Ajker Patrika

অপারেশন হানিমুন: প্রেমিকের সঙ্গে স্বামীকে হত্যার ছক কষেন সোনমই

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, ২০: ৫১
সোনম ও তাঁর স্বামী রাজা রঘুবংশী। ছবি: সংগৃহীত
সোনম ও তাঁর স্বামী রাজা রঘুবংশী। ছবি: সংগৃহীত

মাত্র কয়েক দিনের বিবাহিত জীবন। এর মধ্যেই ভয়ংকর এক ষড়যন্ত্রের শিকার হন মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশী। স্ত্রী সোনমের সঙ্গে তিনি মেঘালয় ভ্রমণে গিয়েছিলেন হানিমুনে। তিনি জানতেন না, এ যাত্রাই তাঁর শেষ যাত্রা।

তদন্তে জানা গেছে, স্ত্রী সোনম ও তাঁর প্রেমিক রাজ কুশওয়াহারই রাজাকে হত্যার ছক কষেছিলেন। এই কাজে তাঁদের সহযোগিতা করেছে তিন ভাড়াটে খুনি।

ভারতের চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এনডিটিভি জানিয়েছে, গত ১১ মে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রাজা ও সোনম। এরপর ২০ মে তাঁরা মেঘালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। সোনম ও তাঁর প্রেমিক রাজের পরিকল্পনা অনুযায়ী একই দিনে গুয়াহাটিতে পৌঁছান তিন ভাড়াটে খুনি আনন্দ কুর্মি, আকাশ রাজপুত ও বিশাল সিং চৌহান। সেখানে তাঁরা অনলাইনে একটি কুঠার অর্ডার করেন। ২৩ মে স্বামী রাজাকে ফটোশুটের কথা বলে পাহাড়ি পথে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যান সোনম। একপর্যায়ে সেখানে তিনি ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার ভান করে রাজার পেছনে পড়ে যান এবং আচমকা চিৎকার করেন—‘মেরে দো’! এটাই ছিল হত্যার সংকেত।

উদ্ধার হলো লাশ, ধরা পড়লেন খুনিরা

রাজার নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রথমে নিখোঁজ তদন্ত হিসেবে শুরু হলেও ২ জুন পূর্ব খাসি হিলসে একটি গিরিখাদ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়। এরপরই এটি একটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়। রাজার মাথার সামনে-পেছনে দুটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। কাছেই পাওয়া যায় রক্তমাখা একটি কুঠার।

‘অপারেশন হানিমুন’

এই ঘটনার তদন্তে ২০ সদস্যের বিশেষ টিম ‘অপারেশন হানিমুন’ গঠন করেছিল মেঘালয় পুলিশ। ৪২টি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, কলরেকর্ড যাচাই ও নানা জেলায় অভিযান চালিয়ে তারা গ্রেপ্তার করে তিন খুনিকে। আর ৮ জুন রাতে মধ্যপ্রদেশের গাজীপুরে একটি ধাবায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় সোনমকে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে গাজিপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

সোনমের নাটক ও পরিকল্পনার ব্যর্থতা

সোনম দাবি করেন, তাঁকে মাদক খাইয়ে গাজিপুরে আনা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের দাবি, তিনি নিজেই নাটক সাজিয়ে নিজেকে ‘ভিকটিম’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। তদন্তে জানা যায়, তিনি খুনিদের প্রথমে ৪ লাখ, পরে ২০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। আর সরাসরি ঘটনাস্থলে না গেলেও পুরো ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন সোনমের চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট তাঁর প্রেমিক রাজ। তাঁকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শেষ ফোনকল ও বিভ্রান্তির ছাপ

গত ২৩ মে সোনমের সঙ্গে রাজার মায়ের একটি ফোনালাপ ছিল। ফোনে শাশুড়িকে সোনম জানিয়েছিলেন, রাজার সঙ্গে তিনি জঙ্গলের মধ্যে ট্র্যাক করছেন। তবে সেখানেই সোনমের ক্লান্ত কণ্ঠ ও রাজার অনুপস্থিতি নিয়ে সন্দেহ জাগে। এই কলই পরে পুলিশের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে কাজ করে।

পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সোনম ও তাঁর প্রেমিক রাজের একটি চাঞ্চল্যকর চ্যাটও। এই চ্যাটে সোনম রাজকে লিখেছেন, ‘রাজা কাছে আসছে, আমি তাকে মোটেও পছন্দ করি না...’। বিয়ের মাত্র তিন দিন পরই সোনম ও রাজ রাজাকে খুনের ষড়যন্ত্র করেন। আর খুনের জন্য বেছে নেন হানিমুন ট্রিপকেই।

২৬ বছর বয়সী সোনমের থেকে বয়সে পাঁচ বছরের বড় ছিলেন রাজা রঘুবংশী। অন্যদিকে প্রেমিক রাজ ছিলেন সোনমের চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট। সোনমের বাবার প্লাইউডের ব্যবসা। সেই কারখানাতেই কাজ করতেন ২১ বছর বয়সী রাজ। সোনমও তাঁর পড়াশোনা শেষ করার পর বাবার প্লাইউডের ব্যবসার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে রাজের দেখা হয়।  

কারখানায় সোনমের সহকর্মীদের মধ্যেই ছিলেন রাজ কুশওয়াহার। একই কারখানায় কাজ করার পাশাপাশি সোনমদের সঙ্গে এক পাড়াতেই থাকতেন রাজ। এই ঘনিষ্ঠতা থেকেই দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিরপরাধ ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশী এই প্রেমেরই শিকার হলেন অবশেষে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত