Ajker Patrika

গাজায় ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে: ইইউ পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল

গাজায় ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে: ইইউ পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল

গাজা যুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। এই অঞ্চলে ত্রাণের সংকটকে ‘মানবসৃষ্ট’ বিপর্যয় আখ্যা দিয়েছেন তিনি। 

অতিপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে একটি স্প্যানিশ জাহাজ সাইপ্রাস থেকে গাজার উদ্দেশে রওনা হলেও এটি স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন বোরেল। 

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এই অঞ্চলে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার দ্রুততম ও সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো স্থলপথ। তবে ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রয়োজনের এক ক্ষুদ্র অংশই শুধু প্রবেশ করতে পারছে। তাই এর বিকল্প হিসেবে সমুদ্রপথ এবং উড়োজাহাজ থেকে খাদ্যসামগ্রী ফেলা নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জর্ডানের সহযোগিতায় এরই মধ্যে কয়েক দফায় উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলেছে। এসব ত্রাণের প্যাকেট মাথায় পড়ে অন্তত ৫ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।

ইসরায়েল বলছে, গাজায় খাদ্য সংকটের জন্য তারা দায়ী নয়, কারণ তারা দক্ষিণের দুটি ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ভাষণে বোরেল বলেন, নিরাপদ ও টেকসই স্থলপথ না থাকায় ওই অঞ্চলে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এমন একটি জনগোষ্ঠী, যারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো দরকার এবং এটি সম্ভব করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন যতটা সম্ভব কাজ করছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এই মানবিক বিপর্যয়টি মানবসৃষ্ট এবং যখন আমরা সমুদ্রপথে, আকাশপথে সহায়তা পৌঁছানোর বিকল্প উপায় সন্ধান করব, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের এটি করতে হবে, কারণ স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহের প্রাকৃতিক উপায় কৃত্রিমভাবে বন্ধ।’ 

বোরেল বলেন, ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা ইউক্রেনে এই ঘটনার যখন নিন্দা করেছি, তখন গাজায় যা ঘটছে তার জন্য আমাদের একই শব্দ ব্যবহার করতে হবে।’ 

তাঁর এ মন্তব্যের আগে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, দুর্ভিক্ষ থেকে এক কদম দূরে আছে গাজার অন্তত ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের একভাগ। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে অপুষ্টি ও খাওয়ার পানির অভাবে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। 

বর্তমানে সাইপ্রাস থেকে স্পেনের একটি জাহাজ ২০০ টন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। এরই মধ্যে গাজা উপকূলে একটি জেটি নির্মাণ নিয়ে কাজ করছে মার্কিন দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে)। 

এদিকে জাহাজ ভিড়ার জন্য গাজায় অস্থায়ী পাটাতন নির্মাণের সরঞ্জাম নিয়ে একটি মার্কিন সামরিক জাহাজ জেনারেল ফ্র্যাংক এস বেসন মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। 

তবে দাতব্য সংস্থা ডব্লিউসিকে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগ এবং তাদের উদ্যোগ আলাদা।

সামুদ্রিক করিডরকে স্বাগত জানিয়ে ইসরায়েল বলেছে, একদিকে তাদের সামরিক বাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, একই সঙ্গে তারা ত্রাণ সরবরাহ সহজ করে তুলছে। 

গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, মিসর সীমান্তের কাছে অবস্থিত গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় সামরিক অভিযান চালাবে ইসরায়েল। তিনি বলেন, ‘আমরা রাফায় কাজ শেষ করব এবং বেসামরিক জনগণকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেব।’ 

এদিকে গাজার উদ্দেশে সমুদ্রপথে ত্রাণ সরবরাহের জন্য আশদোদের প্রধান বন্দর খুলে দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। আশদোদ ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত দেশটির তিনটি প্রধান বন্দরের একটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩০০ অভিবাসীকে নিয়ে মালাক্কা প্রণালিতে নৌকাডুবি, আছে বাংলাদেশিও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির (এমএমইএ) কর্মকর্তারা জীবিতদের উদ্ধারে এখনো অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ছবি: এএফপি
মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির (এমএমইএ) কর্মকর্তারা জীবিতদের উদ্ধারে এখনো অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ছবি: এএফপি

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তের মালাক্কা প্রণালিতে অভিবাসী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে শতাধিক মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। মালয়েশিয়ান মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত রোববার (৬ নভেম্বর) এ দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর গত তিন দিনে অন্তত ১০ জনকে জীবিত ও একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বারনামা জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ১০ জনের মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক, দুজন রোহিঙ্গা ও একজন বাংলাদেশি পুরুষ রয়েছেন। উদ্ধার হওয়া মরদেহটি একজন রোহিঙ্গা নারীর।

উত্তর মালয়েশিয়ার কেদাহ ও পারলিস প্রদেশের মেরিটাইম কর্তৃপক্ষের পরিচালক ফার্স্ট অ্যাডমিরাল রোমলি মোস্তফা বলেন, ‘নৌকাডুবির তিন দিন পরও সমুদ্রে বহু মানুষ জীবিত বা মৃত অবস্থায় থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা এখনো উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।’

জানা গেছে, মিয়ানমারের বুথিডং এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ জন অভিবাসী নিয়ে জাহাজটি মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন রোহিঙ্গা মুসলিম।

কেদাহ প্রদেশের পুলিশপ্রধান আদজলি আবু শাহ বলেন, সমুদ্রে পাড়ি জমানো অভিবাসীরা প্রথমে একটি বড় জাহাজে ছিলেন। তবে মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছালে কর্তৃপক্ষের চোখ এড়াতে তাঁদের তিনটি ছোট নৌকায় ভাগ হয়ে যেতে বলা হয়। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ১০০ জন করে ছিলেন।

তিনি আরও জানান, এই তিনটি ছোট নৌকার মধ্যে একটি ডুবে গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তবে বাকি দুটি নৌকার অবস্থান সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বেডরুমের ভাড়া বাড়ি থেকে প্রাসাদে উঠছেন জোহরান মামদানি, কী আছে সেখানে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জোহরান মামদানি ও তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: সংগৃহীত
জোহরান মামদানি ও তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি থাকেন কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়ায় একটি সাধারণ ভাড়া অ্যাপার্টমেন্ট। মাসে ২ হাজার ৩০০ ডলার ভাড়ার এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। সিঙ্ক ফুটা হয়ে পানি চুঁইয়ে পড়ছিল, তাইলে তোয়ালে দিয়ে মেঝে ঢাকতে হয়েছিল তাঁকে। দৈনন্দিন এমন গৃহস্থালী সমস্যা এবং ‘এক বেডরুম এখনকার জন্য একটু বেশিই ছোট’–সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে জোহরান এই হতাশা প্রকাশ করেছেন।

তবে এই ধরনের সাধারণ সমস্যাগুলো আর বেশিদিন তাঁকে সামলাতে হবে না। কারণ, নিউইয়র্ক সিটির সরকারি বাসভবন গ্রেসি ম্যানশনের বাসিন্দা হবেন শিগগিরই।

জোহরান মামদানির বর্তমান অ্যাপার্টমেন্টটি বড়জোর ৮০০ বর্গফুট হতে পারে। সেখানে রয়েছে হিটিং ও গরম পানির ব্যবস্থা, রান্নাঘরে একটি জানালা, দুটি ক্লোজেট—এমন সাধারণ কিছু আসবাবপত্র।

অন্যদিকে, গ্রেসি ম্যানশন হলো ২২৬ বছরের পুরোনো, ১১ হাজার বর্গফুটের একটি প্রাসাদ। আপার ইস্ট সাইডে ইস্ট নদীর তীরে কার্ল শুরজ পার্কে অবস্থিত এই ভবন। ঝাড়বাতির আলোয় উজ্জ্বল আয়না, চকচকে মেহগনি কাঠের দরজা, বিশাল লনে রয়েছে আপেল ও ডুমুর গাছ এবং সবজি বাগান। বাগানে অবশ্য মাঝেমধ্যেই খরগোশেরা বেশ উপদ্রব করে। এমন এক রাজকীয় আবহ রয়েছে সেখানে।

গ্রেসি ম্যানশনকে একবার নিউইয়র্ক টাইমসের একজন রিপোর্টার ‘ফ্যাকাশে লেমন কেকের মতো বাড়ি’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। এটি কেবল বাসস্থান নয়, এটি কঠোর নিরাপত্তা এবং বিলাসবহুল আয়োজনের এক অভিজাত কেন্দ্র।

নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসিয়া ম্যানশন। ছবি: উইকিপিডিয়া
নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসিয়া ম্যানশন। ছবি: উইকিপিডিয়া

বাসভবনের নিচতলাটি অত্যন্ত জমকালো ‘ফেডারেল’ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। এই স্থাপত্য নকশায় মেয়রের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এখানে একটি গ্র্যান্ড ফায়ারপ্লেস-সহ বিনোদন কক্ষ এবং প্যারিসের বাগানচিত্রযুক্ত ওয়ালপেপার দিয়ে মোড়ানো একটি ডাইনিং রুম রয়েছে।

মেয়রদের জন্য এখানে রয়েছে পূর্ণ-সময়ের শেফ, যিনি তাঁর জন্য খাবার প্রস্তুত করেন। করিডোরের ওপারে রয়েছে বিশাল বলরুম। ১৯৬৬ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়।

নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসিয়া ম্যানশন। ছবি: উইকিপিডিয়া
নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসিয়া ম্যানশন। ছবি: উইকিপিডিয়া

মূল ভবনে ওপর তলায় রয়েছে পাঁচটি বেডরুম। যদিও ঘরোয়া আবহ আনার জন্য বিভিন্ন মেয়র তাঁদের মতো করে অভ্যন্তরীণ সজ্জা পরিবর্তন করেছেন। মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর পরিবার আধুনিকীকরণের জন্য একজন ডেকোরেটর নিয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া মেয়র আব্রাহাম বিমের স্ত্রী মাঝরাতের হালকা খাবার খাওয়ার জন্য একটি ঘরকে ছোট ডাইনেটে রূপান্তরিত করেছিলেন।

মেয়র ডি ব্লাসিওর ছেলে ড্যান্টে ডি ব্লাসিও স্মরণ করেন, ‘বিশাল লন এবং বলরুম পাওয়াটা ছিল আমেরিকার সবচেয়ে ভাগ্যবান শিশুর মতো অনুভূতি।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, এই বিশালতা শহরের দৈনন্দিন বাস্তবতা, এর গৌরব ও বিনয়ের দিকগুলো থেকে ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসিয়া ম্যানশন। ছবি: উইকিপিডিয়া
নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসিয়া ম্যানশন। ছবি: উইকিপিডিয়া

অ্যাস্টোরিয়া, যেখানে মামদানি এখনো অ্যাসেম্বলিম্যান হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেন, সেটি হলো বহু সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র—গ্রিক, মিশরীয়, মরক্কো এবং লাতিন জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। এটি সাশ্রয়ী, কোলাহলপূর্ণ এবং নিউইয়র্কের অন্যতম সেরা ফুড জোন। মামদানি নিজেই তাঁর পাড়ার থাই রেস্তোরাঁর কাঁচা স্পাইসি বিফ এবং সামুদ্রিক খাবারের স্পটগুলো (বাহারি ইস্টিয়াটোরিও, ইলিয়াস কর্নার এবং আবুকার) সুপারিশ করেন।

অন্যদিকে, আপার ইস্ট সাইড দীর্ঘকাল ধরে নিউইয়র্কের সবচেয়ে ধনী এবং অভিজাত এলাকা। এখানে বার্গার বা স্প্যাগেটি পমোডোরো সহজে খুঁজে পেলেও অ্যাস্টোরিয়ার মতো ভিন্ন স্বাদের খাবার পাওয়া কঠিন। সেন্ট্রাল পার্কের কাছে অবস্থিত মার্ক হোটেলের মতো বিলাসবহুল স্থানে এক প্লেট গ্রিলড ব্ল্যাক সি বাসের দাম ৭২ ডলার।

মামদানির অ্যাস্টোরিয়ার অ্যাপার্টমেন্টে কোনো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। কিন্তু গ্রেসি ম্যানশনের আসল আকর্ষণ হলো এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উঁচু প্রাচীর, চতুর্দিকে ক্যামেরা এবং বাইরে মোতায়েন থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের দল—নিরাপত্তার এই স্তরটি নিশ্চিত করার জন্যই মেয়ররা শেষ পর্যন্ত এখানে আসতে বাধ্য হন। প্রাক্তন মেয়র বিল ডি ব্লাসিও মামদানিকে এই কারণেই গ্রেসি ম্যানশনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন: ‘নিরাপত্তার জন্য হলেও তার সেখানে যাওয়া উচিত।’

মেয়র ফিওরেলো লাগার্ডিয়া ১৯৪২ সালে প্রথম এই ম্যানশনে স্থানান্তরিত হন এবং এর নাম পরিবর্তন করে আরও সাধারণ ‘গ্রেসি ফার্ম’ রাখার চেষ্টা করেন। যদিও নামটি টেকেনি, কিন্তু তাঁর স্ত্রী নিজে বাড়ির সমস্ত গৃহস্থালির কাজ করতেন এবং লনে পরিবারের কাপড় শুকাতেন।

তবে সাবেক মেয়র এরিক অ্যাডামস এই বাড়ির এক অন্যরকম হুমকির কথা বলেছিলেন: ‘ম্যানশনে ভূত আছে, ভাই!’

মেয়র রুডি গুলিয়ানিকে তাঁর তৎকালীন স্ত্রী ডোনা হ্যানোভার ডিভোর্স দিলে, সিটি হল ছাড়ার কয়েক বছর পরে এটির লনেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের অনুষ্ঠান করেন রুডি।

মেয়র এড কচ প্রথমে তাঁর ভাড়া বাড়িতে থাকতে চাইলেও পরে ভোটারদের ফোনের অত্যাচারে বিরক্ত হয়ে গ্রেসি ম্যানশনে চলে যান। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘পশ জীবনের সঙ্গে খুব দ্রুত মানিয়ে নেওয়া যায়, এবং আমি সেটাই করেছিলাম।’

ড্যান্টে ডি ব্লাসিওর পরামর্শ ছিল, ‘আপনার প্রচুর পার্টি করা উচিত!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রে ভুল ঠিকানায় গিয়ে বাড়িওয়ালার গুলিতে নিহত গৃহকর্মী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় গুলিতে নিহত মারিয়া ফ্লোরিন্ডা রিওস পেরেজ। ছবি: সিবিএস
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় গুলিতে নিহত মারিয়া ফ্লোরিন্ডা রিওস পেরেজ। ছবি: সিবিএস

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে ভুলবশত অন্যের বাড়িতে যাওয়ায় এক গৃহকর্মীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে কি না, তা খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টার কিছু আগে মারিয়া ফ্লোরিন্ডা রিওস পেরেজ নামের ওই নারীকে তাঁর স্বামীর কোলে মৃত অবস্থায় বাড়ির বারান্দায় পাওয়া যায়।

পুলিশ ওই সময় ইন্ডিয়ানাপলিসের উপশহর হুইটসটাউনে একটি বাড়িতে অনধিকার প্রবেশের খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছায়। পুলিশ বলছে, নিহত নারী ও তাঁর স্বামী বাড়ির ভেতরে ঢোকেননি।

বাড়ির বাসিন্দাদের নাম পুলিশ এখনো প্রকাশ করেনি বা কে গুলি চালিয়েছে, তা জানায়নি। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এটি ‘জটিল, সংবেদনশীল ও চলমান তদন্ত’। এখনই কোনো তথ্য প্রকাশ করা অনুচিত এবং সম্ভাব্যভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

তদন্তকারীরা জনসাধারণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই ঘটনার বিষয়ে ‘অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে’, যা উদ্বেগজনক।

সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিহত নারীর স্বামী মৌরিসিও ভেলাজকেজ তাঁর ৩২ বছর বয়সী স্ত্রীর জন্য ন্যায়বিচার দাবি করেন।

সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নিহত মারিয়া চার সন্তানের জননী ছিলেন। তিনি গুয়াতেমালা থেকে এসেছেন।

সিবিএসের সহযোগী চ্যানেল ডব্লিউটিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভেলাজকেজ বলেন, গুলি বাড়ির দরজা ভেদ করে এসে তাঁর স্ত্রীর গায়ে লাগে।

ভেলাজকেজ বলেন, ‘ওরা আগে পুলিশ ডাকতে পারত। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই সরাসরি গুলি চালাল। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হিন্দুধর্মও তো নিবন্ধিত নয়—কংগ্রেসের আক্রমণের জবাবে আরএসএস প্রধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল নয়; বরং নীতির পক্ষে অবস্থান নেয়—এমনটাই বলেছেন সংগঠনটির প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর মতে, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের দাবিকে যদি কংগ্রেস সমর্থন করত, তাহলে আরএসএসের কর্মীরা কংগ্রেসকেই সমর্থন করতেন।

মোহন ভাগবতের এই মন্তব্য এমন সময়ে এল—যখন কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা, বিশেষ করে দলীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আরএসএসের সমালোচনায় মুখর। গত মাসে খাড়গে বলেছিলেন, আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা উচিত। তাঁর ছেলে ও কর্ণাটকের মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়গেসহ বেশ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা সম্প্রতি আরএসএসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালান।

কংগ্রেসের নেতাদের থেকে আসা আক্রমণের জবাবে ভাগবত বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। নির্বাচনী রাজনীতিতেও অংশ নিই না। সংঘের কাজ হলো সমাজকে এক করা। অন্যদিকে রাজনীতি বিভাজন সৃষ্টি করে। আমরা নীতিকে সমর্থন করি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা অযোধ্যায় রামমন্দির চেয়েছিলাম। তাই আমাদের স্বয়ংসেবকরা এটি নির্মাণের পক্ষে ছিলেন। বিজেপি তা সমর্থন করেছিল। তাই তারা ভোট পেয়েছে। কংগ্রেস যদি ওই দাবিকে সমর্থন করত, আমাদের স্বয়ংসেবকেরা তাদেরই ভোট দিত।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ নেই। সংঘের নিজস্ব কোনো দল নেই, কোনো দল আমাদের নয়। আবার সব দলই আমাদের—কারণ তারা ভারতীয় দল। আমরা “রাষ্ট্রনীতি”কে সমর্থন করি, “রাজনীতি”কে নয়। আমাদের নিজস্ব মত আছে। আমরা চাই, দেশ নির্দিষ্ট পথে এগোক। যারা সেই পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আমরা তাদেরই সমর্থন করব।’

আরএসএসে মুসলমানদের যোগ দেওয়ার সুযোগ আছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে আরএসএস প্রধান বলেন, ‘সংঘে কোনো ব্রাহ্মণ, কোনো জাতি, কোনো মুসলমান বা খ্রিষ্টান আলাদাভাবে অনুমোদিত নয়। কিন্তু যে কেউ—মুসলমান বা খ্রিষ্টানসহ—নিজস্ব পৃথক পরিচয় বাইরে রেখে সংঘে যোগ দিতে পারে। শাখায় এলে তিনি “ভারত মায়ের সন্তান” হিসেবেই আসেন। মুসলমান ও খ্রিষ্টানরাও শাখায় আসেন। তবে আমরা তাদের সংখ্যা গুনি না। কারা আসছেন, তা-ও জিজ্ঞেস করি না।’

কংগ্রেস নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, আরএসএস নিবন্ধিত সংগঠন নয়।

এর জবাবে ভাগবত বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর বহুবার দেওয়া হয়েছে। যাঁরা প্রশ্ন তুলতে চান, তাঁরা বারবার সেটা তুলেই যান। সংঘের জন্ম ১৯২৫ সালে। তখন কি আমরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে গিয়ে নিবন্ধন করতাম? স্বাধীনতার পরও আইন অনুযায়ী নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। “বডি অব ইনডিভিজুয়্যালস” হিসেবেই আমাদের আইনগত স্বীকৃতি আছে এবং আমরা একটি স্বীকৃত সংগঠন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনবার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যদি আমরা না থাকতাম, তাহলে সরকার কাকে নিষিদ্ধ করেছিল? প্রতিবারই আদালত সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। সংসদ ও বিধানসভায় বহুবার আরএসএসকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমর্থন ও বিরোধিতা—দুটিই হয়েছে। আইনগতভাবে ও বাস্তবে আমরা একটি সংগঠন, অসাংবিধানিক নই। তাই নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। অনেক কিছুই আছে, যেগুলো নিবন্ধিত নয়। হিন্দুধর্মও তো নিবন্ধিত নয়।’

আরএসএসের শক্তি বরং আরও বাড়ে, যখন তার বিরোধিতা করা হয়—যোগ করেন ভাগবত।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত