Ajker Patrika

ইসরায়েল ছাড়ছেন ইহুদিরা, দৈনিক হাজারখানেক যাচ্ছেন সাইপ্রাসে

আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০: ৪৬
ইসরায়েল ছাড়ছেন ইহুদিরা, দৈনিক হাজারখানেক যাচ্ছেন সাইপ্রাসে

হলোকাস্ট থেকে বাঁচতে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল, সেখানেই ফিরছে ইসরায়েলি ইহুদিরা। দৈনিক প্রায় ১ হাজার ইহুদি ইসরায়েল ছেড়ে সাইপ্রাসে পাড়ি জমাচ্ছে। এখন তারা এ দেশকেই সবচেয়ে নিরাপদ মনে করছে। 

এখানেই ছিল ব্রিটিশদের বন্দিশিবির, যেখানে ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ সালের দিকে ৫৩ হাজার ইহুদিকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। তারা নাৎসিদের হলোকাস্ট থেকে প্রাণে বাঁচতে দলে দলে এখানে জড়ো হয়েছিল। সেখান থেকেই পরে নবগঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্রে তাদের শেষ ১০ হাজার জনকে স্থানান্তর করা হয়। 

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর ইহুদিরা আর সেখানে নিরাপদ বোধ করছে না। ওদিকে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের এই সামরিক শক্তির প্রদর্শনীতে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে ফিলিস্তিনের নারী, শিশুসহ বেসামরিক মানুষ। 

কিন্তু এর পরও ‘ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি’ ইসরায়েলকে নিরাপদ মনে করতে পারছে না ইহুদিরা। হাজার হাজার ইহুদি দেশ ছাড়ছে। মূলত ৭ অক্টোবরের পর থেকেই দেশত্যাগী মানুষের স্রোত দেখা যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমানবন্দরে। 

সাইপ্রাসের মধ্য লারনাকায় ইহুদি কমিউনিটি সেন্টার এখন লোকে লোকারণ্য। রীতিমতো সংকট পরিস্থিতিতে চলে গেছে এই কমিউনিটি সেন্টার। করিডর ও বিনোদনের স্থানগুলো ভরে গেছে যুবক, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষে। ইসরায়েল থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের ফ্লাইটে সাইপ্রাস দ্বীপে একটু নিরাপত্তা ও শান্তি খুঁজতে ছুটছে ইহুদিরা। 

দ্বীপের প্রধান রাব্বি অ্যারি জিভ রাসকিন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘দৈনিক প্রায় ১ হাজার লোক এখানে আসছে। সেই ভয়ানক দিন (৭ অক্টোবর) থেকে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ এখন মানসিক শান্তির সন্ধানে সাইপ্রাসে এসেছে।’ 

সংঘাত শুরু হওয়ার পর সেই মাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পরিবার সাইপ্রাসে গেছে। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রতিশোধমূলক পাল্টা আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে অপর পক্ষের পাল্টা আক্রমণের ভয়েও অনেকে দেশ ছেড়ে সাইপ্রাসে পাড়ি জমিয়েছে, যেখানে ইসরায়েলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। 

সাম্প্রতিক সপ্তাহে সাইপ্রাসে ইসরায়েলিদের ঢল নেমেছে। কিন্তু সংকটকালে সাইপ্রাসে শরণার্থীদের এমন আগমন নতুন নয়। হামাস-ইসরায়েল সংঘাত আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কার মধ্যে দেশটির সংঘাত-বিভক্ত রাজধানী নিকোসিয়ায় পশ্চিমা দূতাবাসগুলোও ‘কৌশলগত ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপটি আবারও মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র এবং পরিচালনাকেন্দ্রে’ পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখে তৎপরতা চালাচ্ছে। 

এর আগে ২০০৬‍ সালে লেবানন যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা ৩০ হাজার বিদেশি নাগরিকের জন্য একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সবচেয়ে পূর্বের এই দেশকে ব্যবহার করা হয়েছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে সুদান থেকে হাজার হাজার ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীকে উড়োজাহাজে করে দেশে ফেরানোর সময়ও সাইপ্রাসকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। 

সাইপ্রাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্ট্যান্টিনোস কম্বোস আশঙ্কা করছেন, গাজা-ইসরায়েল সংঘাত বাড়তে থাকলে লেবানন এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য অংশ থেকে সাইপ্রাসে ১ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। পার্লামেন্টে তিনি জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ৩৫টি দেশের ১ হাজারেরও বেশি পুরুষ, নারী ও শিশুকে দ্বীপে স্থানান্তর করা হয়েছে। 

জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের এসএএস সৈন্য এবং অন্যান্য বিশেষ বাহিনীকে সাইপ্রাসে তাদের সামরিক ঘাঁটিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে সাবেক এই উপনিবেশে এখনো যুক্তরাজ্যের উপস্থিতি রয়েছে। এই অভিজাত বাহিনীগুলো মূলত জিম্মি উদ্ধার অভিযানে দক্ষ বলে জানা যায়। 

গ্রিসের মতো সাইপ্রাসের দৃষ্টিভঙ্গিও দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের চেয়ে আরবের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকার পক্ষে। ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি এবং ইসরায়েলের উপকূলে গ্যাসের মজুত আবিষ্কারের পর সমুদ্র পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হওয়ার পথ খুলে গেছে। 

সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডৌলিডস এবং গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস ৭ অক্টোবরের ঘটনার পরপরই ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে’ প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে হামাসের আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছেন। 

তবে দুই নেতা কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টাও করেছেন। মিৎসোতাকিস গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিরীহ বেসামরিক মানুষ নিহত, আহত এবং বাস্তুচ্যুত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ক্রিস্টোডৌলিডস প্রস্তাব করেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার জন্য সাইপ্রাসে একটি মানবিক সামুদ্রিক করিডর স্থাপন করা যেতে পারে। ত্রাণ পরিবহনের জন্য এই করিডর হতে পারে তাৎক্ষণিক, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি। গাজায় বিপুল মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর একটি টেকসই ও নিরাপদ পথ হতে পারে সাইপ্রাস। 

সাইপ্রাসের কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতি এবং স্থল পরিস্থিতি অনুকূলে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাইপ্রাসের প্রধান সমুদ্রবন্দর লিমাসল থেকে মাত্র ২৫৫ মাইল দূরে গাজায় ত্রাণের জাহাজ পাঠানো যেতে পারে। 

ব্রাসেলসভিত্তিক জার্মান মার্শাল ফান্ড ইউএসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ান লেসার গত বুধবার সাইপ্রাস সফরের সময় বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই সাইপ্রাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে জোর দেয়, তবে প্রধান পরীক্ষাটিই দিতে হবে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিপাইনে ১১৪ প্রাণ কেড়ে নিয়ে ভিয়েতনামে আঘাত হানল টাইফুন ‘কালমায়েগি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফিলিপাইনে ১১৪ প্রাণ কেড়ে নিয়ে ভিয়েতনামে আঘাত হানল টাইফুন ‘কালমায়েগি’

ভয়াবহ টাইফুন ‘কালমায়েগি’ ভিয়েতনামে আঘাত হেনেছে। এর আগে ফিলিপাইনে দুই দিন তাণ্ডব চালিয়ে অন্তত ১১৪ জনের প্রাণ কেড়েছে এই টাইফুন।

ভিয়েতনামের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার কালমায়েগির বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৪৯ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) পর্যন্ত পৌঁছায়। ঝড়ে অসংখ্য ঘরের ছাদ উড়ে গেছে এবং গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ১০ মিটার (৩০ ফুট) উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই টাইফুনের কারণে ভিয়েতনাম সরকার ইতিমধ্যে ছয়টি বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে এবং গিয়া লাই প্রদেশে ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। এটি চলতি বছরে ভিয়েতনামে আঘাত হানা ১৩তম টাইফুন এবং সবচেয়ে শক্তিশালীগুলোর একটি।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি সেনাসদস্য উদ্ধার তৎপরতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সরকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে। মধ্যাঞ্চলের উচ্চভূমি অঞ্চলগুলো—বিশেষ করে, কফি উৎপাদনের জন্য পরিচিত সেন্ট্রাল হাইল্যান্ডস—সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রবল ঝড়ের আগমনে পর্যটননগরী হোই আনের কুয়া দাই সৈকতের হোটেল ও ঘরবাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে উপকূলীয় শহর হুয়ের আশপাশের কৃষকেরা এখনো আগের বন্যা থেকে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। ওই অঞ্চলে চলতি সপ্তাহেই বন্যায় ৪৭ জনের মৃত্যু হয়।

স্থানীয় কৃষক নগুয়েন ভ্যান রিন (৪২) বলেন, ‘গত বন্যায় আমার গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি সব মারা গেছে। কালমায়েগি এবার চতুর্থবারের মতো বন্যা আনবে—আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ঘর থেকে নৌকা বেয়ে বের হতে হচ্ছে আর রাস্তায় গাড়িগুলো ধীরে ধীরে পানির ভেতর দিয়ে চলাচল করছে।

এদিকে ভিয়েতনামে প্রবেশের আগে ফিলিপাইনের সেবু প্রদেশে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায় কালমায়েগি। বন্যার পানি নামার পর আজ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র স্পষ্ট হয়—অগণিত ঘরবাড়ি মাটিতে মিশে গেছে, গাড়ি উল্টে গেছে, রাস্তাজুড়ে ধ্বংসস্তূপ।

দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, এখনো ১২৭ জন নিখোঁজ। ত্রাণ কার্যক্রম ও মরদেহ উদ্ধারে বাধা সৃষ্টি করছে বিশাল ধ্বংসস্তূপ।

দেশটির জ্যেষ্ঠ বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা র‍্যাফি আলেজান্দ্রো রয়টার্সকে বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন ধ্বংসস্তূপ সরানো। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে এগুলো দ্রুত পরিষ্কার করা জরুরি।

সেবুতে এক মাস আগে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে শখানেক মানুষ মারা যায় ও হাজারো গৃহহীন হয়। এর ঠিক এক মাস পর আবারও এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে।

ফিলিপাইনের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও দ্বীপের পূর্ব দিকে নতুন একটি ঝড় তৈরি হচ্ছে, যা আগামী সপ্তাহের শুরুতে টাইফুনে পরিণত হয়ে আবারও দেশটিতে আঘাত হানতে পারে।

আজ সেবুর অনেক বাসিন্দা ঘরে ফিরে দেখেন, তাঁদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। কেউ কেউ মাটি ও কাদা সরিয়ে ঘর পরিষ্কারে ব্যস্ত। তালিসাই শহরের বাসিন্দা লিজা বেকুস বলেন, ‘আমার সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে, শুধু মেঝেটা টিকে আছে। আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’

লিজা বেকুস ধ্বংসস্তূপ থেকে ধাতব পাত ও লোহার টুকরো কুড়িয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন, যেন সাত সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য কিছু চাল কেনা যায়। লিজা বলেন, ‘আমার বাচ্চাদের কিছুই নেই—তাদের ইউনিফর্ম, ব্যাগ, পোশাক সব ভেসে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তালেবানের নিষেধাজ্ঞার পর আফগানিস্তানে আফিম চাষ কমেছে: জাতিসংঘ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার আগে আফগানিস্তান বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি আফিম উৎপাদন করত। ছবি: এএফপি
২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার আগে আফগানিস্তান বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি আফিম উৎপাদন করত। ছবি: এএফপি

তালেবান সরকার ২০২২ সালে আফগানিস্তানে আফিম চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর থেকে দেশটিতে আফিমের চাষ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত অফিস (ইউএনওডিসি) একটি জরিপে বলেছে, আফিম চাষের জন্য ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে এবং একই সময়ে আফিমের চাষ কমেছে ৩২ শতাংশ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগে আফগানিস্তান বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি আফিম উৎপাদন করত এবং আফগান আফিম থেকে তৈরি হেরোইন ইউরোপের বাজারের ৯৫ শতাংশ পূরণ করত। তবে ২০২২ সালের এপ্রিলে তালেবান সরকার ক্ষমতা দখলের পর আফিমকে ক্ষতিকারক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে এর চাষ নিষিদ্ধ করে। ইউএনওডিসির তথ্য বলছে, ‘গুরুতর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ সত্ত্বেও বেশির ভাগ কৃষক এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছেন।

ইউএনওডিসি জানিয়েছে, আফগান কৃষকেরা এখন শস্য চাষ করছেন, তবে পপি—যা থেকে হেরোইনের প্রধান উপাদান আফিম পাওয়া যায়, সেটি এখনো বৈধ ফসলের চেয়ে ‘অনেক বেশি লাভজনক’। সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে, লাভজনক বিকল্পের অভাব, সীমিত কৃষি উৎপাদন ও প্রতিকূল জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে ৪০ শতাংশের বেশি আবাদযোগ্য জমি পতিত থেকে গেছে।

আফগানিস্তানের বৃহত্তম হেলমান্দ প্রদেশের একজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি পশতুকে বলেন, ‘আমরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আমাদের জেল হয়। মেনে চললে আমরা দারিদ্র্যের শিকার হই। কিন্তু আমার কাছে যদি টাকা না থাকে, তাহলে আমি আবার পপি চাষ করব।’

অন্য একজন কৃষক তাঁর বাড়ির সামনের একটি ছোট পপিখেত দেখিয়ে বলেন, ‘আমি কী করব? আমি এটা করতে বাধ্য—আমার আর কিছুই করার নেই। আমি আমার পরিবারের জন্য খাবারও জোগাড় করতে পারি না।’

চলতি বছর আফগানিস্তানে আফিম চাষের জমির পরিমাণ ছিল আনুমানিক ১০ হাজার ২০০ হেক্টর, যার বেশির ভাগ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের। এর মধ্যে বাদাখশান প্রদেশে সবচেয়ে বেশি আফিম চাষ হয়েছে। ২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার আগে আফগানিস্তানে ২ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে আফিম চাষ হতো।

ইউএনওডিসি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে আফিম চাষ হওয়া চারটি প্রদেশকে (বাল্খ, ফারাহ, লাগমান ও উরুজগান) ২০২৫ সালে আফিমমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী শক্ত ঘাঁটিগুলো থেকে আফিম চাষ নির্মূল হওয়া নিষেধাজ্ঞার মাত্রা ও স্থায়িত্ব তুলে ধরে।

তবে ইউএনওডিসি জানিয়েছে, তালেবানের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গার কৃষকেরা সহিংস প্রতিরোধ তৈরি করেছেন, বিশেষ করে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। বাদাখশানের কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষের সময় হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে। তা সত্ত্বেও বেশির ভাগ আফগান কৃষক তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার জারি করা এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছেন।

ইউএনওডিসি জানিয়েছে, আফিমের চাষ কমলেও নিষেধাজ্ঞার পর থেকে মেথামফেটামিনের মতো সিনথেটিক ড্রাগের পাচার বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে ও এর আশপাশে এ ধরনের মাদক জব্দের হার গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি ছিল। ইউএনওডিসি বলছে, সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠীগুলো সিনথেটিক ড্রাগকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ, এগুলো উৎপাদন করা সহজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি তেমন প্রভাব ফেলে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদানকে ভাগ করে নিল সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সুদানে ২ কোটি ৫ লাখের বেশি মানুষের এখন জরুরি সাহায্যের প্রয়োজন। ছবি: এপির সৌজন্যে
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সুদানে ২ কোটি ৫ লাখের বেশি মানুষের এখন জরুরি সাহায্যের প্রয়োজন। ছবি: এপির সৌজন্যে

তৃতীয় বছরে পা দেওয়া সুদানের যুদ্ধ এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটগুলোর একটি। দেশটির সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে চলমান এ সংঘাতে ইতিমধ্যে ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, দেশটি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে—একাংশ সেনাদের দখলে, অপরাংশ আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিহাদ মাশামউন এ যুদ্ধকে ‘পাল্টাপাল্টি দখল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলুকে বলেন, এটা কোনো একতরফা অভিযান নয়, বরং একধরনের দেওয়া–নেওয়া পরিস্থিতি। কয়েক মাস ধরে উভয় পক্ষই পালাক্রমে কিছু জায়গা দখল করছে, আবার হারাচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি পশ্চিম এল-ওবেইদের উম সুমেইমা শহরের কথা উল্লেখ করেন, যা প্রথমে সেনাদের দখলে ছিল, পরে আরএসএফ দখল নেয় এবং গত সেপ্টেম্বরে আবার সরকার তা পুনর্দখল করে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সুদানস পোস্ট জানায়, বর্তমানে সুদানের পূর্ব, উত্তর ও মধ্যাঞ্চল সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে খার্তুম, আল-জাজিরা, হোয়াইট নাইল, কাসালা, গেদারেফ, রিভার নাইল, রেড সি ও সেন্নার প্রদেশ অন্তর্ভুক্ত। মাশামউনের হিসাবে, সেনাবাহিনী দেশটির প্রায় ৬০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে আর আরএসএফ ও তাদের মিত্রদের দখলে ৪০ শতাংশ।

মাশামউন জানান, উত্তর ও পূর্ব সুদান পুরোপুরি সেনাদের হাতে এবং মধ্যাঞ্চল সম্পূর্ণ মুক্ত—সেখানে আরএসএফের কোনো উপস্থিতি নেই। দক্ষিণাঞ্চল, বিশেষ করে, ব্লু নাইল ও হোয়াইট নাইল এলাকার ৯৫ শতাংশ সেনা নিয়ন্ত্রণে।

এ ছাড়া দারফুরে এল-ফাশেরের উত্তরাংশ এখনো সেনাবাহিনীর অনুগত গোষ্ঠীগুলোর হাতে, যারা ২০২৩ সালে নিরপেক্ষতা ত্যাগ করে যুদ্ধে যোগ দেয়।

মাশামউন বলেন, খার্তুম ও এর সংলগ্ন শহর বাহরি ও উমদুরমান গত মে থেকে পুরোপুরি আরএসএফমুক্ত এবং সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা (সশস্ত্র সংঘাতের অবস্থান ও ঘটনার তথ্য) এসি-এলইডির (ACLED) পূর্ব আফ্রিকা বিশ্লেষক জালালে গেতাচেউ বিরু বলেন, রাজধানী খার্তুমে এখন তুলনামূলক স্থিতিশীলতা এসেছে, তবে পরিস্থিতি এখনো নাজুক। সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে স্থানীয় বিমানবন্দরগুলো পুনরায় চালু করার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

জালালে গেতাচেউ আরও জানান, ২০২৫ সালের জুন থেকে সুদান–লিবিয়া–মিসরের সীমান্ত আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে। ত্রিভুজ আকৃতির এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তপথ।

গত ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী উত্তর কোর্দোফানের রাজধানী এল-ওবেইদ আবার দখল করেছে। তবে এল-ফাশের আরএসএফের হাতে যাওয়ার পর পশ্চিম দিক থেকে সেনাদের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।

দারফুর অঞ্চলে আরএসএফ এখন পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে চারটির নিয়ন্ত্রণে। মাশামউন বলেন, আরএসএফের শক্ত ঘাঁটি পূর্ব দারফুর থেকে শুরু হয়ে পশ্চিমে চাদ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত, যার মধ্যে দক্ষিণ ও উত্তর দারফুরের বড় শহরগুলোও রয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও লুটপাটের অভিযোগ এনেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, ওই অঞ্চলের ৬২ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে।

মাশামউন বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা এখন যে দৃশ্য দেখছি, তা হলো বেসামরিক জনগণের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা। আরএসএফ মনে করে, এই জনগোষ্ঠী সেনাদের সমর্থন করে, তাই তাদের সম্মিলিতভাবে শাস্তি দিচ্ছে। তাদের মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা নেই। তারা শুধু হত্যা, লুটপাট ও ধ্বংস করতে জানে।’

মাশামউন আরও বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে আরএসএফ বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধা ও আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। শহরটি পতনের আগে তারা দুই শতাধিক হামলা চালায়। এখন যা ঘটছে, তা সম্পূর্ণ দায়মুক্তির ফল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোর্দোফান অঞ্চল এখন সুদানের পরবর্তী বড় যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। উত্তর ও পশ্চিম কোর্দোফান উভয় পক্ষের মধ্যে বিভক্ত আর কৌশলগত কারণে এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেওয়া উভয়েরই লক্ষ্য।

বিশ্লেষক জালালে গেতাচেউ বলেন, কোর্দোফান এখন আঞ্চলিক দখলযুদ্ধের নতুন ফ্রন্টলাইন।

মাশামউন জানান, সেনারা বর্তমানে বৃহত্তর কোর্দোফান পুনর্দখলের ওপর মনোযোগ দিচ্ছে, এরপর পশ্চিমে দারফুরের দিকে অগ্রসর হবে। সেনাবাহিনীর লক্ষ্য আরএসএফের সরবরাহ লাইন কেটে দেওয়া এবং চাদ সীমান্ত করিডর বন্ধ করা। উত্তর সুদানের মিত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে চাদ সীমান্ত থেকে নতুন সেনা মোতায়েনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।

আরএসএফ কোর্দোফান থেকে খার্তুম ও পোর্ট সুদানের দিকে ড্রোন ও আর্টিলারি হামলা চালাচ্ছে বলেও জানান মাশামউন। তিনি বলেন, বারা ও নুহুদ শহর পুনর্দখল করলে এই হামলা বন্ধ করা সম্ভব হবে।

এর আগে অক্টোবরে আরএসএফ দাবি করে, তারা উত্তর কোর্দোফানের বারা শহর দখল করেছে, ফলে ৪ হাজার ৫০০-এর বেশি বাসিন্দা পালিয়ে গেছে এবং সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর পাওয়া গেছে। শহরটি এল-ওবেইদের কাছেই, যা সেনাদের শক্ত ঘাঁটি হলেও ধীরে ধীরে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে।

উভয় পক্ষ এখন দখল করা এলাকা শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এদিকে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সুদানের অর্ধেক জনগণ (২ কোটি ২৫ লাখের বেশি) প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে ভুগছে। দারফুর, কোর্দোফান ও খার্তুমজুড়ে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।

মাশামউন বলেন, দেশটি এক ভয়াবহ অচলাবস্থায় আটকে গেছে। আরএসএফের কোনো সুস্পষ্ট কৌশল বা নিয়ন্ত্রণকাঠামো নেই। এখন তাদের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, বেসামরিক বাড়িঘর লুট ও মানুষ হত্যা করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ বিমানবন্দরে ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমানোর নির্দেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪২
নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডালাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় ও ব্যস্ত ৩০টি বিমানবন্দর এর আওতায় পড়বে। ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডালাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় ও ব্যস্ত ৩০টি বিমানবন্দর এর আওতায় পড়বে। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সরকারি অচলাবস্থার (শাটডাউন) মধ্যে এবার বিমান চলাচলে বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি জানিয়েছেন, দেশের ৪০টি বড় বিমানবন্দরে ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমানোর নির্দেশ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি অচলাবস্থা টানা ৩৬ দিন পার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ। এর আগে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে—২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত টানা ৩৪ দিন শাটডাউন স্থায়ী ছিল।

এদিকে এই অচলাবস্থার মধ্যে ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও ৫০ হাজার পরিবহন নিরাপত্তা কর্মকর্তা (টিএসএ এজেন্ট) বেতন ছাড়াই কাজ করছেন। পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি বলেন, এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব, যদি ডেমোক্র্যাটরা পুনরায় সরকার চালু করতে রাজি হন।

ডাফির ঘোষণার পরপরই এয়ারলাইনগুলো ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ফ্লাইট সময়সূচি পরিবর্তনের কাজে নেমে পড়ে। যাত্রীরা হেল্পলাইনে ফোন করে টিকিট বাতিল বা পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকেন।

ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, ফ্লাইট কমানো ধাপে ধাপে শুরু হবে—প্রথমে ৪ শতাংশ, শনিবার ৫ শতাংশ, রোববার ৬ শতাংশ এবং আগামী সপ্তাহে এটি ১০ শতাংশে পৌঁছাবে। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এই কাটছাঁটের বাইরে থাকবে।

এফএএ প্রশাসক ব্রায়ান বেডফোর্ড বলেন, ‘যখন আমরা দেখি ৪০টি বড় শহরের বিমান চলাচলে চাপ তৈরি হচ্ছে, তখন সেটি উপেক্ষা করা যায় না। আমরা এখনই পদক্ষেপ নিচ্ছি, যেন পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।’

তবে সরকার বিমানবন্দরগুলোর নাম প্রকাশ করেনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডালাসসহ দেশের বড় ও ব্যস্ত ৩০টি বিমানবন্দর এর আওতায় পড়বে। এতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফ্লাইট ও ২ লাখ ৬৮ হাজার আসন কমে যাবে বলে জানিয়েছে বিমান বিশ্লেষণ সংস্থা সিরিয়াম।

যুক্তরাষ্ট্রে অচলাবস্থা শুরু হওয়ার পর থেকে আকাশপথে লক্ষাধিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩২ লাখের বেশি যাত্রী বিমান নিয়ন্ত্রণ-সংকটে ভুগেছেন বলে জানিয়েছে বিমান সংস্থাগুলো।

পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি বলেন, ‘আমাদের প্রধান দায়িত্ব, নিরাপদ আকাশসীমা নিশ্চিত করা। কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও তা নিতে হবে।’

এফএএ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে বর্তমানে ৩ হাজার ৫০০ জন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের ঘাটতি রয়েছে। অনেকে বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত সময় ও ছয় দিন কাজ করছেন। শাটডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকে এ সংকট ছিল।

ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী স্কট কারবি বলেন, আন্তর্জাতিক ও হাব-টু-হাব রুটের ফ্লাইট স্বাভাবিক থাকবে, তবে দেশীয় ও আঞ্চলিক রুটে কাটছাঁট করা হবে। কোনো যাত্রী এ সময় ভ্রমণ করতে না চাইলে বা ফ্লাইট বাতিল না হলে তিনি সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাবেন।

আমেরিকান এয়ারলাইনস জানিয়েছে, তাদের যাত্রীদের ওপর প্রভাব খুব সীমিত থাকবে।

সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দেশীয় বিমান সংস্থা। এর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা কাটছাঁটের প্রভাব বিশ্লেষণ করছে এবং দ্রুত যাত্রীদের বিষয়টি অবহিত করবে।

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ইউনিয়ন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টস—সিডব্লিউএ’ এই শাটডাউনকে ‘আমেরিকানদের ওপর নিষ্ঠুর আঘাত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি সারা নেলসন বলেন, ফেডারেল কর্মীদের বেতন দেওয়া অথবা স্বাস্থ্যসেবা রক্ষা—এ দুটির মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই দুই সংকট যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরাই এটা সমাধান করতে পারেন।

শাটডাউনের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসে ফেডারেল সরকারের ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি না বাড়ানো পর্যন্ত তাঁরা কোনো বিল অনুমোদন করবেন না। এদিকে রিপাবলিকানরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের ওপর চাপ বাড়াতে এখন জনজীবনে অচলাবস্থার প্রভাব আরও দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত