Ajker Patrika

নেপালে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে পুলিশের নির্বিচার গুলি, নিহত বেড়ে ১৪

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫৬
নেপালে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে পুলিশের নির্বিচার গুলি, নিহত বেড়ে ১৪

নেপালে জেন-জিদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় আজ সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত নয়া বানেশ্বরে জেন-জিদের প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন।

খবরে বলা হয়েছে, চিকিৎসক দীপেন্দ্র পাণ্ডে নিশ্চিত করেছেন, জাতীয় ট্রমা সেন্টারে আনা সাতজন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। তিনি জানান, আরও ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের মাথা ও বুকে গুলি লেগেছে। এ ছাড়া অন্যান্য আঘাতে আহত আরও ২০ জনের বেশি চিকিৎসাধীন।

বানেশ্বরের এভারেস্ট হাসপাতালের কর্মকর্তা অনিল অধিকারী জানিয়েছেন, তাঁদের হাসপাতালে তিন আন্দোলনকারী মারা গেছেন। তিনি জানান, ৫০ জনের বেশি ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে, এর মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর।

বানেশ্বরের সিভিল হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক মোহন চন্দ্র রেগমি বলেন, হাসপাতালটিতে দুজন মারা গেছেন। কেএমসি ও ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষণ হাসপাতালেও একজন করে ব্যক্তি আহত থেকে মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ওপর জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও তাজা গুলি ব্যবহার করেছে। রাজধানী কাঠমান্ডু ও অন্যান্য বড় শহরে এখনো প্রতিবাদ চলছে।

বিক্ষোভকারীরা নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে ঢুকলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাসের শেল ও গুলি চালায়। এতে অনেকে আহত হন। দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জেনারেশন জেডের তরুণেরা রাস্তায় নামলে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

সহিংসতার পর রাজধানী কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ছাড়া দেশের অন্য প্রধান শহরগুলোতেও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় রাজধানীতে কারফিউর মেয়াদ বাড়িয়েছে। সরকারিভাবে দুর্নীতি ও সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে জেনারেশন জেড বা জেন জেডের বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রথমে বানেশ্বরের কিছু এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছিল। কারণ, বিক্ষোভকারীরা সেখানে একটি নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। তবে নতুন সিদ্ধান্তে কারফিউয়ের পরিধি আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। এখন এটি রাষ্ট্রপতির বাসভবন শীতল নিবাস এলাকা, মহারাজগঞ্জ, ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, সিংহ দরবারের চারপাশ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বলুয়াতার ও এর আশপাশের এলাকা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

neapal-8

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে কারফিউ বাড়ানো হয়েছে।

নেপালে সরকারের দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিসরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে কিছুদিন ধরে ক্ষুব্ধ ছিল দেশটির তরুণসমাজ। তারা কিছুদিন ধরে ডিজিটাল পরিসরে এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। তবে আজ ডিজিটাল পরিসর পেরিয়ে এবার রাস্তায় নেমেছে জেনারেশন জেড।

স্থানীয় সময় আজ সকাল ৯টা থেকে রাজধানী কাঠমান্ডুর মৈতিঘরে জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান তোলেন তরুণেরা। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নেপো কিড’ ও ‘নেপো বেবিজ’ হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড চলছিল। সরকার অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই এসব হ্যাশট্যাগ আন্দোলন আরও বেশি গতি পায়।

কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ‘হামি নেপাল’ সংগঠন এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। তারা এর আগে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতিও নেয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান সুধান গুরুঙ বলেন, সরকারের পদক্ষেপ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে দেশজুড়ে আরও নানা জায়গায় এ ধরনের কর্মসূচি চলছে।

আয়োজকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিক্ষোভের রুট ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরে বই হাতে নিয়ে প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত