Ajker Patrika

অ্যালকোহলে আগ্রহ হারাচ্ছেন জার্মান তরুণেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৪৩
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩৯০ কোটি লিটার বিয়ার। ছবি: সংগৃহীত
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩৯০ কোটি লিটার বিয়ার। ছবি: সংগৃহীত

জার্মানিতে বিয়ার পান আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের বিয়ারের প্রতি আগ্রহ কমে এসেছে। তবে অ্যালকোহল-মুক্ত বিয়ারের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে।

জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিসটিকস অফিস ডেস্টাটিস জানিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার বিক্রি ১০৯ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে, বিয়ারের মোট বিক্রি এখন গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

ছয় মাসের হিসাব অনুযায়ী, বিয়ারের বিক্রি প্রথমবারের মতো ৪০০ কোটি লিটারের নিচে নেমে গেছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩৯০ কোটি লিটার বিয়ার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বা ২৬ কোটি ২০ লাখ লিটার কম।

মিউনিখের কাছাকাছি অবস্থিত বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থা এরডিঙ্গার ১৮৮০ সাল থেকে বিয়ার তৈরি করে আসছে। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেফান ক্রেইস বলেন, মানুষের পান করার অভ্যাস বদলাচ্ছে, আর এখন তাদের মোট উৎপাদনের প্রায় এক-চতুর্থাংশই অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এমন একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যাতে তরুণদের কাছে বিয়ার, এমনকি তা অ্যালকোহলমুক্ত হলেও, আকর্ষণীয় হয়। তাদের মেলামেশার এবং একসঙ্গে পার্টি করার ধরনটা আমাদের বুঝতে হবে। এমন কোনো অ্যালগরিদম নেই, যা বলে দেবে এখন তোমার বিয়ার দরকার।’

স্টেফান ক্রেইস এখনো জার্মান বিয়ারের সংস্কৃতিকে শক্তিশালী বলে মনে করেন। বর্তমানে তাঁর কোম্পানি বিভিন্ন স্পোর্টস ইভেন্টে তাদের অ্যালকোহল-মুক্ত বিয়ারের প্রচার করছে এই বলে যে, এটি এনার্জি ড্রিংকের একটি ভালো বিকল্প।

মিউনিখের ক্যাফে কসমসের বারটেন্ডার লুইস ফন টুখার বলেন, তাঁর অনেক ক্রেতাই এখন স্বাস্থ্যসচেতন।

তিনি বলতে থাকেন, ‘বিশের দশকের দিকে, আমার মনে আছে, যদি কাউকে এক গ্লাস জল খাওয়ার কথা বলা হতো, তাহলে মানুষ ভীষণ বিরক্ত হতো।’

কিন্তু এখন মানুষের এ অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন লুই। তিনি বলেন, ‘সবাই এখন নিজেদের পানীয়ের ব্যাপারে একটু বেশি সচেতন। আমার মনে হয়, বেশির ভাগ মানুষ এখনো অ্যালকোহল পান করে, তবে তারা এটি আরও সচেতনভাবে করে এবং মাঝে মাঝে অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ও বেছে নেয়।’

তবে লুই মনে করেন, সাধারণ বিয়ার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে না।

এই বারটেন্ডারের মতে, ‘এটা শুধু সামান্য একটা পরিবর্তন। আমরা রাতে সাধারণত ১৫০ থেকে ৫০০ লিটার পর্যন্ত সাধারণ বিয়ার বিক্রি করি, যেখানে অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার হয়তো ২০ লিটারের মতো বিক্রি হয়। তাই এ দুটির মধ্যে এখনো বিশাল ফারাক আছে।’

উত্তর বাভারিয়ার বামবার্গ শহরের স্যান্ডকার্ভা লোক উৎসবে আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে জার্মানিতে অ্যালকোহলযুক্ত বিয়ারের ঐতিহ্য এখনো দারুণভাবে বেঁচে আছে।

পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবে বামবার্গের আঁকাবাঁকা মধ্যযুগীয় রাস্তাগুলো ভরে ওঠে সংগীতশিল্পীদের আনাগোনায়। সসেজ বিক্রির স্টল আর অগণিত বিয়ার স্টলে জমজমাট ব্যবসা চলে সারাক্ষণ।

পুরোনো শহরের স্যান্ডস্ট্রাসেতে এক বন্ধুর সঙ্গে বিয়ার খাচ্ছিলেন পাস্কাল।

তিনি বললেন, ‘বিয়ার এই শহরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আর এখানে অনেক ব্রুয়ারি আছে। মানুষ এখানে আসে বিয়ার আর উৎসবের জন্য। আমি কল্পনাও করতে পারি না যে বামবার্গে বিয়ার খাওয়া আগের চেয়ে সত্যিই কমেছে।’

একটি বিয়ার গার্ডেনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থী ম্যাগডালেনাও পাস্কালের সঙ্গে একমত হলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি চারপাশে তাকাচ্ছি আর দেখছি, প্রত্যেকের হাতেই বিয়ারের গ্লাস। আমার মনে হয়, জার্মানির এই অংশে বিয়ার দৈনন্দিন জীবনের একটি বিশাল অংশ, যদিও আমরা সবাই জানি এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের প্রজন্মের মানুষের হয়তো কম বিয়ার পান করার প্রবণতা আছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা এখনো জার্মানি, এটা এখনো বাভারিয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত