Ajker Patrika

৩৮ দফা দাবি: পাকিস্তানের কাশ্মীরে তীব্র বিক্ষোভ

  • ‘আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে’ ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়েছে
  • আবার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে সরকার ও বিক্ষোভকারীদের
  • লকডাউনের কারণে কয়েকটি জেলার কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কাঠামোগত সংস্কার এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের দাবিতে গত বুধবার পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির কর্মীরা। ছবি: এএফপি
কাঠামোগত সংস্কার এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের দাবিতে গত বুধবার পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির কর্মীরা। ছবি: এএফপি

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৩৮টি দাবিতে গত বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো ধর্মঘট পালন করে বিক্ষোভকারীরা। চলমান এই সহিংসতায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিহতের সংখ্যা ১৫ জন ছাড়িয়েছে। যাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সুবিধা কমানোই হলো বিক্ষোভকারীদের মূল দাবি। কর্তৃপক্ষ ও বিক্ষোভকারীদের গতকাল শুক্রবার আবার আলোচনায় বসার কথা ছিল।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে বিক্ষোভ শুরু হয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর। ওইদিন থেকে লকডাউন কর্মসূচির ডাক দেয় জম্মু কাশ্মীর যৌথ আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (জেএএসি)। এই সংগঠন মূলত ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিধিত্ব করে। লকডাউনের কারণে কয়েকটি জেলার কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ‘আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে’ (স্থানীয়ভাবে পরিচিত) ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়েছে। জেএএসির নেতারা জানিয়েছেন, ৩৮ দাবিতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের প্রাদেশিক সরকার আধা স্বায়ত্তশাসিত। সেখানে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী ও আইনসভা আছে। ২০১৭ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, অঞ্চলটির জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। বর্তমান অস্থিরতার প্রথম শুরুটা হয়েছিল ২০২৩ সালের মে মাসে। তখন অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের প্রতিবাদে বাসিন্দারা রাস্তায় নামে। একই সময়ে ময়দা চোরাচালান ও ভর্তুকি দেওয়া গমের সরবরাহে তীব্র ঘাটতি তৈরির অভিযোগ ওঠে। ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা ওই বছরের আগস্ট মাসে একত্র হয়ে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সেপ্টেম্বরে তারা মুজাফফরাবাদে একত্র হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জেএএসি প্রতিষ্ঠা করে।

আন্দোলন প্রথম বড় সংঘর্ষে রূপ নেয় ২০২৪ সালের মে মাসে। বিক্ষোভকারীরা মুজাফফরাবাদের দিকে দীর্ঘ মিছিল শুরু করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হয়। এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ময়দার দাম কমানো ও বিদ্যুতের শুল্ক হ্রাসে সম্মত হলে বিক্ষোভ স্থগিত করা হয়। কিন্তু অঞ্চলটিতে শান্তি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। চলতি বছরের আগস্টে জেএএসি ঘোষণা দেয়, তারা আরেক দফায় লকডাউন শুরু করবে। অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়াও তারা এবার আরও কিছু দাবি উত্থাপন করে।

সরকারের কাছে এবার ৩৮টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে বিনা মূল্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প চালু এবং প্রাদেশিক আইনসভার কাঠামো পরিবর্তন করা। তবে তালিকার শীর্ষে থাকা দাবিটি হলো, সরকারি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সুবিধা বিলোপ করা। বর্তমানে জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত সুবিধার মধ্যে আছে দুটি সরকারি গাড়ি, ব্যক্তিগত সহকারীসহ দেহরক্ষী এবং সরকারি কাজে ব্যবহৃত যানবাহনে সীমাহীন জ্বালানি। ২০২৪ সালের মে মাসের বিক্ষোভের সময় সরকার এসব সুবিধা পর্যালোচনার জন্য কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

এ ছাড়া, আঞ্চলিক আইনসভায় শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ১২টি আসনের বিলোপ চাওয়া হয়েছে। জেএএসি বলছে, ১৯৪৭ সালের বিভাজনের পর শরণার্থীরা ভারতশাসিত কাশ্মীর থেকে এসেছে। কিন্তু তারা এখন একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্লক গঠন করে উন্নয়ন তহবিলের ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। দাবিগুলোর মধ্যে আরও আছে, ২০২৩ ও ২৪ সালের বিক্ষোভের সময় হওয়া মামলা প্রত্যাহার, করমুক্তি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এ ছাড়া, পাহাড়ি অঞ্চলকে পাকিস্তানের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করতে টানেল ও সেতু নির্মাণ করা।

বিক্ষোভ দমনে স্থানীয় প্রশাসন যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা আরোপ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তবে আধা সামরিক বাহিনী এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে মোতায়েনের বিষয়টি বিতর্ক তৈরি করেছে। জেএএসি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের বিরোধিতা করছে।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার সংঘর্ষে ৯ জন নিহতের কথা বললেও স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এ সংখ্যা ১৫ জন। আজাদ কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী আব্দুল মাজিদ খান বলেন, সংকট সমাধানে এরই মধ্যে একটি প্রতিনিধিদল মুজাফফরাবাদে এসেছে। তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করবে। গত বছর বিক্ষোভের সময় তুলে ধরা দাবি সরকার মেনে নিয়েছে। কিন্তু এরপরও নতুন করে বিক্ষোভের আগে তাদের বোঝা উচিত ছিল, সবকিছু এক রাতে সমাধান হয় না।

মাজিদ খান আরও বলেন, সরকার ৩৮ দাবির বেশির ভাগই মেনে নিতে সম্মত হয়েছে। দুটি বিষয়ের আলোচনায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সেগুলো হলো—শরণার্থীদের জন্য আইনসভায় আসন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়তি সুবিধা বাতিল।

গত বৃহস্পতিবার সরকারি প্রতিনিধি ও জেএএসির সদস্যদের আলোচনায় কোনো সমাধান বের হয়নি। গতকাল শুক্রবার ফের আলোচনায় বসার কথা ছিল উভয় পক্ষের। তবে সমস্যা হলো–তাদের মধ্যে বিশ্বাসের ঘটতি তৈরি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীর মিরপুরে যাত্রী নামিয়ে গুলি ছুড়ে বাসে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা

দিল্লির সংকটকালে ভারতীয়-আমেরিকানদের বিস্ময়কর নীরবতা

শুধু ডিজিএফআইয়ের লোগোর সঙ্গে মিল থাকায় শাপলা না দেওয়া বৈষম্যমূলক: এনসিপি

মানচিত্র থেকে পাকিস্তানকে মুছে ফেলার হুমকি দিলেন ভারতের সেনাপ্রধান

তোফায়েল আহমেদের শারীরিক অবস্থা ‘অপরিবর্তিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত