Ajker Patrika

বেইজিংয়ে চীনা অধ্যাপক ও ইসরায়েলি কর্মকর্তার মধ্যে গাজা নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৮
চীনের খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ইয়ান শুয়েতং ও ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তার এলাদ শোশানের মধ্যে তীব্র বিতর্ক হয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
চীনের খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ইয়ান শুয়েতং ও ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তার এলাদ শোশানের মধ্যে তীব্র বিতর্ক হয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে চীনের খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ইয়ান শুয়েতং ও ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তার মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্কের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বেইজিংয়ে শিয়াংশান ফোরামে এ তর্ক-বিতর্ক হয়। হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চীনের বিখ্যাত সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের ডিন ইয়ান শুয়েতংকে দেখা যায় ইসরায়েলি দূতাবাসের সামরিক অ্যাটাশে এলাদ শোশানের সঙ্গে তর্ক করতে। শোশান দাবি করেন, যুদ্ধের কারণ হলো ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাস এখনো আমাদের জিম্মিদের ধরে রেখেছে।’

জবাবে ইয়ান শুয়েতং বলেন, ‘আপনাদের সেনাদের সন্ত্রাসীদের দিকে গুলি চালানো উচিত ছিল। শিশু নয়! নারী নয়! যখন আপনারা নারী-শিশুদের গুলি করলেন, তখনই সেই কারণ দেখিয়ে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার নৈতিক বৈধতা হারালেন।’ তিনি তুলনা টানেন ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে। প্রশ্ন তোলেন, অপরাধীদের ধরতে গিয়ে কি পুলিশ ব্যাংকের কর্মী বা গ্রাহকদের গুলি করতে পারে?

ইসরায়েলের হাতে গাজায় ৭০ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে—এই তথ্য এলাদ শোশান অস্বীকার করেন। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’ ইয়ান শুয়েতং পাল্টা জবাব দেন, ‘তথ্য আপনি নির্ধারণ করবেন না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ই সেটা নির্ধারণ করবে।’

এ ঘটনার পর গত সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চীনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলবিরোধী প্রচারণার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, অনলাইনে ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করছে চীন ও কাতার। জেরুসালেমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ২৫০ জন আইনপ্রণেতার সঙ্গে বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, ‘তারা পশ্চিমা দুনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলের বৈধতাকে আক্রমণ করছে।’

এর প্রতিক্রিয়ায় বুধবার ইসরায়েলে চীনা দূতাবাস জানায়, নেতানিয়াহুর এসব মন্তব্য ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আঘাত হেনেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরায়েল ভুল পক্ষকে দোষ দিচ্ছে এবং ভুল সমাধান দিচ্ছে।’

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই চীন-ইসরায়েল সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা জানায় বেইজিং। তারা বারবার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে নেতানিয়াহু সেই সমাধান প্রত্যাখ্যান করেছেন।

অর্থনৈতিক দিক থেকে দুই দেশের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ইসরায়েল বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে অংশ নেওয়া অল্প কয়েকটি উন্নত দেশের একটি। ২০২৩ সালে চীন ছিল ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং সবচেয়ে বড় আমদানির উৎস। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চীনের ইসরায়েল থেকে কেনাকাটা আগের বছরের তুলনায় ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

যদিও সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত মিলেছিল গত ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’র-এর বৈঠকে। এরপর গত সপ্তাহে তেল আবিবে চীনের রাষ্ট্রদূত শিয়াও জুনঝেং বলেন, দুই দেশ সম্পর্ক উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

কিন্তু এর একদিন পরই জাতিসংঘে চীন কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের বিমান হামলার নিন্দা জানায়। চীনা প্রতিনিধি ফু কং বলেন, ‘এটি স্রেফ দুরভিসন্ধিমূলক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ।’ পরে কাতার বেইজিংয়ে তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে চীনকে ধন্যবাদ জানায়।

এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক তদন্ত কমিশন জানায়, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। একই দিনে ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটিতে স্থল অভিযান ও ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে, পূর্ণ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এবং মানবিক বিপর্যয় আরও না বাড়াতে।’

চীনা দূতাবাসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দ্রুত যুদ্ধবিরতি হলে ইসরায়েলি জিম্মিদের নিরাপদে ফেরত আনা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভেতর থেকেও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি সমাধানের আহ্বান উঠছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ইসরায়েলের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগকে সম্মান জানানো উচিত। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি জনগণের টিকে থাকা, রাষ্ট্র গঠন ও উন্নয়নের অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে।’

চীনের মতে, টেকসই শান্তির পথ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক উদ্যোগের মধ্যে নিহিত, শুধু সামরিক অভিযান ও বোমাবর্ষণে নয়। তারা আশা প্রকাশ করেছে, অঞ্চলে দেশগুলোর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হবে এবং চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে উত্তেজনা প্রশমনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটি ফেরত চান ট্রাম্প, লক্ষ্য চীনের পারমাণবিক স্থাপনা

শেষ ওভারে নবির ছক্কাবৃষ্টি, বাংলাদেশের সমীকরণ কী দাঁড়াল

সেনা আশ্রয় ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে নেপালের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী

দিয়াবাড়ির কাশবনে নারীর অর্ধগলিত লাশ, মৃত্যু ১০-১২ দিন আগে: পুলিশ

স্ত্রী পুরুষ নন—আদালতে প্রমাণ করতে হবে মাখোঁকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত