Ajker Patrika

এইচ-১বি ভিসা নীতি নিয়ে ভারতের রাজনীতিতেও উত্তাপ

কলকাতা প্রতিনিধি  
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
এত বড় একটি নীতিগত পরিবর্তন এক দিনের মধ্যে কার্যকর করায় ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বজুড়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
এত বড় একটি নীতিগত পরিবর্তন এক দিনের মধ্যে কার্যকর করায় ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বজুড়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

এইচ-১বি ভিসা ফি এক লাখ ডলারে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানান, প্রতি নতুন আবেদনকারীকে এই ফি দিতে হবে। পুরোনোদের বা ভিসা নবায়নে এই ফি লাগবে না। এই নতুন ফি নিয়ে সবচেয়ে বেশি অস্থির হয়ে পড়েছে ভারতের প্রযুক্তি খাত। এই ফি আরোপ দেশটির জনগণ ও প্রবাসীদের যেমন আতঙ্কে ফেলেছে, তেমনি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মঞ্চও।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৭৫তম জন্মদিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুভেচ্ছা জানানোর মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত আসায় বিরোধীরা এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে মোদি সরকারের প্রতি তীব্র বাক্যবাণ ছুড়েছেন।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লেখেন, ‘আমি ফের বলছি, ভারত একজন দুর্বল প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে।’ ২০১৭ সালের নিজের একটি পুরোনো টুইট শেয়ার করে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘তখনো বলেছিলাম, এখনো বলছি—মোদি দুর্বল।’

অন্যদিকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক্সে লেখেন, ‘আপনার জন্মদিনে ফোনে শুভেচ্ছার পর ট্রাম্প যে উপহার দিলেন, তাতে কেবল ভারতীয়দের কষ্ট বাড়ল।’

তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি মহুয়া মৈত্র কটাক্ষ করে বলেন, ‘৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা, তারপর ১ লাখ ডলার ভিসা ফি—ট্রাম্পের বন্ধুত্ব ভারতের জন্য ভয়ানক ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে।’

ট্রাম্প সরকারের দাবি, মার্কিন কর্মসংস্থান রক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে নতুন এই বিশাল অঙ্কের ভিসা ফির সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভারতীয় প্রযুক্তি খাতের হাজার হাজার কর্মী।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যত এইচ-১বি ভিসা অনুমোদিত হয়েছিল, তাঁর ৭২ শতাংশই পেয়েছিলেন ভারতীয় নাগরিকেরা। এরই মধ্যে মাইক্রোসফট, জেপি মরগ্যান ও অ্যামাজনের মতো বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে নির্দেশ দিয়েছে।

এই খবরের প্রভাব পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারেও। আজ সোমবার সকালে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ন্যাশনাল শেয়ার এক্সচেঞ্জে সূচকগুলো ব্যাপক পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু করে। নিফটি ও সেনসেক্স প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ইনফোসিস, টিসিএস, উইপ্রো, এইচসিএল টেক ও টেক মাহিন্দ্রার মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম ৪ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসে।

মুম্বাইয়ের এক বিনিয়োগকারী জানান, আইটি শেয়ারে দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ থেকে এক দিনেই লাখ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

এই আকস্মিক পতনে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন, যা বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশে ‘আত্মনির্ভরতার’ ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ভারতের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো বিদেশ নির্ভরতা।’ তবে তাঁর পুরোনো একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘একদিন আমেরিকানরা ভারতের ভিসার জন্য লাইন দেবে।’ নেটিজেনরা কটাক্ষ করে লিখছেন, ‘বন্ধুত্বের আসল খেসারত দিচ্ছেন ভারতীয় তরুণেরা।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তের মানবিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, এই ফি বৃদ্ধির ফলে বহু পরিবার বিভক্ত হতে পারে এবং বিদেশে কর্মরত ভারতীয়দের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রণধীর আরও বলেন, প্রযুক্তি খাত এবং দক্ষ মেধার আদান-প্রদান উভয় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের পদক্ষেপ সেই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। ন্যাসকমও এই পদক্ষেপকে প্রযুক্তি খাতের ব্যবসার ধারাবাহিকতা ব্যাহতকারী বলে উল্লেখ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত