Ajker Patrika

হাদিসের গল্প: সংখ্যাধিক্যে মুগ্ধতা এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির গল্প

আমজাদ ইউনুস
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সন্তান-সন্তুতি, সম্পদ বা অনুসারীর সংখ্যাধিক্যে মুগ্ধতা—এসব প্রকৃত মুমিনের জন্য একপ্রকার আত্মপ্রবঞ্চনা। সত্যিকারের ইমানদার ব্যক্তি শত্রুর মোকাবিলায় বাহিনীর সংখ্যা দেখে আত্মতুষ্ট হয় না এবং সংখ্যার স্বল্পতা নিয়ে দুশ্চিন্তাও করে না। কারণ বিজয় একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর বিজয় তো কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ১০)

একদিন আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করেন, যাকে আল্লাহ একটি বিশাল ও শক্তিশালী জাতি দান করেছিলেন। তিনি তাঁর জাতির শক্তি ও সংখ্যাধিক্যে মুগ্ধ ছিলেন। পরে তাঁর জাতির পরিণতি কী ঘটেছিল এই হাদিসে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। হাদিসের আলোকে ঘটনাটি তুলে ধরা হলো—

সুহাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সালাত আদায় করতেন, তখন এমন কিছু বলে ফিসফিস করতেন, যা আমি বুঝতে পারতাম না এবং তিনি আমাদের তা বলতেনও না। একদিন তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আমার ফিসফিস করার বিষয়টি খেয়াল করেছ?’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘আমি এক নবীর কথা স্মরণ করছিলাম, যাকে তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে এক বিশাল সেনাবাহিনী দেওয়া হয়েছিল।’ অন্য এক বর্ণনায় এসেছে—‘তিনি তাঁর জাতির সংখ্যাধিক্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন—কে এদের সঙ্গে লড়বে? কে এদের প্রতিরোধ করবে?’

এরপর আল্লাহ তাঁর প্রতি অহি পাঠালেন—‘তোমার জাতির জন্য তিনটি বিকল্প বেছে নাও—এক. তাদের বিরুদ্ধে কোনো বাইরের শত্রুকে চাপিয়ে দেওয়া। দুই. দুর্ভিক্ষ। তিন. মৃত্যু।’ নবী তাঁর সম্প্রদায়ের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তারা বলল, ‘আপনি আল্লাহর নবী, সিদ্ধান্ত আপনার ওপরই ছেড়ে দিলাম।’ এরপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন। যখন তারা কোনো বিপদের সম্মুখীন হতো, তখন তারা সালাতের আশ্রয় নিত। নবী যথেষ্ট সময় নিয়ে সালাত আদায় করলেন, তারপর বললেন, ‘হে আমার প্রভু, বাইরের শত্রুর আক্রমণ নয়, দুর্ভিক্ষও নয়, বরং মৃত্যু। তাহলে তাদের ওপর মৃত্যু চাপিয়ে দাও।’ ফলস্বরূপ, তাদের মধ্য থেকে ৭০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করল।

এ কারণেই আমি ফিসফিস করে বলছিলাম, ‘হে আল্লাহ, তোমার সাহায্যে আমি লড়াই করি, তোমার সাহায্যেই আমি আক্রমণ প্রতিহত করি এবং একমাত্র আল্লাহর শক্তিতেই সবকিছু সম্ভব।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৮৯৩৭)

হাদিস থেকে শিক্ষা

নবী (সা.)-এর শিক্ষা: রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবিদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, আত্মতুষ্টি ও আত্মগরিমা জাতির দুর্বলতা ও ধ্বংসের অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই এই ধরনের মনোভাব থেকে সতর্ক থাকা উচিত।

আত্মগরিমার ক্ষতিকর পরিণতি: অহংকার ও আত্মগরিমার ফল সর্বদা ভয়াবহ। এটি তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর নির্ভরতা) দুর্বল করে দেয় এবং মানুষকে পার্থিব উপকরণের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে। এই আত্মতুষ্টির কারণে সেই নবীর জাতিও আল্লাহর শাস্তির স্বীকার হয়েছিল।

পরীক্ষার কারণ কখনো অদৃশ্য হতে পারে: কখনো কখনো পরীক্ষার কারণ সুস্পষ্ট হয় না। এমনকি কোনো নেককার ও মুজাহিদ জাতিও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারে, অথচ তারা বুঝতেও পারে না কেন এই বিপর্যয় এসেছে। তাই সর্বদা আত্মসমালোচনা করা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া জরুরি।

পূর্ববর্তী জাতিদের শিক্ষা: আমাদের আগেও বহু নেককার ও ধর্মপরায়ণ জাতি ছিল, যাদের সংখ্যা ছিল প্রচুর এবং যারা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করত। কিন্তু তাদের মধ্যেও অনেকেই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে মৃত্যুবরণ করেছিল—যেমন, সেই জাতির সত্তর হাজার লোক অল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছিল।

সংকটের সময়ে নামাজ ও দোয়া: যখন কোনো কঠিন বিষয় সামনে আসে তখন মুমিনের উচিত সালাতে আত্মনিয়োগ করা। যেন আল্লাহ তাকে সঠিক পথনির্দেশনা দেন। এই উদ্দেশ্যে সালাতুল ইস্তিখারার বিধান রয়েছে, যাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে উত্তম সিদ্ধান্তের জন্য দোয়া করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত