Ajker Patrika

রহমতের রমজান: মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়া যে কারণে জরুরি

আবদুল আযীয কাসেমি
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ২২
রহমতের রমজান: মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়া যে কারণে জরুরি

দরুদ শব্দটি মূলত ফারসি। এর আরবি শব্দটি হলো—সালাত ও সালাম। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠানো বা দরুদ শরিফ পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। এতে মূলত নবীজির জন্য রহমতের প্রার্থনা করা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যেন তাঁর রাসুলকে রহমতের চাদরে জড়িয়ে নেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি “সালাত” পাঠান। হে ইমানদারগণ, তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত পাঠাও এবং পাঠাও অধিক পরিমাণে সালাম।’ (আল আহযাব: ৫৫) 

মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ বা সালাত-সালাম পাঠানোর অর্থ দয়া ও অনুগ্রহের সঙ্গে নবীর প্রশংসা ও মর্যাদা জ্ঞাপন। সালাত প্রেরণকারীর অবস্থান হিসেবে সালাতের অর্থ উদ্দেশিত হবে। পুত্রের প্রতি পিতার যে ধরনের ভালোবাসা ও অনুগ্রহ হবে, পিতার প্রতি পুত্রের সে ধরনের হবে না। আর ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা ও অনুগ্রহের রূপ উল্লিখিত দুজন থেকেও ভিন্ন হবে। দরুদ ও সালাতের বিষয়টিও তেমন। উলামায়ে কেরাম বলেন, আল্লাহর সালাত হচ্ছে রহমত পাঠানো, ফেরেশতাদের সালাত হচ্ছে ইস্তিগফার করা, আর মুমিনদের সালাত হচ্ছে দোয়া করা। 

হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠাবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশবার রহমত পঠাবেন।’ (মুসলিম) 

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শাহ আবদুল কাদির (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর নবীর জন্য এবং সেই সঙ্গে তাঁর পরিবার-পরিজনের জন্য রহমত নাজিলের দোয়া কবুল হয়। এতে তাঁর প্রতি তাঁর মর্যাদানুপাতিক রহমত বর্ষিত হয়। আর একবারের দোয়ার ফলে দোয়াকারীর প্রতি দশবার রহমত বর্ষিত হয়। এখন যার যত মন চায়, ততটুকু অর্জন করুক।’ (তাফসিরে উসমানি) 
 
আল্লামা হালিমি (রহ.) বলেন, ‘নবীজির প্রতি দরুদ পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন এবং আমাদের ওপর নবীজির অধিকার পূর্ণ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।’ 

ইমাম ইযযুদ্দিন ইবনে আবদুস সালাম আরও যোগ করে বলেন, ‘নবীজির জন্য আমাদের দরুদ পাঠ তাঁর জন্য সুপারিশ করা নয়। কেননা আমাদের মতো লোকজন নবীজির মতো মহান ব্যক্তির জন্য কী-ইবা সুপারিশ করতে পারে। তবে আল্লাহ তাআলা আমাদের আদেশ দিয়েছেন, যিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তাঁর অনুগ্রহের বদলা দিতে। যদি আমরা এর বদলা দিতে অক্ষম হই, তবে যেন তাঁর জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে বদলা দেওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা যেহেতু আমাদের অক্ষমতার কথা জানেন, তাই তিনি নবীজির প্রতি দরুদ পাঠানোর নির্দেশ করেছেন।’ 
 
ইমাম ইবনুল আরাবি (রহ.) বলেন, ‘দরুদ পাঠের উপকার তিনিই লাভ করেন, যিনি দরুদ পাঠান। কেননা দরুদ পাঠ থেকে বোঝা যায়, তাঁর আকিদা-বিশ্বাস শুদ্ধ, তাঁর নিয়ত একনিষ্ঠ এবং নবীজির প্রতি রয়েছে তাঁর ভালোবাসা ও অকুণ্ঠ আনুগত্য।’ (ফাতহুল মুলহিম: ৩/ ৩৩৩) 
 
নবীজির প্রতি আমরা দরুদ পড়ব না কেন? তিনি তো সমগ্র মানবতার জন্যই রহমত। উম্মতের প্রতি তাঁর দরদ-মায়া ছিল অপরিসীম। তাঁর মতো মহত্তম মানুষের আগমন পৃথিবীতে কখনো ঘটেনি এবং ঘটবেও না। পৃথিবীতে টিকে থাকা তাবৎ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছেন। মানুষকে বের করে এনেছেন মূর্খতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোয়। প্রাণহীন প্রতিমাপূজা থেকে তিনি মানুষকে দেখিয়েছেন বিশুদ্ধ তাওহিদের পথ। তাঁর হাত ধরেই মূর্খতার যুগের মানুষগুলো পরিণত হয়েছিলেন সোনার মানুষে। তাঁরা শুধু নিজেরাই খাঁটি হননি; তাঁদের মাধ্যমে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ পেয়েছে পথের দিশা। এসবের পেছনের কারিগর তিনি। তাঁর নিরলস পরিশ্রম, আত্মত্যাগ ও কোরবানির ফলে আমরা দীনের পথে চলতে পারছি। 

লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওমরাহর বিধান, ফজিলত ও তাৎপর্য

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ভ্রমণ করা বা জনবহুল স্থানে ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে, ইহরাম বাঁধা অবস্থায় কাবা শরিফ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সায়ি করাকে ওমরাহ বলে।

ওমরাহ পরিচিতি

নির্দিষ্ট স্থান (মিকাত) থেকে ইহরাম বাঁধার মাধ্যমে ওমরাহ শুরু হয়। এরপর ওমরাহর মধ্যে রয়েছে কাবা ঘরকে সাতবার প্রদক্ষিণ করা, সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ানো বা হাঁটা, তাওয়াফ ও সায়ি শেষে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা।

ওমরাহর গুরুত্ব ও সময়

হজের মতো এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জীবনে একবার ওমরাহ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (জরুরি সুন্নাহ)। হজের নির্দিষ্ট সময় (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ) ব্যতীত বছরের যেকোনো সময়ই ওমরাহ পালন করা যায়। ওমরাহ করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। একই সফরে একাধিক ওমরাহ করার অনুমতি আছে।

ওমরাহর ফজিলত

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ধারাবাহিকভাবে একের পর এক হজ ও ওমরাহ করতে থাকো। কেননা, হজ ও ওমরাহ এমনভাবে অভাব মোচন করে এবং গুনাহ দূর করে, যেমনভাবে কামারের হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার মরিচা দূর করে।’ (জামে তিরমিজি: ৮১০)

হজরত জাবের (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হজ আদায়কারী ব্যক্তি কখনোই একেবারে নিঃস্ব হয় না।’ (তাবারানি ফিল আওসাত: ৫২০৯)

অন্যত্র হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘এক ওমরাহর পর আরেকটি ওমরাহ আদায় করা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের জন্য কাফফারা।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯)

এ ছাড়া ওমরাহ আদায়ে প্রয়োজনে ১ টাকা খরচ করলে ৭০০ টাকা সদকা করার সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাহ হলো আল্লাহর রাস্তা। আর আল্লাহর রাস্তায় ১ দিরহাম খরচের সওয়াব ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।’ (তাবারানি ফিল আওসাত: ৫৬৯০)

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথের মুজাহিদ এবং হজ-ওমরাহ আদায়কারী আল্লাহর প্রতিনিধি। তাঁরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন আর আল্লাহও তাঁদের প্রার্থনা কবুল করেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮৯৩)

আবু হুরাইরা (রা.) মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘এক ওমরাহ অন্য ওমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সকল কিছুর কাফফারা।’ (সহিহ বুখারি: ১৭২৩)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, সে একটি গোলাম আজাদ করার সওয়াব পায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৯৫৬)

আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) নসিহত করেন, ‘হে আয়েশা, তুমি ব্যয় করতে সংকোচ কোরো না। কারণ, তোমার ব্যয় অনুপাতে ওমরাহর প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (তারগিব: ১৬৮১)

হাজরে আসওয়াদ ইসতেলামের ফজিলত

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এই পাথর কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে তার দুটি চোখ থাকবে, যা দ্বারা সে দেখবে। জিহ্বা থাকবে যা দ্বারা সে কথা বলবে। সে ওই ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষ্য দেবে যে তাকে সঠিক পন্থায় ইসতেলাম করবে।’ (ইবনে মাজাহ: ২৯৪৪)। হাজরে আসওয়াদকে চুমু দেওয়া, স্পর্শ করা বা দূর থেকে চুমুর ইঙ্গিত করাকে বলে ইসতেলাম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।

সাফা-মারওয়া সায়ি করার ফজিলত

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সাফা-মারওয়া সায়ি করো। কেননা, তা ৭০ জন দাস মুক্ত করার সমতুল্য।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৮৮৭)

হলক বা চুল কাটার ফজিলত

আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি হলককারীকে ক্ষমা করুন।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, যারা চুল কাটবে তাদের?’ তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি হলককারীকে ক্ষমা করুন।’ সাহাবায়ে কেরাম আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘যারা চুল কাটবে তাদের?’ তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি হলককারীকে ক্ষমা করুন।’ তৃতীয়বার আবার আরজ করলে নবীজি (সা.) বললেন, যারা চুল কাটবে তাদেরকেও।’ (সহিহ বুখারি: ১৭২৮)

ওমরাহ পালনের উপকারিতা

  • শারীরিক ও মানসিক পরিশুদ্ধি লাভ হয়।
  • আত্মনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়।
  • এর মাধ্যমে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচিতি ও সম্প্রীতি বাড়ে।

লেখক: হাফেজ মাওলানা আজিজুল হক, কলামিস্ট ও মাদ্রাসাশিক্ষক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুমার ফজিলত পেতে প্রস্তুতি নিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই

কাউসার লাবীব
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সপ্তাহজুড়ে কর্মব্যস্ততা, নানা চাহিদা আর ক্লান্তির পর মুসলিম জীবনের এক বিশেষ অবলম্বন হলো জুমার দিন। এটি শুধু একটি সপ্তাহান্ত নয়—বরং তা ইবাদত, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অপূর্ব সুযোগ। হাদিসে এসেছে, জুমার দিন সপ্তাহের সেরা দিন। জুমাবারের গুরুত্ব বোঝাতে আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১০৮৪)

এ ছাড়া এই দিনের রয়েছে আলাদা মর্যাদা ও ফজিলত। তাই শুধু জুমার নামাজ আদায় করলেই নয়, বরং যথাযথ প্রস্তুতি ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত পালনের মাধ্যমেই এ দিনের পূর্ণ কল্যাণ লাভ সম্ভব।

জুমার দিনের বেশ ফজিলতপূর্ণ কিছু আমল রয়েছে। যেমন—

  • ১. সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা।
  • ২. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
  • ৩. দোয়ায় মশগুল হওয়া।
  • ৪. দান-সদকা করা।

এই আমলগুলো বৃহস্পতিবার সূর্য ডোবার পর থেকেই শুরু করা যায়। কারণ, বৃহস্পতিবার দিন শেষে সূর্য ডোবার পর থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত হলো ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী জুমার দিন। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সূর্য ডোবার পর থেকে জুমার দিন শুরু হয়ে যায়। কেননা, ইসলামি পঞ্জিকায় রাত আগে আসে। দিন আসে পরে।

তাই জুমাবার দিনের বেলায় কেউ ব্যস্ততা বা কোনো কারণে সুরা কাহাফ তিলাওয়াতের সুযোগ করতে না পারলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করলে তা জুমার দিনে পড়া হয়েছে বলে গণ্য হবে।

পাশাপাশি জুমার প্রস্তুতিও রাত থেকেই শুরু হতে পারে। রাতে আগে আগে ঘুমিয়ে যাওয়া, জুমায় যাওয়ার পোশাক প্রস্তুত করে রাখাসহ যেসব কাজ আগেই সেরে ফেলা যায়—তা সেরে ফেললেই ভালো। জুমার মূল প্রস্তুতি শুরু হবে জুমার দিন সকাল থেকে। নবী করিম (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিস থেকে জুমার নামাজের প্রস্তুতি বিষয়ে যা জানা যায়, তা তুলে ধরা হলো—

১. জুমার নামাজের প্রস্তুতি মেসওয়াক করার মাধ্যমে শুরু হতে পারে। আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রত্যেক নামাজের সময় মেসওয়াক করতেন। নবীজি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের জন্য যদি কঠিন না মনে করতাম—তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম।’ (সহিহ্ বুখারি)

২. জুমার নামাজে যাওয়ার জন্য এ দিন একটু আগে আগে মিসওয়াক করে অজু করে গোসল সেরে নেওয়া উচিত। জুমার দিন গোসল করা সুন্নত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ জুমার নামাজে এলে সে যেন গোসল করে আসে।’ (সহিহ্ বুখারি)

৩. গোসল শেষে জুমার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তেল মাখা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। (সহিহ্ বুখারি)

৪. জুমার নামাজে যাওয়ার সময় সাধ্য অনুযায়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ভালো পোশাক পরা উত্তম। (সহিহ্ বুখারি)

৫. প্রস্তুতি শেষে জুমার দিন আগেভাগেই মসজিদে উপস্থিত হওয়া উচিত। কেননা, এতে রয়েছে বিশেষ নেকি পাওয়ার সম্ভাবনা।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘ফেরেশতারা জুমার দিনে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লেখেন। সবার আগে যে আসে, তার নামে একটি উট সদকা করার সওয়াব লেখা হয়। তারপর যে আসে ওই ব্যক্তির আমলনামায় একটি গাভি, তারপর আগমনকারীর নামে একটি মুরগি, তারপর আগমনকারীর নামে একটি ডিম সদকা করার সওয়াব লেখা হয়। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে আসেন—তখন ফেরেশতারা আমল লেখার খাতা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনেন।’ (সহিহ্ বুখারি: ৮৮২)

৬. পায়ে হেঁটে জুমার নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে বিশেষ সওয়াব। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন যে গোসল করে জুমার সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে যাবে, যাওয়ার সময় কোনো বাহনে চড়বে না—হেঁটে যাবে, ইমামের কাছাকাছি বসবে, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং খুতবার সময় কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবে না—সে মসজিদে আসার প্রতিটি কদমে এক বছর নফল রোজা রাখা ও এক বছর নফল নামাজ আদায়ের সওয়াব পাবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩৪৫, জামে তিরমিজি: ৪৫৬)

৭. মসজিদে যাওয়ার পর মনোযোগ দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনা উচিত। নবী করিম (সা.) এমনটিই নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জুমার দিনে যে ব্যক্তি মাথা ও শরীর ধুয়ে ভালোভাবে গোসল করে জুমার সময়ের প্রথম সময়েই কোনো বাহনে আরোহণ না করে হেঁটে মসজিদে যায় এবং ইমামের কাছাকাছি বসে, নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনে, কোনো অনর্থক কাজ না করে—তার প্রত্যেক কদমে এক বছর আমল করার সওয়াব হবে।’ (সুনানে নাসায়ি: ১৩৮৪)

এককথায় জুমার প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়গুলো হলো—

  • ১. মিসওয়াক করা।
  • ২. অজু করা।
  • ৩. গোসল করা।
  • ৪. তেল ও সুগন্ধি লাগানো।
  • ৫. উত্তম পোশাক পরা।
  • ৬. আগে আগে মসজিদে যাওয়া।
  • ৭. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
  • ৮. মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা।

এভাবে প্রস্তুতি নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করলে এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত হওয়া সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। নবী করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করল, নিজের সাধ্যমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা করল, তারপর তেল ও সুগন্ধ ব্যবহার করল, অতঃপর দ্বিপ্রহরের পর মসজিদে গিয়ে এভাবে বসল—দুজন লোককে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করেনি অর্থাৎ দুজনের মাঝখানে জোর করে প্রবেশ করেনি। তারপর সে তার ওপর নির্ধারিত নামাজ আদায় করল, ইমাম যখন (মিম্বারের দিকে) বের হলো, তখন সে চুপচাপ (বসে খুতবা শুনতে) থাকল, তা হলে সে এক জুমা থেকে অন্য জুমা পর্যন্ত যত পাপ করেছে, ওই সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ্ বুখারি)

জুমা মানেই শুধুমাত্র মসজিদে যাওয়া নয়, বরং এ দিনটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইবাদতের দিন। ছোট ছোট কিছু প্রস্তুতি ও আমলের মাধ্যমে এ দিনের ফজিলতকে অর্জন করা যায়। সঠিকভাবে গোসল, পরিচ্ছন্নতা, খুশবু, আগেভাগে যাওয়া, খুতবা শোনা এবং দরুদ-দোয়া—এসবই আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধৈর্য আর মমতায় গড়ে ওঠে সুখের সংসার

ইসলাম ডেস্ক 
ক্যারিয়ারের প্রশ্নে বিয়ের আগেই খোলামেলা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। ছবি: ফ্রিপিক
ক্যারিয়ারের প্রশ্নে বিয়ের আগেই খোলামেলা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। ছবি: ফ্রিপিক

সুখময় পরিবার জীবনের অমূল্য সম্পদ। সুখী সংসারকে বলা হয় দুনিয়ার জান্নাত। পরিবার আমাদের আশ্রয়, ভালোবাসা ও সাহসের উৎস। পরিবারে একে অপরের পাশে থাকলে সব বাধা সহজে অতিক্রম করা যায়। ছোঁয়া যায় ভালোবাসার আকাশ। মাখা যায় সুখের আবেশ। এ ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) হতে পারেন উত্তম আদর্শ।

পারিবারিক জীবনে সুখের অন্যতম মাধ্যম ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। দুই মনের দুজন এক ছাদের নিচে বসবাস শুরু করার পর কখনো অযাচিত মনোমালিন্য তৈরি হতে পারে। সংসারজীবনে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এই স্বাভাবিক বিষয় যেন জটিলতার দিকে এগোতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। পরিবারে কোনোভাবেই সন্দেহ প্রবেশের সুযোগ দেওয়া যাবে না। সন্দেহ সম্পর্ককে তিলে তিলে ক্ষয় করে। কখনো একজন রেগে গেলে অন্যজনকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। নিজেদের মাঝে অভিমান জমা হলে আগের ভালোবাসার মুহূর্তগুলোর কথা স্মরণ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব রাগ-অভিমান পেছনে ফেলে একে অপরকে আপন করে নিতে হবে।

আবু বকর (রা.) একবার আয়েশা (রা.)-এর ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন, তিনি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে জোরগলায় কথা বলছেন। তখন তিনি আয়েশা (রা.)-কে বলেন, ‘তুমি আল্লাহর রাসুলের (সা.) সঙ্গে এভাবে উঁচু গলায় কথা বলছ!’ ঠিক ওই সময় নবী করিম (সা.) আবু বকরকে (রা.) থামিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর হজরত আবু বকর বের হয়ে যান। তখন নবীজি (সা.) প্রিয়তমা স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য বলেন, ‘দেখলে, কীভাবে তোমাকে ওই লোকের হাত থেকে বাঁচালাম!’ কিছুক্ষণ পর আবার আবু বকর (রা.) এসে তাঁদের দুজনকেই হাসতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), যুদ্ধের সময় আপনারা যেভাবে আমাকে দলে নিয়েছিলেন, সন্ধির সময়ও সেভাবে দলে নিন।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৭৯২৭)

পারিবারিক, সাংসারিক ও দাম্পত্যজীবনে সুখ বজায় রাখতে পারস্পরিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা অপরিহার্য। স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকেরই আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। সেসব দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকলে পরিবারে নেমে আসে অনাবিল সুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৩ নভেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫২
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৫২ মিনিট
ফজর০৪: ৫৩ মিনিট০৬: ১০ মিনিট
জোহর১১: ৪৪ মিনিট০৩: ৩৭ মিনিট
আসর০৩: ৩৮ মিনিট০৫: ১২ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৪ মিনিট০৬: ৩০ মিনিট
এশা০৬: ৩১ মিনিট০৪: ৫২ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত