Ajker Patrika

ফিলিস্তিনের গাজা: বিদেশে চিকিৎসা ছাড়া গতি নেই তাদের

ইসরায়েলি হামলায় অঙ্গ হারানো গাজার শিশুদের একাংশ। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি হামলায় অঙ্গ হারানো গাজার শিশুদের একাংশ। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকার একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্ট। যত দূর চোখ যায়, চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপের ছড়াছড়ি। এর মধ্যেই বহুল প্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতির জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন আবির আল-আওয়াদি নামের এক নারী। কেননা, টানা ১৫ মাসের এই ধ্বংসযজ্ঞে একটু বিরতি তাঁর মেয়ে হানার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিতে পারে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ৪৭ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)। জাতিসংঘের হিসাবে এর মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৬০ জন চিকিৎসাকর্মীও রয়েছেন। এই মৃত্যুর মিছিলের মধ্যে বেঁচে থেকেও দুনিয়ার আলো দেখতে পারছে না ১৫ বছরের কিশোরী হানা। মুখ ঢেকে রাখা কম্বলটি তুলে নিলেই তার তীব্র চিৎকারে সেখানে টিকে থাকা দায়। সামান্য আলোর ঝলকও সহ্য করতে পারে না সে। তিন মাস আগে ক্যানসার ধরা পড়া মেয়ের অসহ্য যন্ত্রণা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কীই-বা করার আছে তার মায়ের! আল্লাহর কাছে তাঁর একটাই চাওয়া, মেয়ের চিকিৎসার জন্য একটু চেষ্টা যেন অন্তত করতে পারেন তিনি।

গত ১৫ মাসে উপত্যকার হাসপাতালগুলোতেও তাণ্ডব চালিয়েছে দখলদার বাহিনী। ফলে চিকিৎসার জন্য মেয়েকে গাজার বাইরে নেওয়া প্রয়োজন। আর রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া ছাড়া সেটি সম্ভব নয়।

আবির আল-আওয়াদি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, হানা কত দিন বাঁচবে কিংবা চিকিৎসার সুযোগ মিলবে কি না, তা তাঁর জানা নেই। তবে যুদ্ধবিরতিতে একটাই চাওয়া, রাফাহ ক্রসিং যেন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। মেয়ের সুচিকিৎসার জন্য অন্তত একটু চেষ্টা যেন তিনি করতে পারেন।

হানা একা নয়, চিকিৎসার অভাবে পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের আর্তনাদ যেন উপত্যকার বাসিন্দাদের কাছে এক সাধারণ ঘটনা। গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় উপত্যকার বাইরে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে তাদের। আর তাই রাফাহ ক্রসিং চালুর দিকে তাকিয়ে সবাই।

আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া আল জাজিরাকে বলেন, এই সংকটময় পরিস্থিতিতে গাজার স্বাস্থ্যসেবা খাত বলতে সেভাবে কিছু অবশিষ্ট নেই। ওষুধ কিংবা বিশেষজ্ঞ—কিছুই নেই। বিদেশে চিকিৎসা ছাড়া অনেকের আসলে এখানে কিছুই করার নেই।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় নিহতদের ৭০ শতাংই নারী ও শিশু। চলতি মাসের গোড়ার দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আহতদের মধ্যে ২৫ শতাংশের আঘাত এতটাই গুরুতর যে তাদের আর আগের অবস্থায় ফেরার সুযোগ নেই।

মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএসএফ) সমন্বয়ক কারিন হাস্টার বিবিসিকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আহত রোগীদের ঠিকমতো দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এই সংঘাতে অবকাঠামোগত ক্ষতির মাত্রাও ব্যাপক। সিএনওয়াই গ্র্যাজুয়েট সেন্টারের অধ্যাপক কোরি শের এবং ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জামন ভ্যান ডেন হোক স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিসর যাচাই করেছেন। ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণে তাঁরা অনুমান করেছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত