Ajker Patrika

কিংবদন্তি প্রাণিবিজ্ঞানী জেন গুডল আর নেই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
১৯৬০ সালে তাঞ্জানিয়ার গোম্বে ন্যাশনাল পার্কে শিম্পাঞ্জি গবেষণা শুরু করেছিলেন জেন গুডল। ছবি: জেন গুডল ইনস্টিটিউট
১৯৬০ সালে তাঞ্জানিয়ার গোম্বে ন্যাশনাল পার্কে শিম্পাঞ্জি গবেষণা শুরু করেছিলেন জেন গুডল। ছবি: জেন গুডল ইনস্টিটিউট

বিশ্ববিখ্যাত প্রাণিবিজ্ঞানী ও প্রাইমেট গবেষক জেন গুডল আর নেই। ৯১ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘জেন গুডল ইনস্টিটিউট’। বন্য শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণা তাঁকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছিল। মানুষ ও শিম্পাঞ্জির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে গুডল প্রমাণ করেছিলেন, এই প্রাণীগুলো মানুষের সঙ্গে আবেগ, আচরণ ও সামাজিকতায় বিস্ময়কর মিল রাখে।

১৯৩৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গুডল। কলেজে যাওয়ার সামর্থ্য না থাকায় তিনি সেক্রেটারিয়াল স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৬ সালে আফ্রিকায় পাড়ি জমান এবং দ্রুতই পরিচিত হন বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ লুই লিকির সঙ্গে। লিকিই তাঁকে শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণার সুযোগ করে দেন। তখন তাঁর কোনো ডিগ্রি ছিল না, বয়স মাত্র ২৬ বছর এবং একজন নারী গবেষকের জন্য সুযোগ পাওয়া ছিল বিরল।

১৯৬০ সালে তিনি তাঞ্জানিয়ার গোম্বে ন্যাশনাল পার্কে শিম্পাঞ্জি গবেষণা শুরু করেন। প্রথমে শিম্পাঞ্জিরা তাঁকে এড়িয়ে চললেও ধৈর্য, নীরবতা ও কলার টোপ দিয়ে ধীরে ধীরে তাঁদের আস্থা অর্জন করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি আবিষ্কার করেন, শিম্পাঞ্জিরাও মানুষের মতো সরঞ্জাম তৈরি ও ব্যবহার করতে পারে। তাঁর প্রিয় শিম্পাঞ্জি ডেভিড গ্রেবিয়ার্ড উইপোকার ঢিবি থেকে খাবার বের করতে একটি ডাল ভেঙে ব্যবহার করেছিল। এই আবিষ্কার প্রচলিত ধারণাকে বদলে দেয়—মানুষই যন্ত্র তৈরি করতে পারে এমন একমাত্র প্রাণী নয়।

গুডলের গবেষণা শুধু বিজ্ঞানের ধারা পাল্টায়নি, প্রাণীদের আবেগ ও সামাজিক বন্ধন সম্পর্কেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনেছিল। তিনি দেখেছিলেন, শিম্পাঞ্জিরা পরস্পরকে আলিঙ্গন করে, হাত ধরে হাঁটে, ভালোবাসা প্রকাশ করে, আবার সহিংসতাও চালায়।

১৯৭৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জেন গুডল ইনস্টিটিউট। ১৯৮৬ সালের এক সম্মেলনে বন্যপ্রাণীর সংকট ও পাচারের ভয়াবহতা তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। এরপর থেকে তিনি শুধু গবেষক নন, পরিবেশ ও প্রাণী সুরক্ষার বিশ্বদূত হয়ে ওঠেন। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করে বক্তৃতা দিয়েছেন, মানুষকে সচেতন করেছেন।

জেন গুডল শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রকৃতি ও প্রাণীর সঙ্গে মানবজাতির সম্পর্কের প্রতীক। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম, সততা ও সহানুভূতি বিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত