Ajker Patrika

রবিউল আউয়াল মাসের তৃতীয় জুমা: নবীপ্রেম ও ইবাদতের অনন্য সুযোগ

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের ইতিহাসে রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাসেই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) দুনিয়ায় আগমন করেন। তাঁর আগমন শুধু আরব উপদ্বীপ নয়, গোটা মানবজাতির জন্য ছিল রহমত ও নুরের সঞ্চার। তাই রবিউল আউয়ালকে বলা হয় রহমতের মাস, নুরের মাস।

অন্যদিকে শুক্রবার বা জুমা হলো সপ্তাহের সেরা দিন। আল্লাহর কাছে এর মর্যাদা এত বেশি যে, এ দিনেই বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে রবিউল আউয়ালের প্রতিটি জুমা মুসলিম হৃদয়ে বিশেষ আবেগ সৃষ্টি করে। বিশেষত তৃতীয় জুমা মুসলমানদের জন্য নবীপ্রেম, সুন্নাহ চর্চা ও ইবাদতে মনোযোগী হওয়ার অনন্য সুযোগ।

রবিউল আউয়াল ও নবীপ্রেম

মুসলমানদের হৃদয়ে নবীপ্রেমই ইমানের প্রাণ। নবী (সা.)-কে ভালোবাসা ছাড়া ইমান পূর্ণ হয় না। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ, যে আল্লাহ ও পরকাল কামনা করে এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব: ২১)।

রবিউল আউয়ালের প্রতিটি দিন মুসলমানদের মনে নবীপ্রেম জাগিয়ে তোলে। এ মাসে সিরাত মাহফিল হয়, নবীজির জীবন আলোচনা হয়, দরুদ পাঠ বাড়ে এবং মানুষ তাঁর আদর্শ অনুসরণের প্রতিজ্ঞা করে। বিশেষ করে, তৃতীয় জুমায় মসজিদগুলোতে ভিড় বেড়ে যায়, মুসল্লিরা নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে দোয়া-মোনাজাতে লিপ্ত হন।

জুমার মাহাত্ম্য

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সূর্যোদয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার। এ দিনেই আদম সৃষ্ট হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং এ দিনেই জান্নাত থেকে অবতরণ করেছেন। আর এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।’ (সহিহ্ মুসলিম)

শুক্রবার মুসলমানদের জন্য রহমতের দিন, দোয়া কবুলের দিন। এ দিনে এক বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যখন বান্দার দোয়া কবুল হয়। রবিউল আউয়ালে এ দিনের তাৎপর্য আরও বাড়ে, কারণ, নবীপ্রেম ও সুন্নাহ স্মরণের আবহ পুরো সমাজকে আচ্ছন্ন করে রাখে।

তৃতীয় জুমার তাৎপর্য

রবিউল আউয়ালের তৃতীয় জুমা মুসলমানদের কাছে এক অনন্য তাৎপর্য বহন করে—

  • ১. নবীস্মরণ—এ দিনে নবীর জীবন আলোচনা করা, তাঁর আদর্শ প্রচার করা এবং মানুষের হৃদয়ে নবীপ্রেম জাগ্রত করা।
  • ২. দরুদ শরিফ—নবীর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
  • ৩. সুন্নাহর অঙ্গীকার—নামাজ, আমল ও দৈনন্দিন জীবনে সুন্নাহর অনুসরণে দৃঢ় হওয়া।
  • ৪. ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব—জুমার খুতবা মুসলিম সমাজকে একত্র করে, রবিউল আউয়ালের আবহে তা আরও শক্তিশালী হয়।

আমাদের করণীয়

  • কোরআন তিলাওয়াত ও তাফসির পাঠ বাড়ানো।
  • নবীজির জীবনী গভীরভাবে অধ্যয়ন ও অন্যদের মাঝে প্রচার করা।
  • দরুদ ও ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে পড়া।
  • গরিব-অসহায়দের সহযোগিতা করা, যা নবীর শিক্ষা।
  • পরিবার ও সমাজে ইবাদত, আখলাক ও দাওয়াহর পরিবেশ গড়ে তোলা।

রবিউল আউয়াল মাসের প্রতিটি জুমাই বরকতময়, তবে তৃতীয় জুমা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি নবীপ্রেম, সুন্নাহ অনুসরণ ও ইবাদতের প্রতিজ্ঞা নবায়নের সময়। মুসলমানেরা যদি এ দিনের মর্যাদা উপলব্ধি করে আন্তরিকভাবে আমল করেন, তবে সমাজে শান্তি, ন্যায় ও আল্লাহর রহমত প্রতিষ্ঠিত হবে। রবিউল আউয়ালের এই আলো আমাদের অন্তরে নবীপ্রেম জাগিয়ে তুলুক এবং আমাদের জীবনকে সুন্নাহর আলোয় উদ্ভাসিত করুক—এটাই প্রার্থনা।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৌকীর-বিপাশা বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন যে কারণে

ফিলিস্তিনকে আজই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ, বিরোধিতা ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের

মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাসায় নিয়ে গায়েব করেন উপদেষ্টা— আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ

চীনা যুদ্ধবিমান থেকে এলএস-৬ বোমা ফেলে কেন নিজ দেশে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালাল পাকিস্তান

ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনকে মারতে উদ্যত হওয়া সেই চিকিৎসক বরখাস্ত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত