Ajker Patrika

ভারতীয়দের বিরুদ্ধে অনলাইন প্রচারণায় ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ ইনফ্লুয়েন্সাররা, কী বলছেন তাঁরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লরা ইনগ্রাহাম ও চার্লি কার্ক। ছবি: সংগৃহীত
লরা ইনগ্রাহাম ও চার্লি কার্ক। ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্য ও অভিবাসনকে কেন্দ্র করে মার্কিন রক্ষণশীল মহলের একাংশ ভারতের বিরুদ্ধে এক নতুন প্রচারণা অভিযান শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিতর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। সমাজের প্রভাবশালী রক্ষণশীল কণ্ঠস্বর, যাদের অনেকেরই সামাজিক মাধ্যমে বিশাল অনুসারী রয়েছে, তাঁরা ভারতীয় কর্মী, শিক্ষার্থী এবং ‘কল সেন্টার’গুলোকে লক্ষ্য করে একের পর এক পোস্ট করছেন। এই পোস্টগুলোতে ‘বর্ণবাদ’ ও ‘ভণ্ডামির’ উপাদানও রয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

ফক্স নিউজের উপস্থাপক লরা ইনগ্রাহাম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘ভুলে যাবেন না যে ভারতের সঙ্গে যেকোনো বাণিজ্য চুক্তির জন্য আমাদের তাদের আরও ভিসা দিতে হবে। আমি ভিসা এবং বাণিজ্য ঘাটতিতে তাদের অর্থ দিতে চাই না। বরং মোদি সি চিনপিংয়ের কাছ থেকে কী শর্ত পান, তা দেখতে চাই।’

তাঁর মন্তব্যগুলো দ্রুতই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক এবং টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ-এর প্রতিষ্ঠাতা চার্লি কার্ক শেয়ার করেন। প্রভাবশালীদের সমর্থন জানানোর কারণে এ ধরনের ক্যাম্পেইন দ্রুতই জোরালো হচ্ছে।

চার্লি কার্ক ভারতীয় পেশাদাররা আমেরিকানদের কর্মসংস্থান দখল করছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি লেখেন, ‘ভারতীয়দের আর বেশি ভিসা দেওয়ার প্রয়োজন নেই আমেরিকার। সম্ভবত ভারতের মতো অন্য কোনো বৈধ অভিবাসন এত বেশি আমেরিকান কর্মীর কর্মসংস্থান খায়নি। যথেষ্ট হয়েছে। আমরা পরিপূর্ণ। এবার নিজেদের মানুষদের অগ্রাধিকার দিই।’

এই ধরনের মন্তব্যগুলো ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের পর একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওই সময় প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়-আমেরিকান ভোটার রিপাবলিকান পার্টিকে সমর্থন করেছিলেন। তাঁরা ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি হতাশ ছিলেন।

এই আক্রমণের ঢেউয়ে যোগ দিয়ে কট্টর ডানপন্থী কমেন্টেটর জ্যাক পসোবিয়েক ভারতের আউটসোর্সিং শিল্পের ওপর সম্পূর্ণভাবে শুল্ক আরোপের দাবি জানান। তিনি দুটি পৃথক পোস্টে লেখেন, ‘কল সেন্টারগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করো। সবগুলোর ওপর। সব বিদেশি কল সেন্টার এবং বিদেশি দূরবর্তী কর্মীদের ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করো।’

এই অনলাইন বাগ্‌যুদ্ধ অনেক ভারতীয়-আমেরিকানদের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। তাঁরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডানপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকেছেন। একজন ভারতীয়-আমেরিকান ভোটার লিখেছেন, ‘আমি হতবাক, যদিও আমার অবাক হওয়া উচিত নয়, কীভাবে ডানপন্থীদের একটি নির্দিষ্ট অংশ প্রায় বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারছে! আমি এমন অনেক ভারতীয়-আমেরিকান ভোটারকে জানি যারা ২০২৪ সালে প্রথমবার জিওপিকে (রিপাবলিকান পার্টি) ভোট দিয়েছিলেন...কিন্তু মাত্র কয়েক মাস পরে এই ধরনের বাগাড়ম্বর দেখে তাঁরা অনুতপ্ত হচ্ছেন। ভিসা সীমিত করো, অভিবাসন সীমিত করো, যা ইচ্ছে করো, কিছু বিধিনিষেধ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু এটা কেবলই নির্লজ্জ বর্ণবাদ, তোমরা আমাকে যদি “লিবারেল” বলতে চাও, বলো।’

এই আক্রমণগুলো এমন এক সময়ে আসছে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছেন। যেকোনো মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ হার এটি। এর তুলনায়, চীনা আমদানির ওপর শুল্ক মাত্র ৩০ শতাংশ। প্রশাসন একই সঙ্গে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের হাজার হাজার ভিসা বাতিল করেছে, অথচ ৬ লাখ চীনা শিক্ষার্থীকে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাগত জানিয়েছে।

সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত গুগল, মাইক্রোসফট এবং আমাজনের মতো বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর প্রধান উদ্ভাবনী ক্ষেত্রগুলোর চালিকাশক্তি বলা হয় ভারতীয়দের। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসাধারীদের ৭৫ শতাংশ। দুই লাখেরও বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত