Ajker Patrika

ভারতের সবচেয়ে বড় হিপ-হপ তারকাকে খুনের কারণ জানালেন গ্যাংস্টার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, ২২: ১৭
প্রয়াত পাঞ্জাবি হিপ-হপ তারকা সিধু মুসেওয়ালা। ছবি: বিবিসি
প্রয়াত পাঞ্জাবি হিপ-হপ তারকা সিধু মুসেওয়ালা। ছবি: বিবিসি

২০২২ সালের মে মাসের এক উষ্ণ সন্ধ্যায় ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের মানসা জেলার এক গ্রামীণ রাস্তায় নিজের কালো মাহিন্দ্রা থার গাড়িটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন পাঞ্জাবি হিপ-হপ তারকা সিধু মুসেওয়ালা। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটি গাড়ি তাঁর গাড়িকে অনুসরণ করতে শুরু করে। পরে একটি বাঁকে গিয়ে তাঁকে ঘিরে ধরে। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয় গুলি বর্ষণ। এতে সিধুর গাড়ির সামনের কাচ গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ সিধুকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মাত্র ২৮ বছর বয়সে ২৪টি বুলেটবিদ্ধ হয়ে, খুন হলেন ভারতের সর্বাধিক আলোচিত গায়কদের একজন।

ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কানাডা থেকে সামাজিক মাধ্যমে এই খুনের দায় স্বীকার করেন পাঞ্জাবি গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রার। কিন্তু আজ, প্রায় তিন বছর পরও, এই ঘটনায় কাউকে আদালতের মুখোমুখি হতে হয়নি। গোল্ডি এখনো পলাতক।

তবে সম্প্রতি ‘বিবিসি আই’-এর এক অনুসন্ধানে গোল্ডি ব্রারের সঙ্গে ৬ ঘণ্টার এক কথোপকথনের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ।

বিবিসিকে গোল্ডি বলেছেন, ‘সিধু এমন কিছু ভুল করেছিল যেগুলো ক্ষমার অযোগ্য। আমাদের হাতে বিকল্প ছিল না। হয় ও, না হয় আমরা। ব্যাপারটা এতটাই সোজা।’

সিধু মুসেওয়ালার আসল নাম শুভদীপ সিং সিধু। জন্ম পাঞ্জাবের এক জাঠ-শিখ পরিবারে। ২০১৬ সালে পড়াশোনার জন্য যান কানাডায়। সেখানেই শুরু হয় সংগীতজীবনের উত্থান। গ্রামের নাম ‘মুসা’ থেকেই নেন মঞ্চনাম ‘সিধু মুসেওয়ালা’। গান লিখতেন পরিচয়, রাজনীতি, প্রতিশোধ আর অস্ত্র নিয়ে—যা তাঁকে পাঞ্জাবি হিপ-হপের ব্যতিক্রমী কণ্ঠে পরিণত করে।

তবে শুধু কণ্ঠ নয়, সিধু হয়ে ওঠেন প্রজন্মের প্রতীক। ইউটিউবে পাঁচ বিলিয়ন ভিউ, ইউকে চার্টে শীর্ষ স্থান, আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সঙ্গে গান—সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন এক তারকা। কিন্তু তারকাখ্যাতির পাশাপাশি তিনি আকৃষ্ট করেছিলেন অপরাধ জগতের মনোযোগও।

ভারতের গ্যাং লিডারদের মধ্যে গোল্ডি ব্রার ও তাঁর সঙ্গী লরেন্স বিষ্ণোই সবচেয়ে কুখ্যাত। বিষ্ণোই বর্তমানে ভারতের একটি হাই-সিকিউরিটি জেলে থাকলেও সেখান থেকেই গ্যাং পরিচালনা করছেন। আর ২০১৭ সালে কানাডায় চলে যাওয়া গোল্ডি প্রথম দিকে ট্রাক চালাতেন। এখন তিনি বিষ্ণোই গ্যাংয়ের অন্যতম চালিকাশক্তি।

ভারতের গ্যাং লিডারদের মধ্যে গোল্ডি ব্রার ও তাঁর সঙ্গী লরেন্স বিষ্ণোই সবচেয়ে কুখ্যাত। ছবি: বিবিসি
ভারতের গ্যাং লিডারদের মধ্যে গোল্ডি ব্রার ও তাঁর সঙ্গী লরেন্স বিষ্ণোই সবচেয়ে কুখ্যাত। ছবি: বিবিসি

বিবিসিকে দেওয়া বক্তব্যে গোল্ডি জানান, সিধুর সঙ্গে বিষ্ণোইয়ের যোগাযোগ ছিল ২০১৮ সাল থেকেই। এমনকি সিধু নাকি মাঝে মাঝে ‘গুড মর্নিং’ মেসেজও পাঠাতেন বিষ্ণোইকে। কিন্তু সম্পর্ক খারাপ হয় গ্রামীণ একটি হাডুডু খেলাকে কেন্দ্র করে। এই খেলাটি আয়োজন করা হয়েছিল বিষ্ণোই গ্যাংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ‘বম্বিহা গ্যাং’-এর এলাকায়। সিধু সেই খেলাটির প্রচারে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। আর এই বিষয়টিই বিষ্ণোই ও ব্রারকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ২০২১ সালে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের ঘনিষ্ঠ ভিকি মিদ্দুখেরা খুন হলে আবার উত্তপ্ত হয় সম্পর্ক। সেই খুনের জন্য বম্বিহা গ্যাং দায় স্বীকার করে। কিন্তু পুলিশের অভিযোগপত্রে উঠে আসে সিধুর ম্যানেজার ও বন্ধু শাগনপ্রীতের নাম। শাগনপ্রীত পরে দেশ ছাড়েন, বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায়। ওই হত্যাকাণ্ডে সিধু নিজে জড়িত—এমন প্রমাণ মেলেনি। তারপরও গোল্ডি বিশ্বাস করেন এতে সিধু জড়িত ছিলেন।

গোল্ডি বলেন, ‘আমরা বারবার বিচার চেয়েছি। কিন্তু কেউ শোনেনি। যখন ভদ্রতা ব্যর্থ হয়, তখন বন্দুকের কথাই মনে আসে।’

বিবিসির প্রশ্ন ছিল—ভারতে কি বিচারব্যবস্থা নেই? উত্তরে ব্রার বললেন, ‘বিচারব্যবস্থা শুধু ক্ষমতাবানদের জন্য। আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জন্য নয়।’

এই খুন শুধু একজন শিল্পীকে কাড়েনি, বরং পাঞ্জাবের গ্যাং সংস্কৃতিকে আরও বেশি চর্চায় এনেছে। স্থানীয় সাংবাদিকেরা বলছেন, সিধু খুনের পর গোল্ডি ও বিষ্ণোইয়ের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এখন শুধু সংগীত জগৎ নয়, সাধারণ ব্যবসায়ীদেরও ফোনে হুমকি দিয়ে টাকা চাওয়া হচ্ছে।

গোল্ডি এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও স্বীকার করেন, ‘আমরা অনেক মানুষকে সামলাই—ওদের পরিবার মনে করি। টাকা তো লাগেই। টাকা পেতে ভয় দেখাতে হয়।’

এই ভয়, এই সহিংসতাই এক প্রতিভাবান গায়কের প্রাণ কেড়ে নিল—আর রেখে গেল একটি শূন্যতা, যাকে শুধাতে পারবে না কোনো গান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত