মো. আবুবকর সিদ্দীক

হজ ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ। আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে এরূপ মুসলমান নর-নারীর ওপর হজ ফরজ। হজ অত্যন্ত পূর্ণময় ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। হজের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে বায়তুল্লাহ, হাজরে আসওয়াদ, সাফা-মারওয়া, মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা প্রভৃতি পবিত্র স্থানসমূহের নাম বিজড়িত। এসব পবিত্র স্থানসমূহ দুই নয়নে অবলোকনের ব্যাকুলতা মুসলমানদের আজন্মলালিত অভিলাষ। আর কোনো মুসলমান যদি কখনো সৌদি আরবে যান নিমেষের জন্য হলেও তিনি চাইবেন মসজিদে নববী এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে আসতে। পূর্ণ আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে মোমিনদের জন্য হজ পালন চির আরাধ্য। প্রত্যেক মুসলমান তার অন্তরে হজ পালনের তীব্র বাসনা লালন করেন।
হজের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় হৃদয় মোহাবিষ্ট থাকলেও অতি সংগোপনে সেই হৃদয়েই বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারণে শঙ্কা তৈরি হয়। বিদেশ-বিভুঁইয়ে অচেনা রাস্তাঘাট, অপরিচিত মানুষ আর অজানা ভাষা! পথ হারানোর ভয় ও যোগাযোগ না করতে পারার বিড়ম্বনা অনেককে আতঙ্কিত করে তুলতে পারে। অবশ্য কিছুটা ভয় পাওয়া দোষের নয়; বরং এটাই স্বাভাবিক।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি মানুষের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভৌগোলিক দূরত্ব ঘুচে গেছে অনেকটাই। দূরে থেকেও মানুষ এখন সন্নিকটে, হাতের কাছেই। গোটা পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। হজ ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনীর সন্নিবেশ ঘটেছে। হজের নিবন্ধন, তাঁবু বরাদ্দ, হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতিই সম্পন্ন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
এ বছর বাংলাদেশ সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় যোগ করেছে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল অ্যাপ, হজ প্রি-পেইড কার্ড ও মোবাইল সিম রোমিং সার্ভিস। হজের সফরকে সহজ, মসৃণ, নিরাপদ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় ‘Labbaik’ শিরোনামের মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই মোবাইল অ্যাপ হজযাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা প্রদানে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। এ ছাড়া, ডাউনলোড লিংক অথবা কিউআর কোড স্ক্যান করে ডাউনলোড করার সুযোগ রয়েছে। এই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের সময় হজযাত্রীর মোবাইল নম্বর, পিআইডি (পিলগ্রিম আইডি) ও জন্ম তারিখ প্রয়োজন হবে। ওটিপি যাচাইয়ের পর ৪ ডিজিটের পিন সেট করতে হবে। একজন হাজি তার পরিবারের সর্বোচ্চ ৩ জন সদস্যকে ইনভাইটেশন পাঠিয়ে অ্যাপে যুক্ত করতে পারবে। পরিবারের সদস্যের নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে ইনভাইটেশন পাঠালে ওই সদস্য তাঁর মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর তাঁরা হাজির তথ্য জানতে পারবেন। এ ছাড়াও গেস্ট ইউজার হিসেবেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
হজযাত্রী হারিয়ে গেলে বা গুরুতর অসুস্থ বা বিপদে পড়লে জরুরি মুহূর্তে এই মোবাইল অ্যাপ থেকে SoS (Save Our Souls) বাটনে ক্লিক করলে সাপোর্ট টিম হাজিকে উদ্ধার/সহায়তা করবেন। এই অ্যাপ থেকে জানা যাবে নামাজের সময়সূচি, প্রতিদিনের করণীয়, দৈনিক হজ সিডিউল, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, আবাসন তথ্য যেমন হোটেলের নাম, ঠিকানা, দূরত্ব, ছবি, ভিডিও, চেক-ইন/চেক-আউট তারিখ ইত্যাদি। হজযাত্রী ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য যেমন ফ্লাইট কোড, বোর্ডিং টাইম, ডিপারচার ও অ্যারাইভাল টাইম, লাগেজের ওজন সীমা ইত্যাদি মিলবে এই অ্যাপ থেকে। লোকেশন ট্রাকিং যেমন হজযাত্রী গুগল ম্যাপে নিজেদের বা দলের অন্যান্য সদস্যদের অবস্থান নির্ণয়, পরিবারের সদস্য কর্তৃক তাদের হজযাত্রী ট্র্যাকিং, মিনা-আরাফাহর তাঁবুর লোকেশন ট্র্যাকিং সেবাও রয়েছে এই অ্যাপে। এ ছাড়া রয়েছে হজ প্রি-পেইড কার্ডের ব্যালান্স, ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রোফাইল তথ্য ও সার্বক্ষণিক ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য সহায়তা, বাংলাদেশ মেডিকেল সেন্টার ও সৌদি হাসপাতালের তথ্য, গাইডভিত্তিক গ্রুপ যোগাযোগ সুবিধা, কোরআন ও হাদিস লাইব্রেরি, কিবলা নির্দেশনা, ডিজিটাল তসবি, হজ ও ওমরাহ সহায়িকা, কোরবানি কুপন সংগ্রহ কেন্দ্রের তালিকা ও মক্কা ও মদিনার ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ, হজ এজেন্সির তথ্য যেমন এজেন্সি নাম, লাইসেন্স নম্বর, প্যাকেজ, রেটিং, রিভিউ প্রদান ইত্যাদি সেবা।
এ বছর হজযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে চালু করা হয়েছে হজ প্রি পেইড কার্ড। সরকারের নির্দেশনার আলোকে এই কার্ড চালু করেছে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। এই কার্ড নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি লাঘব করেছে। এই কার্ড ইস্যুতে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজন নেই। এটি ক্যাশের পরিপূরক এবং কার্ডের মেয়াদ ৫ বছর। ইসলামী ব্যাংকের সকল শাখা থেকে এ কার্ড পাওয়া যাবে। হজ প্রিপেইড কার্ডের অনেকগুলো সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। সুবিধাসমূহের মধ্যে রয়েছে- (১) তৎক্ষণাৎ কার্ড ইস্যু ও ডেলিভারি, (২) কার্ড ইস্যুতে কোনো চার্জ/ফি নেই, (৩) ট্রানজেকশন প্রসেস ফি ৩ শতাংশ এর স্থলে ১ শতাংশ, (৪) হজ পরবর্তী সময়েও এ কার্ড ব্যবহার করা যাবে, (৫) বাংলাদেশি টাকা লোড করে ডলার/সৌদি রিয়াল পাওয়া যাবে, (৬) প্রত্যেক হজযাত্রী ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা কার্ডে লোড করে নিতে পারবেন, (৭) সৌদি আরবে Master Card লোগোযুক্ত এটিএম বুথ থেকে নগদ সৌদি রিয়াল উত্তোলন, (৮) POS মেশিনে পেমেন্ট সুবিধা, (৯) কার্ডে ব্যালেন্স রিলোড এবং (১০) অব্যবহৃত ব্যালেন্স রিফান্ড সুবিধা।
এই কার্ড ইস্যু ও ডলার এনডোর্সমেন্টের জন্য প্রয়োজন হবে মূল পাসপোর্ট/পাসপোর্টের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, দুই কপি ছবি, হজ ভিসার কপি ও সচল মোবাইল নম্বর। এই কার্ডের বিষয়ে দেশ থেকে কল সেন্টারে ১৬২৫৯ এবং ০২-৮৩৩১০৯০ নম্বরে ফোন করে কিংবা ইসলামী ব্যাংকের যে কোনো শাখায় যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা যাবে। আর বিদেশ থেকে +৮৮০১৮৪৪২৪২৬৪৬ ও +৮৮০১৮১৩১৯৭৯১৫ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ নম্বরে অথবা কল সেন্টারে +৮৮০৯৬১১০১৬২৫৯ নম্বরে ফোন করে তথ্য পাওয়া যাবে।
২০২৫ সালের হজে হজযাত্রীদের জন্য দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন সার্ভিস কোম্পানি ‘গ্রামীণফোন’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘রবি’ বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ চালু করেছে। রোমিং প্যাকেজের সুবিধাসমূহের মধ্যে আছে: (ক) হাজিগণ সৌদি আরবে মোবাইল সিম ক্রয় ছাড়াই বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল সিমের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলতে ও বার্তা পাঠাতে পারবেন। (খ) হজ রোমিং প্যাকেজসমূহ সৌদি মোবাইল অপারেটরসমূহের রেটের তুলনায় সাশ্রয়ী। (গ) হাজিগণ প্রচলিত পেমেন্ট গেটওয়ে অথবা অপারেটরদের মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে দেশীয় মুদ্রায় সহজেই ১-৬০ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজ ক্রয় ও অ্যাক্টিভেট করতে পারবেন। গ্রামীণফোন ও রবির প্যাকেজসমূহ ক্রয়ের দিন হতেই সক্রিয় হবে। তবে বাংলালিংকের প্যাকেজসমূহ হাজিগণ সৌদি আরব পৌঁছামাত্র সক্রিয় হবে। বাংলালিংকের পোস্টপেইড গ্রাহকেরা রোমিং ভয়েস কল সুবিধা পাবেন না। প্যাকেজ মূল্যের চেয়ে কম অথবা বেশি টাকা রিচার্জ করলে প্যাকেজ অ্যাক্টিভেট হবে না।
হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান। তাদের হজযাত্রাকে মসৃণ করতে সরকার সদা তৎপর। এ বছর মোবাইল অ্যাপ, হজ প্রিপেইড কার্ড ও মোবাইল ফোন রোমিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সরকারের এ সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে হজ পালন হবে সহজ, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

হজ ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ। আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে এরূপ মুসলমান নর-নারীর ওপর হজ ফরজ। হজ অত্যন্ত পূর্ণময় ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। হজের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে বায়তুল্লাহ, হাজরে আসওয়াদ, সাফা-মারওয়া, মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা প্রভৃতি পবিত্র স্থানসমূহের নাম বিজড়িত। এসব পবিত্র স্থানসমূহ দুই নয়নে অবলোকনের ব্যাকুলতা মুসলমানদের আজন্মলালিত অভিলাষ। আর কোনো মুসলমান যদি কখনো সৌদি আরবে যান নিমেষের জন্য হলেও তিনি চাইবেন মসজিদে নববী এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে আসতে। পূর্ণ আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে মোমিনদের জন্য হজ পালন চির আরাধ্য। প্রত্যেক মুসলমান তার অন্তরে হজ পালনের তীব্র বাসনা লালন করেন।
হজের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় হৃদয় মোহাবিষ্ট থাকলেও অতি সংগোপনে সেই হৃদয়েই বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারণে শঙ্কা তৈরি হয়। বিদেশ-বিভুঁইয়ে অচেনা রাস্তাঘাট, অপরিচিত মানুষ আর অজানা ভাষা! পথ হারানোর ভয় ও যোগাযোগ না করতে পারার বিড়ম্বনা অনেককে আতঙ্কিত করে তুলতে পারে। অবশ্য কিছুটা ভয় পাওয়া দোষের নয়; বরং এটাই স্বাভাবিক।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি মানুষের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভৌগোলিক দূরত্ব ঘুচে গেছে অনেকটাই। দূরে থেকেও মানুষ এখন সন্নিকটে, হাতের কাছেই। গোটা পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। হজ ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনীর সন্নিবেশ ঘটেছে। হজের নিবন্ধন, তাঁবু বরাদ্দ, হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতিই সম্পন্ন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
এ বছর বাংলাদেশ সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় যোগ করেছে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল অ্যাপ, হজ প্রি-পেইড কার্ড ও মোবাইল সিম রোমিং সার্ভিস। হজের সফরকে সহজ, মসৃণ, নিরাপদ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় ‘Labbaik’ শিরোনামের মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই মোবাইল অ্যাপ হজযাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা প্রদানে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। এ ছাড়া, ডাউনলোড লিংক অথবা কিউআর কোড স্ক্যান করে ডাউনলোড করার সুযোগ রয়েছে। এই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের সময় হজযাত্রীর মোবাইল নম্বর, পিআইডি (পিলগ্রিম আইডি) ও জন্ম তারিখ প্রয়োজন হবে। ওটিপি যাচাইয়ের পর ৪ ডিজিটের পিন সেট করতে হবে। একজন হাজি তার পরিবারের সর্বোচ্চ ৩ জন সদস্যকে ইনভাইটেশন পাঠিয়ে অ্যাপে যুক্ত করতে পারবে। পরিবারের সদস্যের নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে ইনভাইটেশন পাঠালে ওই সদস্য তাঁর মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর তাঁরা হাজির তথ্য জানতে পারবেন। এ ছাড়াও গেস্ট ইউজার হিসেবেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
হজযাত্রী হারিয়ে গেলে বা গুরুতর অসুস্থ বা বিপদে পড়লে জরুরি মুহূর্তে এই মোবাইল অ্যাপ থেকে SoS (Save Our Souls) বাটনে ক্লিক করলে সাপোর্ট টিম হাজিকে উদ্ধার/সহায়তা করবেন। এই অ্যাপ থেকে জানা যাবে নামাজের সময়সূচি, প্রতিদিনের করণীয়, দৈনিক হজ সিডিউল, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, আবাসন তথ্য যেমন হোটেলের নাম, ঠিকানা, দূরত্ব, ছবি, ভিডিও, চেক-ইন/চেক-আউট তারিখ ইত্যাদি। হজযাত্রী ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য যেমন ফ্লাইট কোড, বোর্ডিং টাইম, ডিপারচার ও অ্যারাইভাল টাইম, লাগেজের ওজন সীমা ইত্যাদি মিলবে এই অ্যাপ থেকে। লোকেশন ট্রাকিং যেমন হজযাত্রী গুগল ম্যাপে নিজেদের বা দলের অন্যান্য সদস্যদের অবস্থান নির্ণয়, পরিবারের সদস্য কর্তৃক তাদের হজযাত্রী ট্র্যাকিং, মিনা-আরাফাহর তাঁবুর লোকেশন ট্র্যাকিং সেবাও রয়েছে এই অ্যাপে। এ ছাড়া রয়েছে হজ প্রি-পেইড কার্ডের ব্যালান্স, ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রোফাইল তথ্য ও সার্বক্ষণিক ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য সহায়তা, বাংলাদেশ মেডিকেল সেন্টার ও সৌদি হাসপাতালের তথ্য, গাইডভিত্তিক গ্রুপ যোগাযোগ সুবিধা, কোরআন ও হাদিস লাইব্রেরি, কিবলা নির্দেশনা, ডিজিটাল তসবি, হজ ও ওমরাহ সহায়িকা, কোরবানি কুপন সংগ্রহ কেন্দ্রের তালিকা ও মক্কা ও মদিনার ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ, হজ এজেন্সির তথ্য যেমন এজেন্সি নাম, লাইসেন্স নম্বর, প্যাকেজ, রেটিং, রিভিউ প্রদান ইত্যাদি সেবা।
এ বছর হজযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে চালু করা হয়েছে হজ প্রি পেইড কার্ড। সরকারের নির্দেশনার আলোকে এই কার্ড চালু করেছে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। এই কার্ড নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি লাঘব করেছে। এই কার্ড ইস্যুতে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজন নেই। এটি ক্যাশের পরিপূরক এবং কার্ডের মেয়াদ ৫ বছর। ইসলামী ব্যাংকের সকল শাখা থেকে এ কার্ড পাওয়া যাবে। হজ প্রিপেইড কার্ডের অনেকগুলো সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। সুবিধাসমূহের মধ্যে রয়েছে- (১) তৎক্ষণাৎ কার্ড ইস্যু ও ডেলিভারি, (২) কার্ড ইস্যুতে কোনো চার্জ/ফি নেই, (৩) ট্রানজেকশন প্রসেস ফি ৩ শতাংশ এর স্থলে ১ শতাংশ, (৪) হজ পরবর্তী সময়েও এ কার্ড ব্যবহার করা যাবে, (৫) বাংলাদেশি টাকা লোড করে ডলার/সৌদি রিয়াল পাওয়া যাবে, (৬) প্রত্যেক হজযাত্রী ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা কার্ডে লোড করে নিতে পারবেন, (৭) সৌদি আরবে Master Card লোগোযুক্ত এটিএম বুথ থেকে নগদ সৌদি রিয়াল উত্তোলন, (৮) POS মেশিনে পেমেন্ট সুবিধা, (৯) কার্ডে ব্যালেন্স রিলোড এবং (১০) অব্যবহৃত ব্যালেন্স রিফান্ড সুবিধা।
এই কার্ড ইস্যু ও ডলার এনডোর্সমেন্টের জন্য প্রয়োজন হবে মূল পাসপোর্ট/পাসপোর্টের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, দুই কপি ছবি, হজ ভিসার কপি ও সচল মোবাইল নম্বর। এই কার্ডের বিষয়ে দেশ থেকে কল সেন্টারে ১৬২৫৯ এবং ০২-৮৩৩১০৯০ নম্বরে ফোন করে কিংবা ইসলামী ব্যাংকের যে কোনো শাখায় যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা যাবে। আর বিদেশ থেকে +৮৮০১৮৪৪২৪২৬৪৬ ও +৮৮০১৮১৩১৯৭৯১৫ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ নম্বরে অথবা কল সেন্টারে +৮৮০৯৬১১০১৬২৫৯ নম্বরে ফোন করে তথ্য পাওয়া যাবে।
২০২৫ সালের হজে হজযাত্রীদের জন্য দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন সার্ভিস কোম্পানি ‘গ্রামীণফোন’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘রবি’ বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ চালু করেছে। রোমিং প্যাকেজের সুবিধাসমূহের মধ্যে আছে: (ক) হাজিগণ সৌদি আরবে মোবাইল সিম ক্রয় ছাড়াই বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল সিমের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলতে ও বার্তা পাঠাতে পারবেন। (খ) হজ রোমিং প্যাকেজসমূহ সৌদি মোবাইল অপারেটরসমূহের রেটের তুলনায় সাশ্রয়ী। (গ) হাজিগণ প্রচলিত পেমেন্ট গেটওয়ে অথবা অপারেটরদের মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে দেশীয় মুদ্রায় সহজেই ১-৬০ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজ ক্রয় ও অ্যাক্টিভেট করতে পারবেন। গ্রামীণফোন ও রবির প্যাকেজসমূহ ক্রয়ের দিন হতেই সক্রিয় হবে। তবে বাংলালিংকের প্যাকেজসমূহ হাজিগণ সৌদি আরব পৌঁছামাত্র সক্রিয় হবে। বাংলালিংকের পোস্টপেইড গ্রাহকেরা রোমিং ভয়েস কল সুবিধা পাবেন না। প্যাকেজ মূল্যের চেয়ে কম অথবা বেশি টাকা রিচার্জ করলে প্যাকেজ অ্যাক্টিভেট হবে না।
হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান। তাদের হজযাত্রাকে মসৃণ করতে সরকার সদা তৎপর। এ বছর মোবাইল অ্যাপ, হজ প্রিপেইড কার্ড ও মোবাইল ফোন রোমিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সরকারের এ সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে হজ পালন হবে সহজ, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মো. আবুবকর সিদ্দীক

হজ ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ। আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে এরূপ মুসলমান নর-নারীর ওপর হজ ফরজ। হজ অত্যন্ত পূর্ণময় ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। হজের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে বায়তুল্লাহ, হাজরে আসওয়াদ, সাফা-মারওয়া, মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা প্রভৃতি পবিত্র স্থানসমূহের নাম বিজড়িত। এসব পবিত্র স্থানসমূহ দুই নয়নে অবলোকনের ব্যাকুলতা মুসলমানদের আজন্মলালিত অভিলাষ। আর কোনো মুসলমান যদি কখনো সৌদি আরবে যান নিমেষের জন্য হলেও তিনি চাইবেন মসজিদে নববী এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে আসতে। পূর্ণ আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে মোমিনদের জন্য হজ পালন চির আরাধ্য। প্রত্যেক মুসলমান তার অন্তরে হজ পালনের তীব্র বাসনা লালন করেন।
হজের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় হৃদয় মোহাবিষ্ট থাকলেও অতি সংগোপনে সেই হৃদয়েই বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারণে শঙ্কা তৈরি হয়। বিদেশ-বিভুঁইয়ে অচেনা রাস্তাঘাট, অপরিচিত মানুষ আর অজানা ভাষা! পথ হারানোর ভয় ও যোগাযোগ না করতে পারার বিড়ম্বনা অনেককে আতঙ্কিত করে তুলতে পারে। অবশ্য কিছুটা ভয় পাওয়া দোষের নয়; বরং এটাই স্বাভাবিক।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি মানুষের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভৌগোলিক দূরত্ব ঘুচে গেছে অনেকটাই। দূরে থেকেও মানুষ এখন সন্নিকটে, হাতের কাছেই। গোটা পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। হজ ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনীর সন্নিবেশ ঘটেছে। হজের নিবন্ধন, তাঁবু বরাদ্দ, হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতিই সম্পন্ন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
এ বছর বাংলাদেশ সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় যোগ করেছে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল অ্যাপ, হজ প্রি-পেইড কার্ড ও মোবাইল সিম রোমিং সার্ভিস। হজের সফরকে সহজ, মসৃণ, নিরাপদ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় ‘Labbaik’ শিরোনামের মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই মোবাইল অ্যাপ হজযাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা প্রদানে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। এ ছাড়া, ডাউনলোড লিংক অথবা কিউআর কোড স্ক্যান করে ডাউনলোড করার সুযোগ রয়েছে। এই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের সময় হজযাত্রীর মোবাইল নম্বর, পিআইডি (পিলগ্রিম আইডি) ও জন্ম তারিখ প্রয়োজন হবে। ওটিপি যাচাইয়ের পর ৪ ডিজিটের পিন সেট করতে হবে। একজন হাজি তার পরিবারের সর্বোচ্চ ৩ জন সদস্যকে ইনভাইটেশন পাঠিয়ে অ্যাপে যুক্ত করতে পারবে। পরিবারের সদস্যের নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে ইনভাইটেশন পাঠালে ওই সদস্য তাঁর মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর তাঁরা হাজির তথ্য জানতে পারবেন। এ ছাড়াও গেস্ট ইউজার হিসেবেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
হজযাত্রী হারিয়ে গেলে বা গুরুতর অসুস্থ বা বিপদে পড়লে জরুরি মুহূর্তে এই মোবাইল অ্যাপ থেকে SoS (Save Our Souls) বাটনে ক্লিক করলে সাপোর্ট টিম হাজিকে উদ্ধার/সহায়তা করবেন। এই অ্যাপ থেকে জানা যাবে নামাজের সময়সূচি, প্রতিদিনের করণীয়, দৈনিক হজ সিডিউল, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, আবাসন তথ্য যেমন হোটেলের নাম, ঠিকানা, দূরত্ব, ছবি, ভিডিও, চেক-ইন/চেক-আউট তারিখ ইত্যাদি। হজযাত্রী ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য যেমন ফ্লাইট কোড, বোর্ডিং টাইম, ডিপারচার ও অ্যারাইভাল টাইম, লাগেজের ওজন সীমা ইত্যাদি মিলবে এই অ্যাপ থেকে। লোকেশন ট্রাকিং যেমন হজযাত্রী গুগল ম্যাপে নিজেদের বা দলের অন্যান্য সদস্যদের অবস্থান নির্ণয়, পরিবারের সদস্য কর্তৃক তাদের হজযাত্রী ট্র্যাকিং, মিনা-আরাফাহর তাঁবুর লোকেশন ট্র্যাকিং সেবাও রয়েছে এই অ্যাপে। এ ছাড়া রয়েছে হজ প্রি-পেইড কার্ডের ব্যালান্স, ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রোফাইল তথ্য ও সার্বক্ষণিক ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য সহায়তা, বাংলাদেশ মেডিকেল সেন্টার ও সৌদি হাসপাতালের তথ্য, গাইডভিত্তিক গ্রুপ যোগাযোগ সুবিধা, কোরআন ও হাদিস লাইব্রেরি, কিবলা নির্দেশনা, ডিজিটাল তসবি, হজ ও ওমরাহ সহায়িকা, কোরবানি কুপন সংগ্রহ কেন্দ্রের তালিকা ও মক্কা ও মদিনার ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ, হজ এজেন্সির তথ্য যেমন এজেন্সি নাম, লাইসেন্স নম্বর, প্যাকেজ, রেটিং, রিভিউ প্রদান ইত্যাদি সেবা।
এ বছর হজযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে চালু করা হয়েছে হজ প্রি পেইড কার্ড। সরকারের নির্দেশনার আলোকে এই কার্ড চালু করেছে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। এই কার্ড নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি লাঘব করেছে। এই কার্ড ইস্যুতে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজন নেই। এটি ক্যাশের পরিপূরক এবং কার্ডের মেয়াদ ৫ বছর। ইসলামী ব্যাংকের সকল শাখা থেকে এ কার্ড পাওয়া যাবে। হজ প্রিপেইড কার্ডের অনেকগুলো সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। সুবিধাসমূহের মধ্যে রয়েছে- (১) তৎক্ষণাৎ কার্ড ইস্যু ও ডেলিভারি, (২) কার্ড ইস্যুতে কোনো চার্জ/ফি নেই, (৩) ট্রানজেকশন প্রসেস ফি ৩ শতাংশ এর স্থলে ১ শতাংশ, (৪) হজ পরবর্তী সময়েও এ কার্ড ব্যবহার করা যাবে, (৫) বাংলাদেশি টাকা লোড করে ডলার/সৌদি রিয়াল পাওয়া যাবে, (৬) প্রত্যেক হজযাত্রী ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা কার্ডে লোড করে নিতে পারবেন, (৭) সৌদি আরবে Master Card লোগোযুক্ত এটিএম বুথ থেকে নগদ সৌদি রিয়াল উত্তোলন, (৮) POS মেশিনে পেমেন্ট সুবিধা, (৯) কার্ডে ব্যালেন্স রিলোড এবং (১০) অব্যবহৃত ব্যালেন্স রিফান্ড সুবিধা।
এই কার্ড ইস্যু ও ডলার এনডোর্সমেন্টের জন্য প্রয়োজন হবে মূল পাসপোর্ট/পাসপোর্টের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, দুই কপি ছবি, হজ ভিসার কপি ও সচল মোবাইল নম্বর। এই কার্ডের বিষয়ে দেশ থেকে কল সেন্টারে ১৬২৫৯ এবং ০২-৮৩৩১০৯০ নম্বরে ফোন করে কিংবা ইসলামী ব্যাংকের যে কোনো শাখায় যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা যাবে। আর বিদেশ থেকে +৮৮০১৮৪৪২৪২৬৪৬ ও +৮৮০১৮১৩১৯৭৯১৫ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ নম্বরে অথবা কল সেন্টারে +৮৮০৯৬১১০১৬২৫৯ নম্বরে ফোন করে তথ্য পাওয়া যাবে।
২০২৫ সালের হজে হজযাত্রীদের জন্য দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন সার্ভিস কোম্পানি ‘গ্রামীণফোন’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘রবি’ বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ চালু করেছে। রোমিং প্যাকেজের সুবিধাসমূহের মধ্যে আছে: (ক) হাজিগণ সৌদি আরবে মোবাইল সিম ক্রয় ছাড়াই বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল সিমের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলতে ও বার্তা পাঠাতে পারবেন। (খ) হজ রোমিং প্যাকেজসমূহ সৌদি মোবাইল অপারেটরসমূহের রেটের তুলনায় সাশ্রয়ী। (গ) হাজিগণ প্রচলিত পেমেন্ট গেটওয়ে অথবা অপারেটরদের মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে দেশীয় মুদ্রায় সহজেই ১-৬০ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজ ক্রয় ও অ্যাক্টিভেট করতে পারবেন। গ্রামীণফোন ও রবির প্যাকেজসমূহ ক্রয়ের দিন হতেই সক্রিয় হবে। তবে বাংলালিংকের প্যাকেজসমূহ হাজিগণ সৌদি আরব পৌঁছামাত্র সক্রিয় হবে। বাংলালিংকের পোস্টপেইড গ্রাহকেরা রোমিং ভয়েস কল সুবিধা পাবেন না। প্যাকেজ মূল্যের চেয়ে কম অথবা বেশি টাকা রিচার্জ করলে প্যাকেজ অ্যাক্টিভেট হবে না।
হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান। তাদের হজযাত্রাকে মসৃণ করতে সরকার সদা তৎপর। এ বছর মোবাইল অ্যাপ, হজ প্রিপেইড কার্ড ও মোবাইল ফোন রোমিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সরকারের এ সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে হজ পালন হবে সহজ, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

হজ ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ। আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে এরূপ মুসলমান নর-নারীর ওপর হজ ফরজ। হজ অত্যন্ত পূর্ণময় ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। হজের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে বায়তুল্লাহ, হাজরে আসওয়াদ, সাফা-মারওয়া, মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা প্রভৃতি পবিত্র স্থানসমূহের নাম বিজড়িত। এসব পবিত্র স্থানসমূহ দুই নয়নে অবলোকনের ব্যাকুলতা মুসলমানদের আজন্মলালিত অভিলাষ। আর কোনো মুসলমান যদি কখনো সৌদি আরবে যান নিমেষের জন্য হলেও তিনি চাইবেন মসজিদে নববী এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে আসতে। পূর্ণ আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে মোমিনদের জন্য হজ পালন চির আরাধ্য। প্রত্যেক মুসলমান তার অন্তরে হজ পালনের তীব্র বাসনা লালন করেন।
হজের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় হৃদয় মোহাবিষ্ট থাকলেও অতি সংগোপনে সেই হৃদয়েই বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারণে শঙ্কা তৈরি হয়। বিদেশ-বিভুঁইয়ে অচেনা রাস্তাঘাট, অপরিচিত মানুষ আর অজানা ভাষা! পথ হারানোর ভয় ও যোগাযোগ না করতে পারার বিড়ম্বনা অনেককে আতঙ্কিত করে তুলতে পারে। অবশ্য কিছুটা ভয় পাওয়া দোষের নয়; বরং এটাই স্বাভাবিক।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি মানুষের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভৌগোলিক দূরত্ব ঘুচে গেছে অনেকটাই। দূরে থেকেও মানুষ এখন সন্নিকটে, হাতের কাছেই। গোটা পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। হজ ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনীর সন্নিবেশ ঘটেছে। হজের নিবন্ধন, তাঁবু বরাদ্দ, হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতিই সম্পন্ন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
এ বছর বাংলাদেশ সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় যোগ করেছে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল অ্যাপ, হজ প্রি-পেইড কার্ড ও মোবাইল সিম রোমিং সার্ভিস। হজের সফরকে সহজ, মসৃণ, নিরাপদ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় ‘Labbaik’ শিরোনামের মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই মোবাইল অ্যাপ হজযাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা প্রদানে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। এ ছাড়া, ডাউনলোড লিংক অথবা কিউআর কোড স্ক্যান করে ডাউনলোড করার সুযোগ রয়েছে। এই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের সময় হজযাত্রীর মোবাইল নম্বর, পিআইডি (পিলগ্রিম আইডি) ও জন্ম তারিখ প্রয়োজন হবে। ওটিপি যাচাইয়ের পর ৪ ডিজিটের পিন সেট করতে হবে। একজন হাজি তার পরিবারের সর্বোচ্চ ৩ জন সদস্যকে ইনভাইটেশন পাঠিয়ে অ্যাপে যুক্ত করতে পারবে। পরিবারের সদস্যের নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে ইনভাইটেশন পাঠালে ওই সদস্য তাঁর মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর তাঁরা হাজির তথ্য জানতে পারবেন। এ ছাড়াও গেস্ট ইউজার হিসেবেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
হজযাত্রী হারিয়ে গেলে বা গুরুতর অসুস্থ বা বিপদে পড়লে জরুরি মুহূর্তে এই মোবাইল অ্যাপ থেকে SoS (Save Our Souls) বাটনে ক্লিক করলে সাপোর্ট টিম হাজিকে উদ্ধার/সহায়তা করবেন। এই অ্যাপ থেকে জানা যাবে নামাজের সময়সূচি, প্রতিদিনের করণীয়, দৈনিক হজ সিডিউল, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, আবাসন তথ্য যেমন হোটেলের নাম, ঠিকানা, দূরত্ব, ছবি, ভিডিও, চেক-ইন/চেক-আউট তারিখ ইত্যাদি। হজযাত্রী ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য যেমন ফ্লাইট কোড, বোর্ডিং টাইম, ডিপারচার ও অ্যারাইভাল টাইম, লাগেজের ওজন সীমা ইত্যাদি মিলবে এই অ্যাপ থেকে। লোকেশন ট্রাকিং যেমন হজযাত্রী গুগল ম্যাপে নিজেদের বা দলের অন্যান্য সদস্যদের অবস্থান নির্ণয়, পরিবারের সদস্য কর্তৃক তাদের হজযাত্রী ট্র্যাকিং, মিনা-আরাফাহর তাঁবুর লোকেশন ট্র্যাকিং সেবাও রয়েছে এই অ্যাপে। এ ছাড়া রয়েছে হজ প্রি-পেইড কার্ডের ব্যালান্স, ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রোফাইল তথ্য ও সার্বক্ষণিক ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য সহায়তা, বাংলাদেশ মেডিকেল সেন্টার ও সৌদি হাসপাতালের তথ্য, গাইডভিত্তিক গ্রুপ যোগাযোগ সুবিধা, কোরআন ও হাদিস লাইব্রেরি, কিবলা নির্দেশনা, ডিজিটাল তসবি, হজ ও ওমরাহ সহায়িকা, কোরবানি কুপন সংগ্রহ কেন্দ্রের তালিকা ও মক্কা ও মদিনার ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ, হজ এজেন্সির তথ্য যেমন এজেন্সি নাম, লাইসেন্স নম্বর, প্যাকেজ, রেটিং, রিভিউ প্রদান ইত্যাদি সেবা।
এ বছর হজযাত্রা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে চালু করা হয়েছে হজ প্রি পেইড কার্ড। সরকারের নির্দেশনার আলোকে এই কার্ড চালু করেছে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। এই কার্ড নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি লাঘব করেছে। এই কার্ড ইস্যুতে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজন নেই। এটি ক্যাশের পরিপূরক এবং কার্ডের মেয়াদ ৫ বছর। ইসলামী ব্যাংকের সকল শাখা থেকে এ কার্ড পাওয়া যাবে। হজ প্রিপেইড কার্ডের অনেকগুলো সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। সুবিধাসমূহের মধ্যে রয়েছে- (১) তৎক্ষণাৎ কার্ড ইস্যু ও ডেলিভারি, (২) কার্ড ইস্যুতে কোনো চার্জ/ফি নেই, (৩) ট্রানজেকশন প্রসেস ফি ৩ শতাংশ এর স্থলে ১ শতাংশ, (৪) হজ পরবর্তী সময়েও এ কার্ড ব্যবহার করা যাবে, (৫) বাংলাদেশি টাকা লোড করে ডলার/সৌদি রিয়াল পাওয়া যাবে, (৬) প্রত্যেক হজযাত্রী ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা কার্ডে লোড করে নিতে পারবেন, (৭) সৌদি আরবে Master Card লোগোযুক্ত এটিএম বুথ থেকে নগদ সৌদি রিয়াল উত্তোলন, (৮) POS মেশিনে পেমেন্ট সুবিধা, (৯) কার্ডে ব্যালেন্স রিলোড এবং (১০) অব্যবহৃত ব্যালেন্স রিফান্ড সুবিধা।
এই কার্ড ইস্যু ও ডলার এনডোর্সমেন্টের জন্য প্রয়োজন হবে মূল পাসপোর্ট/পাসপোর্টের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, দুই কপি ছবি, হজ ভিসার কপি ও সচল মোবাইল নম্বর। এই কার্ডের বিষয়ে দেশ থেকে কল সেন্টারে ১৬২৫৯ এবং ০২-৮৩৩১০৯০ নম্বরে ফোন করে কিংবা ইসলামী ব্যাংকের যে কোনো শাখায় যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা যাবে। আর বিদেশ থেকে +৮৮০১৮৪৪২৪২৬৪৬ ও +৮৮০১৮১৩১৯৭৯১৫ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ নম্বরে অথবা কল সেন্টারে +৮৮০৯৬১১০১৬২৫৯ নম্বরে ফোন করে তথ্য পাওয়া যাবে।
২০২৫ সালের হজে হজযাত্রীদের জন্য দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন সার্ভিস কোম্পানি ‘গ্রামীণফোন’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘রবি’ বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ চালু করেছে। রোমিং প্যাকেজের সুবিধাসমূহের মধ্যে আছে: (ক) হাজিগণ সৌদি আরবে মোবাইল সিম ক্রয় ছাড়াই বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল সিমের মাধ্যমে প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলতে ও বার্তা পাঠাতে পারবেন। (খ) হজ রোমিং প্যাকেজসমূহ সৌদি মোবাইল অপারেটরসমূহের রেটের তুলনায় সাশ্রয়ী। (গ) হাজিগণ প্রচলিত পেমেন্ট গেটওয়ে অথবা অপারেটরদের মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে দেশীয় মুদ্রায় সহজেই ১-৬০ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজ ক্রয় ও অ্যাক্টিভেট করতে পারবেন। গ্রামীণফোন ও রবির প্যাকেজসমূহ ক্রয়ের দিন হতেই সক্রিয় হবে। তবে বাংলালিংকের প্যাকেজসমূহ হাজিগণ সৌদি আরব পৌঁছামাত্র সক্রিয় হবে। বাংলালিংকের পোস্টপেইড গ্রাহকেরা রোমিং ভয়েস কল সুবিধা পাবেন না। প্যাকেজ মূল্যের চেয়ে কম অথবা বেশি টাকা রিচার্জ করলে প্যাকেজ অ্যাক্টিভেট হবে না।
হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান। তাদের হজযাত্রাকে মসৃণ করতে সরকার সদা তৎপর। এ বছর মোবাইল অ্যাপ, হজ প্রিপেইড কার্ড ও মোবাইল ফোন রোমিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সরকারের এ সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে হজ পালন হবে সহজ, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
৫ ঘণ্টা আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
৮ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
৯ ঘণ্টা আগে
দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
৯ ঘণ্টা আগেডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
পবিত্র কোরআনের এসেছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ত্বরান্বিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা: ৯)
জুমা কেবল নামাজের দিন নয়—এটি মুসলমানদের ঐক্য, সংহতি ও আত্মসমালোচনার দিন। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে; কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র—কিন্তু সবাই আল্লাহর বান্দা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সব পার্থিব বিভাজনকে ভুলে গিয়ে আল্লাহর সামনে এক হয়ে দাঁড়ানোই ইমানের সৌন্দর্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তম পোশাক পরে, সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৮৮৩; সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৭)। এই হাদিস শুধু বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলে না, বরং অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধির প্রতীক। যেমন—পোশাক ধোয়া হয় ময়লা দূর করার জন্য, তেমনি আত্মাকে ধোয়া হয় তাওবা, ইস্তিগফার ও সৎকর্মের মাধ্যমে।
এই মাসের তৃতীয় জুমা তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি নতুন শুরু এখনো সম্ভব। যত গুনাহই হোক না কেন, আল্লাহর রহমতের দরজা সব সময় খোলা। এ জুমা আমাদের শেখায়—আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য কখনো দেরি করতে হয় না।
আসুন, এই জমাদিউল আউয়ালের তৃতীয় জুমাকে আমরা আত্মশুদ্ধি, তাওবা ও ইমান নবায়নের দিন হিসেবে গ্রহণ করি। আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দেন, গুনাহ মাফ করেন, আর এই জুমাকে করে তোলেন আমাদের জীবনের মোড় ঘোরানোর দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
পবিত্র কোরআনের এসেছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ত্বরান্বিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা: ৯)
জুমা কেবল নামাজের দিন নয়—এটি মুসলমানদের ঐক্য, সংহতি ও আত্মসমালোচনার দিন। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে; কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র—কিন্তু সবাই আল্লাহর বান্দা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সব পার্থিব বিভাজনকে ভুলে গিয়ে আল্লাহর সামনে এক হয়ে দাঁড়ানোই ইমানের সৌন্দর্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তম পোশাক পরে, সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৮৮৩; সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৭)। এই হাদিস শুধু বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলে না, বরং অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধির প্রতীক। যেমন—পোশাক ধোয়া হয় ময়লা দূর করার জন্য, তেমনি আত্মাকে ধোয়া হয় তাওবা, ইস্তিগফার ও সৎকর্মের মাধ্যমে।
এই মাসের তৃতীয় জুমা তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি নতুন শুরু এখনো সম্ভব। যত গুনাহই হোক না কেন, আল্লাহর রহমতের দরজা সব সময় খোলা। এ জুমা আমাদের শেখায়—আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য কখনো দেরি করতে হয় না।
আসুন, এই জমাদিউল আউয়ালের তৃতীয় জুমাকে আমরা আত্মশুদ্ধি, তাওবা ও ইমান নবায়নের দিন হিসেবে গ্রহণ করি। আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দেন, গুনাহ মাফ করেন, আর এই জুমাকে করে তোলেন আমাদের জীবনের মোড় ঘোরানোর দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

গোটা পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। হজ ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনীর সন্নিবেশ ঘটেছে। হজের নিবন্ধন, তাঁবু বরাদ্দ, হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতিই সম্পন্ন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
১০ মে ২০২৫
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
৮ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
৯ ঘণ্টা আগে
দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
৯ ঘণ্টা আগেজাহিদ হাসান

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব এবং কার্যকর কূটনীতির এক অনন্য সমন্বয়, যা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামরিক কৌশল ও বিপ্লবী চেতনার জন্য আজও অনুকরণীয়।
নবীজি (সা.) শুধু ধর্ম সংস্কারক বা ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক, ন্যায়পরায়ণ বিচারক, সফল সামরিক নেতা এবং দূরদর্শী কূটনীতিক। তিনি আরবের বিচ্ছিন্ন ও খণ্ড খণ্ড সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন এক আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা কেবল সপ্তম শতকেই নয়, আধুনিক যুগেও তা নজিরবিহীন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, সামরিক নেতৃত্বে ছিলেন এক অকুতোভয় সেনাপতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
মহানবী (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়েছিল নবুওয়াত প্রাপ্তির বহু আগেই, তাঁর নৈতিক কর্তৃত্বের ভিত্তিতে। তাঁর নেতৃত্বের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ফুটে ওঠে হিলফুল ফুজুল নামের একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। কিছু সামাজিক সংস্কারের লক্ষ্যে তিনি আরবের সচেতন যুবকদের নিয়ে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আরব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় অবিচার দূরীকরণই ছিল হিলফুল ফুজুলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
রাসুল (সা.)-এর এই নৈতিক মূল্যবোধই তাঁকে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিল। যেমন, কাবা ঘরের সংস্কারের সময় হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কুরাইশ গোত্রগুলোর মধ্যে যখন চরম বিরোধ দেখা দেয় এবং রক্তপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন তারা সর্বসম্মতভাবে তাঁকে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর কুরাইশরা শতভাগ আস্থা রেখেছিল। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে তিনি প্রাক্-নবুওয়াতি যুগ থেকেই একজন নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী এবং ন্যায় বিচারক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর এই সর্বজনীন ন্যায়পরায়ণতার স্বীকৃতি পরবর্তী সময়ে মদিনায় ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি স্থাপন করে।
৪০ বছর বয়সে রাসুল (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর, মক্কায় গোপনে তাওহিদের দাওয়াত দিয়ে বিচ্ছিন্ন আরব সমাজকে আল্লাহর একত্ববাদের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন। পরে তিনি যখন প্রকাশ্যে তাওহিদের দাওয়াত দিতে শুরু করেন, তখন মক্কার পরিবেশ তাঁর ও তাঁর সাথিদের জন্য এক প্রতিকূল পরিবেশে রূপান্তরিত হয়। তাঁদের ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার, যা পরে মুসলমানদের মদিনায় হিজরতের দিকে ধাবিত করে। হিজরত কেবল ধর্মীয় আশ্রয় গ্রহণ ছিল না, বরং এটি ছিল মক্কার গোত্রীয় ক্ষমতার বাইরে গিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম কৌশলগত পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই মুহাম্মদ (সা.) স্বাধীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে ওঠেন।
মদিনায় হিজরতের পর তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কাজ ছিল মদিনার সনদ প্রণয়ন, যা ইতিহাসের প্রথম লিখিত রাজনৈতিক চুক্তি ও প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে পরিচিত। এই মদিনার সনদই ছিল মদিনায় স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে প্রণীত এই সনদ মদিনার মুসলমান, ইহুদি এবং পৌত্তলিকদের একত্র করে একটি সাধারণ জাতি গঠনে সহায়তা করেছিল। এই সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপন। এই সংবিধানের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয় যে মুহাম্মদ (সা.) হবেন নবগঠিত এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। এই ধারা মদিনার নবগঠিত রাষ্ট্রকাঠামো এবং ক্ষমতাকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর অবস্থানকে আইনি বৈধতা দান করে।
মদিনা সনদে সব সম্প্রদায়কে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, যেখানে কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এমনকি ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করার আইনি নিশ্চয়তা লাভ করে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্বের ধারণা প্রবর্তন করা হয়। মদিনা সনদের মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্রে এক যৌথ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সনদের ধারা অনুযায়ী, কোনো গোত্র বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলোর সম্মিলিত শক্তি দিয়ে শত্রু প্রতিহত করবে ও মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং চুক্তিবদ্ধ সব গোত্র যুদ্ধের ব্যয়ভার গ্রহণ করবে।
রাসুল (সা.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সব থেকে বেশি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বৈদেশিক নীতি, আন্তগোত্রীয় সম্পর্ক নির্ধারণের মধ্য দিয়ে। যেখানে তিনি সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সম্মান করেছেন। তাঁর অন্যতম বৃহৎ কূটনৈতিক সাফল্য হলো হুদাইবিয়ার সন্ধি, যা পবিত্র কোরআনে ফাতহুম মুবিন নামে পরিচিত। এই সন্ধির মাধ্যমে মক্কার কুরাইশরা মদিনার রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এই রাজনৈতিক স্বীকৃতি মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এই সন্ধি রাসুল (সা.)-এর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
হুদাইবিয়ার সন্ধির পর যখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়, মুহাম্মদ (সা.) তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পত্র দিয়ে ইসলামের বাণীকে বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন। যার কারণে ইসলাম আরবের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তাঁর সামরিক কৌশলগত নেতৃত্বের ফলাফল হিসেবে মক্কা বিজয় হলো এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মক্কা বিজয়ের পর তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই ক্ষমাশীল ব্যক্তিত্ব তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব এবং কার্যকর কূটনীতির এক অনন্য সমন্বয়, যা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামরিক কৌশল ও বিপ্লবী চেতনার জন্য আজও অনুকরণীয়।
নবীজি (সা.) শুধু ধর্ম সংস্কারক বা ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক, ন্যায়পরায়ণ বিচারক, সফল সামরিক নেতা এবং দূরদর্শী কূটনীতিক। তিনি আরবের বিচ্ছিন্ন ও খণ্ড খণ্ড সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন এক আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা কেবল সপ্তম শতকেই নয়, আধুনিক যুগেও তা নজিরবিহীন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, সামরিক নেতৃত্বে ছিলেন এক অকুতোভয় সেনাপতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
মহানবী (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়েছিল নবুওয়াত প্রাপ্তির বহু আগেই, তাঁর নৈতিক কর্তৃত্বের ভিত্তিতে। তাঁর নেতৃত্বের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ফুটে ওঠে হিলফুল ফুজুল নামের একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। কিছু সামাজিক সংস্কারের লক্ষ্যে তিনি আরবের সচেতন যুবকদের নিয়ে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আরব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় অবিচার দূরীকরণই ছিল হিলফুল ফুজুলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
রাসুল (সা.)-এর এই নৈতিক মূল্যবোধই তাঁকে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিল। যেমন, কাবা ঘরের সংস্কারের সময় হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কুরাইশ গোত্রগুলোর মধ্যে যখন চরম বিরোধ দেখা দেয় এবং রক্তপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন তারা সর্বসম্মতভাবে তাঁকে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর কুরাইশরা শতভাগ আস্থা রেখেছিল। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে তিনি প্রাক্-নবুওয়াতি যুগ থেকেই একজন নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী এবং ন্যায় বিচারক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর এই সর্বজনীন ন্যায়পরায়ণতার স্বীকৃতি পরবর্তী সময়ে মদিনায় ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি স্থাপন করে।
৪০ বছর বয়সে রাসুল (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর, মক্কায় গোপনে তাওহিদের দাওয়াত দিয়ে বিচ্ছিন্ন আরব সমাজকে আল্লাহর একত্ববাদের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন। পরে তিনি যখন প্রকাশ্যে তাওহিদের দাওয়াত দিতে শুরু করেন, তখন মক্কার পরিবেশ তাঁর ও তাঁর সাথিদের জন্য এক প্রতিকূল পরিবেশে রূপান্তরিত হয়। তাঁদের ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার, যা পরে মুসলমানদের মদিনায় হিজরতের দিকে ধাবিত করে। হিজরত কেবল ধর্মীয় আশ্রয় গ্রহণ ছিল না, বরং এটি ছিল মক্কার গোত্রীয় ক্ষমতার বাইরে গিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম কৌশলগত পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই মুহাম্মদ (সা.) স্বাধীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে ওঠেন।
মদিনায় হিজরতের পর তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কাজ ছিল মদিনার সনদ প্রণয়ন, যা ইতিহাসের প্রথম লিখিত রাজনৈতিক চুক্তি ও প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে পরিচিত। এই মদিনার সনদই ছিল মদিনায় স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে প্রণীত এই সনদ মদিনার মুসলমান, ইহুদি এবং পৌত্তলিকদের একত্র করে একটি সাধারণ জাতি গঠনে সহায়তা করেছিল। এই সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপন। এই সংবিধানের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয় যে মুহাম্মদ (সা.) হবেন নবগঠিত এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। এই ধারা মদিনার নবগঠিত রাষ্ট্রকাঠামো এবং ক্ষমতাকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর অবস্থানকে আইনি বৈধতা দান করে।
মদিনা সনদে সব সম্প্রদায়কে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, যেখানে কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এমনকি ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করার আইনি নিশ্চয়তা লাভ করে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্বের ধারণা প্রবর্তন করা হয়। মদিনা সনদের মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্রে এক যৌথ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সনদের ধারা অনুযায়ী, কোনো গোত্র বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলোর সম্মিলিত শক্তি দিয়ে শত্রু প্রতিহত করবে ও মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং চুক্তিবদ্ধ সব গোত্র যুদ্ধের ব্যয়ভার গ্রহণ করবে।
রাসুল (সা.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সব থেকে বেশি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বৈদেশিক নীতি, আন্তগোত্রীয় সম্পর্ক নির্ধারণের মধ্য দিয়ে। যেখানে তিনি সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সম্মান করেছেন। তাঁর অন্যতম বৃহৎ কূটনৈতিক সাফল্য হলো হুদাইবিয়ার সন্ধি, যা পবিত্র কোরআনে ফাতহুম মুবিন নামে পরিচিত। এই সন্ধির মাধ্যমে মক্কার কুরাইশরা মদিনার রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এই রাজনৈতিক স্বীকৃতি মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এই সন্ধি রাসুল (সা.)-এর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
হুদাইবিয়ার সন্ধির পর যখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়, মুহাম্মদ (সা.) তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পত্র দিয়ে ইসলামের বাণীকে বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন। যার কারণে ইসলাম আরবের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তাঁর সামরিক কৌশলগত নেতৃত্বের ফলাফল হিসেবে মক্কা বিজয় হলো এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মক্কা বিজয়ের পর তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই ক্ষমাশীল ব্যক্তিত্ব তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

গোটা পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। হজ ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনীর সন্নিবেশ ঘটেছে। হজের নিবন্ধন, তাঁবু বরাদ্দ, হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতিই সম্পন্ন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
১০ মে ২০২৫
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
৫ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
৯ ঘণ্টা আগে
দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
৯ ঘণ্টা আগেমুফতি শাব্বির আহমদ

প্রশ্ন: বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
আসলাম শেখ, গোপালগঞ্জ।
উত্তর: আপনার প্রশ্নটি বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং এর সঠিক হিসাব ও আদায় প্রতিটি সম্পদশালী মুসলমানের জন্য ফরজ। ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটরের ব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা নিচে তুলে ধরা হলো।
ইসলামে প্রযুক্তির ব্যবহার
ইসলাম একটি চির আধুনিক জীবনব্যবস্থা। নবী-রাসুলগণও তাঁদের যুগে দাওয়াত ও দ্বীন প্রচারে তৎকালীন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বর্তমান যুগেও কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন হচ্ছে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ব্যক্তিগত ইবাদত পালনে সহায়তাকারী অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর এই আধুনিক প্রযুক্তিরই একটি ফসল। প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য যদি শরিয়তসম্মত হয়, তাহলে এর ব্যবহার নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ জায়েজ ও অনুমোদিত।
জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সঠিক বিধান
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা বৈধ হলেও, জাকাত একটি ফরজ ইবাদত হওয়ায় এর হিসাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এই ক্যালকুলেটরগুলো ব্যবহারের সঠিক বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতার দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. ডিজিটাল ক্যালকুলেটরকে জাকাতের হিসাবকার্যে সহায়তাকারী একটি যন্ত্র হিসেবে গণ্য করতে হবে। এটি কোনোভাবেই চূড়ান্ত নির্ভুল হিসাবের নিশ্চয়তা প্রদানকারী নয়। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নিসাব (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা সমমূল্যের সম্পদ) এবং এক বছর অতিবাহিত হওয়া—এই শর্তগুলো সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কি না, তা ব্যবহারকারীকেই নিশ্চিত করতে হবে।
২. ক্যালকুলেটরের হিসাব সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যবহারকারী কর্তৃক সঠিকভাবে তথ্য দেওয়ার ওপর। যদি ভুল তথ্য দেওয়া হয় (যেমন নিসাব পরিমাণ অর্থ, বর্ধনশীল সম্পদ, ঋণ ইত্যাদি ভুলভাবে প্রবেশ করানো হয়), তাহলে ক্যালকুলেটর দ্বারা প্রাপ্ত জাকাতের পরিমাণও ভুল হবে। ভুল তথ্যের কারণে হিসাব ভুল হলে এর দায় সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারকারীর ওপর বর্তাবে।
৩. জাকাতের হিসাব অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল। বিভিন্ন ধরনের সম্পদ, ঋণ এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে হিসাবের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ডিজিটাল ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জাকাতের একটি হিসাব নির্ণয় করার পর, সেটির যথার্থতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব বা ইসলামি স্কলারের শরণাপন্ন হয়ে হিসাবটি যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক। এটিই সতর্কতা ও ইবাদতের পূর্ণতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম পন্থা।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ এবং এটি একটি সুবিধাজনক মাধ্যম। তবে এটি শুধু একটি সহায়ক সরঞ্জাম। জাকাতদাতার প্রধান দায়িত্ব হলো, নিজে সঠিকভাবে সব তথ্য দেওয়া এবং ফরজ ইবাদত নিশ্চিত করার জন্য প্রাপ্ত হিসাব একজন বিজ্ঞ আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া। এতে প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করা হলো এবং একই সঙ্গে ইবাদতের সূক্ষ্মতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করা গেল।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

প্রশ্ন: বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
আসলাম শেখ, গোপালগঞ্জ।
উত্তর: আপনার প্রশ্নটি বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং এর সঠিক হিসাব ও আদায় প্রতিটি সম্পদশালী মুসলমানের জন্য ফরজ। ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটরের ব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা নিচে তুলে ধরা হলো।
ইসলামে প্রযুক্তির ব্যবহার
ইসলাম একটি চির আধুনিক জীবনব্যবস্থা। নবী-রাসুলগণও তাঁদের যুগে দাওয়াত ও দ্বীন প্রচারে তৎকালীন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বর্তমান যুগেও কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন হচ্ছে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ব্যক্তিগত ইবাদত পালনে সহায়তাকারী অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর এই আধুনিক প্রযুক্তিরই একটি ফসল। প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য যদি শরিয়তসম্মত হয়, তাহলে এর ব্যবহার নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ জায়েজ ও অনুমোদিত।
জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সঠিক বিধান
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা বৈধ হলেও, জাকাত একটি ফরজ ইবাদত হওয়ায় এর হিসাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এই ক্যালকুলেটরগুলো ব্যবহারের সঠিক বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতার দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. ডিজিটাল ক্যালকুলেটরকে জাকাতের হিসাবকার্যে সহায়তাকারী একটি যন্ত্র হিসেবে গণ্য করতে হবে। এটি কোনোভাবেই চূড়ান্ত নির্ভুল হিসাবের নিশ্চয়তা প্রদানকারী নয়। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নিসাব (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা সমমূল্যের সম্পদ) এবং এক বছর অতিবাহিত হওয়া—এই শর্তগুলো সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কি না, তা ব্যবহারকারীকেই নিশ্চিত করতে হবে।
২. ক্যালকুলেটরের হিসাব সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যবহারকারী কর্তৃক সঠিকভাবে তথ্য দেওয়ার ওপর। যদি ভুল তথ্য দেওয়া হয় (যেমন নিসাব পরিমাণ অর্থ, বর্ধনশীল সম্পদ, ঋণ ইত্যাদি ভুলভাবে প্রবেশ করানো হয়), তাহলে ক্যালকুলেটর দ্বারা প্রাপ্ত জাকাতের পরিমাণও ভুল হবে। ভুল তথ্যের কারণে হিসাব ভুল হলে এর দায় সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারকারীর ওপর বর্তাবে।
৩. জাকাতের হিসাব অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল। বিভিন্ন ধরনের সম্পদ, ঋণ এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে হিসাবের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ডিজিটাল ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জাকাতের একটি হিসাব নির্ণয় করার পর, সেটির যথার্থতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব বা ইসলামি স্কলারের শরণাপন্ন হয়ে হিসাবটি যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক। এটিই সতর্কতা ও ইবাদতের পূর্ণতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম পন্থা।
ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ এবং এটি একটি সুবিধাজনক মাধ্যম। তবে এটি শুধু একটি সহায়ক সরঞ্জাম। জাকাতদাতার প্রধান দায়িত্ব হলো, নিজে সঠিকভাবে সব তথ্য দেওয়া এবং ফরজ ইবাদত নিশ্চিত করার জন্য প্রাপ্ত হিসাব একজন বিজ্ঞ আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া। এতে প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করা হলো এবং একই সঙ্গে ইবাদতের সূক্ষ্মতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করা গেল।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

গোটা পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। হজ ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনীর সন্নিবেশ ঘটেছে। হজের নিবন্ধন, তাঁবু বরাদ্দ, হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতিই সম্পন্ন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
১০ মে ২০২৫
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
৫ ঘণ্টা আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
৮ ঘণ্টা আগে
দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
৯ ঘণ্টা আগেফয়জুল্লাহ রিয়াদ

দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
বক্তার দায়িত্ব খালেস নিয়তে দ্বীনের দাওয়াত: একজন বক্তার দায়িত্ব হলো খালেস নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে বয়ান করা। হৃদয়ে এ চিন্তা জাগরূক রাখা যে মাহফিল শুধু বক্তব্য দেওয়ার মঞ্চ নয়; বরং এটি দ্বীনের দাওয়াত ও ধর্মীয় জ্ঞান প্রচারের পবিত্র দায়িত্ব ও আমানত। বক্তাকে অবশ্যই কোরআন-হাদিসের আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। এর জন্য প্রচুর অধ্যয়ন ও গবেষণার মাধ্যমে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় মনগড়া কথা বলার আশঙ্কা তৈরি হয়, যা গুরুতর পাপের কারণ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (সহিহ বুখারি: ১০৭) একজন প্রকৃত বক্তা কখনোই মিথ্যা, অতিরঞ্জন বা লোকপ্রিয়তার জন্য ভিত্তিহীন ঘটনা বলতে পারেন না। বক্তাকে তাই হতে হবে সত্যনিষ্ঠ, বিনয়ী ও মননশীল। কণ্ঠের জোরে নয়, বরং কথার মাধুর্য, শক্তিশালী দলিল ও আন্তরিকতার গুণে তিনি মানুষকে প্রভাবিত করবেন।
শ্রোতার দায়িত্ব মনোযোগ ও আমলের নিয়ত: শ্রোতার দায়িত্ব হলো মনোযোগ, শ্রদ্ধাবোধ এবং আমলের নিয়তে বয়ান শোনা। বয়ানের সময় হট্টগোল, হাসাহাসি করা বা অন্যমনস্ক হওয়া অনুচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোরআন পাঠ করা হলে তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ করে থাকো, যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পারো।’ (সুরা আরাফ: ২০৪) এই আদেশ দ্বীনি বক্তব্য শোনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শ্রোতারা যদি মনোযোগ না দেয় কিংবা আলোচনাকে জীবনে প্রয়োগ না করে, তবে ওয়াজ-মাহফিল শুধু আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। তাই শ্রোতার উচিত বক্তার উপকারী কথাগুলো গ্রহণ করা এবং সেগুলো আমলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা।
আয়োজকদের দায়িত্ব আন্তরিকতা ও শৃঙ্খলা: ওয়াজ-মাহফিলে আয়োজকদের দায়িত্বও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, মাহফিল আয়োজনের উদ্দেশ্য যেন বেশি লোকসমাগম, লৌকিকতা প্রদর্শন বা লোকদেখানোর জন্য না হয়। উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীনের প্রচার। দ্বিতীয়ত, মাহফিলের পরিবেশ হবে শান্ত, শালীন ও বয়ান শোনার উপযোগী। তৃতীয়ত, বক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, চরিত্র ও দ্বীনদারিকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। একইভাবে ব্যয়, সাজসজ্জা ও মঞ্চ পরিচালনায় অপচয় বা অহংকার প্রদর্শন ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়।
আয়োজকদের আরও দায়িত্ব হলো সময়মতো মাহফিল শুরু ও শেষ করা, অধিক রাত পর্যন্ত মাহফিল না করা, এলাকার অসুস্থ, বৃদ্ধ ও শিশুদের যেন কষ্ট না হয় এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, নারী-পুরুষের পর্দা বজায় রাখা এবং শ্রোতাদের জন্য আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা করা।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

দ্বীনি মাহফিল মুসলিম সমাজের আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও ইমান জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতি অর্জন করে এবং জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনার অনুপ্রেরণা পায়। তবে একটি দ্বীনি মাহফিল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন এর বক্তা, শ্রোতা ও আয়োজক—সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
বক্তার দায়িত্ব খালেস নিয়তে দ্বীনের দাওয়াত: একজন বক্তার দায়িত্ব হলো খালেস নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে বয়ান করা। হৃদয়ে এ চিন্তা জাগরূক রাখা যে মাহফিল শুধু বক্তব্য দেওয়ার মঞ্চ নয়; বরং এটি দ্বীনের দাওয়াত ও ধর্মীয় জ্ঞান প্রচারের পবিত্র দায়িত্ব ও আমানত। বক্তাকে অবশ্যই কোরআন-হাদিসের আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। এর জন্য প্রচুর অধ্যয়ন ও গবেষণার মাধ্যমে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় মনগড়া কথা বলার আশঙ্কা তৈরি হয়, যা গুরুতর পাপের কারণ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (সহিহ বুখারি: ১০৭) একজন প্রকৃত বক্তা কখনোই মিথ্যা, অতিরঞ্জন বা লোকপ্রিয়তার জন্য ভিত্তিহীন ঘটনা বলতে পারেন না। বক্তাকে তাই হতে হবে সত্যনিষ্ঠ, বিনয়ী ও মননশীল। কণ্ঠের জোরে নয়, বরং কথার মাধুর্য, শক্তিশালী দলিল ও আন্তরিকতার গুণে তিনি মানুষকে প্রভাবিত করবেন।
শ্রোতার দায়িত্ব মনোযোগ ও আমলের নিয়ত: শ্রোতার দায়িত্ব হলো মনোযোগ, শ্রদ্ধাবোধ এবং আমলের নিয়তে বয়ান শোনা। বয়ানের সময় হট্টগোল, হাসাহাসি করা বা অন্যমনস্ক হওয়া অনুচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোরআন পাঠ করা হলে তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ করে থাকো, যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পারো।’ (সুরা আরাফ: ২০৪) এই আদেশ দ্বীনি বক্তব্য শোনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শ্রোতারা যদি মনোযোগ না দেয় কিংবা আলোচনাকে জীবনে প্রয়োগ না করে, তবে ওয়াজ-মাহফিল শুধু আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। তাই শ্রোতার উচিত বক্তার উপকারী কথাগুলো গ্রহণ করা এবং সেগুলো আমলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা।
আয়োজকদের দায়িত্ব আন্তরিকতা ও শৃঙ্খলা: ওয়াজ-মাহফিলে আয়োজকদের দায়িত্বও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, মাহফিল আয়োজনের উদ্দেশ্য যেন বেশি লোকসমাগম, লৌকিকতা প্রদর্শন বা লোকদেখানোর জন্য না হয়। উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীনের প্রচার। দ্বিতীয়ত, মাহফিলের পরিবেশ হবে শান্ত, শালীন ও বয়ান শোনার উপযোগী। তৃতীয়ত, বক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, চরিত্র ও দ্বীনদারিকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। একইভাবে ব্যয়, সাজসজ্জা ও মঞ্চ পরিচালনায় অপচয় বা অহংকার প্রদর্শন ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়।
আয়োজকদের আরও দায়িত্ব হলো সময়মতো মাহফিল শুরু ও শেষ করা, অধিক রাত পর্যন্ত মাহফিল না করা, এলাকার অসুস্থ, বৃদ্ধ ও শিশুদের যেন কষ্ট না হয় এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, নারী-পুরুষের পর্দা বজায় রাখা এবং শ্রোতাদের জন্য আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা করা।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

গোটা পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। হজ ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনীর সন্নিবেশ ঘটেছে। হজের নিবন্ধন, তাঁবু বরাদ্দ, হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতিই সম্পন্ন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
১০ মে ২০২৫
ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়াল। মাসটির নাম শুনলেই মনে হয় প্রশান্ত এক সময়—শীতল আবহে আত্মশুদ্ধি, তাওবা আর নতুনভাবে ইমানের জাগরণ ঘটানোর উপযুক্ত সময়। এ মাসের প্রতিটি জুমা যেমন বরকত ও রহমতের দিন, তেমনি তৃতীয় জুমাটি যেন আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
৫ ঘণ্টা আগে
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল প্রাক্-ইসলামিক আরবের গোত্রীয় সংঘাত ও নৈরাজ্যের বিপরীতে এক সুসংগঠিত, একত্ববাদী এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন। তাঁর নেতৃত্বের কৌশল ছিল গভীর দূরদর্শিতা, নৈতিক কর্তৃত্ব...
৮ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজিটাল জাকাত ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এসব ক্যালকুলেটরে সম্পদের সার্বিক তথ্য দিলে সম্ভাব্য জাকাতের পরিমাণ নির্ণয় করে দেওয়া হয়। ইসলামে এ ধরনের ডিজিটাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সঠিক বিধান কী? এ বিষয়ে জানতে চাই।
৯ ঘণ্টা আগে