Ajker Patrika

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ব্যর্থতা, হামাসের হামলা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি

আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ২৩: ৫৫
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ব্যর্থতা, হামাসের হামলা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস আজ শনিবার ইসরায়েলে অতর্কিত এক হামলা চালিয়েছে। এদিন সকালে মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থান ও অবকাঠামো লক্ষ্য করে পাঁচ হাজার রকেট ছোড়ে তারা। এতে এ পর্যন্ত ২২ জন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে জীবিত অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাদের জিম্মি করে গাজায় নেওয়ার ভিডিও প্রকাশ করেছে।

ইসরায়েলের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে ভেঙে এমন হামলা আসলেই নজিরবিহীন। প্রশ্ন উঠছে মধ্যপ্রাচ্যর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয় ভেঙে এমন হামলা কী করে চালাল হামাস? মোসাদের মতো গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও হামলার কোনো পূর্বতথ্য ছিল না! বিষয়টিকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা তৎপরতার বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিনিধি ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিভাগ অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিভাগ উভয় দিক থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি শুধু ফিলিস্তিনি অঞ্চলে নয়, লেবানন, সিরিয়া এবং অন্যান্য স্থানে জঙ্গিগোষ্ঠীর ভেতরেই গোয়েন্দা নিয়োজিত রয়েছে। 

ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিভাগ অতীতে জঙ্গিনেতাদের ড্রোন হামলা বা বুবি-ট্র্যাপ মোবাইল ফোন হামলায় হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আজকের এই হামলার সময় তারা একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল। এটি বড় এক ব্যর্থতা। 

অপর দিকে হামাস সম্পূর্ণ গোপনীয়তা ও সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করেছে। এমনকি ইসরায়েলের ওপর হামলা করতেও সক্ষম হয়েছে। 

ইসরায়েল এখন প্রতিশোধের জন্য যে বিশাল শক্তি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালাবে—তা নিশ্চিত। কিন্তু ইসরায়েলের নাগরিকেরা এখন প্রশ্ন তুলবে কেন তাদের দেশের গুপ্তচরেরা ব্যর্থ হলো, কেন তারা নাগরিকদের পূর্ব সতর্কতা দিতে পারল না।

এদিকে আজকের রকেট হামলার পর হামাসের যোদ্ধারা আকাশ, নৌ ও স্থলপথ দিয়ে ইসরায়েলের অবৈধ বসতিগুলোতে প্রবেশ করেন। ইসরায়েলে হামলার কারণ জানিয়ে হামাস বলেছে, ‘দখলদার ইসরায়েলিদের সব অপরাধ অবসানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। কোনো বিচার ছাড়া তাদের তাণ্ডব চালানোর সময় শেষ।’

এক বিবৃতিতে হামলার দায় স্বীকার করে হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-ক্বাসাম/// ব্রিগেডের নেতা মোহাম্মদ দায়েফ বলেছেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। আমরা ফিলিস্তিনিদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এরই মধ্যে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে পাঁচ হাজার রকেট হামলা চালিয়েছি।’

দায়েফ আরও বলেন, শত্রুপক্ষকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। দখলদারেরা এখানে শত শত বেসামরিক নাগরিককে গণহত্যা করেছে। তাদের হামলায় চলতি বছর শত শত মানুষ শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন।

বড় ধরনের এই রকেট হামলাকে ‘অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম’ হিসেবে ঘোষণা করে আল-ক্বাসাম ব্রিগেডপ্রধান বলেন, ‘আমরাই আগে হামলা চালিয়েছি।’ 

হামাসের সামরিক শাখার এই শীর্ষ নেতা জানান, আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের সদস্যরা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অবস্থান, বিমানবন্দর, বিভিন্ন ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে। সব মিলিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালানো রকেটের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

হামাসের এই বিশাল অভিযান শুরুর পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ইসরায়েলিদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধের মধ্যে আছি। কোনো অভিযান নয়; কোনো উসকানি নয়, যুদ্ধ।

‘আজ সকালে ইসরায়েল ও ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক ও আকস্মিক হামলা চালিয়েছে হামাস। আমরা সকাল থেকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে আছি। আমি নিরাপত্তাব্যবস্থার সব প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রথমত, যারা ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছি—এ অপারেশন এ মুহূর্তে চলছে।

‘এ মুহূর্তে, আমি রিজার্ভ সেনাদের জড়ো করা এবং শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি, যা শত্রুরা কখনো কল্পনা করেনি। শত্রুরা এমন মূল্য দেবে, যা তারা ভাবতেও পারেনি। সঙ্গে, আমি সাধারণ মানুষকে সেনাবাহিনীর নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এখন যুদ্ধে আছি এবং আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত