Ajker Patrika

শ্রমিক মায়ের সন্তান পুতিন, দাদা ছিলেন লেনিনের শেফ

আপডেট : ০১ মার্চ ২০২২, ১৮: ৫৫
শ্রমিক মায়ের সন্তান পুতিন, দাদা ছিলেন লেনিনের শেফ

পুরো নাম ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন। রাশিয়ার একচ্ছত্র অধিপতি হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে ভ্লাদিমির পুতিন নামেই খ্যাত। একাধিক টাইম ম্যাগাজিনের শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে প্রচ্ছদ হয়েছেন তিনি। এর আগে চেচনিয়া যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন। অনেকে তাঁকে ‘চেচনিয়ার কসাই’ বলেন। আর সর্বশেষ ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপ-আমেরিকারজুড়ে নিরাপত্তা সংকট তৈরি করা পুতিনকে একজন নিষ্ঠুর যুদ্ধবাজ আগ্রাসী হিসেবেই দেখছে বিশ্ববাসী। 

 ৭ অক্টোবর, ১৯৫২ সালে, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে রুশ প্রজাতন্ত্রের লেনিনগ্রাদের এক অতি সাধারণ কর্মজীবী পরিবারের জন্ম পুতিনের। ভ্লাদিমির স্পিরিদনোভিচ পুতিন (১৯১১-১৯৯৯) এবং মারিয়া ইভানোভনা পুতিনা (১৯১৯-১৯৯৯) দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে পুতিন সর্বকনিষ্ঠ। 

 ১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জন্ম হয় পুতিনের দুই ভাই ভিক্তর এবং আলবার্ত। আলবার্ত শৈশবে মারা যায়। ভিক্তরের মৃত্যু হয় ডিপথেরিয়ায়। তখন চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। নাৎসি জার্মান বাহিনীর লেনিনগ্রাদ অবরোধ করে রেখেছে। বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে পুতিনের বড় ভাই ভিক্তর। 

পুতিনের মা ছিলেন কারখানার শ্রমিক। আর বাবা সোভিয়েত নৌবাহিনীতে বাধ্যতামূলক কর্মচারী। ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে সাবমেরিন ফ্লিটে কাজ করছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে, পুতিনের বাবা সোভিয়েত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নিয়মিত সেনাবাহিনীতে স্থানান্তরিত হন। ১৯৪২ সালে গুরুতর আহত হন তিনি। পুতিনের নানি ১৯৪১ সালে তিভার অঞ্চলে জার্মান বাহিনীর হাতে নিহত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুতিনের মামারা ইস্টার্ন ফ্রন্ট থেকে নিখোঁজ হন। 

১৯৮০ সালে কেজিবির ইউনিফর্ম পরিহিত পুতিন১৯৬০ সালের ১ সেপ্টেম্বর পুতিন বাড়ির কাছে বাসকভ লেনে ১৯৩ নম্বর স্কুলে ভর্তি হন। পুতিনের ক্লাসে ছিল আনুমানিক ৪৫ জন ছাত্র। তাদের মধ্যে যে কজন ইয়াং পাইওনিয়ার নামে একটি সংগঠনে যোগ দেয় তাদের মধ্যে পুতিন ছিলেন অন্যতম। ১২ বছর বয়সে সাম্বো এবং জুডো অনুশীলন শুরু করেন পুতিন। অবসর সময়ে তিনি মার্কস, এঙ্গেলস এবং লেনিনের বই পড়তেন। পুতিন সেন্ট পিটার্সবার্গ হাইস্কুল ২৮১-এ জার্মান স্টাডিজে পড়াশোনা করেন। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে জার্মানে কথা বলেন পুতিন।

১৯৭০ সালে আন্দ্রেই ঝদানভের (বর্তমানে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি) নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত লেনিনগ্রাদ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়েন। ১৯৭৫ সালে স্নাতক হন। তাঁর থিসিস ছিল ‘দ্য মোস্ট ফেভারড নেশন ট্রেডিং প্রিন্সিপল ইন ইন্টারন্যাশনাল ল’। সেখানে থাকাকালীন তাঁকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিতে হয়। পার্টি যতদিন ছিল ততদিন এর সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালের আগস্টে এই কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়। 

অধ্যাপক আনাতোলি সোবচাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় পুতিনের। তিনি তখন সহকারী অধ্যাপক, ব্যবসায়িক আইন পড়াতেন। পরে রাশিয়ার সংবিধান রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অধ্যাপক আনাতোলি। পরে সেন্ট পিটার্সবার্গে পুতিন যেমন আনাতোলি সোবচাকের ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলেছিলেন, তেমনি মস্কোতে পুতিনের ওপর প্রভাব রাখেন আনাতোলি সোবচাক।

১৯৯৬ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গের মেয়র আনাতোলি সোবচাকের শেষকৃত্যে পুতিন। সোবচাক ছিলেন তাঁর মেন্টরএদিকে ২০১৮ সালের পুতিনকে নিয়ে দুই ঘণ্টার একটি তথ্যচিত্র রাশিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। সেই তথ্যচিত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন দাবি করেন, তাঁর দাদা স্পিরিদন পুতিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিনের একজন ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। ১৯৫৩ সালে মারা যান স্তালিন। প্রায় তিন দশকের শাসনামলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করেন স্তালিন। 

ভ্লাদিমির লেনিনের সঙ্গে জোসেফ স্তালিন। ছবি: ক্রেমলিন ডট আরইউ। ডানের ব্যক্তিই পুতিনের দাদা স্পিরিদন পুতিন বলে দাবি করছে কিছু গণমাধ্যম। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।পুতিন বলেন, আমার দাদা স্পিরিদন পুতিন পেশায় ছিলেন পাচক (শেফ)। রান্নাবান্নায় তাঁর বেশ সুনাম ছিল। প্রথমে তিনি রুশ বিপ্লবের রূপকার ভ্লাদিমির ইলিইচ উলিয়ানোভ লেনিনের জন্য রান্না করতেন। পরে স্তালিনেরও ব্যক্তিগত পাচক ছিলেন। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সময় থেকেই তিনি লেনিনের জন্য রান্নার কাজ করতেন। ১৯৬৬ সালে ৮৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি এই কাজই করে গেছেন। 

পুতিনের সেই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন আন্দ্রে কন্দ্রাশভ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্বাচনী প্রচারণার মুখপাত্র ছিলেন। এই তথ্যচিত্র প্রকাশের পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নিশ্চিত করেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সঠিক। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

‘বেয়াদবি ছুটায় দেব’: সরি বলতে অসুবিধা নেই, বললেন সেই জামায়াত নেতা

সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করবেন যেভাবে

তিন ভোটে দায়িত্ব পালনকারীদের ‘যথাসম্ভব’ দূরে রাখতে হবে

‘ম্যামের মুখটা দেখলাম, মনে হলো—শুয়ে আছেন, কিছুই হয়নি তাঁর’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত