Ajker Patrika

বিমানবাহিনী দিবসে পাকিস্তানের শহরগুলোকে ‘রোস্ট’ করে খেল ভারত

কলকাতা প্রতিনিধি  
ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নৈশভোজের মেনুতে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরের নাম। ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নৈশভোজের মেনুতে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরের নাম। ছবি: সংগৃহীত

নয়াদিল্লিতে এক জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী তাদের ৯৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করেছে। কিন্তু অনুষ্ঠানের শেষ পর্বের নৈশভোজের মেনু হয়ে উঠেছে পুরো দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মনে হচ্ছে যেন নৈশভোজে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর ‘রোস্ট’ করে খেয়েছে ভারত!

মেনু প্রকাশ্যে আসতেই দেখা যায়, তাতে একের পর এক পদ পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরের নামে। যেমন—রাওয়ালপিন্ডি চিকেন টিক্কা মাসালা, রফিকি রারা মাটন, সুক্কুর শাম সাভেরা কোফতা, সরগোধা ডাল মাখনি, জাকোবাবাদ মেওয়া পোলাও, বাহাওয়ালপুর নান এবং ডেজার্টে বালাকোট টিরামিসু, মুজাফফরাবাদ কুলফি ফালুদা ও মুরিদকে মিষ্টি পান।

পাকিস্তানের শহরের নামে নামকরণ করা এই মেনুর ছবি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় এক্স ও ইনস্টাগ্রামে। তারপরই শুরু হয় মন্তব্যের বন্যা। কেউ লিখেছেন—‘প্লেটে যেন আসলেই পাকিস্তান’, আবার কেউ মন্তব্য করেছেন—‘বিমানবাহিনীর রসবোধ ও বার্তা একসঙ্গে পরিবেশন হলো টেবিলে।’ হ্যাশট্যাগে ভরে ওঠে টাইমলাইন—#RawalpindiChicken, #IAFDay, #SavageMenu।

তবে মেনুর প্রতিটি নাম নিছক রন্ধনশৈলীর কল্পনা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কৌশলগত ইঙ্গিত। কারণ, এই শহরগুলোর একাধিক স্থান অতীতে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বা বিমান হামলার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। যেমন বালাকোট, সরগোধা বা রাওয়ালপিন্ডি। এমন মেনু প্রকাশ্যে আসায় অনেকে বলেছেন, এটা যেন ‘অপারেশন কিচেন’—যেখানে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা হয়েছে রসবোধের অস্ত্রে।

প্রতিরক্ষা সচিবালয় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও বিমানবাহিনী সূত্রে বোঝা গেছে, এটি পরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছিল মনোবল বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে। সামরিক বাহিনীর গাম্ভীর্য ও শৃঙ্খলার মধ্যেও যে রসবোধ থাকতে পারে, সেটাই এ বছরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনের বার্তা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গেছে, বহু সাবেক সেনাকর্মী এই উদ্যোগকে ‘চতুর স্যাটায়ার’ বলে অভিহিত করেছেন। এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘যখন আপনি সীমানা রক্ষা করেন, তখন যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়াও মনোবলে লড়াই চলে—এই মেনু সেই মানসিক লড়াইয়ের প্রতীক।’ অন্যদিকে কিছু সমালোচক বলছেন, সেনাবাহিনী যদি রন্ধনশৈলীর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দেয়, তা কূটনৈতিক শালীনতার পরিপন্থী হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ সাধারণ নাগরিক ও তরুণ প্রজন্ম একে হাস্যরসাত্মক দেশপ্রেমের প্রকাশ বলেই দেখছেন।

আসলে বর্তমান সময়ে প্রতিরক্ষা বিষয় মানেই শুধু গুরুগম্ভীর টোন নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্রমশ জনসংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠছে। এ মেনুর মাধ্যমে ভারতীয় বিমানবাহিনী বোঝাতে চেয়েছে—যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন তাদের দক্ষতা অবিসংবাদিত, তেমনই মঞ্চ ও মনেও তারা প্রস্তুত।

দিল্লির ওই নৈশভোজে উপস্থিত ছিলেন বিমানবাহিনীর প্রধান, সেনা ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠান শেষে যখন অতিথিরা মেনুর দিকে চোখ ফেলেন, তখনই রাওয়ালপিন্ডি চিকেন বা বালাকোট টিরামিসুর মতো নাম দেখে হাসির রোল পড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে অতিথিদের অনেকে সে ছবি তোলেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন, যার ফলে খবরটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

মেনু ঘিরে হাস্যরস যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনই সীমান্তের ওপারে বার্তাও পৌঁছে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি নিছক একটি নৈশভোজের আয়োজন নয়, বরং জনমত ও প্রতিরক্ষা ভাবমূর্তি গঠনের একটি নরম কৌশল (soft power projection)। আধুনিক রাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা যোগাযোগে এখন মনস্তাত্ত্বিক কূটনীতি বা ‘psy-ops’-এর গুরুত্ব বেড়ে গেছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এ রসবোধ সে ধারারই অংশ, যেখানে হাসির ছলে কৌশলগত বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ফোন বন্ধ পেলে ধরে নিবা মারা গেছি’, স্ত্রীকে বলেছিলেন ইউক্রেনে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল

শাহবাগে গত রাতে ফুটপাত থেকে নারীসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার

নার্সিং হোমে বয়স্ক পুরুষদের ওষুধ খেতে উৎসাহিত করতে মিনি স্কার্ট পরে তরুণীর নাচ

ফিলিস্তিনিদের বের করে দেওয়া হবে না, বরং উল্টোটা ঘটবে: ট্রাম্প

যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইসরায়েলের দুজন প্রধানমন্ত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত