Ajker Patrika

আধ্যাত্মিকতার মিশেলে গড়া ইবনুল আরাবি মসজিদ

কাউসার লাবীব
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দামেস্কের বুকে শায়খ মুহিউদ্দিন মহল্লায়, ইয়াজিদ নদীর শান্ত ধারার পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক ঐতিহাসিক নিদর্শন—শায়খ মুহিউদ্দিন ইবনুল আরাবি জামে মসজিদ। এর প্রতিটি ইট-পাথরে মিশে আছে শত শত বছরের ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা আর শিল্পের নৈপুণ্য। এটি যেন নিছক একটি মসজিদ নয়, একই সঙ্গে সুফি সাধকদের মিলনস্থল, স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য উদাহরণ এবং মহান সাধক শায়খ মুহিউদ্দিন ইবনুল আরাবি (রহ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত এক পবিত্র স্থান। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ‘খানকার মসজিদ’, ‘আল-মুহিউই মসজিদ’ এবং ‘সালিমি মসজিদ’ নামেও পরিচিত।

মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে কালজয়ী সুফি সাধক আবু বকর মুহিউদ্দিন মুহাম্মদ ইবনু আলী আত-তায়ি আল-আন্দালুসির নামানুসারে। যিনি ইবনুল আরাবি নামে সমধিক পরিচিত। এই মসজিদেরই পবিত্র ভূমিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মহান এই সাধক। মসজিদটির বিভিন্ন নাম এর ইতিহাসের বিভিন্ন দিককে তুলে ধরে। যেমন, উসমানি সুলতান প্রথম সালিমের নামানুসারে এটি ‘আস-সালিমি মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়। আবার ‘খানকার মসজিদ’ নামটি এর রাজকীয় মর্যাদা নির্দেশ করে। তবে ‘আল-মুহিউই মসজিদ’ নামটিই তাঁর নামের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সখ্য বহন করে।

মসজিদটির আদি রূপ ছিল বেশ সাদামাটা। একটি ছোট ভবন, যার মধ্যে ছিল একটি মিম্বার, একটি মিহরাব এবং ইবনুল আরাবির সমাধি। কিন্তু এর গুরুত্ব উসমানি সুলতান প্রথম সালিমের নজর এড়ায়নি। ১৫১৮ খ্রিষ্টাব্দে দামেস্ক সফরকালে তিনি এই মসজিদটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেন। এক কিংবদন্তি অনুসারে, সুলতান স্বপ্নে শায়খ মুহিউদ্দিনকে দেখেন, যিনি তাঁর সমাধির ওপর একটি মাকাম (সমাধিসৌধ) নির্মাণের অনুরোধ জানান। সুলতানের নির্দেশে উসমানি স্থপতি শিহাব উদ্দিন ইবনুল আত্তার এই মসজিদটিকে এক নতুন রূপ দেন।

ইবনুল আরাবির জীবন ছিল জ্ঞান, ভ্রমণ আর আধ্যাত্মিকতার এক প্রবহমান ধারা। ৫৬০ হিজরির ১৭ রমজান আন্দালুসের মুরসিয়ায় এক অভিজাত পরিবারে তাঁর জন্ম। আট বছর বয়সে তিনি সেভিলে পাড়ি জমান। তাঁর বিশাল জ্ঞান, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ-ক্ষমতা এবং অসাধারণ সাহিত্য-প্রতিভা তাঁকে সেভিল রাজদরবারের একজন লেখক হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। তবে তিনি কেবল একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন না; জ্ঞানার্জন, শিক্ষাদান এবং আধ্যাত্মিক বিতর্কের জন্য তিনি মুসলিম বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেন। জীবনের শেষ ভাগে দামেস্ক শহরে এসে তিনি ইন্তেকাল করেন। ৬৩৮ হিজরির ২৮ রবিউস সানি, শুক্রবার রাতে দামেস্কের কাজি ইবনুজ জাকির বাড়িতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

ইবনুল আরাবির মরদেহ কাসিয়ুন পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত সালাহিয়ায় দাফন করা হয়। পরে উসমানি সুলতান সালিম এই সমাধির ওপর একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করে তাঁর স্মৃতি অমর করে রাখেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মসজিদটি উসমানি শৈলীতে সজ্জিত একটি বিশাল চত্বর নিয়ে গঠিত, যা রঙিন মার্বেল এবং সাদা-হলুদ পাথরের সমন্বয়ে এক মনোমুগ্ধকর রূপ ধারণ করেছে। চত্বরের মাঝখানে রয়েছে দামেস্কি শৈলীর একটি ছোট পুকুর। মসজিদের ভেতরের অংশটি চারটি খিলান ও পাঁচটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যা মসজিদের মূল ভবনকে দৃঢ়তা দান করেছে। মসজিদের মিহরাব কাঠের তৈরি, আর এর গম্বুজ কারুকার্যময় টাইলস দিয়ে আবৃত। এর আকর্ষণীয় মিনার এবং দেয়ালে দামেস্কি উসমানি ও মামলুক শৈলীর ফলকগুলো দর্শকদের মুগ্ধ করে।

শায়খ মুহিউদ্দিন ইবনুল আরাবি মসজিদ সব সময় ইবাদতে মুখরিত থাকে। এখানে হাজার হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে আসেন। জুমার দিনে ও পবিত্র রমজানে এখানে বিশেষ আয়োজন হয়ে থাকে। এই মসজিদ ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী, যা আজও শায়খ ইবনুল আরাবির আধ্যাত্মিক উপস্থিতি এবং তাঁর জ্ঞানের আলোকবর্তিকা বহন করে চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নতুন বেতন নির্ধারণে কমিটি

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় স্কুলশিক্ষক গ্রেপ্তার

২০২৬ সালের পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নামের আগে গণহত্যাকারী, ফেসবুকে আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত