Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধে ঝুঁকির মুখে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা

ইউক্রেন যুদ্ধে ঝুঁকির মুখে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা

বিশ্বে গমসহ কৃষিজ খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেন অন্যতম। দেশটিতে রুশ আক্রমণের ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বে খাদ্যপণ্য সরবরাহে সংকট দেখা দেবে। কিন্তু সেই ঘাটতির ধাক্কা কেমন হবে সেটি নিয়ে এখনো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্তভিত্তিক গবেষণা হয়নি। আঘাতটা যে বড়সড়ই হবে তা নিয়ে কোনো সন্দেই নেই বললেই চলে। 

বিশ্বের বৃহত্তম সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইয়ারা ইন্টারন্যাশনালের প্রধান সভেইন তোরে হোলসেথার জানিয়েছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্যের বাজারে বড় রকমের ধাক্কা দিতে যাচ্ছে। 

বিশ্বের ৬০ টিরও বেশি দেশে কাজ করে ইয়ারা ইন্টারন্যাশনাল। তাদের অন্যতম কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। এই যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার ওপর বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইয়ারার জন্য দেশটি থেকে গ্যাস পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে যাবে। ফলে বাড়বে সারের দাম। যদিও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার আগেও সারের দাম বেশি ছিল। তবে নতুন এই সংকট আরও মূল্য বাড়াবে বলে সতর্ক করেছেন ইয়ারার প্রধান সভেইন তোরে হোলসেথার। পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে বলে সতর্ক করে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।’ 

হোলসেথার আরও বলেছেন, ‘যুদ্ধের আগে আমরা এমনিই একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম...এখন এটি (যুদ্ধ) সরবরাহ ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা এখন উত্তর গোলার্ধে চাষাবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমে চলে এসেছি। আগামী দিনে খুব শিগগিরই আমাদের বিপুল পরিমাণে সার লাগবে। কিন্তু তা সম্ভবত সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।’ 

ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ এবং খাদ্যমূল্য বৃদ্ধিতে একটি বড় রকমের ধাক্কা দিতে যাচ্ছেরাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী কৃষিজ পণ্য ও খাদ্যের সবচেয়ে বড় উৎপাদক। রাশিয়ার কৃষি কাজের জন্য প্রচুর সার ও অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করে। বিশেষ করে, পটাশ এবং ফসফেটের মতো সারগুলো বেশি ব্যবহার করা হয়। এসব সার গাছের বৃদ্ধির মূল উপাদান। ফলন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখে এসব সার। 

ওয়ার্ল্ড এগ্রিকালচার প্রোডাকশনের হিসাবে, গম উৎপাদনে ইউক্রেন বিশ্বে নবম। আর গম রপ্তানিতে পঞ্চম। অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটির হিসাবে, ২০১৯ সালে বিশ্বে মোট রপ্তানিকৃত গমের এক চতুর্থাংশই (২৫.৪ শতাংশ) সরবরাহ করেছে যৌথভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেন। 

হলসেথার বলেন, ‘সার ব্যবহারের ফলেই বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়...ফলে যদি সার সরবরাহ সম্ভব না হয় তাহলে কৃষিজ ফলন অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবে। এ অবস্থায় আমার কাছে—আমরা বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের দিকে যাচ্ছি কি না তা বিবেচ্য নয় বরং বিবেচ্য হলো সংকট কতোটা ভয়াবহ হবে।’ 

হলসেথার জানিয়েছেন, ইউরোপে খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত মূল পুষ্টি উপাদানের (সার) চারভাগের এক ভাগ আসে রাশিয়া থেকে। 
 
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, এই পদক্ষেপের (রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়া) অর্থ কৃষকদের জন্য উচ্চ ব্যয় চাপিয়ে দেওয়া এবং সেই সঙ্গে ফসলের ফলন কম হওয়া। এটি অবশ্যই খাবারের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। গত বছর গ্যাসের পাইকারি দাম বৃদ্ধির কারণে ইউরোপে সক্ষমতার প্রায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন সাময়িকভাবে কমাতে বাধ্য হয়েছিল ইয়ারা। অন্য উৎপাদকেরাও এ সময় সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। 

সার সরবরাহ করা সম্ভব না হয় তাহলে কৃষিজ ফলন অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবেজাহাজীকরণ ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, বেলারুশের (অন্যতম পটাশ সরবরাহকারী দেশ) ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া—এসব মিলিয়ে গত বছর সারের দাম লাফিয়ে বেড়েছিল। এর ফলে অবধারিতভাবে বাড়ে খাবারের দামও। 

ইয়ারার প্রধান বলছেন, বিশ্বকে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য উৎপাদনের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, কোভিড মহামারী এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ইয়ারার প্রধান সব মিলিয়ে এই যুদ্ধকে ‘বিপর্যয়ের মধ্যে আরও একটি বিপর্যয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এতে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা সংকট আরও বাড়বে।’ 

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, গত দুই বছরে যারা ‘না খেয়ে ঘুমাতে যায়’ তাঁদের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন আরও ১০ কোটি মানুষ। ফলে এই যুদ্ধ সেই তালিকায় আর কোনো মানুষ যুক্ত করার আগেই বন্ধ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাখাইনে মানবিক করিডর: জান্তার আপত্তিতে সরকারে দ্বিধা

মানবিক করিডরে বাংলাদেশের ফায়দা কী

রোগী দেখতে হবে কমপক্ষে ১০ মিনিট, অতিদরিদ্রদের জন্য বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা

সন্ধ্যায় বাজারে গিয়ে নিখোঁজ, ভোরে কালভার্টের নিচে মিলল নারীর লাশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইচ্ছেমতো’ ব্যয়, দুই বছরে রাষ্ট্রের ক্ষতি ৩৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত