Ajker Patrika

কী নেই ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসের স্টেট ডাইনিং রুমে সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড। ছবি: এএফপি
গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসের স্টেট ডাইনিং রুমে সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড। ছবি: এএফপি

গাজায় চলমান ধ্বংসাত্মক সংঘাত অবসানের জন্য একটি ২০ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাগজে-কলমে এটি মোটামুটি একটি যৌক্তিক চুক্তি। এই পরিকল্পনার মূল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধ বন্ধ করা, অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া, গাজায় ত্রাণসহায়তা বাড়ানো, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করা ও সম্ভাব্য নির্বাসন দেওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের স্বশাসনের দিকে একটি চূড়ান্ত পথ তৈরি করা। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে গাজাবাসীকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করে সেখানে রিসোর্ট তৈরির জন্য ট্রাম্পের পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এর ফলে গাজা থেকে জাতিগতভাবে ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করার ইসরায়েলি স্বপ্নকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

মোটকথা, ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি হলো বহু বছর ধরে আলোচিত কিছু যুক্তিসংগত ধারণার সমষ্টি, যা বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ, সংঘাত নিরসনে উভয় পক্ষেরই কিছু কিছু বিষয়ে গুরুতর আপত্তি ছিল। এখন প্রশ্ন হলো, সেই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না। ট্রাম্পের এই প্রস্তাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, প্রধান আরব রাষ্ট্রসমূহ, ইসরায়েলি জিম্মি পরিবার ও হামাসের পৃষ্ঠপোষক তুরস্ক ও কাতারের সমর্থন রয়েছে। হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও শর্তসাপেক্ষে এতে সমর্থন দিয়েছেন এবং ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে প্রশংসা করেন।

এত কিছুর পরেও সবচেয়ে কঠিন কাজটি হলো চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা। ট্রাম্প এটিকে ‘সম্পন্ন চুক্তি’ হিসেবে উপস্থাপন করলেও আসল কাজ সবে শুরু হয়েছে। প্রশ্ন হলো—ট্রাম্প ও মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর মিত্ররা কি হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের মতো বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি করাতে পারবে, যা তারা এখন পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করে আসছে?

এই চুক্তি ইসরায়েলের সংসদে নেতানিয়াহুর চরম ডানপন্থী জোটের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে নেতানিয়াহু চুক্তি থেকে সরেও যেতে পারেন। যদি এমন হয়, তবে কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে আটকাতে পারবেন?

এই পরিকল্পনা সফল করতে হলে ট্রাম্পের প্রয়োজন হবে কাতারের ও তুরস্কের (যেখানে হামাস নেতারা আশ্রয় নেন) বন্ধুদের। তারা হামাসকে চুক্তিতে আনতে বাধ্য করবে। সে সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী যেন তাঁর অঙ্গীকার বজায় রাখেন, সেদিকে ট্রাম্পকে সতর্ক নজর রাখতে হবে।

তাত্ত্বিকভাবে ট্রাম্পের এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। কাতার ও তুরস্কের নেতাদের সঙ্গে তাঁর উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং সম্প্রতি তিনি উভয়কেই হোয়াইট হাউসে আতিথেয়তা দিয়েছেন। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের এমন একটি প্রভাব রয়েছে, যা এর আগে কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ছিল না।

আগে বারাক ওবামার মতো উদার আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের চাপ থেকে নেতানিয়াহু নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করলেও ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে তাঁর মিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ২০২৬ সালে নতুন নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় নেতানিয়াহু এমন একজন নেতার (ট্রাম্প) সঙ্গে বিরোধে যেতে পারবেন না, যাঁর সমর্থন নির্বাচনে তাঁর সফলতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এ কারণেই ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন করা ছাড়া নেতানিয়াহুর কোনো উপায় ছিল না।

তবে এই প্রাথমিক সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি চুক্তি সফল হওয়ার নিশ্চয়তা দেয় না। হামাস এখনো প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। তারা আলোচনার সময় দীর্ঘায়িত করতে এবং ব্যর্থতার দায় ইসরায়েলের ওপর চাপানোর উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তিকর জবাব দিতে পারে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু তাঁর চরম ডানপন্থী জোটের সদস্যদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হবেন। তাঁরা গাজাকে জাতিগতভাবে নির্মূল করে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করতে চান। ফলে তাঁর সরকার ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকলে তিনি চুক্তি থেকে সরে আসার চেষ্টা করতে পারেন।

ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ বলেন, নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে ‘হ্যাঁ’ বলেন। আর যখন তিনি ইসরায়েলে ফিরে আসেন, তখন ‘না’ বলেন। কারণ, তিনি যখন হোয়াইট হাউসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান, তখন নিজেকে একজন যুগান্তকারী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অনুভব করেন। আর নিজ দেশে ফিরে তিনি বুঝতে পারেন তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান।

অতীতেও নেতানিয়াহু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে নানা আলোচনা থেকে সরে এসেছেন। তবে সেই চুক্তিতে কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট সরাসরি জড়িত ছিলেন না। ট্রাম্পের কাছে নেতানিয়াহুকে বাধ্য করার ক্ষমতা আছে। তবে প্রশ্ন হলো, তিনি সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম কি না।

গাজা যুদ্ধের মর্মান্তিক সত্য হলো, অধিকাংশ ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি বহু মাস ধরে এই সংঘাতের অবসান চেয়েছেন, কিন্তু তাঁদের নেতারা অন্যকে খুশি করতে গিয়ে নিজেদের আদর্শগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনা ঘোষণার পর গাজা সিটির ৪৭ বছর বয়সী বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-বেলতাজি এএফপিকে বলেছিলেন, ‘বরাবরের মতোই, ইসরায়েল প্রথমে রাজি হয়, তারপর হামাস প্রত্যাখ্যান করে—কিংবা উল্টোটা। এটা একটা খেলা আর আমরা সাধারণ মানুষ সেটার মূল্য দিচ্ছি।’

এ প্রস্তাব কার্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করছে হামাস ও ইসরায়েলের রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে তাঁর মনোযোগ ধরে রাখতে পারবেন কি না। তবে এই চুক্তি গাজায় চলমান ধ্বংসাত্মক সংঘাত বন্ধে একটি নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।

দ্য আটলান্টিক থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তি হিন্দু ঐতিহ্য’: তসলিমা নাসরিনের মন্তব্যের জবাব দিলেন জাভেদ আখতার

লন্ডনে বিমানের ক্রু তৈফুরকে মাটিতে ফেলে পেটে কিল-ঘুষি

সোনার দাম বেড়েই চলেছে, নতুন রেকর্ড

গাজাগামী ফ্লোটিলা থেকে যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাহারের পর যা বললেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী

গায়ক আসিফসহ বিনা ভোটে বিসিবির পরিচালক যাঁরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত