Ajker Patrika

ইসরায়েলের বেড়ায় বড় কারাগারে রূপ নিল পশ্চিম তীরের সিনজিল শহর

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ২৩: ১৫
এভাবেই সিনজিল শহরে বেড়া তুলে দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। ছবি: রয়টার্স
এভাবেই সিনজিল শহরে বেড়া তুলে দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শহর সিনজিল এখন কার্যত একটি খোলা কারাগার। কারণ, শহরটির পূর্ব প্রান্তে পাঁচ মিটার উঁচু ধাতব বেড়া দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। আর এই বেড়ার একটি মাত্র প্রবেশপথ খুলে রেখে সবদিক সিল করে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র গেটটি আবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

সাত সন্তানের জনক স্থানীয় ৫২ বছর বয়সী মুসা শাবানেহ বলেন, সিনজিল এখন একটা বড় কারাগার। নিজের নার্সারিতে গাছের চারা লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন মুসা। বেড়াটি এখন সেই নার্সারির মাঝখান দিয়েই গেছে। তিনি বলেন, সব গাছ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

আজ শুক্রবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি চেকপোস্ট ও দেয়ালের সঙ্গে পশ্চিম তীরের প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি অনেক আগে থেকে পরিচিত। কিন্তু গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বহু শহর ও গ্রাম এখন স্থায়ী অবরোধের মধ্যে রয়েছে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, সিনজিলের পাশে থাকা রামাল্লাহ-নাবলুস মহাসড়ক সুরক্ষিত রাখতেই বেড়া তোলা হয়েছে। তবে শুধু একটি পথ খোলা থাকায় যাতায়াতে কোনো অসুবিধা নেই বলেই দাবি করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। কিন্তু বাস্তবতা হলো—শহরটির বাসিন্দাদের সরু ঘুরপথ দিয়ে গাড়ি বা পায়ে হেঁটে বের হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। শহরের ডেপুটি মেয়র বাহা ফোকা জানিয়েছেন, নতুন বেড়াটি ৮ হাজার মানুষকে মাত্র ১০ একরের মধ্যে আটকে ফেলেছে। অথচ এই শহরের বাসিন্দাদের মালিকানাধীন ২ হাজার একর জমি রয়েছে বাইরের দিকে। সেখানে যাওয়া এখন কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

ডেপুটি মেয়র বলেন, এটি দখলদার বাহিনীর ভয়ভীতি প্রদর্শনের কৌশল, ফিলিস্তিনিদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা।

এদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ধরনের বেড়া ও চেকপয়েন্ট পশ্চিম তীরে থাকা প্রায় ৭ লাখ ইসরায়েলি বসতির বাসিন্দাদের রক্ষার জন্য অপরিহার্য। তারা দাবি করে, সিনজিলের লোকজন সড়কের অপর পাশের ইহুদি বসতিগুলোর বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে প্রায়ই পাথর ও পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে। তবে বেশির ভাগ দেশ ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি জমিতে ইসরায়েলি এই বসতিগুলোকে অবৈধ বলে মনে করে।

জানা গেছে, যুদ্ধপরবর্তী সময় পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি বেড়ে যায়। রাতারাতি মাটি, বোল্ডার ও লোহার গেট দিয়ে বহু ফিলিস্তিনি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ‘ফ্লাইং চেকপয়েন্ট’ বা আকস্মিক চেকপয়েন্টও সেখানে এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সিনজিলের বাসিন্দা সানা আলওয়ান বলেন, ‘আগে রামাল্লায় যেতে আধা ঘণ্টা লাগত। এখন তিন ঘণ্টাও লেগে যায়। ফলে আমি আমার ক্লায়েন্টদের কাছে সময়মতো পৌঁছাতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবনের অর্ধেকটাই রাস্তায় কেটে যাচ্ছে।’

ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজা যতটা বিধ্বস্ত, পশ্চিম তীর ততটা না হলেও জীবন সেখানে মারাত্মক অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন সেই রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মনে করে, এসব দমননীতি ইচ্ছাকৃত। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা বলেন, ‘তারা আমাদের জনগণের জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে চাইছে।’ এতে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি—অনেক তরুণ এতে বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘অপারেশন সিঁদুরে’ তিন শত্রুর মোকাবিলা করেছে ভারত, অন্য দেশের নাম জানালেন সেনা কর্মকর্তা

যুবলীগ নেতাকে ধরতে নয়, বাসাটি ঘেরাওয়ের নেপথ্যে অন্য কারণ

‘একটা মার্ডার করেছি, আরও ১০০টা মার্ডার করব’, ভিডিও ভাইরাল

মহাকাশে হারিয়ে গেল ৯ কোটি ডলারের স্যাটেলাইট, জলবায়ু গবেষণায় বড় ধাক্কা

জুলাই আন্দোলনের প্রথম অংশ ‘অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড’: মাহফুজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত