুটি কয়েকজনের মতকে অগ্রাধিকার মনে হয়, তাহলে আপনার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলাম। তবে তার আগে দুটি কথা শুনুন। দুনিয়ার আর কোথাও কিন্তু আপনি নিজেও তিনকে এক বলে চালিয়ে দেন না।
আপনার কাছ থেকে কেউ তিন লাখ টাকা নিলে এক লাখ টাকা পরিশোধ করলে মেনে নেবেন না। মাগরিবের নামাজ তিন রাকাতের পরিবর্তে এক রাকাত আদায় করেন না। ধরে নিলাম। তিন তালাক মানে এক তালাক। যদি এ মত সঠিক হয়, তাহলে আপনি অবৈধ সম্পর্ক থেকে বেঁচে গেলেন। কিন্তু যদি ঘটনাক্রমে তিন তালাক তিন তালাক হয়ে যাওয়ার মত (ইসলামি শরিয়তে) অগ্রাধিকার হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু আখিরাতের জালে আপনি আটকা পড়ে গেলেন। আপনাদের সম্পর্কটা শেষপর্যন্ত হারাম রিলেশনের মতো হলো।
এখন বিবেচনা আপনার হাতে। নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলবেন কি না, সেটার দায়ও আপনার। সুতরাং, বিবেকের আদালতে প্রশ্ন করুন। সে-ই আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে। একান্তে নিজের সঙ্গে মতবিনিময় করুন। সঙ্গে আগের বলা কথাগুলোও মাথায় রাখুন। আর হ্যাঁ, যেসব হুজুর তিন তালককে তিন তালাকই বলেন, আপনাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁদের কোনো স্বার্থ নেই। আপনাদের বিবাহ ভাঙলে যে তাঁদের খুব ভালো লাগে, তা-ও না।
একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, শরিয়ত অনুযায়ী যেন আমাদের জীবন-কর্ম পরিচালনা হয়। স্রেফ এতটুকুই, আর কিছু নয়।
৩. পানি বালুতে গড়িয়ে যাওয়ার পর সে পানি ওঠাতে যাবেন না
তিন তালাক দিয়ে যখন পানি ফেলেই দিয়েছেন, তখন আর সে পানি ওঠাতে যাবেন না। তখন হাতে শুধু কাদাই স্পর্শ হবে। পানি পাওয়া তো দূরের কথা। প্রিয় ভাই, একটু কষ্ট করুন। অন্যত্র সন্ধান করুন। হয়তো এতেই কল্যাণ। কিন্তু তবু যদি আপনি আগের সম্পর্কে যুক্ত থাকেন, তাহলে জেনে রাখুন, এটা হারাম রিলেশনের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
আপনি যত দিন অবস্থান করবেন, হারাম অবস্থান করবেন। এমনকি আপনার থেকে যে সন্তান জন্ম নেবে, তাকেও হারাম হয়ে জন্ম নিতে হবে। অতএব, একটু ভাবুন হারাম সম্পর্কে জড়িত হওয়ার আগে। অন্তত আপনার সন্তানের কথা ভাবুন। শুধু আপনাদের ভোগের কারণেই এ নিষ্পাপ শিশুকে হারাম পরিচয় ধারণ করতে হচ্ছে। এর দায়ভার আপনারা এড়াতে পারবেন?
সারকথা, যে মেসেজটা দিতে চেয়েছি পাঠককে, তা হলো, ডিভোর্স সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান। ডিভোর্সের কঠিন বিধান সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। তিন তালাকের পর যেকোনোভাবেই পুনঃসম্পর্কের সুযোগ নেই, তা-ও ভালোভাবে জানুন। আর যদি দিতেই হয়, তাহলে এক তালাকের বেশি নয়। এটুকু কথা সুরা ফাতিহার মতো মুখস্থ করুন। নিজে করুন, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করুন।
লেখক: জাহিদ বিন জোবায়ের, অনুবাদক, গবেষণাকর্মী
ইসলাম ডেস্ক

যদি বলা হয়, সমাজের কিছু ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরতে, তাহলে ডিভোর্স হবে তার মধ্যে অন্যতম। খোঁজ নিলে দেখতে পাবেন, সুখ-সংসারের এ জগতে ডিভোর্স ঘটা পরিবারগুলো একেকটা জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড। বড় আফসোস ও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিষয়টা যত গুরুতর ও গুরুত্বপূর্ণ, আমরা ততই হালকা চোখে দেখছি।
এমন না যে আমাদের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা নেই, বরং আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সঙ্গে বিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অথচ আমাদের সমাজে না আছে এর আলোচনা, না আছে সমালোচনা। না লেখকেরা এ বিষয়ে স্বতন্ত্র আকারে কলম ধরেন, না আলোচকেরা এ বিষয়ে কথা বলেন। আর না খতিবেরা মসজিদের মিম্বারে এ ধরনের শব্দ মুখে আনেন। যেন এ নিয়ে আলোচনা করা দোষের।
ডিভোর্সের পরিমাণ
অবক্ষয় ধরা আমাদের এ সমাজে প্রতিদিন কী পরিমাণ ডিভোর্স হচ্ছে শুনবেন? জানি না, আপনি শুনতে প্রস্তুত কি না, তবে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য যে, শুধু ঢাকায় প্রতি ৪০ ঘণ্টায় একটি করে ডিভোর্সের আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগের কথা বাদ দিলাম। পুরো বিশ্বের তো প্রশ্নই আসে না। প্রথম আলোর একটি জরিপ বলছে, ঢাকার দুই সিটির মেয়রের কার্যালয়ে ২০২২ সালে তালাকের আবেদন এসেছিল মোট ১৩ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭ হাজার ৬৯৮টি, উত্তর সিটিতে ৫ হাজার ৫৯০টি।
এ হিসাবে রাজধানীতে প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে প্রায় ৩৭টি দাম্পত্যসম্পর্ক, অর্থাৎ তালাকের ঘটনা ঘটছে ৪০ মিনিটে একটি করে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদনের সংখ্যা ২ হাজার ৪৮৮টি। (প্রথম আলো, ১৩ জুন ২০২৩)। অথচ আবেদন কি সবাই করে? তাহলে আবেদন করার সংখ্যা যদি এ পরিমাণ হয়ে থাকে, তাহলে অন্যদের সংখ্যা কী পরিমাণ হতে পারে! তবুও কি এটাকে সমাজের অবক্ষয় মনে হচ্ছে না আপনার কাছে?
ডিভোর্সের ভয়াবহতা
ডিভোর্সের ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এই একটি শব্দ নিজেদের অজ্ঞতার কারণে শত শত পরিবারকে নিমেষে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই একটি শব্দ দীর্ঘ পরিশ্রমে সাজানো সুখের সংসারটা মুহূর্তে ভেঙে ছারখার করে দিচ্ছে।
তিন অক্ষরবিশিষ্ট শব্দটি চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিচ্ছে দুই দম্পতির। অন্ধকার করে ফেলছে নিরপরাধ সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। যেসব দম্পতি এ অগ্নিকুণ্ডে জ্বলছে, তাঁদের অবস্থা দেখে আপনি ডিভোর্সের ভয়াবহতা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারবেন। প্রায় প্রতিদিনই তো আমাদের কাছে ডিভোর্সের ঘটনা আসে।
একেক দম্পতির কী যে আর্তচিৎকার, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একেকজন যে কতভাবে অনুনয়-বিনয় করে আমাদের কাছে আবেদন করেন, হুজুর কোনোভাবে যদি আমাদের সম্পর্কটা রক্ষা পায়! হুজুর, আমাদের এত বছরের সন্তান রয়েছে। আমরা আলাদা কীভাবে থাকব!
ডিভোর্স সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা
নিত্যনতুন ডিভোর্স ঘটছে আমাদের সমাজে। তারপরও কী পরিমাণ অজ্ঞ এ সম্পর্কে সমাজের মানুষগুলো, তার কিছু হাস্যকর ও দুঃখজনক চিত্র দেখুন। সেদিন এক ভাই বললেন, তালাক, এটা তো স্রেফ একটা গালি। যা রাগের মাথায় স্বামীর মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়।
আরও এক ভাই বললেন, তালাক এত ছোট একটা শব্দ। এটা দিয়ে বুঝি এত বছরের সংসার ছিন্ন হয়ে যায়! এমনও শুনতে হয়েছে, তালাক না দিলে নাকি ঝগড়া পূর্ণাঙ্গ হয় না। এটা ঝগড়ারই একটা অংশ। এক বোন বললেন, তালাক দিতে হলে তিন তালাকই দিতে হয়।
এক তালাক কোনো তালাকই না। এ হচ্ছে কোনো জরিপ ছাড়াই আমাদের সমাজের কিছু চিত্র। জরিপ চালালে আরও কত ভয়ংকর তথ্য বের হবে, বুঝতেই পারছেন। অথচ এ বিষয়ে জ্ঞান রাখা কি শুধু হুজুরদের ওপর ফরজ ছিল? নাকি প্রত্যেক বিবাহিত ব্যক্তির ওপর বিবাহের আগে এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ? আজ এসব না জানার কারণে সমাজে ডিভোর্সের এত ছড়াছড়ি।
হাতছাড়া হওয়ার আগে হাত সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করুন
আপনার হাত যেন সামনে ছাড়া না হয়ে যায়, সে জন্য এখনই পদক্ষেপ নিন। আপনার পাত্রের পানি যেন গড়িয়ে না যায়, সে লক্ষে এখনই নেমে পড়ুন। সে জন্য একমাত্র সমাধান হলো জ্ঞানার্জন। সামনে যেন আপনাকে হা-হুতাশ করতে না হয়, তাই এখনই ডিভোর্সের বিধানগুলো জানুন। বিবাহিতরা তো বটেই, এমনকি যাঁরা অবিবাহিত, তাঁরাও। আপনি হয়তো ভাববেন, আমাদের অনেক সুখের সংসার। সামান্য কোনো রেষারেষিও হয় না।
জি, এবার আপনাকে একটি সুখের সংসারের গল্প শোনাই। আমাদের কাছে তালাকসংক্রান্ত যেসব প্রশ্ন আসে, তার সাড়ে নিরানব্বই ভাগের ভাষ্য এমন, ‘হুজুর, আমরা কয়েক বছর অনেক সুখে-শান্তিতে ছিলাম। খুব সুন্দরভাবে চলছিল আমাদের সংসার। কিন্তু সেদিন আমাদের মাঝে ছোট একটা বিষয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাগের বশে আমি তিন তালাক দিয়ে দিই। হুজুর, আমার কোনো চিন্তাও ছিল না। কিন্তু কেমনে বের হয়ে গেছে, সেটাও জানি না।
অল্প সময়ের ভেতরে আমাদের মাঝে সমাধান হয়ে যায়। এখন আমরা আবার আগের মতো সংসার করতে চাচ্ছি; হুজুর...।’ এ হচ্ছে আমাদের তথাকথিত সুখের সংসার। তাই বলছি, নিজের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অল্প সময়ের ব্যবধানেই উভয়ের সম্পর্ক আর দশজন সাধারণ মানুষের সম্পর্ক পরিবর্তিত হবে। তাই এখনো যাঁদের এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি, তাঁরা এখনই আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিন।
মোটাদাগে কিছু বিষয়
এখানে তালাকসংক্রান্ত কিছু বিষয় মোটাদাগে উল্লেখ করছি, যার প্রতিটি বিষয় বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। এ বিষয়গুলো প্রত্যেকের জানা ও মুখস্থ রাখা আবশ্যক।
১. ডিভোর্সের আগে চার ধাপ
ভালো করে বুঝুন, ডিভোর্স কোনো সস্তা বা সহজলভ্য জিনিস নয় যে, যখন-তখন চাইলেই পাওয়া যায়। ইচ্ছে হলেই খরচ করা যায়। এটি একটি স্রেফ সুযোগ। বের হওয়ার রাস্তা। কখনো যদি বৈবাহিক সম্পর্কে জটিলতা দেখা দেয়, তখন ইসলাম স্বামীকে প্রাথমিকভাবে চারটি পর্যায় অবলম্বন করতে বলেছে। প্রথমে স্বামীকে আলোচনার মাধ্যমে স্ত্রীকে বোঝাতে বলেছে। কাজ না হলে বিছানা পৃথক করতে বলেছে। তারপরও কাজ না হলে স্থান-কাল-পাত্র হিসেবে মৃদু প্রহার করতে বলেছে। এসবেও সমাধান না হলে উভয় পক্ষ থেকে সালিস ডাকতে বলেছে।
তারা যেন উভয়ের মাঝে মেলানোর চেষ্টা করে। এত কিছুর পরও যদি বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিক না করা যায়, তখন ইসলাম ডিভোর্সের মাধ্যমে বৈবাহিক বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার একটি সুযোগ করে দিয়েছে এবং সে সুযোগটি তিন ধাপে করার সুযোগ দিয়েছে। যেন প্রথমবার সুযোগটির যথাযথ ব্যবহার না হলে আবার বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা যায়। তাহলে কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে, তিন ধাপে করার সুযোগটিকে এক ধাপে সংকুচিত করে দেওয়ার মাঝে? অতএব পানি যদি ফেলতেই হয়, তাহলে সামান্যই ফেলুন।
যেন আরও কিছু অবশিষ্ট থাকে। প্রয়োজন হলে আবার যেন ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য—‘তালাক দেওয়া ভালো নয়; তালাক যদি দিতেই হয়, এক তালাকের বেশি নয়।’ স্লোগানটি মুখস্থ করুন। এটাকে আন্দোলনের একটা স্লোগান হিসেবে নিন। সমাজকে যততত্র ডিভোর্স অবক্ষয়মুক্ত করার আন্দোলন। আচ্ছা বলুন তো, কেউ যদি এতগুলো ধাপ অবলম্বন করে, তারপর একবার করে তালাক দেয়, তাহলে কি এত দ্রুত বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়? এ জন্য শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই তালাক দেওয়া অনুচিত। নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে অপছন্দের বৈধ জিনিস হচ্ছে তালাক।’ (সুনানে আবু দাউদ)
২. তিন তালাক দিলেন তো পাত্রের পানি ঢেলে দিলেন
একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়াকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ইসলাম বলে, তালাক যদি দিতেই হয়, তাহলে শুরুতে এক তালাক। এর বেশি দেওয়া সুন্নাহ সম্মত নয়। এতে মারাত্মক গুনাহ হয়ে থাকে। কিন্তু যখন আপনি তিন তালাক দিয়েই দিলেন, তখন বর্ডার ক্রস হয়ে গেছে। পাত্রের পানি পড়ে গেছে। শত চেষ্টাতেও আগের সম্পর্কে ফিরে আসার সুযোগ আর নেই। খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? মেনে নিন। এটাই ইসলামের বিধান। আজকে একটু কষ্ট করুন। কালকে এর ফল ভোগ করতে পারবেন। হয়তো এতে আপনাদের কল্যাণ।
দোষ তো আপনাদেরই। ইসলাম তো আর আপনাকে বাধ্য করেনি তিন তালাক দিতে। বরং আরও নিষেধ করেছে। সে সঙ্গে আরও প্রাথমিক ধাপগুলো অনুসরণের কথা বলেছে। কিন্তু তবু আপনি সেদিকে কর্ণপাত করেননি। কিন্তু খুব আফসোস হয় সেসব তথাকথিত আলেমদের দেখে, যাঁরা সামান্য কিছু নর্দমা কামানোর জন্য তিন তালাককে এক তালাক বলে চালিয়ে দেন। নিজের জীবন তো বরবাদ করলেন, অন্যের জীবনকেও অবৈধ সম্পর্কে ফেললেন। সাফ জেনে রাখুন। তিন তালাক তিন তালাকই।
তিন কী করে এক হবে? দুনিয়ার কোনো হিসাবে এর নজির দেখেছেন? কোরআন-সুন্নাহ তো তিন তালাকই হয়ে যাওয়ার কথা বলে। সালাফের যুগ থেকে এ পর্যন্ত এ মতই চলে আসছে। কেউ ভিন্নমত পোষণ করেননি। চার মাজহাবের চারও ইমামের মত এটাই।
সেখানে ১ হাজার ৩০০ বছর পর গুটি কয়েকজন ভিন্নমত পোষণ করেন, তিন তালাক দিলে এক তালাকই হবে। এত সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের বিপরীতে যদি আপনার কাছে সে গুটি কয়েকজনের মতকে অগ্রাধিকার মনে হয়, তাহলে আপনার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলাম। তবে তার আগে দুটি কথা শুনুন। দুনিয়ার আর কোথাও কিন্তু আপনি নিজেও তিনকে এক বলে চালিয়ে দেন না।
আপনার কাছ থেকে কেউ তিন লাখ টাকা নিলে এক লাখ টাকা পরিশোধ করলে মেনে নেবেন না। মাগরিবের নামাজ তিন রাকাতের পরিবর্তে এক রাকাত আদায় করেন না। ধরে নিলাম। তিন তালাক মানে এক তালাক। যদি এ মত সঠিক হয়, তাহলে আপনি অবৈধ সম্পর্ক থেকে বেঁচে গেলেন। কিন্তু যদি ঘটনাক্রমে তিন তালাক তিন তালাক হয়ে যাওয়ার মত (ইসলামি শরিয়তে) অগ্রাধিকার হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু আখিরাতের জালে আপনি আটকা পড়ে গেলেন। আপনাদের সম্পর্কটা শেষপর্যন্ত হারাম রিলেশনের মতো হলো।
এখন বিবেচনা আপনার হাতে। নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলবেন কি না, সেটার দায়ও আপনার। সুতরাং, বিবেকের আদালতে প্রশ্ন করুন। সে-ই আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে। একান্তে নিজের সঙ্গে মতবিনিময় করুন। সঙ্গে আগের বলা কথাগুলোও মাথায় রাখুন। আর হ্যাঁ, যেসব হুজুর তিন তালককে তিন তালাকই বলেন, আপনাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁদের কোনো স্বার্থ নেই। আপনাদের বিবাহ ভাঙলে যে তাঁদের খুব ভালো লাগে, তা-ও না।
একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, শরিয়ত অনুযায়ী যেন আমাদের জীবন-কর্ম পরিচালনা হয়। স্রেফ এতটুকুই, আর কিছু নয়।
৩. পানি বালুতে গড়িয়ে যাওয়ার পর সে পানি ওঠাতে যাবেন না
তিন তালাক দিয়ে যখন পানি ফেলেই দিয়েছেন, তখন আর সে পানি ওঠাতে যাবেন না। তখন হাতে শুধু কাদাই স্পর্শ হবে। পানি পাওয়া তো দূরের কথা। প্রিয় ভাই, একটু কষ্ট করুন। অন্যত্র সন্ধান করুন। হয়তো এতেই কল্যাণ। কিন্তু তবু যদি আপনি আগের সম্পর্কে যুক্ত থাকেন, তাহলে জেনে রাখুন, এটা হারাম রিলেশনের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
আপনি যত দিন অবস্থান করবেন, হারাম অবস্থান করবেন। এমনকি আপনার থেকে যে সন্তান জন্ম নেবে, তাকেও হারাম হয়ে জন্ম নিতে হবে। অতএব, একটু ভাবুন হারাম সম্পর্কে জড়িত হওয়ার আগে। অন্তত আপনার সন্তানের কথা ভাবুন। শুধু আপনাদের ভোগের কারণেই এ নিষ্পাপ শিশুকে হারাম পরিচয় ধারণ করতে হচ্ছে। এর দায়ভার আপনারা এড়াতে পারবেন?
সারকথা, যে মেসেজটা দিতে চেয়েছি পাঠককে, তা হলো, ডিভোর্স সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান। ডিভোর্সের কঠিন বিধান সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। তিন তালাকের পর যেকোনোভাবেই পুনঃসম্পর্কের সুযোগ নেই, তা-ও ভালোভাবে জানুন। আর যদি দিতেই হয়, তাহলে এক তালাকের বেশি নয়। এটুকু কথা সুরা ফাতিহার মতো মুখস্থ করুন। নিজে করুন, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করুন।
লেখক: জাহিদ বিন জোবায়ের, অনুবাদক, গবেষণাকর্মী

যদি বলা হয়, সমাজের কিছু ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরতে, তাহলে ডিভোর্স হবে তার মধ্যে অন্যতম। খোঁজ নিলে দেখতে পাবেন, সুখ-সংসারের এ জগতে ডিভোর্স ঘটা পরিবারগুলো একেকটা জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড। বড় আফসোস ও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিষয়টা যত গুরুতর ও গুরুত্বপূর্ণ, আমরা ততই হালকা চোখে দেখছি।
এমন না যে আমাদের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা নেই, বরং আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সঙ্গে বিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অথচ আমাদের সমাজে না আছে এর আলোচনা, না আছে সমালোচনা। না লেখকেরা এ বিষয়ে স্বতন্ত্র আকারে কলম ধরেন, না আলোচকেরা এ বিষয়ে কথা বলেন। আর না খতিবেরা মসজিদের মিম্বারে এ ধরনের শব্দ মুখে আনেন। যেন এ নিয়ে আলোচনা করা দোষের।
ডিভোর্সের পরিমাণ
অবক্ষয় ধরা আমাদের এ সমাজে প্রতিদিন কী পরিমাণ ডিভোর্স হচ্ছে শুনবেন? জানি না, আপনি শুনতে প্রস্তুত কি না, তবে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য যে, শুধু ঢাকায় প্রতি ৪০ ঘণ্টায় একটি করে ডিভোর্সের আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগের কথা বাদ দিলাম। পুরো বিশ্বের তো প্রশ্নই আসে না। প্রথম আলোর একটি জরিপ বলছে, ঢাকার দুই সিটির মেয়রের কার্যালয়ে ২০২২ সালে তালাকের আবেদন এসেছিল মোট ১৩ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭ হাজার ৬৯৮টি, উত্তর সিটিতে ৫ হাজার ৫৯০টি।
এ হিসাবে রাজধানীতে প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে প্রায় ৩৭টি দাম্পত্যসম্পর্ক, অর্থাৎ তালাকের ঘটনা ঘটছে ৪০ মিনিটে একটি করে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদনের সংখ্যা ২ হাজার ৪৮৮টি। (প্রথম আলো, ১৩ জুন ২০২৩)। অথচ আবেদন কি সবাই করে? তাহলে আবেদন করার সংখ্যা যদি এ পরিমাণ হয়ে থাকে, তাহলে অন্যদের সংখ্যা কী পরিমাণ হতে পারে! তবুও কি এটাকে সমাজের অবক্ষয় মনে হচ্ছে না আপনার কাছে?
ডিভোর্সের ভয়াবহতা
ডিভোর্সের ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এই একটি শব্দ নিজেদের অজ্ঞতার কারণে শত শত পরিবারকে নিমেষে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই একটি শব্দ দীর্ঘ পরিশ্রমে সাজানো সুখের সংসারটা মুহূর্তে ভেঙে ছারখার করে দিচ্ছে।
তিন অক্ষরবিশিষ্ট শব্দটি চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিচ্ছে দুই দম্পতির। অন্ধকার করে ফেলছে নিরপরাধ সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। যেসব দম্পতি এ অগ্নিকুণ্ডে জ্বলছে, তাঁদের অবস্থা দেখে আপনি ডিভোর্সের ভয়াবহতা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারবেন। প্রায় প্রতিদিনই তো আমাদের কাছে ডিভোর্সের ঘটনা আসে।
একেক দম্পতির কী যে আর্তচিৎকার, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একেকজন যে কতভাবে অনুনয়-বিনয় করে আমাদের কাছে আবেদন করেন, হুজুর কোনোভাবে যদি আমাদের সম্পর্কটা রক্ষা পায়! হুজুর, আমাদের এত বছরের সন্তান রয়েছে। আমরা আলাদা কীভাবে থাকব!
ডিভোর্স সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা
নিত্যনতুন ডিভোর্স ঘটছে আমাদের সমাজে। তারপরও কী পরিমাণ অজ্ঞ এ সম্পর্কে সমাজের মানুষগুলো, তার কিছু হাস্যকর ও দুঃখজনক চিত্র দেখুন। সেদিন এক ভাই বললেন, তালাক, এটা তো স্রেফ একটা গালি। যা রাগের মাথায় স্বামীর মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়।
আরও এক ভাই বললেন, তালাক এত ছোট একটা শব্দ। এটা দিয়ে বুঝি এত বছরের সংসার ছিন্ন হয়ে যায়! এমনও শুনতে হয়েছে, তালাক না দিলে নাকি ঝগড়া পূর্ণাঙ্গ হয় না। এটা ঝগড়ারই একটা অংশ। এক বোন বললেন, তালাক দিতে হলে তিন তালাকই দিতে হয়।
এক তালাক কোনো তালাকই না। এ হচ্ছে কোনো জরিপ ছাড়াই আমাদের সমাজের কিছু চিত্র। জরিপ চালালে আরও কত ভয়ংকর তথ্য বের হবে, বুঝতেই পারছেন। অথচ এ বিষয়ে জ্ঞান রাখা কি শুধু হুজুরদের ওপর ফরজ ছিল? নাকি প্রত্যেক বিবাহিত ব্যক্তির ওপর বিবাহের আগে এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ? আজ এসব না জানার কারণে সমাজে ডিভোর্সের এত ছড়াছড়ি।
হাতছাড়া হওয়ার আগে হাত সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করুন
আপনার হাত যেন সামনে ছাড়া না হয়ে যায়, সে জন্য এখনই পদক্ষেপ নিন। আপনার পাত্রের পানি যেন গড়িয়ে না যায়, সে লক্ষে এখনই নেমে পড়ুন। সে জন্য একমাত্র সমাধান হলো জ্ঞানার্জন। সামনে যেন আপনাকে হা-হুতাশ করতে না হয়, তাই এখনই ডিভোর্সের বিধানগুলো জানুন। বিবাহিতরা তো বটেই, এমনকি যাঁরা অবিবাহিত, তাঁরাও। আপনি হয়তো ভাববেন, আমাদের অনেক সুখের সংসার। সামান্য কোনো রেষারেষিও হয় না।
জি, এবার আপনাকে একটি সুখের সংসারের গল্প শোনাই। আমাদের কাছে তালাকসংক্রান্ত যেসব প্রশ্ন আসে, তার সাড়ে নিরানব্বই ভাগের ভাষ্য এমন, ‘হুজুর, আমরা কয়েক বছর অনেক সুখে-শান্তিতে ছিলাম। খুব সুন্দরভাবে চলছিল আমাদের সংসার। কিন্তু সেদিন আমাদের মাঝে ছোট একটা বিষয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাগের বশে আমি তিন তালাক দিয়ে দিই। হুজুর, আমার কোনো চিন্তাও ছিল না। কিন্তু কেমনে বের হয়ে গেছে, সেটাও জানি না।
অল্প সময়ের ভেতরে আমাদের মাঝে সমাধান হয়ে যায়। এখন আমরা আবার আগের মতো সংসার করতে চাচ্ছি; হুজুর...।’ এ হচ্ছে আমাদের তথাকথিত সুখের সংসার। তাই বলছি, নিজের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অল্প সময়ের ব্যবধানেই উভয়ের সম্পর্ক আর দশজন সাধারণ মানুষের সম্পর্ক পরিবর্তিত হবে। তাই এখনো যাঁদের এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি, তাঁরা এখনই আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিন।
মোটাদাগে কিছু বিষয়
এখানে তালাকসংক্রান্ত কিছু বিষয় মোটাদাগে উল্লেখ করছি, যার প্রতিটি বিষয় বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। এ বিষয়গুলো প্রত্যেকের জানা ও মুখস্থ রাখা আবশ্যক।
১. ডিভোর্সের আগে চার ধাপ
ভালো করে বুঝুন, ডিভোর্স কোনো সস্তা বা সহজলভ্য জিনিস নয় যে, যখন-তখন চাইলেই পাওয়া যায়। ইচ্ছে হলেই খরচ করা যায়। এটি একটি স্রেফ সুযোগ। বের হওয়ার রাস্তা। কখনো যদি বৈবাহিক সম্পর্কে জটিলতা দেখা দেয়, তখন ইসলাম স্বামীকে প্রাথমিকভাবে চারটি পর্যায় অবলম্বন করতে বলেছে। প্রথমে স্বামীকে আলোচনার মাধ্যমে স্ত্রীকে বোঝাতে বলেছে। কাজ না হলে বিছানা পৃথক করতে বলেছে। তারপরও কাজ না হলে স্থান-কাল-পাত্র হিসেবে মৃদু প্রহার করতে বলেছে। এসবেও সমাধান না হলে উভয় পক্ষ থেকে সালিস ডাকতে বলেছে।
তারা যেন উভয়ের মাঝে মেলানোর চেষ্টা করে। এত কিছুর পরও যদি বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিক না করা যায়, তখন ইসলাম ডিভোর্সের মাধ্যমে বৈবাহিক বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার একটি সুযোগ করে দিয়েছে এবং সে সুযোগটি তিন ধাপে করার সুযোগ দিয়েছে। যেন প্রথমবার সুযোগটির যথাযথ ব্যবহার না হলে আবার বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা যায়। তাহলে কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে, তিন ধাপে করার সুযোগটিকে এক ধাপে সংকুচিত করে দেওয়ার মাঝে? অতএব পানি যদি ফেলতেই হয়, তাহলে সামান্যই ফেলুন।
যেন আরও কিছু অবশিষ্ট থাকে। প্রয়োজন হলে আবার যেন ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য—‘তালাক দেওয়া ভালো নয়; তালাক যদি দিতেই হয়, এক তালাকের বেশি নয়।’ স্লোগানটি মুখস্থ করুন। এটাকে আন্দোলনের একটা স্লোগান হিসেবে নিন। সমাজকে যততত্র ডিভোর্স অবক্ষয়মুক্ত করার আন্দোলন। আচ্ছা বলুন তো, কেউ যদি এতগুলো ধাপ অবলম্বন করে, তারপর একবার করে তালাক দেয়, তাহলে কি এত দ্রুত বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়? এ জন্য শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই তালাক দেওয়া অনুচিত। নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে অপছন্দের বৈধ জিনিস হচ্ছে তালাক।’ (সুনানে আবু দাউদ)
২. তিন তালাক দিলেন তো পাত্রের পানি ঢেলে দিলেন
একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়াকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ইসলাম বলে, তালাক যদি দিতেই হয়, তাহলে শুরুতে এক তালাক। এর বেশি দেওয়া সুন্নাহ সম্মত নয়। এতে মারাত্মক গুনাহ হয়ে থাকে। কিন্তু যখন আপনি তিন তালাক দিয়েই দিলেন, তখন বর্ডার ক্রস হয়ে গেছে। পাত্রের পানি পড়ে গেছে। শত চেষ্টাতেও আগের সম্পর্কে ফিরে আসার সুযোগ আর নেই। খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? মেনে নিন। এটাই ইসলামের বিধান। আজকে একটু কষ্ট করুন। কালকে এর ফল ভোগ করতে পারবেন। হয়তো এতে আপনাদের কল্যাণ।
দোষ তো আপনাদেরই। ইসলাম তো আর আপনাকে বাধ্য করেনি তিন তালাক দিতে। বরং আরও নিষেধ করেছে। সে সঙ্গে আরও প্রাথমিক ধাপগুলো অনুসরণের কথা বলেছে। কিন্তু তবু আপনি সেদিকে কর্ণপাত করেননি। কিন্তু খুব আফসোস হয় সেসব তথাকথিত আলেমদের দেখে, যাঁরা সামান্য কিছু নর্দমা কামানোর জন্য তিন তালাককে এক তালাক বলে চালিয়ে দেন। নিজের জীবন তো বরবাদ করলেন, অন্যের জীবনকেও অবৈধ সম্পর্কে ফেললেন। সাফ জেনে রাখুন। তিন তালাক তিন তালাকই।
তিন কী করে এক হবে? দুনিয়ার কোনো হিসাবে এর নজির দেখেছেন? কোরআন-সুন্নাহ তো তিন তালাকই হয়ে যাওয়ার কথা বলে। সালাফের যুগ থেকে এ পর্যন্ত এ মতই চলে আসছে। কেউ ভিন্নমত পোষণ করেননি। চার মাজহাবের চারও ইমামের মত এটাই।
সেখানে ১ হাজার ৩০০ বছর পর গুটি কয়েকজন ভিন্নমত পোষণ করেন, তিন তালাক দিলে এক তালাকই হবে। এত সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের বিপরীতে যদি আপনার কাছে সে গুটি কয়েকজনের মতকে অগ্রাধিকার মনে হয়, তাহলে আপনার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলাম। তবে তার আগে দুটি কথা শুনুন। দুনিয়ার আর কোথাও কিন্তু আপনি নিজেও তিনকে এক বলে চালিয়ে দেন না।
আপনার কাছ থেকে কেউ তিন লাখ টাকা নিলে এক লাখ টাকা পরিশোধ করলে মেনে নেবেন না। মাগরিবের নামাজ তিন রাকাতের পরিবর্তে এক রাকাত আদায় করেন না। ধরে নিলাম। তিন তালাক মানে এক তালাক। যদি এ মত সঠিক হয়, তাহলে আপনি অবৈধ সম্পর্ক থেকে বেঁচে গেলেন। কিন্তু যদি ঘটনাক্রমে তিন তালাক তিন তালাক হয়ে যাওয়ার মত (ইসলামি শরিয়তে) অগ্রাধিকার হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু আখিরাতের জালে আপনি আটকা পড়ে গেলেন। আপনাদের সম্পর্কটা শেষপর্যন্ত হারাম রিলেশনের মতো হলো।
এখন বিবেচনা আপনার হাতে। নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলবেন কি না, সেটার দায়ও আপনার। সুতরাং, বিবেকের আদালতে প্রশ্ন করুন। সে-ই আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে। একান্তে নিজের সঙ্গে মতবিনিময় করুন। সঙ্গে আগের বলা কথাগুলোও মাথায় রাখুন। আর হ্যাঁ, যেসব হুজুর তিন তালককে তিন তালাকই বলেন, আপনাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁদের কোনো স্বার্থ নেই। আপনাদের বিবাহ ভাঙলে যে তাঁদের খুব ভালো লাগে, তা-ও না।
একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, শরিয়ত অনুযায়ী যেন আমাদের জীবন-কর্ম পরিচালনা হয়। স্রেফ এতটুকুই, আর কিছু নয়।
৩. পানি বালুতে গড়িয়ে যাওয়ার পর সে পানি ওঠাতে যাবেন না
তিন তালাক দিয়ে যখন পানি ফেলেই দিয়েছেন, তখন আর সে পানি ওঠাতে যাবেন না। তখন হাতে শুধু কাদাই স্পর্শ হবে। পানি পাওয়া তো দূরের কথা। প্রিয় ভাই, একটু কষ্ট করুন। অন্যত্র সন্ধান করুন। হয়তো এতেই কল্যাণ। কিন্তু তবু যদি আপনি আগের সম্পর্কে যুক্ত থাকেন, তাহলে জেনে রাখুন, এটা হারাম রিলেশনের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
আপনি যত দিন অবস্থান করবেন, হারাম অবস্থান করবেন। এমনকি আপনার থেকে যে সন্তান জন্ম নেবে, তাকেও হারাম হয়ে জন্ম নিতে হবে। অতএব, একটু ভাবুন হারাম সম্পর্কে জড়িত হওয়ার আগে। অন্তত আপনার সন্তানের কথা ভাবুন। শুধু আপনাদের ভোগের কারণেই এ নিষ্পাপ শিশুকে হারাম পরিচয় ধারণ করতে হচ্ছে। এর দায়ভার আপনারা এড়াতে পারবেন?
সারকথা, যে মেসেজটা দিতে চেয়েছি পাঠককে, তা হলো, ডিভোর্স সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান। ডিভোর্সের কঠিন বিধান সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। তিন তালাকের পর যেকোনোভাবেই পুনঃসম্পর্কের সুযোগ নেই, তা-ও ভালোভাবে জানুন। আর যদি দিতেই হয়, তাহলে এক তালাকের বেশি নয়। এটুকু কথা সুরা ফাতিহার মতো মুখস্থ করুন। নিজে করুন, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করুন।
লেখক: জাহিদ বিন জোবায়ের, অনুবাদক, গবেষণাকর্মী

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
২ ঘণ্টা আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
৫ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
৬ ঘণ্টা আগে
দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
৬ ঘণ্টা আগেডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
পবিত্র কোরআনের এসেছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ত্বরান্বিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা: ৯)
জুমা কেবল নামাজের দিন নয়—এটি মুসলমানদের ঐক্য, সংহতি ও আত্মসমালোচনার দিন। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে; কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র—কিন্তু সবাই আল্লাহর বান্দা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সব পার্থিব বিভাজনকে ভুলে গিয়ে আল্লাহর সামনে এক হয়ে দাঁড়ানোই ইমানের সৌন্দর্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তম পোশাক পরে, সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৮৮৩; সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৭)। এই হাদিস শুধু বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলে না, বরং অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধির প্রতীক। যেমন—পোশাক ধোয়া হয় ময়লা দূর করার জন্য, তেমনি আত্মাকে ধোয়া হয় তাওবা, ইস্তিগফার ও সৎকর্মের মাধ্যমে।
এই মাসের তৃতীয় জুমা তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি নতুন শুরু এখনো সম্ভব। যত গুনাহই হোক না কেন, আল্লাহর রহমতের দরজা সব সময় খোলা। এ জুমা আমাদের শেখায়—আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য কখনো দেরি করতে হয় না।
আসুন, এই জমাদিউল আউয়ালের তৃতীয় জুমাকে আমরা আত্মশুদ্ধি, তাওবা ও ইমান নবায়নের দিন হিসেবে গ্রহণ করি। আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দেন, গুনাহ মাফ করেন, আর এই জুমাকে করে তোলেন আমাদের জীবনের মোড় ঘোরানোর দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
পবিত্র কোরআনের এসেছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ত্বরান্বিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা: ৯)
জুমা কেবল নামাজের দিন নয়—এটি মুসলমানদের ঐক্য, সংহতি ও আত্মসমালোচনার দিন। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে; কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র—কিন্তু সবাই আল্লাহর বান্দা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সব পার্থিব বিভাজনকে ভুলে গিয়ে আল্লাহর সামনে এক হয়ে দাঁড়ানোই ইমানের সৌন্দর্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তম পোশাক পরে, সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৮৮৩; সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৭)। এই হাদিস শুধু বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলে না, বরং অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধির প্রতীক। যেমন—পোশাক ধোয়া হয় ময়লা দূর করার জন্য, তেমনি আত্মাকে ধোয়া হয় তাওবা, ইস্তিগফার ও সৎকর্মের মাধ্যমে।
এই মাসের তৃতীয় জুমা তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি নতুন শুরু এখনো সম্ভব। যত গুনাহই হোক না কেন, আল্লাহর রহমতের দরজা সব সময় খোলা। এ জুমা আমাদের শেখায়—আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য কখনো দেরি করতে হয় না।
আসুন, এই জমাদিউল আউয়ালের তৃতীয় জুমাকে আমরা আত্মশুদ্ধি, তাওবা ও ইমান নবায়নের দিন হিসেবে গ্রহণ করি। আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দেন, গুনাহ মাফ করেন, আর এই জুমাকে করে তোলেন আমাদের জীবনের মোড় ঘোরানোর দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

নিত্যনতুন ডিভোর্স ঘটছে আমাদের সমাজে। তারপরও কী পরিমাণ অজ্ঞ এ সম্পর্কে সমাজের মানুষগুলো, তার কিছু হাস্যকর ও দুঃখজনক চিত্র দেখুন। সেদিন এক ভাই বললেন, তালাক, এটা তো স্রেফ একটা গালি। যা রাগের মাথায় স্বামীর মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
৫ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
৬ ঘণ্টা আগে
দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
৬ ঘণ্টা আগেজাহিদ হাসান

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব এবং কার্যকর কূটনীতির এক অনন্য সমন্বয়, যা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামরিক কৌশল ও বিপ্লবী চেতনার জন্য আজও অনুকরণীয়।
নবীজি (সা.) শুধু ধর্ম সংস্কারক বা ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক, ন্যায়পরায়ণ বিচারক, সফল সামরিক নেতা এবং দূরদর্শী কূটনীতিক। তিনি আরবের বিচ্ছিন্ন ও খণ্ড খণ্ড সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন এক আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা কেবল সপ্তম শতকেই নয়, আধুনিক যুগেও তা নজিরবিহীন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, সামরিক নেতৃত্বে ছিলেন এক অকুতোভয় সেনাপতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
মহানবী (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়েছিল নবুওয়াত প্রাপ্তির বহু আগেই, তাঁর নৈতিক কর্তৃত্বের ভিত্তিতে। তাঁর নেতৃত্বের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ফুটে ওঠে হিলফুল ফুজুল নামের একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। কিছু সামাজিক সংস্কারের লক্ষ্যে তিনি আরবের সচেতন যুবকদের নিয়ে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আরব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় অবিচার দূরীকরণই ছিল হিলফুল ফুজুলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
রাসুল (সা.)-এর এই নৈতিক মূল্যবোধই তাঁকে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিল। যেমন, কাবা ঘরের সংস্কারের সময় হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কুরাইশ গোত্রগুলোর মধ্যে যখন চরম বিরোধ দেখা দেয় এবং রক্তপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন তারা সর্বসম্মতভাবে তাঁকে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর কুরাইশরা শতভাগ আস্থা রেখেছিল। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে তিনি প্রাক্-নবুওয়াতি যুগ থেকেই একজন নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী এবং ন্যায় বিচারক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর এই সর্বজনীন ন্যায়পরায়ণতার স্বীকৃতি পরবর্তী সময়ে মদিনায় ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি স্থাপন করে।
৪০ বছর বয়সে রাসুল (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর, মক্কায় গোপনে তাওহিদের দাওয়াত দিয়ে বিচ্ছিন্ন আরব সমাজকে আল্লাহর একত্ববাদের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন। পরে তিনি যখন প্রকাশ্যে তাওহিদের দাওয়াত দিতে শুরু করেন, তখন মক্কার পরিবেশ তাঁর ও তাঁর সাথিদের জন্য এক প্রতিকূল পরিবেশে রূপান্তরিত হয়। তাঁদের ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার, যা পরে মুসলমানদের মদিনায় হিজরতের দিকে ধাবিত করে। হিজরত কেবল ধর্মীয় আশ্রয় গ্রহণ ছিল না, বরং এটি ছিল মক্কার গোত্রীয় ক্ষমতার বাইরে গিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম কৌশলগত পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই মুহাম্মদ (সা.) স্বাধীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে ওঠেন।
মদিনায় হিজরতের পর তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কাজ ছিল মদিনার সনদ প্রণয়ন, যা ইতিহাসের প্রথম লিখিত রাজনৈতিক চুক্তি ও প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে পরিচিত। এই মদিনার সনদই ছিল মদিনায় স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে প্রণীত এই সনদ মদিনার মুসলমান, ইহুদি এবং পৌত্তলিকদের একত্র করে একটি সাধারণ জাতি গঠনে সহায়তা করেছিল। এই সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপন। এই সংবিধানের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয় যে মুহাম্মদ (সা.) হবেন নবগঠিত এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। এই ধারা মদিনার নবগঠিত রাষ্ট্রকাঠামো এবং ক্ষমতাকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর অবস্থানকে আইনি বৈধতা দান করে।
মদিনা সনদে সব সম্প্রদায়কে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, যেখানে কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এমনকি ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করার আইনি নিশ্চয়তা লাভ করে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্বের ধারণা প্রবর্তন করা হয়। মদিনা সনদের মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্রে এক যৌথ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সনদের ধারা অনুযায়ী, কোনো গোত্র বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলোর সম্মিলিত শক্তি দিয়ে শত্রু প্রতিহত করবে ও মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং চুক্তিবদ্ধ সব গোত্র যুদ্ধের ব্যয়ভার গ্রহণ করবে।
রাসুল (সা.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সব থেকে বেশি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বৈদেশিক নীতি, আন্তগোত্রীয় সম্পর্ক নির্ধারণের মধ্য দিয়ে। যেখানে তিনি সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সম্মান করেছেন। তাঁর অন্যতম বৃহৎ কূটনৈতিক সাফল্য হলো হুদাইবিয়ার সন্ধি, যা পবিত্র কোরআনে ফাতহুম মুবিন নামে পরিচিত। এই সন্ধির মাধ্যমে মক্কার কুরাইশরা মদিনার রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এই রাজনৈতিক স্বীকৃতি মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এই সন্ধি রাসুল (সা.)-এর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
হুদাইবিয়ার সন্ধির পর যখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়, মুহাম্মদ (সা.) তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পত্র দিয়ে ইসলামের বাণীকে বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন। যার কারণে ইসলাম আরবের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তাঁর সামরিক কৌশলগত নেতৃত্বের ফলাফল হিসেবে মক্কা বিজয় হলো এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মক্কা বিজয়ের পর তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই ক্ষমাশীল ব্যক্তিত্ব তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব এবং কার্যকর কূটনীতির এক অনন্য সমন্বয়, যা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামরিক কৌশল ও বিপ্লবী চেতনার জন্য আজও অনুকরণীয়।
নবীজি (সা.) শুধু ধর্ম সংস্কারক বা ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক, ন্যায়পরায়ণ বিচারক, সফল সামরিক নেতা এবং দূরদর্শী কূটনীতিক। তিনি আরবের বিচ্ছিন্ন ও খণ্ড খণ্ড সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন এক আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা কেবল সপ্তম শতকেই নয়, আধুনিক যুগেও তা নজিরবিহীন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, সামরিক নেতৃত্বে ছিলেন এক অকুতোভয় সেনাপতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
মহানবী (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়েছিল নবুওয়াত প্রাপ্তির বহু আগেই, তাঁর নৈতিক কর্তৃত্বের ভিত্তিতে। তাঁর নেতৃত্বের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ফুটে ওঠে হিলফুল ফুজুল নামের একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। কিছু সামাজিক সংস্কারের লক্ষ্যে তিনি আরবের সচেতন যুবকদের নিয়ে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আরব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় অবিচার দূরীকরণই ছিল হিলফুল ফুজুলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
রাসুল (সা.)-এর এই নৈতিক মূল্যবোধই তাঁকে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিল। যেমন, কাবা ঘরের সংস্কারের সময় হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কুরাইশ গোত্রগুলোর মধ্যে যখন চরম বিরোধ দেখা দেয় এবং রক্তপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন তারা সর্বসম্মতভাবে তাঁকে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর কুরাইশরা শতভাগ আস্থা রেখেছিল। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে তিনি প্রাক্-নবুওয়াতি যুগ থেকেই একজন নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী এবং ন্যায় বিচারক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর এই সর্বজনীন ন্যায়পরায়ণতার স্বীকৃতি পরবর্তী সময়ে মদিনায় ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি স্থাপন করে।
৪০ বছর বয়সে রাসুল (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর, মক্কায় গোপনে তাওহিদের দাওয়াত দিয়ে বিচ্ছিন্ন আরব সমাজকে আল্লাহর একত্ববাদের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন। পরে তিনি যখন প্রকাশ্যে তাওহিদের দাওয়াত দিতে শুরু করেন, তখন মক্কার পরিবেশ তাঁর ও তাঁর সাথিদের জন্য এক প্রতিকূল পরিবেশে রূপান্তরিত হয়। তাঁদের ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার, যা পরে মুসলমানদের মদিনায় হিজরতের দিকে ধাবিত করে। হিজরত কেবল ধর্মীয় আশ্রয় গ্রহণ ছিল না, বরং এটি ছিল মক্কার গোত্রীয় ক্ষমতার বাইরে গিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম কৌশলগত পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই মুহাম্মদ (সা.) স্বাধীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে ওঠেন।
মদিনায় হিজরতের পর তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কাজ ছিল মদিনার সনদ প্রণয়ন, যা ইতিহাসের প্রথম লিখিত রাজনৈতিক চুক্তি ও প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে পরিচিত। এই মদিনার সনদই ছিল মদিনায় স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে প্রণীত এই সনদ মদিনার মুসলমান, ইহুদি এবং পৌত্তলিকদের একত্র করে একটি সাধারণ জাতি গঠনে সহায়তা করেছিল। এই সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপন। এই সংবিধানের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয় যে মুহাম্মদ (সা.) হবেন নবগঠিত এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। এই ধারা মদিনার নবগঠিত রাষ্ট্রকাঠামো এবং ক্ষমতাকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর অবস্থানকে আইনি বৈধতা দান করে।
মদিনা সনদে সব সম্প্রদায়কে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, যেখানে কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এমনকি ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করার আইনি নিশ্চয়তা লাভ করে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্বের ধারণা প্রবর্তন করা হয়। মদিনা সনদের মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্রে এক যৌথ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সনদের ধারা অনুযায়ী, কোনো গোত্র বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলোর সম্মিলিত শক্তি দিয়ে শত্রু প্রতিহত করবে ও মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং চুক্তিবদ্ধ সব গোত্র যুদ্ধের ব্যয়ভার গ্রহণ করবে।
রাসুল (সা.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সব থেকে বেশি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বৈদেশিক নীতি, আন্তগোত্রীয় সম্পর্ক নির্ধারণের মধ্য দিয়ে। যেখানে তিনি সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সম্মান করেছেন। তাঁর অন্যতম বৃহৎ কূটনৈতিক সাফল্য হলো হুদাইবিয়ার সন্ধি, যা পবিত্র কোরআনে ফাতহুম মুবিন নামে পরিচিত। এই সন্ধির মাধ্যমে মক্কার কুরাইশরা মদিনার রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এই রাজনৈতিক স্বীকৃতি মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এই সন্ধি রাসুল (সা.)-এর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
হুদাইবিয়ার সন্ধির পর যখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়, মুহাম্মদ (সা.) তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পত্র দিয়ে ইসলামের বাণীকে বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন। যার কারণে ইসলাম আরবের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তাঁর সামরিক কৌশলগত নেতৃত্বের ফলাফল হিসেবে মক্কা বিজয় হলো এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মক্কা বিজয়ের পর তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই ক্ষমাশীল ব্যক্তিত্ব তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

নিত্যনতুন ডিভোর্স ঘটছে আমাদের সমাজে। তারপরও কী পরিমাণ অজ্ঞ এ সম্পর্কে সমাজের মানুষগুলো, তার কিছু হাস্যকর ও দুঃখজনক চিত্র দেখুন। সেদিন এক ভাই বললেন, তালাক, এটা তো স্রেফ একটা গালি। যা রাগের মাথায় স্বামীর মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
২ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
৬ ঘণ্টা আগে
দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
৬ ঘণ্টা আগেমুফতি শাব্বির আহমদ

প্রশ্ন: বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
আসলাম শেখ, গোপালগঞ্জ।
উত্তর: আপনার প্রশ্নটি বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং এর সঠিক হিসাব ও আদায় প্রতিটি সম্পদশালী মুসলমানের জন্য ফরজ। ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটরের ব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা নিচে তুলে ধরা হলো।
ইসলামে প্রযুক্তির ব্যবহার
ইসলাম একটি চির আধুনিক জীবনব্যবস্থা। নবী-রাসুলগণও তাঁদের যুগে দাওয়াত ও দ্বীন প্রচারে তৎকালীন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বর্তমান যুগেও কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন হচ্ছে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ব্যক্তিগত ইবাদত পালনে সহায়তাকারী অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর এই আধুনিক প্রযুক্তিরই একটি ফসল। প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য যদি শরিয়তসম্মত হয়, তাহলে এর ব্যবহার নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ জায়েজ ও অনুমোদিত।
জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সঠিক বিধান
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা বৈধ হলেও, জাকাত একটি ফরজ ইবাদত হওয়ায় এর হিসাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এই ক্যালকুলেটরগুলো ব্যবহারের সঠিক বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতার দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. ডিজিটাল ক্যালকুলেটরকে জাকাতের হিসাবকার্যে সহায়তাকারী একটি যন্ত্র হিসেবে গণ্য করতে হবে। এটি কোনোভাবেই চূড়ান্ত নির্ভুল হিসাবের নিশ্চয়তা প্রদানকারী নয়। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নিসাব (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা সমমূল্যের সম্পদ) এবং এক বছর অতিবাহিত হওয়া—এই শর্তগুলো সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কি না, তা ব্যবহারকারীকেই নিশ্চিত করতে হবে।
২. ক্যালকুলেটরের হিসাব সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যবহারকারী কর্তৃক সঠিকভাবে তথ্য দেওয়ার ওপর। যদি ভুল তথ্য দেওয়া হয় (যেমন নিসাব পরিমাণ অর্থ, বর্ধনশীল সম্পদ, ঋণ ইত্যাদি ভুলভাবে প্রবেশ করানো হয়), তাহলে ক্যালকুলেটর দ্বারা প্রাপ্ত জাকাতের পরিমাণও ভুল হবে। ভুল তথ্যের কারণে হিসাব ভুল হলে এর দায় সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারকারীর ওপর বর্তাবে।
৩. জাকাতের হিসাব অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল। বিভিন্ন ধরনের সম্পদ, ঋণ এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে হিসাবের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ডিজিটাল ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জাকাতের একটি হিসাব নির্ণয় করার পর, সেটির যথার্থতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব বা ইসলামি স্কলারের শরণাপন্ন হয়ে হিসাবটি যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক। এটিই সতর্কতা ও ইবাদতের পূর্ণতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম পন্থা।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ এবং এটি একটি সুবিধাজনক মাধ্যম। তবে এটি শুধু একটি সহায়ক সরঞ্জাম। জাকাতদাতার প্রধান দায়িত্ব হলো, নিজে সঠিকভাবে সব তথ্য দেওয়া এবং ফরজ ইবাদত নিশ্চিত করার জন্য প্রাপ্ত হিসাব একজন বিজ্ঞ আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া। এতে প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করা হলো এবং একই সঙ্গে ইবাদতের সূক্ষ্মতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করা গেল।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

প্রশ্ন: বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
আসলাম শেখ, গোপালগঞ্জ।
উত্তর: আপনার প্রশ্নটি বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং এর সঠিক হিসাব ও আদায় প্রতিটি সম্পদশালী মুসলমানের জন্য ফরজ। ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটরের ব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা নিচে তুলে ধরা হলো।
ইসলামে প্রযুক্তির ব্যবহার
ইসলাম একটি চির আধুনিক জীবনব্যবস্থা। নবী-রাসুলগণও তাঁদের যুগে দাওয়াত ও দ্বীন প্রচারে তৎকালীন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বর্তমান যুগেও কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন হচ্ছে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ব্যক্তিগত ইবাদত পালনে সহায়তাকারী অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর এই আধুনিক প্রযুক্তিরই একটি ফসল। প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য যদি শরিয়তসম্মত হয়, তাহলে এর ব্যবহার নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ জায়েজ ও অনুমোদিত।
জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সঠিক বিধান
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা বৈধ হলেও, জাকাত একটি ফরজ ইবাদত হওয়ায় এর হিসাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এই ক্যালকুলেটরগুলো ব্যবহারের সঠিক বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতার দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. ডিজিটাল ক্যালকুলেটরকে জাকাতের হিসাবকার্যে সহায়তাকারী একটি যন্ত্র হিসেবে গণ্য করতে হবে। এটি কোনোভাবেই চূড়ান্ত নির্ভুল হিসাবের নিশ্চয়তা প্রদানকারী নয়। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নিসাব (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা সমমূল্যের সম্পদ) এবং এক বছর অতিবাহিত হওয়া—এই শর্তগুলো সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কি না, তা ব্যবহারকারীকেই নিশ্চিত করতে হবে।
২. ক্যালকুলেটরের হিসাব সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যবহারকারী কর্তৃক সঠিকভাবে তথ্য দেওয়ার ওপর। যদি ভুল তথ্য দেওয়া হয় (যেমন নিসাব পরিমাণ অর্থ, বর্ধনশীল সম্পদ, ঋণ ইত্যাদি ভুলভাবে প্রবেশ করানো হয়), তাহলে ক্যালকুলেটর দ্বারা প্রাপ্ত জাকাতের পরিমাণও ভুল হবে। ভুল তথ্যের কারণে হিসাব ভুল হলে এর দায় সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারকারীর ওপর বর্তাবে।
৩. জাকাতের হিসাব অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল। বিভিন্ন ধরনের সম্পদ, ঋণ এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে হিসাবের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ডিজিটাল ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জাকাতের একটি হিসাব নির্ণয় করার পর, সেটির যথার্থতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব বা ইসলামি স্কলারের শরণাপন্ন হয়ে হিসাবটি যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক। এটিই সতর্কতা ও ইবাদতের পূর্ণতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম পন্থা।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ এবং এটি একটি সুবিধাজনক মাধ্যম। তবে এটি শুধু একটি সহায়ক সরঞ্জাম। জাকাতদাতার প্রধান দায়িত্ব হলো, নিজে সঠিকভাবে সব তথ্য দেওয়া এবং ফরজ ইবাদত নিশ্চিত করার জন্য প্রাপ্ত হিসাব একজন বিজ্ঞ আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া। এতে প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করা হলো এবং একই সঙ্গে ইবাদতের সূক্ষ্মতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করা গেল।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

নিত্যনতুন ডিভোর্স ঘটছে আমাদের সমাজে। তারপরও কী পরিমাণ অজ্ঞ এ সম্পর্কে সমাজের মানুষগুলো, তার কিছু হাস্যকর ও দুঃখজনক চিত্র দেখুন। সেদিন এক ভাই বললেন, তালাক, এটা তো স্রেফ একটা গালি। যা রাগের মাথায় স্বামীর মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
২ ঘণ্টা আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
৫ ঘণ্টা আগে
দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
৬ ঘণ্টা আগেফয়জুল্লাহ রিয়াদ

দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
বক্তার দায়িত্ব খালেস নিয়তে দ্বীনের দাওয়াত: একজন বক্তার দায়িত্ব হলো খালেস নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে বয়ান করা। হৃদয়ে এ চিন্তা জাগরূক রাখা যে মাহফিল শুধু বক্তব্য দেওয়ার মঞ্চ নয়; বরং এটি দ্বীনের দাওয়াত ও ধর্মীয় জ্ঞান প্রচারের পবিত্র দায়িত্ব ও আমানত। বক্তাকে অবশ্যই কোরআন-হাদিসের আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। এর জন্য প্রচুর অধ্যয়ন ও গবেষণার মাধ্যমে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় মনগড়া কথা বলার আশঙ্কা তৈরি হয়, যা গুরুতর পাপের কারণ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (সহিহ বুখারি: ১০৭) একজন প্রকৃত বক্তা কখনোই মিথ্যা, অতিরঞ্জন বা লোকপ্রিয়তার জন্য ভিত্তিহীন ঘটনা বলতে পারেন না। বক্তাকে তাই হতে হবে সত্যনিষ্ঠ, বিনয়ী ও মননশীল। কণ্ঠের জোরে নয়, বরং কথার মাধুর্য, শক্তিশালী দলিল ও আন্তরিকতার গুণে তিনি মানুষকে প্রভাবিত করবেন।
শ্রোতার দায়িত্ব মনোযোগ ও আমলের নিয়ত: শ্রোতার দায়িত্ব হলো মনোযোগ, শ্রদ্ধাবোধ এবং আমলের নিয়তে বয়ান শোনা। বয়ানের সময় হট্টগোল, হাসাহাসি করা বা অন্যমনস্ক হওয়া অনুচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোরআন পাঠ করা হলে তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ করে থাকো, যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পারো।’ (সুরা আরাফ: ২০৪) এই আদেশ দ্বীনি বক্তব্য শোনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শ্রোতারা যদি মনোযোগ না দেয় কিংবা আলোচনাকে জীবনে প্রয়োগ না করে, তবে ওয়াজ-মাহফিল শুধু আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। তাই শ্রোতার উচিত বক্তার উপকারী কথাগুলো গ্রহণ করা এবং সেগুলো আমলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা।
আয়োজকদের দায়িত্ব আন্তরিকতা ও শৃঙ্খলা: ওয়াজ-মাহফিলে আয়োজকদের দায়িত্বও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, মাহফিল আয়োজনের উদ্দেশ্য যেন বেশি লোকসমাগম, লৌকিকতা প্রদর্শন বা লোকদেখানোর জন্য না হয়। উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীনের প্রচার। দ্বিতীয়ত, মাহফিলের পরিবেশ হবে শান্ত, শালীন ও বয়ান শোনার উপযোগী। তৃতীয়ত, বক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, চরিত্র ও দ্বীনদারিকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। একইভাবে ব্যয়, সাজসজ্জা ও মঞ্চ পরিচালনায় অপচয় বা অহংকার প্রদর্শন ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়।
আয়োজকদের আরও দায়িত্ব হলো সময়মতো মাহফিল শুরু ও শেষ করা, অধিক রাত পর্যন্ত মাহফিল না করা, এলাকার অসুস্থ, বৃদ্ধ ও শিশুদের যেন কষ্ট না হয় এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, নারী-পুরুষের পর্দা বজায় রাখা এবং শ্রোতাদের জন্য আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা করা।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
বক্তার দায়িত্ব খালেস নিয়তে দ্বীনের দাওয়াত: একজন বক্তার দায়িত্ব হলো খালেস নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে বয়ান করা। হৃদয়ে এ চিন্তা জাগরূক রাখা যে মাহফিল শুধু বক্তব্য দেওয়ার মঞ্চ নয়; বরং এটি দ্বীনের দাওয়াত ও ধর্মীয় জ্ঞান প্রচারের পবিত্র দায়িত্ব ও আমানত। বক্তাকে অবশ্যই কোরআন-হাদিসের আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। এর জন্য প্রচুর অধ্যয়ন ও গবেষণার মাধ্যমে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় মনগড়া কথা বলার আশঙ্কা তৈরি হয়, যা গুরুতর পাপের কারণ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (সহিহ বুখারি: ১০৭) একজন প্রকৃত বক্তা কখনোই মিথ্যা, অতিরঞ্জন বা লোকপ্রিয়তার জন্য ভিত্তিহীন ঘটনা বলতে পারেন না। বক্তাকে তাই হতে হবে সত্যনিষ্ঠ, বিনয়ী ও মননশীল। কণ্ঠের জোরে নয়, বরং কথার মাধুর্য, শক্তিশালী দলিল ও আন্তরিকতার গুণে তিনি মানুষকে প্রভাবিত করবেন।
শ্রোতার দায়িত্ব মনোযোগ ও আমলের নিয়ত: শ্রোতার দায়িত্ব হলো মনোযোগ, শ্রদ্ধাবোধ এবং আমলের নিয়তে বয়ান শোনা। বয়ানের সময় হট্টগোল, হাসাহাসি করা বা অন্যমনস্ক হওয়া অনুচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোরআন পাঠ করা হলে তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ করে থাকো, যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পারো।’ (সুরা আরাফ: ২০৪) এই আদেশ দ্বীনি বক্তব্য শোনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শ্রোতারা যদি মনোযোগ না দেয় কিংবা আলোচনাকে জীবনে প্রয়োগ না করে, তবে ওয়াজ-মাহফিল শুধু আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। তাই শ্রোতার উচিত বক্তার উপকারী কথাগুলো গ্রহণ করা এবং সেগুলো আমলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা।
আয়োজকদের দায়িত্ব আন্তরিকতা ও শৃঙ্খলা: ওয়াজ-মাহফিলে আয়োজকদের দায়িত্বও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, মাহফিল আয়োজনের উদ্দেশ্য যেন বেশি লোকসমাগম, লৌকিকতা প্রদর্শন বা লোকদেখানোর জন্য না হয়। উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীনের প্রচার। দ্বিতীয়ত, মাহফিলের পরিবেশ হবে শান্ত, শালীন ও বয়ান শোনার উপযোগী। তৃতীয়ত, বক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, চরিত্র ও দ্বীনদারিকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। একইভাবে ব্যয়, সাজসজ্জা ও মঞ্চ পরিচালনায় অপচয় বা অহংকার প্রদর্শন ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়।
আয়োজকদের আরও দায়িত্ব হলো সময়মতো মাহফিল শুরু ও শেষ করা, অধিক রাত পর্যন্ত মাহফিল না করা, এলাকার অসুস্থ, বৃদ্ধ ও শিশুদের যেন কষ্ট না হয় এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, নারী-পুরুষের পর্দা বজায় রাখা এবং শ্রোতাদের জন্য আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা করা।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

নিত্যনতুন ডিভোর্স ঘটছে আমাদের সমাজে। তারপরও কী পরিমাণ অজ্ঞ এ সম্পর্কে সমাজের মানুষগুলো, তার কিছু হাস্যকর ও দুঃখজনক চিত্র দেখুন। সেদিন এক ভাই বললেন, তালাক, এটা তো স্রেফ একটা গালি। যা রাগের মাথায় স্বামীর মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
২ ঘণ্টা আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
৫ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
৬ ঘণ্টা আগে