Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের মার্কিন প্রচেষ্টায় গোপনে বাগড়া দিচ্ছে ইউরোপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১২: ১৬
ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, কিছু ইউরোপীয় নেতা প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করলেও তারা গোপনে সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের মতে, ইউরোপীয় নেতারা নেপথ্যে আলাস্কা সম্মেলনের পর যে অগ্রগতি হয়েছিল, সেটাকে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এমন তথ্যই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।

খবরে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা ক্রমেই ইউরোপীয় নেতাদের ওপর ধৈর্য হারাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, ইউক্রেনকে তারা এমন সব অবাস্তব ভূখণ্ড ছাড়ের প্রত্যাশা দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাপ দিচ্ছেন। এই অবস্থায় হোয়াইট হাউস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টকে বলেছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপ যে সব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারে, তার একটি তালিকা তৈরি করতে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের দুই সপ্তাহ পরও যুদ্ধ শেষ করার পথে তেমন অগ্রগতি হয়নি। ট্রাম্পের উপদেষ্টারা মনে করছেন, এর দায় ইউরোপীয় মিত্রদের ওপর বর্তায়; ট্রাম্প বা পুতিনের ওপর নয়।

অ্যাক্সিওসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার ওপর ইউরোপকে আরোপের আহ্বান জানিয়েছে, তার মধ্যে আছে রাশিয়ার কাছ থেকে সব ধরনের তেল ও গ্যাস কেনা সম্পূর্ণ বন্ধ করা। পাশাপাশি ভারত ও চীনের ওপর দ্বিতীয় দফা শুল্ক বসানো—যেমনটি যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ভারতের ওপর বসিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, ‘ইউরোপ নিজেরা এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে, আবার যুক্তরাষ্ট্রকে খরচ বহন করতে বলবে—এটা চলবে না। ইউরোপ যদি যুদ্ধ বাড়াতে চায়, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। তবে এতে তারা নিশ্চিত জয়ের মুখ থেকে পরাজয় কেড়ে নেবে।’

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ইউরোপীয় নেতারা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ‘ভালো চুক্তির’ জন্য অপেক্ষা করতে চাপ দিচ্ছেন। এই সর্বোচ্চ প্রত্যাশার কৌশলই যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স তুলনামূলকভাবে গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে। তবে অভিযোগ, ইউরোপের অন্য প্রধান দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে পুরো যুদ্ধের খরচ বহন করতে চাইছে, অথচ নিজেরা কোনো ঝুঁকি নিচ্ছে না।

ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সমঝোতায় পৌঁছানো মানেই সম্ভবপর সমাধানের খোঁজ করা। কিন্তু কিছু ইউরোপীয় এখনো কল্পনার দুনিয়ায় আছেন। তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, ট্যাঙ্গো নাচতে গেলে দুজনকেই লাগবে, একজনকে দিয়ে হয় না।’

এদিকে, পুতিন ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বারবার বলেছেন, পরবর্তী ধাপ হওয়া উচিত পুতিন-জেলেনস্কি সম্মেলন। তবে এখনো রাশিয়া এতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে, ইউক্রেনও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া আলোচনার টেবিলে না এলে তারা কোনো ভূখণ্ড ছাড়ের বিষয়ে আলাপ করবে না।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার মার্কিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাম্প দৃশ্যত হতাশ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সবাই অভিনয় করছে। পুরো ব্যাপারটাই বাজে কথা।’

এদিকে কিয়েভে রাশিয়ার ব্যাপক বিমান হামলা আর ইউক্রেনের রুশ তেল শোধনাগারে পাল্টা আক্রমণ শান্তির সম্ভাবনাকে আরও দূরে ঠেলে দিয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার বলেন, ‘হয়তো যুদ্ধের দুই পক্ষই এখনো নিজেদের উদ্যোগে এটি শেষ করার মতো প্রস্তুত নয়। প্রেসিডেন্ট চান যুদ্ধ থামুক। তবে এ দুটি দেশের নেতাদেরও তা চাইতে হবে।’

হোয়াইট হাউসের অপর এক কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে জানিয়েছেন, ট্রাম্প এখন গুরুত্বের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থেকে সরে আসার কথা ভাবছেন, যতক্ষণ না অন্তত একটি পক্ষ কিছুটা নমনীয় হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা আপাতত পেছনে বসে থাকব। ওদের লড়াই করতে দেব। তারপর দেখা যাক কী হয়।’

ট্রাম্প দুই সপ্তাহ আগে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ও জেলেনস্কির সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক করলেও, এখন কিছু মার্কিন কর্মকর্তা ইউরোপীয়দের প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আলোচনায় যুক্ত একজন জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের সঙ্গে একরকম আর তাঁর পেছনে অন্যরকম খেলছেন—এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। বাস্তবে এমন কোনো ফাঁক নেই। তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার ওপর কাজ করছে।

শুক্রবার নিউইয়র্কে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ ও জেলেনস্কির প্রধান উপদেষ্টা আন্দ্রে ইয়ারমাকের বৈঠক হয়েছে। সেখানে সম্ভাব্য পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়। ইয়ারমাক উইটকফকে প্রথমবার কিয়েভ সফরে আমন্ত্রণ জানান। তবে বৈঠকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়নি বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত