Ajker Patrika

ইরানের রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছে সংস্কারপন্থীদের বিবৃতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৪৫
ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় হিজাব ছাড়া নারীদের পদচারণা বাড়ছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় হিজাব ছাড়া নারীদের পদচারণা বাড়ছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

ইরানের রাজনীতিতে সংস্কারপন্থী শিবিরকে দীর্ঘদিন ধরে নরম ও দুর্বল হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি বিবৃতিতে অতীতের নরম অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত ‘ইরানিয়ান রিফর্মিস্ট ফ্রন্ট’ (আইআরএফ)। এ বিবৃতিতে তারা দেশটির অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে বড় পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে।

আইআরএফ মত দিয়েছে, বর্তমান সময় হলো—জনগণের কাছে ফিরে যাওয়ার ও পরিবর্তনের সুবর্ণ সুযোগ। তারা রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, অর্থনীতি ও রাজনীতি থেকে মিলিশিয়াদের প্রভাব কমানো, নারীর অধিকার উন্নয়ন, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের ধরন পাল্টানোসহ নানা দাবির তালিকা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে তাদের সবচেয়ে আলোচিত দাবিটি হলো—যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান স্বেচ্ছায় পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি স্থগিত করবে এবং জাতিসংঘের পরমাণু তদারকি সংস্থার সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। আরও এগিয়ে গিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এই অবস্থান ইরানের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। কারণ, প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান নির্বাচনে আইআরএফের সমর্থন পেয়েছিলেন। যদিও তিনি প্রায়ই সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি আইআরএফ নেত্রী আজার মানসুরির সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁকে এ বিবৃতির বিষয়ে অবস্থান নিতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে সংস্কারপন্থীদের তৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করেছে ইরানের কট্টরপন্থীরা। দৈনিক কায়হান অভিযোগ করেছে, আইআরএফ ধীরে ধীরে অভ্যুত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছে এবং এই অভ্যুত্থানচেষ্টা মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থের সঙ্গে মিলে যায়। কট্টরপন্থী দল পায়দারি ফ্রন্টের নেতা সাদেঘ মাহসুলি বলেছেন, আইআরএফ ইরানকে ভেতর থেকে ভাঙার নতুন ষড়যন্ত্র করছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মাশহাদের খোরাসান দৈনিকও দাবি করেছে, আঞ্চলিক সহযোগিতার নামে ইরানকে আব্রাহাম অ্যাকর্ডে টেনে নেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে।

তবে সংস্কারপন্থী শিবিরের ভেতরেও বিভক্তি রয়েছে। নেদায়ে ইরানিয়ান পার্টির মুখপাত্র সাইয়েদ নুরমোহাম্মাদি জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের বিস্তৃত বিবৃতির পক্ষে ভোট দেননি। সমাজবিজ্ঞানী মোহাম্মদরেজা জালাইপুর এটিকে ‘বড় ভুল’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি কট্টরপন্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী জাওয়াদ আজারি জাহরোমি মনে করেন, এর অর্থ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইরানের আত্মসমর্পণ।

অন্যদিকে এর সমর্থকও কম নয়। সাবেক সংসদ সদস্য ইব্রাহিম আসগারজাদে বলেছেন—বিতর্ক দমন নয়, বরং খোলামেলা রাজনৈতিক আলোচনা দরকার। তাঁর মতে, জনগণের চাহিদা অস্বীকারই দেশি ও বিদেশি চরমপন্থীদের শক্তি বাড়ায়। সমর্থকেরা যুক্তি দিচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কার্যত থেমে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। বিকল্প পথ হলো যুদ্ধের ঝুঁকি।

এ প্রেক্ষাপটে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ, সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী মীর হোসেইন মুসাভিও সাংবিধানিক সংস্কারের কথা বলেছেন। রুহানি বেসরকারি টেলিভিশন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। মুসাভি সরাসরি গণভোটের ডাক দিয়েছেন। সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা তাজজাদে কারাগার থেকে সতর্ক করেছেন—চরম মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও পানি-বিদ্যুতের সংকট রাষ্ট্রকে ভাঙনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

আজ শুক্রবার (২২ আগস্ট) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংস্কারপন্থীদের এই অবস্থান তাঁদের আগের তুলনায় অনেক বেশি সাহসী পদক্ষেপ। তবে তাঁরা এখন নানাবিধ চাপে রয়েছেন। এসব দাবিদাওয়া বাস্তবায়নের জন্য যে রাজনৈতিক সক্রিয়তা দরকার, ইরানে তা বহু বছর ধরে দেখা যায়নি। তবুও স্পষ্ট যে, ইরানের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে পরিবর্তনের ডাক আরও জোরালো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত