Ajker Patrika

হোয়াইট হাউসে এবার ইফতার আয়োজন বাতিল হলো যে কারণে 

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ৩৩
হোয়াইট হাউসে এবার ইফতার আয়োজন বাতিল হলো যে কারণে 

দুই দশক ধরে প্রতি রমজানে হোয়াইট হাউসে বিশিষ্ট মুসলিম আমেরিকানদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা। এবারও ইফতারের প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু গতকাল মঙ্গলবারই সেই আয়োজন বাতিল করা হয়।

হোয়াইট হাউস বলেছে, ইফতারের পরিবর্তে তারা কেবল মুসলিম সরকারি কর্মচারীদের জন্য খাবারের আয়োজন করবে এবং মুসলিম আমেরিকান সম্প্রদায়ের কয়েকজন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবে। 

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসলিম আমেরিকানরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইফতারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করায় বাতিল হয়ে গেছে হোয়াইট হাউসের এবারের ইফতারের আয়োজন। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থনের প্রতিবাদেই প্রতিক্রিয়া এসেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই ব্যক্তি জানান, মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে নেতাদের সতর্ক করার পরে গতকাল মঙ্গলবার এই আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেন নেতারা। 

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের (সিএআইআর) উপপরিচালক এডওয়ার্ড আহমেদ মিচেল বলেন, প্রাথমিকভাবে যেতে রাজি হওয়া আমন্ত্রিতরাসহ অনেকে ইফতারে অংশ নিতে অনাগ্রহ দেখানোর কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে। 

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমেরিকান মুসলিম সম্প্রদায় একেবারে শুরুতেই বলেছিল, যে হোয়াইট হাউস গাজায় ফিলিস্তিনিদের অনাহারে মারতে ও হত্যা করতে ইসরায়েলি সরকারকে সহায়তা করছে, সেই একই হোয়াইট হাউসের সঙ্গে খাবার খাওয়া আমাদের জন্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।’

গত সোমবার সংবাদমাধ্যম সিএনএন এবং এনপিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হোয়াইট হাউস একটি ছোট পরিসরে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে গতকাল মঙ্গলবারই হোয়াইট হাউস ঘোষণা করে, ইফতারের পরিবর্তে তারা কেবল মুসলিম সরকারি কর্মচারীদের জন্য খাবারের আয়োজন করবে এবং মুসলিম আমেরিকান সম্প্রদায়ের কয়েক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবে। 

ইফতার বাতিল হয়ে যাওয়ায় ইসরায়েলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের কারণে মার্কিন আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ থামাতে বাইডেনের ব্য়র্থতা ফুটে উঠেছে। সমালোচকেরা সতর্ক করে বলছেন, আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এই ক্ষোভ বাইডেনের জন্য ব্যালট বাক্সে বিপদ ডেকে আনতে পারে।

গত দুই দশক ধরেই মার্কিন প্রেসিডেন্টরা বিশিষ্ট মুসলিম আমেরিকানদের সঙ্গে ইফতারের আয়োজন করে আসছেন। হোয়াইট হাউসের অন্যান্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতিফলন করতে রমজানে ইফতার মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্‌যাপন হিসেবে কাজ করেছে। 

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারিন জ্যঁ পিয়েরে নিশ্চিত করে বলেন, বাইডেন ও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কামলা হ্যারিস মুসলিম নেতাদের সঙ্গে ইফতারের বদলে বৈঠক করবেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। তাদের কাছে ইফতারের চেয়ে এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আমরাও তা শুনেছি এবং ওই অনুসারে, আয়োজন করেছি।’ 

গত ছয় মাসে মুসলিম সম্প্রদায় তাদের অবস্থান জানান দিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে বেশ কয়েকজন মার্কিন মুসলিম অধিকারকর্মী বলেন, এই বৈঠক হবে আরেকটি নিরর্থক ‘ফটোসেশন’। আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইনের উন্নয়ন পরিচালক মোহাম্মদ হাব্বেহ বলেন, ‘আমরা যতই বৈঠক করি, যতই আলোচনা করি—হোয়াইট হাউস তাদের অবস্থান বদলায়নি।’ ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের সমর্থন যত দিন না বন্ধ হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত তিনি ‘মুসলিম আমেরিকান সম্প্রদায়ের প্রতি যত্নশীল’—এমন দাবি করতে পারবেন না। 

হাবেহ আল জাজিরাকে বলেন, ‘এসব ফটোসেশন ও আলোচনার মাধ্যমে তারা যেকোনোভাবে দেখাতে চায় যে মুসলিম সম্প্রদায় এখনো তাদের সমর্থন করে। এসব তাদের আসল রং বেরিয়ে আসার পর নিজেকে ভালো দেখানোর করুণ প্রচেষ্টা মাত্র।’

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকটি অব দ্য রেকর্ড বৈঠক করেছে বাইডেন প্রশাসন। 

এ ধরনের বৈঠক নিয়ে আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাইডেন প্রশাসন নির্দিষ্ট কিছু মানুষের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করছেন। প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক মুসলিম অধিকারকর্মী হোয়াইট হাউস বৈঠকের জন্য বিশ্বস্ত ফিলিস্তিনি আমেরিকান নেতাদের তালিকা দিলেও প্রশাসন তা প্রত্যাখ্যান করে। 

২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনকে সমর্থনকারী একটি মুসলিম রাজনৈতিক সংগঠন এমগেজ বলেন, তারা গতকাল মঙ্গলবারের বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন তবে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থনের কথা উল্লেখ করে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

এমগেজের সিইও ওয়াএল আলজায়াত এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রচণ্ড যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের এই মুহূর্তে আমরা হোয়াইট হাউসকে এই সমাবেশ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছি। হোয়াইট হাউসের নির্বাচিতদের পরিবর্তে মুসলিম সম্প্রদায়ের পছন্দের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি যথাযথ নীতি সভার আহ্বান জানিয়েছি আমরা।’ 

বাইডেনের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছে এমগেজ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—গাজায় তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সংস্থার অর্থায়ন পুনর্বহাল করা ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য বৈধ রাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা।

আলজায়াত বলেন, ‘এমগেজ উপরোক্ত দাবি পূরণে প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত। তবে, আমরা বিশ্বাস করি না যে ফিলিস্তিনিদের মুখপাত্র এবং নীতি বিশেষজ্ঞদের ছাড়া আজকের বৈঠক এমন কোনো সুযোগ তৈরি হবে।’ 

ফিলিস্তিনি আমেরিকান রাজনৈতিক কৌশলবিদ হেবাহ কাসেম একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কাসেম আল জাজিরাকে বলেন, ‘প্রশাসন কৌশলে বাছাই করছে বৈঠকে কে কে থাকবেন। তারা এমন মানুষদের বেছে নিচ্ছে, যাঁরা তাদের কর্মকাণ্ড এবং নীতির সমালোচনা করবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে তা কেন আমরা তাদের বেছে নিতে দিচ্ছি? এসব বৈঠকের ফলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। যা হয়েছে তা হলো—বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তাঁর সমর্থন দ্বিগুণ করেছেন এবং ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে গুলির শব্দকে শুরুতে আতশবাজি ভেবেছিলেন অনেকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৪৪
হামলার সময় বন্ডি সৈকত আতঙ্কিত মানুষদের ছোটাছুটি। ছবি: সংগৃহীত
হামলার সময় বন্ডি সৈকত আতঙ্কিত মানুষদের ছোটাছুটি। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত বন্ডাই বিচে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে হামলার সময়টিতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁরা বলছেন, শুরুতে অনেকেই বুঝতেই পারেননি কী ঘটছে। অনেকেই ভেবেছিলেন আতশবাজি ফাটছে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়, আর মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে শুরু করে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে হামলার মুহূর্তটির বর্ণনা দিয়েছেন মার্কোস কারভালহো নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী। গুলির শব্দকে আতশবাজি ভেবেছিলেন তিনিও। কারভালহো জানান, সারা দিন সমুদ্রসৈকতে থাকার পর তিনি নিজের জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলেন। এমন সময়ই গুলির শব্দ ভেসে আসে।

তিনি বলেন, ‘এক মিলিয়ন বছরেও ভাবিনি, বন্ডির মতো জায়গায় এমন গুলিবর্ষণ হতে পারে।’ তিনি জানান, মানুষ যখন বুঝতে শুরু করে কী হচ্ছে, তখনই সবাই দিগ্‌বিদিক ছুটে পালাতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে শুরু করেন তিনি নিজেও।

কারভালহো বলেন, ‘আমি প্রাণ বাঁচাতে নর্থ বন্ডি গ্রাসি নলের দিকে দৌড়াই। পরে আরও কয়েকজন সহ আমরা একটি একটি আইসক্রিম ভ্যানের পেছনে লুকাই।’

জরুরি সেবা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরই গুলির শব্দ থামে। এরপর হামলার জায়গাটির পাশ দিয়েই বাড়ি ফেরেন কারভালহো। এ সময় তিনি মাটিতে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, বন্ডাই বিচে উপস্থিত ছিলেন হাইম লেভি। তিনি ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-কে জানান, হানুকা উৎসবের সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি সৈকতে বসেছিলেন। তখনই হামলা শুরু হয়। লেভি বলেন, ‘হঠাৎ ধোঁয়া দেখলাম, আর গুলির শব্দ শুনলাম। প্রথমে বুঝতে পারিনি গুলি আকাশে ছোড়া হচ্ছে নাকি ভিড়ের দিকে। তবে তাৎক্ষণিকভাবেই বোঝা গেল ভয়াবহ কিছু ঘটছে।’

লেভি জানান, তিনি স্ত্রীকে দৌড়াতে বলেন। পরে মেয়েকে নিয়ে ছুটতে শুরু করেন স্ত্রী, আর ছেলেকে নিয়ে একটি গাড়ির পেছনে লুকিয়ে পড়েন তিনি। প্রায় ২০ মিনিট ধরে তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে একটি বেড়া টপকে ছেলেকে নিয়ে গাড়ির কাছে পৌঁছান। খুঁজে পান স্ত্রীকেও। তাঁরা দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়েন।

লেভি আরও জানান, হামলার মুহূর্তটিকে তাঁর দুই বছর বয়সী ছেলে কান্না করছিল। গুলিবর্ষণকারীরা শুনে ফেললে মেরে ফেলতে পারে—এমন ভয়ে তিনি ছেলের মুখ চেপে ধরেন।

অস্ট্রেলিয়ায় ক্রমবর্ধমান ইহুদিবিদ্বেষের সমালোচনা করে লেভি বলেন, ‘এমন কিছু যে ঘটবে, তা স্পষ্ট ছিল। কিন্তু কখনো ভাবিনি আমি নিজে পরিবার নিয়ে এর মাঝখানে পড়ব।’ গুলিবর্ষণের মধ্যে দিয়ে বেঁচে ফেরাকে তিনি ‘অলৌকিক’ বলেই মনে করছেন লেভি।

অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৪ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বন্ডি বিচ ও এর সংলগ্ন এলাকায় বড় আকারের অপারেশন শুরু করেছে।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ ‘এক্স’ হ্যান্ডলে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পুলিশি অভিযান এখনো চলছে এবং জনসাধারণকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে বসে বাংলাদেশে সন্ত্রাস— ঢাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান দিল্লির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১৪
ভারতে বসে বাংলাদেশে সন্ত্রাস— ঢাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান দিল্লির

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিতে উত্থাপিত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। একই সঙ্গে তলব করে যে বক্তব্য জানানো হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লি নিজের অবস্থান তুলে ধরেছে।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসনোটে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ভারত দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে সব সময়ই ভারতের অবস্থান। ভারত আরও দাবি করে, বাংলাদেশের ‘জনগণের স্বার্থবিরোধী’ কোনো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কখনোই ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি।

এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনসহ অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।’

এর আগে দুপুরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতে অবস্থানরত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সমর্থকদের আহ্বান জানাচ্ছেন—এ নিয়ে ভারতের কাছে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়। এসব কর্মকাণ্ড আসন্ন সংসদ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা বলেও অভিযোগ করে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিচারের মুখোমুখি করতে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দ্রুত প্রত্যর্পণের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ভারতে অবস্থানরত পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড, পরিকল্পনা ও সন্ত্রাসী তৎপরতায়’ সহায়তার অভিযোগও তুলে ধরা হয়।

এ ছাড়া সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির ওপর হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজনেরা যেন ভারতে পালাতে না পারেন, সে বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়। কেউ ভারতে প্রবেশ করলে তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বাংলাদেশে হস্তান্তরের আহ্বান জানানো হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানো ভারতের দায়িত্ব।

অন্য দিকে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বৈঠকে জানান, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় ভারত এবং এ লক্ষ্যে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে তাঁর দেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসী হামলায় শনাক্ত কে এই নাভিদ আকরাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৪৩
সিডনির বন্ডি বিচে দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন নাভিদ আকরাম। ছবি: এক্স
সিডনির বন্ডি বিচে দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন নাভিদ আকরাম। ছবি: এক্স

সিডনির বন্ডি বিচে দুই হামলাকারীর মধ্যে একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ নিশ্চিত করেছে, হামলাকারী যুবক ২৪ বছর বয়সী নাভিদ আকরাম। তিনি সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিমের বনিরিগ এলাকার বাসিন্দা।

অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার সময় আকরাম গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং বর্তমানে তিনি হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্য বন্দুকধারী ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

বর্তমানে বনিরিগের পাতিয়া এলাকায় আকরামের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এই সম্পত্তি তাঁর পরিবার এক বছর ধরে ব্যবহার করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বলছেন, নাভিদ আকরাম পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। তবে এ বিষয়ে এখনো তেমন শক্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এই ভয়াবহ হামলায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ১২ জন নিহত ও কমপক্ষে ১৭ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার সময় বন্ডি বিচে ইহুদিদের অন্যতম প্রধান উৎসব হানুক্কার প্রথম দিনের একটি অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘চানুকা বাই দ্য সি ২০২৫’। আজ রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে বিচসংলগ্ন শিশুদের খেলার মাঠে এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। চাবাদ অব বন্ডি নামের একটি ইহুদি কেন্দ্র এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আজ সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে ক্যাম্পবেল প্যারেডসংলগ্ন বন্ডি প্যাভিলিয়নের কাছে একটি গাড়ি থেকে দুই ব্যক্তি নেমে আসেন। এরপর তাঁরা গুলি চালাতে শুরু করেন।

এদিকে এ ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমামস কাউন্সিল ও কাউন্সিল অব ইমামস এনএসডব্লিউ এক যৌথ বিবৃতিতে বন্ডি বিচে গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের সমাজে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের পূর্ণ জবাবদিহি ও আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’

তারা নিহত ব্যক্তিদের পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ও এই ভয়াবহ হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়সহ সব অস্ট্রেলিয়ানের উচিত ঐক্য, সহানুভূতি ও সংহতি নিয়ে একসঙ্গে দাঁড়ানো, সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করা এবং সামাজিক সম্প্রীতি ও সব অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের যৌথ অঙ্গীকার নিশ্চিত করা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত