Ajker Patrika

যারা গাজা শহরে রয়ে যাবে, তারা ‘সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের সমর্থক’—হুঁশিয়ারি ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪৯
ইসরায়েলি বোমা হামলার মুখে গাজা সিটির একটি এলাকা থেকে সরে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি বোমা হামলার মুখে গাজা সিটির একটি এলাকা থেকে সরে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। ছবি: এএফপি

দখলদার ইসরায়েল গতকাল বুধবার গাজার প্রধান শহরের বাসিন্দাদের জন্য চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, যাঁরা দক্ষিণে যেতে চান, তাঁরা যেন দ্রুত সরে যান। যাঁরা যাবেন না, তাঁদের সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করা হবে। এদিকে, প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের ইতি টানতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে হামাস।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, গাজা শহরে তীব্র বোমাবর্ষণের খবর দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, সেনারা শহর ঘিরে অবরোধ আরও কঠোর করছে।

কাৎজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘এটা গাজার (সিটির) বাসিন্দাদের জন্য শেষ সুযোগ, যাঁরা যেতে চান, তাঁরা দক্ষিণে চলে যান। হামাস যোদ্ধাদের গাজা শহরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে দিন।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, যাঁরা গাজা শহরে থেকে যাবেন, তাঁদের ‘সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাস সমর্থক’ হিসেবে গণ্য করা হবে।

কাৎজ আরও জানান, সেনারা নেতজারিম করিডর দখল করেছে। এর মাধ্যমে মধ্য গাজা থেকে পশ্চিম উপকূলের পথ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে গাজার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। দক্ষিণে যেতে চাইলে এখন থেকে গাজা শহরের মানুষকে ইসরায়েলি সেনাদের তল্লাশি চৌকি পেরোতে হবে। এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলি সেনারা জানায়, দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাওয়ার শেষ পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গাজা শহরে আল-শিফা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া ৬০ বছর বয়সী রবাহ আল-হালাবি টেলিফোনে বলেন, চারপাশে একটানা বিস্ফোরণ চলছে। তিনি বলেন, ‘আমি শহর ছাড়ব না। কারণ গাজার দক্ষিণ অংশও সমান বিপজ্জনক। বোমাবর্ষণ সর্বত্র চলছে। আর গৃহচ্যুতি ভীতিকর ও অপমানজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেবল মৃত্যুর অপেক্ষা করছি। হয়তো ঈশ্বরের কাছ থেকে কোনো সান্ত্বনা আসবে কিংবা যুদ্ধবিরতি হবে।’ হামাস কাৎজের এই বক্তব্যকে যুদ্ধাপরাধ বাড়ানোর পূর্বাভাস হিসেবে বর্ণনা করেছে।

যেকোনো মূল্যে যুদ্ধবিরতি

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি জানিয়েছে, গাজা শহরে সামরিক অভিযান তীব্র হওয়ায় তারা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। কয়েক দিন আগে সীমান্তহীন চিকিৎসক সংস্থা (ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস) ও সেখানে কাজ বন্ধ করে দেয়। তবে এখনো কিছু জাতিসংঘ সংস্থা ও ত্রাণ সংগঠন কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এদিকে, হামাস ট্রাম্প প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনা সমর্থন করেছেন। পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।

হামাসের ঘনিষ্ঠ এক ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিকল্পনা পর্যালোচনায় আরও দুই-তিন দিন লাগবে। ওই সূত্রের দাবি, হামাস পরিকল্পনার কিছু ধারা বদলাতে চায়। বিশেষ করে নিরস্ত্রীকরণ ও হামাসকে উৎখাতের শর্তে তারা আপত্তি জানিয়েছে। তারা আরও চায়, ইসরায়েল পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করবে—এ নিয়ে আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা। পাশাপাশি, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ না করার নিশ্চয়তাও চায় তারা।

গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, বুধবার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৬ জন গাজা শহরে। এক স্কুল আশ্রয়কেন্দ্রে হামলায় আটজন নিহত হওয়ার ঘটনাতেও তারা অভিযোগ তুলেছে। তবে ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, ওই স্থানে তারা এক হামাস যোদ্ধাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং বেসামরিক ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।

গাজার সংবাদ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবেশের সীমাবদ্ধতার কারণে হতাহতদের সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। ২৬ বছর বয়সী ফাদেল আল-জাদবা বলেন, তিনি শহর ছেড়ে যাবেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো মূল্যে যুদ্ধবিরতি চাই। কারণ আমরা হতাশ, ক্লান্ত এবং মনে করি আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।’

বুধবার রাতে ইসরায়েলি সেনারা জানায়, গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে চারটি আটকানো হয়, আরেকটি খোলা জায়গায় পড়ে।

হামাসে ‘দুই মত’

ট্রাম্প মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, হামাসের কাছে তার ২০ দফা পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ‘তিন থেকে চার দিন’ সময় আছে। তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করলে হামাসকে ‘দোজখে মূল্য দিতে হবে।’ দোহায় আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক সূত্র জানিয়েছেন, হামাসের ভেতরে দুটি মতামত আছে।

সূত্রটি বলেন, ‘প্রথম দল মনে করছে, যুদ্ধবিরতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিঃশর্তে মেনে নেওয়া উচিত। মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েলকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধ্য করবে। আরেক দল গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোতে আপত্তি জানাচ্ছে। তারা নিরস্ত্রীকরণ ও গাজা থেকে কোনো ফিলিস্তিনিকে উৎখাতের শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের অবস্থান শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়েছিলেন। এদের বেশির ভাগ ছিলেন সাধারণ মানুষ। ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৬ হাজার ১৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই সংখ্যা জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।

এই তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। তবে তালিকায় যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলাদা করে হিসাব দেওয়া হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনার বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত নয়াদিল্লি: ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব

আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বিএনপি একাই সরকার গঠন করবে: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে তারেক রহমান

বুলবুলই আবার বিসিবি সভাপতি, সহসভাপতি পদে চমক

এবার মাউশি মহাপরিচালক খুঁজতে বিজ্ঞপ্তি দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বিরল খনিজের প্রথম চালান যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাল পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত