Ajker Patrika

বর্ষা তো প্রতিবছরই আসে, কিন্তু পাকিস্তানে এত মানুষ মরে কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে বন্যা হয়। এই বন্যায় দেশটিতে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। বিবিসি জানিয়েছে, সম্প্রতি খাইবার পাখতুনখাওয়ার সোয়াবি জেলায় হঠাৎ বন্যার স্রোতে কয়েকটি ঘর ভেসে গেলে মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা যায় দুই শিশু। তাদের নিথর দেহ গ্রামবাসীরা কাঁধে তুলে নিলেও চোখে ছিল না পানি। এর বদলে সরকারের প্রতি ক্ষোভ ছিল শুধু। তাঁদের ভাষ্য হলো—‘সরকার আমাদের আগেভাগে সতর্ক করল না কেন?’

আরিফ খান নামে সেখানকার এক ব্যক্তি জানান, উদ্ধারকাজ চালাতে খননযন্ত্র দরকার ছিল। সেনা ও জরুরি সেবা কর্মীরা উপস্থিত থাকলেও প্লাবিত রাস্তায় আটকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছাতে পারেনি। সারা দিন গ্রামবাসীরাই হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে।

এই দৃশ্য পাকিস্তানের নতুন নয়। এই বছরের জুন থেকে এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৮০০ জন। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ৭০০। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ওই বছর বন্যায় দেশটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১৪.৯ বিলিয়ন ডলারে।

প্রশ্ন জাগে, বারবার একই বিপর্যয় কেন এড়ানো যাচ্ছে না? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণে পাকিস্তান জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুতর শিকার। বর্ষণ, তীব্র তাপমাত্রা, খরা আর হিমবাহ গলে সৃষ্ট হ্রদের ঝুঁকি দেশটিকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। অথচ পাকিস্তানের বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে অবদান এক শতাংশেরও কম। তাই অনেকেই এটিকে ‘আন্তর্জাতিক পাপের মাশুল’ বলে মনে করেন।

অন্যদিকে, জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাজেট সংকোচন বড় বাধা। চলতি অর্থবছরে দেশটির প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়লেও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমিয়ে আনা হয়েছে মাত্র ৯৭ লাখ ডলারে। সাবেক জলবায়ু মন্ত্রী শেরি রহমান এর সমালোচনা করে বলেন, নিজেদের স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ না করলে আন্তর্জাতিক সহায়তাও মিলবে না।

পাকিস্তান আবহাওয়া দপ্তর নতুন রাডার, স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন ও সতর্কতা ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিলেও সমস্যা থেকে যাচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক দুর্বল হওয়ায় সতর্কবার্তা পৌঁছায় না। এ ছাড়া নদী-তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে আইন করেই সরানো যাচ্ছে না। ফলে প্রতি বছর ঘরবাড়ি ভেঙে প্রাণহানি ঘটছে।

রাজধানী করাচিও জলাবদ্ধতায় অচল হয়ে পড়ে প্রায়ই। সেখানে নর্দমা দখল আর দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিপর্যয়কে আরও বাড়িয়ে তুলছে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এই মৌসুমে প্রায় ৩০ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ঘর ধসে পড়ায়।

সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহায়তা চাইছে, বৃক্ষরোপণ ও অভিযোজন পরিকল্পনাও নিয়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থ সংকটে এগুলো কার্যকর হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংকট মোকাবিলায় টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ, নিরাপদ বাসস্থান ও জনসচেতনতা জরুরি।

কিন্তু বাস্তবতা হলো—বছরের পর বছর ধরে অর্থের অভাব, আইন না মানা আর দুর্বল শাসন ব্যবস্থার কারণে পাকিস্তান বারবার একই দুর্যোগে পড়ে। এ বছরের মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। বৃষ্টির নতুন সতর্কতা জারি হয়েছে, আর গ্রামাঞ্চলে চলছে শোকের প্রার্থনা। অসহায় মানুষেরা জানেন না, কবে শেষ হবে তাঁদের এই দুর্ভোগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত