ইজাজুল হক
অষ্টম শতক থেকে ইসলামি দুনিয়া সৌন্দর্য ও নান্দনিকতার উপাদানগুলোর বিকাশ ঘটিয়ে কাচশিল্পে বিরাট রূপান্তর ঘটায়। মসজিদ ও প্রাসাদগুলো আলোকিত করার জন্য রঙিন কাচের প্রদীপ তৈরির সূচনা হয় এ সময়। পরে ইউরোপ থেকে চীন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে তা পাঠানো হয়। এখানে মুসলিম সংস্কৃতিতে কাচের প্রদীপ ব্যবহারের একটি ইতিহাস পরম্পরা তুলে ধরা হলো।
খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে সিডন, আলেপ্পো, হামা ও পালমিরা অঞ্চলের সিরিয়ান কারিগরদের হাত ধরে কাচশিল্পের উদ্ভাবন। সেখানে নিত্যব্যবহার্য ও অভিজাত—সব ধরনের কাচের পাত্র বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হতো এবং রোমান সাম্রাজ্যের সর্বত্র তা রপ্তানি হতো।
ইবনে হাইসামের অপটিক্যাল লেন্স এবং ইবনে হাইয়ানসের রসায়ন ফ্লাস্ক থেকে আমির কাউসুনের মসজিদ প্রদীপ পর্যন্ত তথা ৮ শতক থেকে ১৪ শতক পর্যন্ত কাচশিল্পের বিকাশে মুসলিম সভ্যতা অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
মামলুক আমলে মিসরে মসজিদের অভ্যন্তর আলোকিত করতে কাচের তৈরি তেলের প্রদীপ ব্যবহৃত হতো। এসব কাচের প্রদীপ ছাদ থেকে ধাতব চেইনের মাধ্যমে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো।
মধ্যযুগে আরবি হরফের নান্দনিক ক্যালিগ্রাফিতে উৎকীর্ণ এসব কাচের প্রদীপ মসজিদগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হতো। বিশেষ করে ১৩ ও ১৪ শতকে মিসরের কায়রো, সিরিয়ার আলেপ্পো ও দামেস্ক ছিল এসব প্রদীপ উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
মসজিদ ল্যাম্পগুলো তৈরি হতো একালের কাচ তৈরির মতো করেই। প্রথমে প্লেইন বডিতে সজ্জা তৈরি করে দ্বিতীয়বার আগুনে পোড়ানো হতো। এসব রঙিন সজ্জায় কোরআনের আয়াত লেখা থাকত। বিশেষ করে সুরা নুরের নুর-সংক্রান্ত আয়াত, যেটিকে ভার্স অব লাইট বলা হয়।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আল্লাহ আসমান ও জমিনের আলো। তাঁর আলোর দৃষ্টান্ত হলো যেন একটি তাক, যার ভেতরে আছে একটি ল্যাম্প, ল্যাম্পটি কাচের ভেতরে, কাচটি যেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, যা প্রজ্বালিত করা হয় বরকতময় জয়তুন তেল দিয়ে, যা পূর্বদেশীয়ও নয় আর পশ্চিমদেশীয়ও নয়। আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও তার তেল যেন উজ্জ্বলের বেশ নিকটবর্তী, আলোর ওপরে আলো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন স্বীয় আলোর দিকে পথ দেখান। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করেন, আল্লাহ সব বিষয়ে অধিক জ্ঞাত।’ (সুরা নুর: ৩৫)
আজকাল এসব প্রদীপ প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রাহকদের তুমুল আগ্রহের জায়গা। পশ্চিমা সংগ্রাহকেরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পুরো বিশ্ব চষে এসব কাচের প্রদীপ কিনে নিচ্ছেন।
১৯ শতকের ইউরোপে ইসলামি শিল্পকলার প্রতি আগ্রহের এক বিশাল ঢেউ উঠেছিল, যা ফলিত চারুকলা ও অভ্যন্তরীণ সজ্জাকে বেশ প্রভাবিত করে।
তুরস্কের কাচ তৈরির ইতিহাস সম্পর্কে ইতিহাসবিদগণ বলেন, এটি ১৬ শতকে শুরু হয়। এ সময়েই রঙিন কাচের ছায়াযুক্ত তেলের ল্যাম্পগুলো তৈরির সূচনা হয়। আজকাল এগুলোকেই আমরা তুর্কি ল্যাম্প হিসেবে চিনি।
উপাদানের গুণগত মান ও কারিগরদের শিল্পনৈপুণ্যের কারণে তুর্কি ল্যাম্প খ্যাতি অর্জন করে। এসব ল্যাম্প উৎপাদনে যান্ত্রিকীকরণ নেই বললেই চলে, প্রতিটি প্রদীপই আলাদা শ্রমে তৈরি।
তুর্কি কাচের প্রদীপের এই ধরন পরিমার্জিত হয়ে নান্দনিকতার চূড়ান্তে পৌঁছাতে কয়েক শতক সময় নেয়। ১৯ শতকের শেষের দিকে এটি মসৃণতা ও নিপুণতার অসাধারণ স্তরে উন্নীত হয়।
এই সময়েই লুইস কমফোর্ট টিফানি (১৮৪৮-১৯৩৩) তাঁর এক ইউরোপ ভ্রমণে প্রথম কারুকাজ করা তুর্কি ল্যাম্পের সন্ধান পান। তিনি কনস্টান্টিনোপলে এই জিনিস দেখে হতবাক হন। এরপর আমেরিকায় ফিরে তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন করে উদ্ভাবনে মনোযোগী হন।
টিফানি এই কাচের প্রদীপের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনেন এবং কাচের ধরন পাল্টে দেন। ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে বিশ্ব কলম্বিয়ান প্রদর্শনীতে একে নতুন পণ্য হিসেবে চালু করেন। তখন থেকে এসব কাচের ল্যাম্প টিফানি ল্যাম্প হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
সূত্র: বায়তুল ফন ডটকম
অষ্টম শতক থেকে ইসলামি দুনিয়া সৌন্দর্য ও নান্দনিকতার উপাদানগুলোর বিকাশ ঘটিয়ে কাচশিল্পে বিরাট রূপান্তর ঘটায়। মসজিদ ও প্রাসাদগুলো আলোকিত করার জন্য রঙিন কাচের প্রদীপ তৈরির সূচনা হয় এ সময়। পরে ইউরোপ থেকে চীন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে তা পাঠানো হয়। এখানে মুসলিম সংস্কৃতিতে কাচের প্রদীপ ব্যবহারের একটি ইতিহাস পরম্পরা তুলে ধরা হলো।
খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে সিডন, আলেপ্পো, হামা ও পালমিরা অঞ্চলের সিরিয়ান কারিগরদের হাত ধরে কাচশিল্পের উদ্ভাবন। সেখানে নিত্যব্যবহার্য ও অভিজাত—সব ধরনের কাচের পাত্র বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হতো এবং রোমান সাম্রাজ্যের সর্বত্র তা রপ্তানি হতো।
ইবনে হাইসামের অপটিক্যাল লেন্স এবং ইবনে হাইয়ানসের রসায়ন ফ্লাস্ক থেকে আমির কাউসুনের মসজিদ প্রদীপ পর্যন্ত তথা ৮ শতক থেকে ১৪ শতক পর্যন্ত কাচশিল্পের বিকাশে মুসলিম সভ্যতা অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
মামলুক আমলে মিসরে মসজিদের অভ্যন্তর আলোকিত করতে কাচের তৈরি তেলের প্রদীপ ব্যবহৃত হতো। এসব কাচের প্রদীপ ছাদ থেকে ধাতব চেইনের মাধ্যমে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো।
মধ্যযুগে আরবি হরফের নান্দনিক ক্যালিগ্রাফিতে উৎকীর্ণ এসব কাচের প্রদীপ মসজিদগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হতো। বিশেষ করে ১৩ ও ১৪ শতকে মিসরের কায়রো, সিরিয়ার আলেপ্পো ও দামেস্ক ছিল এসব প্রদীপ উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
মসজিদ ল্যাম্পগুলো তৈরি হতো একালের কাচ তৈরির মতো করেই। প্রথমে প্লেইন বডিতে সজ্জা তৈরি করে দ্বিতীয়বার আগুনে পোড়ানো হতো। এসব রঙিন সজ্জায় কোরআনের আয়াত লেখা থাকত। বিশেষ করে সুরা নুরের নুর-সংক্রান্ত আয়াত, যেটিকে ভার্স অব লাইট বলা হয়।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আল্লাহ আসমান ও জমিনের আলো। তাঁর আলোর দৃষ্টান্ত হলো যেন একটি তাক, যার ভেতরে আছে একটি ল্যাম্প, ল্যাম্পটি কাচের ভেতরে, কাচটি যেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, যা প্রজ্বালিত করা হয় বরকতময় জয়তুন তেল দিয়ে, যা পূর্বদেশীয়ও নয় আর পশ্চিমদেশীয়ও নয়। আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও তার তেল যেন উজ্জ্বলের বেশ নিকটবর্তী, আলোর ওপরে আলো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন স্বীয় আলোর দিকে পথ দেখান। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করেন, আল্লাহ সব বিষয়ে অধিক জ্ঞাত।’ (সুরা নুর: ৩৫)
আজকাল এসব প্রদীপ প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রাহকদের তুমুল আগ্রহের জায়গা। পশ্চিমা সংগ্রাহকেরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পুরো বিশ্ব চষে এসব কাচের প্রদীপ কিনে নিচ্ছেন।
১৯ শতকের ইউরোপে ইসলামি শিল্পকলার প্রতি আগ্রহের এক বিশাল ঢেউ উঠেছিল, যা ফলিত চারুকলা ও অভ্যন্তরীণ সজ্জাকে বেশ প্রভাবিত করে।
তুরস্কের কাচ তৈরির ইতিহাস সম্পর্কে ইতিহাসবিদগণ বলেন, এটি ১৬ শতকে শুরু হয়। এ সময়েই রঙিন কাচের ছায়াযুক্ত তেলের ল্যাম্পগুলো তৈরির সূচনা হয়। আজকাল এগুলোকেই আমরা তুর্কি ল্যাম্প হিসেবে চিনি।
উপাদানের গুণগত মান ও কারিগরদের শিল্পনৈপুণ্যের কারণে তুর্কি ল্যাম্প খ্যাতি অর্জন করে। এসব ল্যাম্প উৎপাদনে যান্ত্রিকীকরণ নেই বললেই চলে, প্রতিটি প্রদীপই আলাদা শ্রমে তৈরি।
তুর্কি কাচের প্রদীপের এই ধরন পরিমার্জিত হয়ে নান্দনিকতার চূড়ান্তে পৌঁছাতে কয়েক শতক সময় নেয়। ১৯ শতকের শেষের দিকে এটি মসৃণতা ও নিপুণতার অসাধারণ স্তরে উন্নীত হয়।
এই সময়েই লুইস কমফোর্ট টিফানি (১৮৪৮-১৯৩৩) তাঁর এক ইউরোপ ভ্রমণে প্রথম কারুকাজ করা তুর্কি ল্যাম্পের সন্ধান পান। তিনি কনস্টান্টিনোপলে এই জিনিস দেখে হতবাক হন। এরপর আমেরিকায় ফিরে তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন করে উদ্ভাবনে মনোযোগী হন।
টিফানি এই কাচের প্রদীপের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনেন এবং কাচের ধরন পাল্টে দেন। ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে বিশ্ব কলম্বিয়ান প্রদর্শনীতে একে নতুন পণ্য হিসেবে চালু করেন। তখন থেকে এসব কাচের ল্যাম্প টিফানি ল্যাম্প হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
সূত্র: বায়তুল ফন ডটকম
পবিত্র কোরআনের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ আয়াত হলো ‘আয়াতুল কুরসি।’ মহানবী (সা.) এই আয়াতটিকে কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। একবার তিনি সাহাবি উবাই ইবনে কাআব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মতে কোরআনের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মহান?’ জবাবে উবাই (রা.) বলেন, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া...’
৩৩ মিনিট আগেক্ষমতা বা রাজত্ব পেলে মানুষ আল্লাহ ভোলা হয়ে যায়। হয়ে ওঠে বেপরোয়া ও অহংকারী। দুর্বলের ওপর অবাধে চালায় অত্যাচার ও নিপীড়ন। আসলে ক্ষমতাসীনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এটা একটা বড় পরীক্ষা। ক্ষমতা পেয়ে বান্দা কেমন আচরণ করে, সেটাই দেখতে চান আল্লাহ তাআলা। তবে সবাই তো এক না।
১৪ ঘণ্টা আগেআল্লাহ তাআলার অফুরন্ত নেয়ামতের অবারিত ঠিকানা জান্নাত। জান্নাতকে পার্থিব নেয়ামত দ্বারা আল্লাহ তাআলা সাজিয়েছেন—যা কোনো চোখ চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো ব্যক্তির অন্তর তা কল্পনাও করতে পারেনি।
১৬ ঘণ্টা আগেমহান আল্লাহ আমাদের একমাত্র রিজিকদাতা। সমগ্র সৃষ্টিকুলের রিজিকের ব্যবস্থা তিনিই করে থাকেন। তাই রিজিকের সন্ধানে দিশেহারা নয়, বরং আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকা জরুরি। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ৪টি আমল করলে রিজিক বৃদ্ধি হবে বলে আশা করা যায়।
১৭ ঘণ্টা আগে