Ajker Patrika

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মন্তব্যের জেরে ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ২১: ৩৫
আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ। ছবি: সংগৃহীত
আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ। ছবি: সংগৃহীত

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ফেসবুকে পোস্টের জেরে আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করেছে হরিয়ানা পুলিশ। ‘নারী সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে কটাক্ষ’ ও ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো’র অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে দেশের শিক্ষাবিদ ও অধিকারকর্মীরা এই গ্রেপ্তারকে বাক্‌স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই মনে করছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ মে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন অধ্যাপক মাহমুদাবাদ। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি খুশি যে অনেক ডানপন্থী বিশ্লেষকেরা কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তবে একইভাবে তাঁরা যদি গো হত্যার অভিযোগে গণপিটুনির শিকার, ইচ্ছেমতো বাড়িঘর ভাঙার ও বিজেপির ঘৃণানীতির শিকার সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার দাবি করতেন, তাহলে সেটা আরও বেশি অর্থবহ হতো। দুই নারী সেনা কর্মকর্তার প্রেস ব্রিফিং অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি চিত্র, তবে বাস্তব পরিবর্তন না এলে তা শুধুই লোকদেখানো।’

তাঁর এই পোস্ট ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশন তাঁকে ‘নারী সেনা কর্মকর্তাদের অপমান’ ও ‘সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো’র অভিযোগে তলব করে এবং ২৩ মের মধ্যে হাজিরা না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়।

তবে অধ্যাপক মাহমুদাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বক্তব্যে কোথাও নারীবিদ্বেষ নেই; বরং আমি সাধারণ নাগরিক ও সেনাদের সুরক্ষা নিয়েই কথা বলেছি।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর পোস্টের বক্তব্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে।

সমাজকর্মী শবনম হাশমি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘আজ অধ্যাপক মাহমুদাবাদকে হরিয়ানা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। তাঁর পোস্ট পড়লে দেখা যাবে, সেখানে কিছুই দেশদ্রোহ বা নারীবিরোধী নয়। এটি নিছক হয়রানি।’

দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে ‘ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন সংস্করণ’ অর্থাৎ ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দেওয়া’, ‘বিদ্রোহে প্ররোচনা’ ও ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করার ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে মাহমুদাবাদের আইনজীবীরা বলছেন, এগুলো ভিত্তিহীন অভিযোগ। পোস্টে তিনি সংবিধানসম্মত মতপ্রকাশের অধিকার প্রয়োগ করেছেন।

এদিকে অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের প্রতিবাদে ভারতের ১ হাজার ১০০ জনের বেশি শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অধিকারকর্মী একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা অবিলম্বে এই সমন প্রত্যাহার এবং হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রকাশ্য ক্ষমা দাবি করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হরিয়ানা ভারতের নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতায় অন্যতম শীর্ষ রাজ্য। সেসব মোকাবিলা না করে হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশন অহেতুক একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁকে হয়রানি করছে। এটি দেশের সংবিধানিক বাক্‌স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।

এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমিত ভাদুড়ি, ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, লেখক রামচন্দ্র গুহ, সমাজকর্মী হর্ষ মন্দার, অধ্যাপক জয়তি ঘোষ ও সমাজকর্মী নিবেদিতা মেনন।

প্রসঙ্গত, এর আগে গতকাল শনিবার পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে হরিয়ানার এক ইউটিউবারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জ্যোতি মালহোত্রা নামের ওই ইউটিউবারের সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুলসংখ্যক অনুসারী রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে তিনি পাকিস্তান সফর করেছিলেন এবং সেই ভ্রমণের একাধিক ভিডিও তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করেন। পুলিশের অভিযোগ, জ্যোতি ভারতের কয়েকটি জায়গার সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানি এজেন্টদের কাছে পাচার করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত