Ajker Patrika

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নবী-রাসুলগণের দোয়া

ইসলাম ডেস্ক 
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম আমাদের জন্য মহান আল্লাহর এক অপরিমেয় নিয়ামত, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। মানবজাতির হেদায়েতের জন্য তিনি অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন এবং আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কোরআন।

আমরা বারবার ভুল করি, ভুল পথে চলে যাই। কিন্তু মহান রব আমাদের জন্য সর্বদা তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন। জীবনের প্রতি সেকেন্ডে আমরা তাঁর অপার রহমতের পরশ পাই। যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ যখন জীবনের কঠিনতম সংকটে পড়েছেন, তখন তাঁরা সরাসরি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁদের সেই অব্যর্থ দোয়া কবুল করেছেন। পবিত্র কোরআনে সেই সব মূল্যবান দোয়া লিপিবদ্ধ আছে, যা মুমিনদের জন্য মহান রবের পক্ষ থেকে এক বিশেষ উপহার। এই দোয়াগুলো আমাদের জীবনের প্রতিটি সংকটে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে।

নিচে কোরআনে বর্ণিত কয়েকজন নবী-রাসুলের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া উল্লেখ করা হলো:

হজরত আদম (আ.)-এর ক্ষমা প্রার্থনা

মানবজাতির আদি পিতা আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘনের পর অনুতপ্ত হয়ে দোয়া করেছিলেন, ‘রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের দয়া না করেন—তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা আরাফ: ২৩)

হজরত নুহ (আ.)-এর দোয়া

বিপর্যয় ও প্লাবনের সময় তিনি আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছিলেন, ‘রাব্বিগ ফিরলি ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও ওয়ালিল মুমিনা-তি ওয়ালা তাজিদিজ জোয়া-লিমিনা ইল্লা তাবারা।’ অর্থ: ‘হে আমার রব, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ইমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন। ধ্বংস ছাড়া আপনি জালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ: ২৮)

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া

মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) মক্কাকে নিরাপদ নগরী বানানোর জন্য এবং তাঁর বংশধরদের প্রতিমাপূজা থেকে দূরে রাখার জন্য দোয়া করেন, ‘রাব্বিজ আল হাজাল বালাদা আমিনাও ওয়াজনুবনি ওয়া বানিইয়া আন নাবুদাল আসনাম...’ অর্থ: ‘হে আমার রব, এই নগরীকে নিরাপদ করো এবং আমাকে ও আমার বংশধরকে প্রতিমাপূজা থেকে দূরে রাখো...’ (সুরা ইবরাহিম: ৩৫-৩৮)

হজরত সোলাইমান (আ.)-এর দোয়া

আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি এমন এক সার্বভৌমত্বের প্রার্থনা করেন, যা আর কারও জন্য থাকবে না। তাঁর দোয়া ছিল, ‘রাব্বিগ ফিরলি ওয়া হাবলি মুলকাল লা-ইয়ামবাগি লিআহাদিম মিম বাদি ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।’ অর্থ: ‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য, যার অধিকারী আমি ছাড়া আর কেউ যেন না হয়। আপনি তো পরম দাতা।’ (সুরা সাদ: ৩৫)

হজরত আইয়ুব (আ.)-এর ফরিয়াদ

অসুস্থতাকালে তিনি আল্লাহর কাছে আরজি পেশ করেন, ‘রাব্বি আন্নি মাস্ সানিয়াদ্ দুররু ওয়া আন্তা আরহামুর-রাহিমিন।’ অর্থ: ‘আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৩)

হজরত ইউনুস (আ.)-এর দোয়া

মাছের পেটে থাকার সময় তিনি দোয়া করেছিলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’ অর্থ: ‘আপনি (আল্লাহ) ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র ও মহান, আমি তো সীমালঙ্ঘনকারী।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৭)

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থনা

আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর মাধ্যমে কোরআনে মুমিনদের জন্য ইহকাল ও পরকালের শ্রেষ্ঠ কল্যাণের দোয়া শেখানো হয়েছে—‘রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান নার।

অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমাদের পৃথিবীতে কল্যাণ দান করুন এবং পরকালেও কল্যাণ দান করুন। আর আমাদের রক্ষা করুন জাহান্নামের শাস্তি থেকে।’ (সুরা বাকারা: ২০১)

লেখক: আলমগীর কবির, ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত