Ajker Patrika

গাজায় ত্রাণের জন্য অপেক্ষারতদের ওপর আবার গুলি বর্ষণ, নিহত ৯

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪, ২২: ২২
গাজায় ত্রাণের জন্য অপেক্ষারতদের ওপর আবার গুলি বর্ষণ, নিহত ৯

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এই হামলায় ৯ জন নিহত এবং অন্তত কয়েক ডজন বেসামরিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

আজ শনিবার গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণের একটি কেন্দ্রে অপেক্ষা করছিল ফিলিস্তিনিরা। সেখানেই গুলি চালিয়েছে আইডিএফ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনীর ট্যাংকের ছোড়া গুলিতে অন্তত নয়জন নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। তাঁরা গাজা শহরের উপকণ্ঠে কুয়েত গোলচত্বরে ত্রাণবাহী ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।’

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এ ঘটনা সম্পর্কে বলেছে, তারা অভিযোগটি খতিয়ে দেখবে।

মাত্র এক সপ্তাহ আগে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কুয়েত গোলচত্বরে সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ২০ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলি গুলিবর্ষণকে দায়ী করেছিল। কিন্তু আইডিএফ সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার্য করে বলেছিল, সশস্ত্র ফিলিস্তিনিরাই ভিড়ের ওপর গুলি চালিয়েছিল।

তীব্র খাদ্যসংকটের কারণে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষের অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় অঞ্চলটিতে গণমৃত্যু অত্যাসন্ন। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মে মাসের মধ্যে এই অঞ্চলের উত্তরে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য মূল্যায়ন বিভাগ।

সাহায্য সংস্থাগুলো গাজার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে জানিয়েছে, উত্তরাংশে দুর্ভিক্ষ আসছে। জাতিসংঘও কয়েক সপ্তাহ ধরে এ ব্যাপারে সতর্ক করে আসছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আসামের গোয়ালপাড়ায় আরও ৫৮০ পরিবারকে উচ্ছেদ, অধিকাংশই ‘বাংলাভাষী মুসলমান’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আসামের গোয়ালপাড়ায় ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ছবি: সংগৃহীত
আসামের গোয়ালপাড়ায় ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ছবি: সংগৃহীত

আসামে ফের শুরু হয়েছে তথাকথিত উচ্ছেদ অভিযান। স্থানীয় সময় আজ রোববার সকালে পশ্চিম আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় জেলা প্রশাসন ও বন কর্তৃপক্ষ মিলে প্রায় ১ হাজার ১৪০ বিঘা (প্রায় ১৫৩ হেক্টর) জমিতে একটি বড় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের শিকার অধিকাংশই বাংলাভাষী মুসলমান। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

গোয়ালপাড়া জেলা কমিশনার প্রদীপ তিমুং বলেছেন, এই উচ্ছেদ অভিযান অন্তত দুই দিন লাগতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৫৮০টি পরিবারকে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছি। পুরো এলাকা দহিকাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এই লোকজন সেই বনভূমি দখল করে বসতি গঠন করেছিল।’

এ বছরে আসামে ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান দেখা গেছে। রাজ্য সরকার বলছে, এটি ‘এক ধর্মের লোকদের জনমিতিক আগ্রাসন’ রোধ করার প্রয়াস। উচ্ছেদের ফলে যাদের ক্ষতি হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।

জুলাই ও আগস্ট মাসে এই উচ্ছেদ অভিযান সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে ১৯ সেপ্টেম্বর আসামের সুপরিচিত শিল্পী গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যুর পর তাঁকে ঘিরে রাজ্যের খবর কেবলই সেই ঘটনার দিকে ঘুরে যাওয়ায় অভিযান কিছুটা থমকে পড়ে। রোববারের এই অভিযান হচ্ছে গত দুই মাসে প্রথম বড় উচ্ছেদ অভিযান।

গোয়ালপাড়া জেলায় আগেও একাধিক বড় উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ১২ জুলাই পাইকান সংরক্ষিত বনে প্রায় ১৪০ হেক্টর বনভূমি দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ চালানো হয়েছিল। আর ১৬ জুন জেলার হাসিলা বিল এলাকায় জলাভূমি দখল করে থাকা কিছু ৬০০ পরিবারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দুই দিন আগে ফেসবুক লাইভে এই উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, জুবিন গার্গের মৃত্যুর পর রাজ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এবং তদন্ত নিয়ে সরকারের ওপর যে চাপ এসেছে, তা নিয়েই কিছু লোক ‘নেপালের মতো পরিস্থিতি’ তৈরি করার চেষ্টা করছে।

বিশ্বশর্মা বলেন, ‘অনেকে ভাবছিল, উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে যাবে। তারা ভেবেছিল, হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ওপর এত চাপ পড়েছে, তিনি আর অভিযান চালানোর সাহস দেখাবেন না। আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমি কাউকে খুশি করে দিতে পারব না। ৯ ও ১০ নভেম্বর গোয়ালপাড়ার দহিকাটা বনে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।’

কেন্দ্রীয় আসাম ফরেস্ট সার্কেল, সেন্ট্রাল আসাম সার্কেলের বন সংরক্ষক সানিদেও ইন্দ্রদেও চৌধুরী জানিয়েছেন, রোববারের অভিযানে ১ হাজারেরও বেশি বনকর্মী ও পুলিশ সদস্য নিয়োজিত ছিল। তিনি বলেন, ‘শুধু গোয়ালপাড়া জেলাতেই এ বছর আমরা উচ্ছেদ করে ৯০০ হেক্টরেরও বেশি বনভূমি পুনরুদ্ধার করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলি হামলার কুফল: গাজার মাটি-পানি বিষাক্ত, সর্বব্যাপী সংকটে ফিলিস্তিনিরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ১১
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান শহরের সেই সুপেয় পানির উৎস—শেখ রাদওয়া পুকুর। ছবি: এএফপি
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান শহরের সেই সুপেয় পানির উৎস—শেখ রাদওয়া পুকুর। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন পুরো অঞ্চলের বাড়িঘরই ধ্বংস করেনি, পরিবারগুলোকে বারবার বাস্তুচ্যুত করেছে, হাসপাতাল-ক্লিনিক গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আর এর সঙ্গে বিষাক্ত করে তুলেছে সেই মাটি ও পানি, যার ওপর নির্ভর করে টিকে আছে ফিলিস্তিনিরা।

নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির চার সপ্তাহ পেরিয়েছে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রভাবে পরিবেশের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ইসরায়েল এখনো প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে।

গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকা একসময় ছিল প্রাণচঞ্চল মহল্লা। এখন সেটি পরিণত হয়েছে এক বিরানভূমিতে। ভাঙা ঘরবাড়ির পাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকার যে পুকুরটি ছিল একসময় মানুষের পানির উৎস, সেখানে এখন জমেছে নোংরা পয়োবর্জ্য আর ধ্বংসাবশেষ। অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য এই জায়গাই এখন একদিকে আশ্রয়, অন্যদিকে বিপদ।

গর্ভবতী উম্মে হিশাম নিজের সন্তানদের নিয়ে প্রতিদিন হাঁটছেন এই দুর্গন্ধে ভরা পানির মধ্য দিয়ে। যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই তাঁদের। তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ রাদওয়ান পুকুরের পাশে আশ্রয় নিয়েছি। মশার যন্ত্রণা, বাড়তে থাকা পয়োনিষ্কাশনের পানি, চারপাশে ধ্বংসস্তূপসহ সব রকম কষ্টের মধ্যে আছি। সব মিলিয়ে আমাদের আর সন্তানদের জীবন হুমকিতে।’

বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য তৈরি সেই পুকুর এখন কাঁচা পয়োনিষ্কাশনে ভরা। ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজার পানির পাম্পগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দূষিত পানি ক্রমেই বাড়ছে, যা আশপাশের ঘরবাড়ি ও তাঁবুগুলোর কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।

গাজা সিটির পৌর কর্মকর্তারা বলছেন, পচা পানি আর মশাবাহিত রোগের আশঙ্কা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। পৌর কর্মকর্তা মাহের সালেম বলেন, ‘সব নাগরিকই মারাত্মক প্রভাবের মধ্যে। দুর্গন্ধ, মশা, পোকামাকড়—সবকিছুই ছড়িয়ে পড়েছে। পচা পানির স্তর এখন ছয় মিটারের বেশি উঁচু। নিরাপত্তা বেড়া ভেঙে গেছে। যেকোনো শিশু, নারী, বৃদ্ধ, এমনকি গাড়িও এই পুকুরে পড়ে যেতে পারে।’

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, স্থির হয়ে থাকা এই পানি থেকে রোগব্যাধি ছড়াতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। কিন্তু গাজার মানুষদের সামনে বিকল্প কিছু নেই। গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ জানে কুয়া, ট্যাংক বা পানিবাহী ট্রাক থেকে যে পানি পাচ্ছে, তা দূষিত। তবু তাদের বিকল্প নেই। বেঁচে থাকার জন্য সেটাই খেতে হচ্ছে।’

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম আল-জেবেন এই সংকটকে ‘গণহত্যার সঙ্গে জড়িত এক পরিবেশগত বিপর্যয়’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘সবাই জানে, গাজা আজও ভুগছে ইসরায়েলের চলমান গণহত্যার কারণে। এই যুদ্ধ প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তৈরি করেছে ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষ, যার বড় অংশই বিষাক্ত পদার্থে দূষিত।’

আল-জেবেন আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ও পয়োনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি ও উপকূলীয় পানিও দূষিত হয়েছে। এখন গাজা ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখে, পরিবেশগত ঝুঁকিও দ্রুত বাড়ছে।’ তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলায় গাজার অধিকাংশ কৃষিজমিও ‘ধ্বংস হয়ে গেছে’। ফলে অঞ্চলটি এখন ‘তীব্র খাদ্য-সংকট ও দুর্ভিক্ষে ভুগছে, যেখানে খাবারকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, গাজার সুপেয় পানির উৎস এখন ‘ভয়াবহভাবে সীমিত এবং বাকি যা আছে, তার বেশির ভাগ দূষিত।’ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার পতন, পাইপলাইন ধ্বংস এবং স্যানিটেশনের জন্য মাটির গর্ত ব্যবহারের কারণে গাজাকে পানি সরবরাহ করা ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে।’

শেখ রাদওয়ানে এখন বাতাস ভারী পচা গন্ধ আর হতাশায়। প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, ‘যখন প্রতিদিনই বাঁচার লড়াই—পানি, খাবার আর এক টুকরা রুটির জন্য, তখন নিরাপত্তা ভাবার সময় থাকে না।’

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড আল–শারা এখন ওয়াশিংটনে, আলোচনায় দামেস্ক মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: আনাদোলু
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: আনাদোলু

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা। জানা গেছে, ওয়াশিংটন এই সফরকে আইএসআইএল বা আইএসআইএসের বিরুদ্ধে দামেস্ককে বৈশ্বিক জোটে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ হিসেবে দেখছে।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে পৌঁছান আল-শারা। একই সময় সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সারা দেশে আইএসআইএল সেলের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়। আল-শারার নেতৃত্বে হায়াত তাহরির আল–শাম ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী গত বছর দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। আজ রোববার হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন আল–শারা।

বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার স্বাধীনতার পর ১৯৪৬ সালের পর এটিই কোনো সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম ঘটনা। আল-শারা গত মে মাসে রিয়াদে প্রথমবার ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত শুক্রবার তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসী নিষেধাজ্ঞা তালিকা’ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া-বিষয়ক বিশেষ দূত টম বারাক চলতি মাসের শুরুতে বলেন, ‘আশা করা যায়’ আল-শারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটে যোগদানের এক চুক্তিতে সই করবেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যা সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে ওয়াশিংটন-নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

অন্যদিকে, আল-শারা তাঁর সফরে সিরিয়ার পুনর্গঠনের জন্য অর্থ সাহায্য চাইবেন। টানা ১৩ বছরের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পর দেশটি এখন ব্যাপক পুনর্নির্মাণ সংকটে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, পুনর্গঠনে অন্তত ২১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার প্রয়োজন, যা তারা ‘সর্বনিম্ন অনুমান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

আল-শারা একসময় আল-কায়েদার সিরিয়ার শাখার নেতৃত্বে ছিলেন। তবে এক দশক আগে তাঁর বিদ্রোহী সংগঠন ওই নেটওয়ার্ক থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পরে আইএসআইএলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তাঁর সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামকে যুক্তরাষ্ট্র গত জুলাইয়ে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয়।

আল-শারার ওয়াশিংটন সফরটি হচ্ছে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তাঁর ঐতিহাসিক সফরের পর। সেসময় তিনিই ছিলেন প্রথম সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, যিনি কয়েক দশক পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ভাষণ দেন। এর ঠিক এক দিন আগে, বৃহস্পতিবার, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক ভোটে আল-শারার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

শনিবার দামেস্কে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশজুড়ে আইএসআইএল সেলের বিরুদ্ধে অন্তত ৬১টি অভিযান চালানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, এসব অভিযানে অন্তত ৭১ জনকে আটক করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, এই অভিযানগুলো আলেপ্পো, ইদলিব, হামা, হোমস ও দামেস্কের উপকণ্ঠে চালানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সংস্থাটি জানায়, এই অভিযান চলমান ‘সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় প্রচেষ্টা এবং জননিরাপত্তা রক্ষার অংশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি অচলাবস্থা: যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১৪০০ ফ্লাইট বাতিল, বিলম্ব কয়েক হাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৯
মার্কিন সরকারের শাটডাউনের কারণে বিমানবন্দরে কর্মীদের বেতন–ভাতা হচ্ছে না ঠিকমতো। আর তাই তারাও কাজে আসতে গড়িমসি করছেন। এ কারণে, বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ছবি: এএফপি
মার্কিন সরকারের শাটডাউনের কারণে বিমানবন্দরে কর্মীদের বেতন–ভাতা হচ্ছে না ঠিকমতো। আর তাই তারাও কাজে আসতে গড়িমসি করছেন। এ কারণে, বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ১ হাজার ৪০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর আগে মার্কিন ফেডারেল সরকার অচলাবস্থার কারণে বিমান চলাচল সীমিত রাখার নির্দেশ দেয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং সংস্থা ফ্লাইটওয়্যারের তথ্যে জানা যায়, আরও প্রায় ৬ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল ৭ হাজারের বেশি। এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানায়, ৪০টি ব্যস্ত বিমানবন্দরে বিমান চলাচলের সক্ষমতা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে। কারণ, সরকারের অচলাবস্থায় বেতন না পাওয়া আকাশপথ নিয়ন্ত্রকেরা (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার) অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করছেন।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা এখনো কংগ্রেসে বাজেট নিয়ে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা দূর করতে পারছে না। ১ অক্টোবর শুরু হওয়া এই স্থবিরতা চলতে থাকায় রোববার ৩৯তম দিনে পা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম সরকার অচলাবস্থা। দুই দলের সিনেটররা সপ্তাহান্তে ওয়াশিংটনে আলোচনায় বসেছেন। তাঁদের লক্ষ্য সরকার পুনরায় চালুর পথ খোঁজা। কারণ, খাদ্যসহায়তা কমে যাওয়া ও ফ্লাইট বিপর্যয়ে এখন সাধারণ মানুষও প্রভাবিত হচ্ছে।

শনিবার এক বিবৃতিতে আমেরিকান এয়ারলাইনস ওয়াশিংটনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানায়, ‘অচলাবস্থা শেষ করতে দ্রুত সমাধানে পৌঁছান।’

নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার সময়। শনিবার বিকেলের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে আগমনকারী ফ্লাইট গড়ে চার ঘণ্টার বেশি দেরি করছিল, আর প্রস্থানকারী ফ্লাইটের গড় বিলম্ব ছিল দেড় ঘণ্টা। শনিবার সর্বাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লট/ডগলাস আন্তর্জাতিক, নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক ও শিকাগোর ও’হেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

এফএএর তথ্যে দেখা গেছে, নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলো গড়ে তিন ঘণ্টা, আটলান্টার হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন বিমানবন্দর থেকে আড়াই ঘণ্টার বেশি এবং লা-গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্বিত হচ্ছিল।

আগামী ২৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংকস গিভিং ছুটি। এটি বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত ভ্রমণ মৌসুমগুলোর একটি। এবার শুধু বাণিজ্যিক ফ্লাইটই নয়, প্রাইভেট জেটের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শনিবার এক্সে শেয়ার করা পোস্টে পরিবহন সচিব ডাফি জানান, বড় বিমানবন্দরগুলোতে প্রাইভেট জেটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। তাদের এখন ছোট বিমানবন্দর বা রানওয়ে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে নিয়ন্ত্রকেরা বাণিজ্যিক ফ্লাইটে মনোযোগ দিতে পারেন।

তবে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এফএএ জানিয়েছে, ধীরে ধীরে ফ্লাইট কমানো হবে—শুক্রবার থেকে ৪ শতাংশ, ১১ নভেম্বর ৬ শতাংশ, ১৩ নভেম্বর ৮ শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর থেকে পূর্ণ ১০ শতাংশ কমানো হবে। সংস্থাটি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জরুরি। কারণ, নিয়ন্ত্রকেরা বেতন ছাড়া কাজ করে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে রয়েছেন।

আইনের কারণে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের বেতন ছাড়া কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেকে অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিচ্ছেন বা জীবিকা চালাতে দ্বিতীয় চাকরি করছেন। তাঁরা ১৪ লাখ সরকারি কর্মীর অংশ, যাঁরা কেউ বিনা বেতনে কাজ করছেন, কেউ বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন। বিমান চলাচলে বিপর্যয়ের আরেক কারণ হলো পরিবহন নিরাপত্তা সংস্থার (টিএসএ) ৬৪ হাজার কর্মীর বেশির ভাগই অচলাবস্থার সময় কোনো বেতন পাচ্ছেন না।

এর আগে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আগের সরকার অচলাবস্থায় দেখা গিয়েছিল, টিএসএ কর্মীদের প্রায় ১০ শতাংশ বিনা বেতনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত