Ajker Patrika

রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম জুমা: গুরুত্ব ও ফজিলত

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামি পঞ্জিকায় রবিউল আউয়াল মাস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই মাসটি ইসলামি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নবী করিম হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্মের মাস। মুসলিম উম্মাহ এই মাসে বিশেষভাবে নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে, তার জীবন ও কর্মের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। রবিউল আউয়ালের প্রথম জুমা মুসলিমদের জন্য এক অনন্য সুযোগ, যেখানে তারা আল্লাহর নৈকট্য, নেকি বৃদ্ধি এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া করতে পারে।

ধর্মীয় গুরুত্ব

রবিউল আউয়াল মাসে মুসলিমরা নবীর প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও আনুগত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে ইমানকে দৃঢ় করে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে, সে আমার সঙ্গে কিয়ামতের দিন হবে।’ (সহিহ্ বুখারি ও সহিহ্ মুসলিম) এই মাসে বিশেষ করে প্রথম জুমার দিন দোয়া, নফল নামাজ, নেকি কাজ এবং দরুদ পাঠ করা অত্যন্ত মহৎ। মুসলিম উম্মাহ এই দিনে নবীর জীবনী ও তার নেকি আখলাক সম্পর্কে অধ্যয়ন ও প্রচার করে।

জুমার মাহাত্ম্য

জুমা হলো মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক গুরুত্বপূর্ণ দিন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে যাঁরা ইমান এনেছ, জুমার দিনে নামাজের জন্য ডাক শুনলে আল্লাহর স্মরণে যাও এবং বেচাকেনা ও খেলাধুলা ত্যাগ কর। ” (সুরা জুমা: ৯)

রবিউল আউয়ালের প্রথম জুমা অন্য জুমার তুলনায় আরও বেশি পবিত্র। কারণ এটি নবীর জন্ম মাসে এসে, মুসলিমদের নেকি ও ইবাদতের সোনালি সুযোগ প্রদান করে। বিশেষ করে, মসজিদে সমবেত হয়ে নামাজ আদায় করা, খুতবা শোনা, দরুদ পাঠ ও দোয়া করা এই দিনে বিশেষ বরকতময়।

দরুদ ও দোয়ার ফজিলত

হাদিসে এসেছে যে, যিনি নবীর ওপর একবার দরুদ পাঠ করবেন, আল্লাহ তার জন্য দশবার রহমত নাজিল করবেন। বিশেষ করে রবিউল আউয়ালের প্রথম জুমার দিনে দরুদ পাঠের ফজিলত অগণিত। এটি মন শান্তি, আত্মার প্রশান্তি এবং নেকি বৃদ্ধির এক অনন্য সুযোগ। দরুদ শরিফ পাঠ করার সময় মুসলিমরা আল্লাহর কাছে নিজের দোয়া, পরিবারের কল্যাণ, সমাজের শান্তি এবং দুনিয়া ও আখিরাতের উন্নতির জন্য দোয়া করতে পারেন।

দরুদ পাঠের পাশাপাশি বিশেষ নফল নামাজ এবং কোরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি নবীর প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে দরুদ পাঠ করবে, তার নেকি বৃদ্ধি পাবে এবং আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি দান করবেন।

সমাজ ও সম্প্রদায়ের গুরুত্ব

রবিউল আউয়ালের প্রথম জুমা দিনে মুসলিমরা মসজিদে সমবেত হয়ে দোয়া, খুতবা এবং নামাজ আদায় করে। এটি মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত করে, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে এবং ইসলামের নৈতিক শিক্ষাকে সম্প্রসারিত করে। বিশেষ করে, অসহায় ও দুস্থদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো, দান ও সমাজসেবায় অংশ নেওয়া এই দিনে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও আদর্শ অনুসরণ করে মুসলিমরা সমাজে নৈতিকতা, মানবিকতা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

ইবাদতের বিশেষ ফজিলত

রবিউল আউয়ালের প্রথম জুমা হলো এক ধরনের ‘আল্লাহর নৈকট্যের সোনালি দিন।’ এই দিনে ইবাদত করার মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। বিশেষ করে, নফল নামাজ, দরুদ পাঠ, কোরআন তিলাওয়াত, এবং দোয়া এই দিনে বেশি ফলপ্রসূ হয়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি রবিউল আউয়ালের প্রথম জুমার দিনে খুতবা মনোযোগসহ শুনবে, নামাজ আদায় করবে এবং দোয়া করবে, তার সকল পাপ মাফ হবে।

এই দিনে বিশেষ করে সামাজিক নেকি কাজ যেমন দারিদ্র্য ও অসহায়দের সাহায্য, ইসলামি জ্ঞান প্রচার, মসজিদে পরিষেবা প্রদান এবং ইসলামের সঠিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুসলিমদের মধ্যে নৈতিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সংহতি ও ঐক্য গড়ে তোলে।

নবী করিম (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ

রবিউল আউয়ালের প্রথম জুমা মুসলমানদের জন্য নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের বিশেষ সুযোগ। দরুদ, নফল নামাজ, কোরআন পাঠ, দোয়া এবং নেকি কাজের মাধ্যমে মুসলিমরা নবীর আদর্শ জীবনের সঙ্গে নিজেদের জীবনকে সংযুক্ত করতে পারে। নবী করিম (সা.)-এর জীবন, কোরআন শিক্ষা ও সুন্নাহ অনুসরণ করে একজন মুসলিম নিজের চরিত্র উন্নত করতে পারে।

রবিউল আউয়ালের প্রথম জুমা হলো এক অনন্য বরকতময় দিন। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য নেকি বৃদ্ধির, আল্লাহর নৈকট্য লাভের, এবং দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। এই দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ, দোয়া, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে একজন মুসলিম তার ইমান ও নেকি বৃদ্ধি করতে পারে।

এটি শুধু ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে না, বরং সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম উম্মাহ এই দিনে নবীর আদর্শ অনুসরণ করে, নৈতিকতা ও মানবিকতা বৃদ্ধি করে এবং সমাজে শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। তাই প্রতিটি মুসলিমকে উৎসাহিত করা হয় যে, রবিউল আউয়ালের প্রথম জুমার দিনটি বিশেষভাবে ইবাদত, দোয়া ও নেকি কাজে ব্যয় করুন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করুন।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত