Ajker Patrika

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) কী ও কারা?

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) হলো একটি দেওবন্দি জিহাদি জঙ্গি গোষ্ঠী। তারা পাকিস্তানি তালেবান নামেও পরিচিত। এটি মূলত আফগান-পাকিস্তান সীমান্তের উভয় পাশজুড়ে সক্রিয়। ২০০৭ সালে গঠিত এ গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিকভাবে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশের মাদারীপুরের এক যুবক দুবাইয়ে যাওয়ার কথা বলে পাকিস্তানে যান। এরপর যোগ দেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানে (টিটিপি)। গত শুক্রবার সংগঠনটির হয়ে লড়তে গিয়ে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সে দেশের সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন ফয়সাল মোড়ল (২১) নামের ওই যুবক। এ ঘটনার পর টিটিপি নিয়ে বাংলাদেশে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

তবে বাংলাদেশি হিসেবে টিটিপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। এর আগে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বোমা হামলায় টিটিপির ৫৪ জন সদস্যের সঙ্গে আহমেদ জোবায়ের নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছিলেন। গত এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে অন্তত চারজন বাংলাদেশি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনার পর পাকিস্তানের টিটিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে অন্তত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)

২০০৭ সালের ডিসেম্বরে বাইতুল্লাহ মেহসুদের নেতৃত্বে পাকিস্তানের ফেডারেল শাসিত উপজাতি এলাকার (এফএটিএ) বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে একত্র করে টিটিপি গঠিত হয়। আল-কায়েদা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এর জন্ম। এই গোষ্ঠীর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল—পাকিস্তান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং শরিয়া আইনের চরমপন্থী ব্যাখ্যা অনুযায়ী একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

মার্কিন ড্রোন হামলায় বেশ কয়েকজন বড় নেতার মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটি একসময় দুর্বল হয়ে যায়। তবে বর্তমান নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদের নেতৃত্বে ২০২০ সাল থেকে তারা আবার ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। এর ফলে জামাত-উল-আহরারের মতো দলগুলো পুনরায় টিটিপিতে যোগ দেয়, যা তাদের শক্তি ও হামলার সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

এদিকে ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর টিটিপি আরও শক্তিশালী হয়। পরে তালেবান সরকার পাকিস্তান ও টিটিপির মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করে। এর মাধ্যমে একটি স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয় এবং টিটিপির বন্দীরা পাকিস্তান থেকে মুক্তি পান। তবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর টিটিপি আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা বাড়িয়ে দেয়।

টিটিপির মূল লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের সরকারকে সরিয়ে তাদের নিজস্ব মতাদর্শে একটি ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এই উদ্দেশ্যে টিটিপি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রায়ই হামলা চালায়।

চাঁদা, অপহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও অনুদানের মাধ্যমে টিটিপি তাদের অর্থ সংগ্রহ করে। সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে টিটিপি আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের পশতুন উপজাতিদের টার্গেট করে, তবে তারা পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও সদস্য আকর্ষণ করে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও তারা সদস্য সংগ্রহ করে বলে জানা গেছে।

মতাদর্শগত মিল থাকলেও টিটিপি ও আফগানিস্তানের তালেবান দুটি আলাদা সংগঠন। আফগান তালেবান টিটিপিকে আশ্রয় দিয়েছে, যা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া আল-কায়েদার সঙ্গেও টিটিপির দীর্ঘদিনের আদর্শগত ও অপারেশনাল সম্পর্ক রয়েছে। প্রশিক্ষণ, আক্রমণের পরিকল্পনা ও অর্থ ভাগাভাগির ব্যাপারটি আল-কায়েদা ও টিটিপি একসঙ্গে করে বলেই জানা গেছে।

২০১৪ সালের শেষ দিকে টিটিপির কিছু কমান্ডার ইসলামিক স্টেট খোরাসানে (আইএসআইএস-কে) যোগ দেন। তবে উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও সংঘাত রয়েছে।

২০২১ সালের শেষ দিকে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর টিটিপি বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলা বাড়িয়েছে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টিটিপির হামলার সংখ্যা বেড়েছে। নুর ওয়ালি মেহসুদের নেতৃত্বে টিটিপি ইসলামাবাদ, করাচি ও কোয়েটার মতো বড় শহরগুলোতেও তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে।

তবে সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে কিছু অভিযান চালিয়েছে। এতে টিটিপির বেশ কিছু সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভিযানে টিটিপির ১৭ জন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এই অভিযানেই বাংলাদেশের মাদারীপুরের যুবক ফয়সাল মোড়ল (২১) নিহত হন।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত