Ajker Patrika

হংকংয়ে শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিককে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে’ চীনের কড়া বার্তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ২৯
হংকংয়ে নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল জুলি ইডেহ। ছবি: এএফপি
হংকংয়ে নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল জুলি ইডেহ। ছবি: এএফপি

হংকংয়ে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কনসাল জেনারেলকে দেওয়া বেইজিংয়ের শীর্ষ কূটনীতিকের সতর্কবার্তা উড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন কূটনীতিককে সতর্ক করে হংকংয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তরফ থেকে বলা হয়েছিল, তিনি যেন চীনের নিয়ন্ত্রিত এ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হংকং কার্যালয়ের কমিশনার ছুই জিয়ানচুন গত মঙ্গলবার এক বৈঠকে মার্কিন কনসাল জেনারেল জুলি ইডেহকে এই সতর্কবার্তা দেন। এরপর, গতকাল বৃহস্পতিবার ছুইয়ের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতেও বিষয়টি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইডেহকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়ম মেনে চলতে এবং দেশীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে ‘চীনবিরোধী শক্তি’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৈঠকে ছুই ইডেহর জন্য চারটি নিষেধাজ্ঞার কথা স্পষ্ট করে দেন। এগুলো হলো—যাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা উচিত নয়, তাঁদের সঙ্গে না দেখা করা; চীনবিরোধী শক্তির সঙ্গে কোনোভাবেই যোগসাজশ না করা; এমন কোনো কার্যক্রমে অর্থ বা সহায়তা না দেওয়া, যা হংকংয়ের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে এবং জাতীয় নিরাপত্তা–সংক্রান্ত মামলায় হস্তক্ষেপ না করা।

ইডেহ গত আগস্টে হংকংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১৯ সালে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সময় হংকংয়ে মার্কিন কনস্যুলেটের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ছিলেন। তখন তিনি গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ছুইয়ের সতর্কবার্তা প্রত্যাখ্যান করে এক বিবৃতিতে জানায়, মার্কিন কূটনীতিকেরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং বিশ্বজুড়ে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেন। এটাই কূটনীতির নিয়ম, হংকংও এর ব্যতিক্রম নয়।

ছুই ও ইডেহর এ বৈঠক দুই দেশের চলমান উত্তেজনাকে আবারও সামনে এনেছে। বিশেষ করে বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও তাইওয়ান ইস্যুতে বেইজিং আর ওয়াশিংটনের মধ্যে টানাপোড়েন অব্যাহত আছে।

উল্লেখ্য, হংকং হলো চীনের এক বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ চুক্তির আওতায় ১৯৯৭ সালে এ অঞ্চল ব্রিটেন থেকে চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে সমালোচকেরা বলছেন, প্রায় তিন দশকের ব্যবধানে শহরটির শাসনব্যবস্থা আরও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে।

২০১৯ সালে বেইজিংবিরোধী আন্দোলনের পর ২০২০ সালের জুনে চীন জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু করে। এতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম, সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০২৪ সালে হংকংয়ের আইন পরিষদ সর্বসম্মতভাবে আরও কঠোর আইন পাস করে। এতে সরকারের ক্ষমতা বাড়ে এবং গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন দমনে সুবিধা পায়। এ আইন অনুযায়ী অসংখ্য কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে অ্যাপল ডেইলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইডেহর সঙ্গে বৈঠকের আগে ছুইয়ের কার্যালয় বেশ কিছু বেইজিংপন্থী সংবাদমাধ্যমের লেখা আবার শেয়ার করে। এসব লেখায় মার্কিন কূটনীতিককে ‘কালার রেভল্যুশনের’ উসকানিদাতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এই শব্দ মূলত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বোঝায়।

এক নিবন্ধে বলা হয়, হংকংয়ে ২০১৯ সালের আন্দোলনের সময় ইডেহ গণতন্ত্রপন্থী নেতা জোশুয়া ওয়ং ও নাথান ল’র সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখন তাঁকে বিক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল। বেইজিংপন্থী কর্মকর্তারা বিক্ষোভকে ‘কালো সহিংসতা’ নামে অভিহিত করেন।

আরেকটি নিবন্ধে বলা হয়, ইডেহ প্রখ্যাত গণতন্ত্রপন্থী আইনপ্রণেতা অ্যানসন চ্যান ও এমিলি লাউকে তাঁর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এখনো পর্যন্ত ইডেহ তাঁর বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত