Ajker Patrika

৫০০ কেজি ওজনের চীনের তৈরি এই এলএস-৬ বোমা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনের তৈরি ৫০০ কেজি ওজনের এলএস-৬ গ্লাইড বোমা। ছবি: সংগৃহীত
চীনের তৈরি ৫০০ কেজি ওজনের এলএস-৬ গ্লাইড বোমা। ছবি: সংগৃহীত

গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনী (পিএএফ) খাইবার পাখতুনখাওয়ার একটি গ্রামে এলএস-৬ বোমা হামলা চালায়। এতে নারী-শিশুসহ অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) আস্তানা লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু এ হামলায় নিহত ব্যক্তিদের সবাই বেসামরিক নাগরিক। এর ফলে চীনা যুদ্ধাস্ত্রটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।

এ হামলায় চীনের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি পাকিস্তানের জেএফ-১৭ জেট ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রামটির ওপর আটটি এলএস-৬ বোমা ফেলা হয়, যা গ্রামের একটি বড় অংশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এলএস-৬ বোমাগুলো কী ও কীভাবে কাজ করে, তা এখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

এলএস-৬ কী

এলএস-৬ (চীনা ভাষায় LeiShi বা থান্ডার স্টোন) হলো চীনা তৈরি একটি ‘গ্লাইড বোমা’। এই গ্লাইড বোমা হলো একধরনের চালিত বা নিয়ন্ত্রিত (গাইডেড) বোমা, যা বিমান থেকে নিক্ষেপ করার পর ডানা খুলে বাতাসের ওপর ভর করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে গ্লাইড বা ভেসে যেতে পারে। যেমনটি আমরা প্লেন বা গ্লাইডারের ক্ষেত্রে দেখে থাকি। এই বোমাগুলোতে সাধারণত একটি ‘প্ল্যানিং’ বা ‘কারেকশন’ মডিউল যুক্ত থাকে, যার মাধ্যমে এটি জিপিএস বা ইনার্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করে নির্ভুলভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

চীনের তৈরি এই ‘এলএস’কে বলা হয়, ‘থান্ডার স্টোন প্রিসিশন গাইডেড বোমা’ (Thunder Stone Precision Guided Bombs)। এই বোমাগুলো তৈরি করেছে চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশনের (সিএএসসি) সহায়ক প্রতিষ্ঠান লুওয়াং ইলেকট্রো-অপটিকস টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। এগুলোকে ‘থান্ডার স্টোন গ্লাইডিং গাইডেড বোমা’ বা এলএস জিজিবি (LS GGB) নামেও ডাকা হয়।

এই বোমাগুলো প্রথাগত ‘ডাম্ব’ (unguided) বোমাগুলোকে নির্ভুল অস্ত্রে রূপান্তরিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এতে একটি দিকনির্দেশক বা ‘গাইডিং কিট’ ও ডানা যুক্ত থাকে, যা বোমাগুলোকে মাটিতে থাকা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সাহায্য করে।

কীভাবে কাজ করে

এলএস-৬এ একটি ‘গাইডেন্স/উইং কিট’ থাকে, যা প্রচলিত ‘ডাম্ব’ (free-fall) বোমাগুলোকে নির্ভুল অস্ত্রে রূপান্তরিত করে। এই কিট বোমাগুলোকে ভূমিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সাহায্য করে। আকার অনুযায়ী এই বোমা চার ধরনের হয়ে থাকে—৫০০ কেজি, ৫৫০ কেজি, ১০০ কেজি ও ৫০ কেজি।

বোমাটিতে এক জোড়া ভাঁজ করা যায় এমন ডানা (foldable wings) এবং লেজের অংশে চারটি স্থির ডানা (cruciform tail) থাকে। এগুলো কম্পোজিট উপাদান ও অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় দিয়ে তৈরি, যা বোমার পাল্লা বাড়ায় এবং উড়ন্ত অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে। এর ফলে যুদ্ধবিমানগুলো লক্ষ্যবস্তু থেকে আরও দূরে ও উঁচু থেকে হামলা চালাতে পারে। ছোট আকারের বোমাগুলো চেংদু জে-২০-এর মতো যুদ্ধবিমানের অভ্যন্তরীণ অস্ত্রাগারে বহন করা যায়।

পাল্লা ও নির্ভুলতা

এর পাল্লা নির্ভর করে যুদ্ধবিমানের উচ্চতা ও গতির ওপর। এটি ৮ হাজার মিটার উচ্চতা থেকে নিক্ষেপ করলে ৪০ কিলোমিটার এবং ১০ হাজার মিটার উচ্চতা থেকে নিক্ষেপ করলে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। লক্ষ্যবস্তু থেকে ১৫ মিটার দূরে থাকাকালে এই বোমা শব্দের (ঘণ্টায় ১২৩৪ কিমি) সমান গতিতে আঘাত হানে।

এর নির্ভুলতা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য রয়েছে। কিছু রিপোর্টে এর নির্ভুলতাকে ১৫ মিটারের নিচে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু উন্নত সংস্করণে লেজার বা ইলেকট্রো-অপটিক্যাল গাইডেন্স সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, যা আরও বেশি নির্ভুলতা নিশ্চিত করে। এই অস্ত্রের সমস্ত মডেল চীনা সামরিক মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে, যার মানে হলো—এগুলো সহজেই যেকোনো পশ্চিমা প্ল্যাটফর্মেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

এলএস-৬ মূলত প্রচলিত বোমাগুলোকে কম খরচে নির্ভুল গাইডেড যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত করার একটি উপায়। এটি বিমানকে শত্রু দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার হুমকি থেকে রক্ষা করে এবং বিমানবাহিনীকে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর জন্য নমনীয় ওয়ারহেড ব্যবহারের সুযোগ দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৌকীর-বিপাশা বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন যে কারণে

ফিলিস্তিনকে আজই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ, বিরোধিতা ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের

ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনকে মারতে উদ্যত হওয়া সেই চিকিৎসক বরখাস্ত

সখীপুরে বনপ্রহরীদের ওপর হামলা: ইউপি সদস্য, বিএনপি নেতাসহ ৭ জনের নামে মামলা

চীনা যুদ্ধবিমান থেকে এলএস-৬ বোমা ফেলে কেন নিজ দেশে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালাল পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত