Ajker Patrika

গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন পর্যন্ত মিলেছে ২০০ মরদেহ, নিখোঁজ প্রায় ২০ হাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ০৭
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই গাজা শহরের বাসিন্দা। ফিলিস্তিনিরা এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এই হত্যাযজ্ঞকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর ‘গণহত্যামূলক যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের বিধ্বংসী হামলার পর এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষের মরদেহ পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গাজা প্রশাসনের অনুমান, এখনো প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিখোঁজ। উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজা শহরসহ আশপাশ এলাকায় ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকাজ চলছে ধীরগতিতে।

ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও গাজার মানুষ ফিরে যাচ্ছে নিজেদের ভাঙাচোরা ঘরে, আগ্রাসন শুরু হওয়ার দুই বছর পর। কিন্তু সেখানে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, নষ্ট হয়ে গেছে পানি, বিদ্যুৎ ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা। যুদ্ধের আগুনে গাজার জীবনযাত্রা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

শনিবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে গাজার প্রায় পুরো জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, টানা হামলার মুখে অনেকে একাধিকবার আশ্রয় বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। ‘প্রায় ৮০ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’ বলে জানিয়েছে ইউএনআরডব্লিউএ। সংস্থাটি আরও বলেছে, তাদের প্রায় সব স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউএনআরডব্লিউএর প্রতিবেদন বলছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা সেবা ও আশ্রয়ের তীব্র সংকটে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অবরুদ্ধ অবস্থায় থেকে তারা এখন প্রতিদিনই জীবন-মৃত্যুর লড়াই চালাচ্ছেন।

একই দিন খান ইউনিস পৌরসভা জানিয়েছে, ইসরায়েলি গণহত্যামূলক অভিযানে শহরের প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। পৌরসভা জানায়, শহরজুড়ে প্রায় ৪ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে, যা সরানো না গেলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি আরও বাড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে খান ইউনিসের মেয়র বলেন, শহরের ৩০০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া ৭৫ শতাংশ ড্রেনেজ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তিনি জানান, বর্তমানে শহরে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টন বর্জ্য জমে আছে। সম্পদের অভাব এবং বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করায় বর্জ্য অপসারণে কর্মীদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

মেয়র আরও বলেন, বর্তমানে মাত্র ৯টি পৌর টিম কাজ করছে। তারা রাস্তাঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ পরিষ্কারে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ডিজেল জ্বালানির সংকটে যেকোনো সময় কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপ ও ভারী ধ্বংসাবশেষ সরাতে আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। পাশাপাশি হামলায় নষ্ট হয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ জেনারেটরগুলোর বিকল্প জেনারেটর জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করতে হবে।’

দীর্ঘ এই যুদ্ধ গাজার অবকাঠামো, মানবজীবন ও পরিবেশকে এমনভাবে বিপর্যস্ত করেছে যে পুনর্গঠনের স্বপ্নও এখন দুরাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়েই গাজার মানুষ নতুন করে বাঁচার পথ খুঁজছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিগত সরকারের সমর্থকদের পক্ষে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রায় সব দল: ডিআইজি হাবীব

চীনের বেলুন সহ্য হয়নি, এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কাতারকে বিমানঘাঁটি দিচ্ছেন ট্রাম্প

চট্টগ্রামে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জেরে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৩

ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানার পর লাপাত্তা মেজর জেনারেল কবীর, সন্ধানে তৎপরতা জানাল সেনাসদর

জুলাই জাতীয় সনদ: গণভোটের সময়ে অনড় জামায়াত-এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত