Ajker Patrika

ভিয়েতনাম-চীনে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় কাজিকি, সরানো হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ১৯
আসন্ন ঘূর্ণিঝড় কাজিকির প্রভাবে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে ভিয়েতনামে। ছবি: এএফপি
আসন্ন ঘূর্ণিঝড় কাজিকির প্রভাবে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে ভিয়েতনামে। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে ভিয়েতনাম ও চীনের উপকূলে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় কাজিকি। ঝড়ের তাণ্ডব মোকাবিলায় দুই দেশে লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফ্লাইট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও নৌযান চলাচল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভিয়েতনামের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমমুখী হয়ে এগোচ্ছিল এটি। বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৪৯ কিলোমিটার। আজ সোমবার উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় এর গতি ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

ঝড়ের কারণে থান হোয়া, কোয়াং ত্রি, হুয়ে ও দা নাংসহ কয়েকটি প্রদেশ থেকে অন্তত ৫ লাখ ৮৬ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ। সাতটি উপকূলীয় প্রদেশে মাছ ধরার নৌকা সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ৬০ হাজার নৌকা ও ২ লাখ ৪৯ হাজার জেলেকে সতর্ক করা হয়েছে। জাতীয় বিমান সংস্থা ভিয়েতনাম এয়ারলাইনস রোববার ও সোমবার মিলিয়ে ২২টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। বাজেট এয়ারলাইন ভিয়েতজেট অ্যাভিয়েশনও কয়েকটি ফ্লাইট স্থগিত বা বিলম্বিত করেছে।

দেশটিতে এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ধান, ফল ও রাবারক্ষেতসহ লাখো হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে মাছের ঘের। জলাধারগুলো ৮০ শতাংশের বেশি ভরে থাকায় বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন দ্রুত সরিয়ে নেওয়া, বাঁধ মজবুত করা এবং জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

ভিয়েতনামের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ের কারণে কিছু অঞ্চলে ২০০ থেকে ৭০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল বাতাসে উপকূলীয় এলাকায় ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে, চীনের হাইনান দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পর্যটন নগরী সানিয়ায় শপিং সেন্টার, রেস্তোরাঁ, সুপারমার্কেট ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। হাইকো শহরের তিনটি বন্দরও বন্ধ করা হয়েছে।

চীনের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্যমতে, রোববার সকালে কাজিকি সানিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ছিল। এটি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। কেন্দ্রে বাতাসের বেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৩৮ মিটার। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, হাইনানে বৃষ্টিপাত ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। প্রবল বর্ষণ হবে গুয়াংডং প্রদেশ ও গুয়াংসি অঞ্চলেও।

গুয়াংসি মেরিটাইম সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সব নৌযানকে বন্দরে ফিরিয়ে আনতে টহল জাহাজ পাঠিয়েছে। হাইনানের রাজধানী হাইকো শনিবার রাতে তিনটি বন্দর বন্ধ করে দিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও খরা ত্রাণ সদর দপ্তর লেভেল-৪ জরুরি সাড়াদান ব্যবস্থা চালু করেছে এবং হাইনানে ত্রাণকাজ তদারকিতে একটি দল পাঠিয়েছে।

থাইল্যান্ডও কাজিকির প্রভাব মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থায় আছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এর ফলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে। আন্দামান সাগর ও থাইল্যান্ড উপসাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা ৩ মিটারের বেশি হতে পারে।

এ বছর দক্ষিণ চীন সাগরে এটি পঞ্চম ট্রপিক্যাল স্টর্ম। ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছে, কাজিকি গত বছরের টাইফুন ইয়াগির মতো শক্তিশালী হতে পারে। সেই ঝড়ে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ৩৩ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছিল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত