আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সময়টা ১৯৭৬ সালের নভেম্বরের এক শীতের রাত। সবাই দৌড়ে পালাচ্ছিল। কেউ জঙ্গলের দিকে, কেউ আশপাশের গ্রামে, কেউ বা সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ে লুকিয়ে পড়ছিল কুয়োর ভেতর। তবে মোহাম্মদ দীনু ছিলেন স্থির। উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মেওয়াট অঞ্চলের উত্তাওয়ার গ্রামের বাসিন্দা তিনি। রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রাম। ১৯৭৬ সালের নভেম্বরের সেই ঠান্ডা রাতে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। তাদের ওপর নির্দেশ ছিল, গ্রামের সব প্রজননক্ষম বয়স্ক পুরুষকে মাঠে জমায়েত করতে হবে।
সে সময় ভারত দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষিত জাতীয় জরুরি অবস্থার ১৭ মাস পার হচ্ছিল। ওই সময়ে দেশের সব নাগরিক স্বাধীনতা কার্যত স্থগিত ছিল। হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচার ছাড়াই জেলে পাঠানো হয়েছিল। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ‘জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি।’
মোহাম্মদ দীনু এবং তাঁর আরও ১৪ জন বন্ধু এই কর্মসূচির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। পুলিশ তাঁদের জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় অব্যবস্থাপনা আর অযত্নে ভরা বন্ধ্যাকরণ শিবিরে। দীনুর চোখে এটি ছিল এক ধরনের ‘ত্যাগ’, যা নাকি গ্রামের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করেছে।
বর্তমানে ফিরে এসে ভাঙাচোরা একটি খাটে বসে ৯০ বছর বয়সী দীনু সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘সবাই যখন নিজেদের বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল, গ্রামের কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ বুঝেছিলেন, কেউ ধরা না পড়লে আরও বড় বিপদ আসবে। তাই গ্রামের কিছু পুরুষকে একত্র করে হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের ত্যাগের মাধ্যমে এই গ্রামকে বাঁচিয়েছি। চারপাশে দেখো, আজ গ্রামের প্রতিটি কোনায় আল্লাহর দেওয়া শিশুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।’
বিশ্বের ‘বৃহত্তম গণতন্ত্র’ বলে দাবি করা ভারত আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন যে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, সেই দিনের বার্ষিকী পালন করছে। আর উত্তাওয়ারে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের শিকার পুরুষদের মধ্যে এখন বেঁচে আছেন একমাত্র মোহাম্মদ দীনু।
১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলা জরুরি অবস্থার সময়, ভারতে ৮০ লাখের বেশি পুরুষকে জোরপূর্বক ভ্যাসেক্টমি বা বন্ধ্যাকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। শুধু ১৯৭৬ সালেই এই সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও সেই ক্ষত এখনো রয়ে গেছে উত্তাওয়ারে। ভারত স্বাধীনতার মাত্র পাঁচ বছর পর, ১৯৫২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তখন সরকার শুধু নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছিল দুই সন্তানের বেশি না নিতে।
কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে, যখন ভারতের নারীদের গড় সন্তানসংখ্যা ছিল নারীপ্রতি প্রায় ৬ জন, তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আরও কঠোর অবস্থান নিতে শুরু করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা মনে করা হতো। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ।
পাশ্চাত্যও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। বিশ্বব্যাংক ভারতের জন্য ৬৬ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির জন্য। যুক্তরাষ্ট্রও দুর্ভিক্ষে কাতর ভারতের জন্য খাদ্য সাহায্য নির্ভর করে রাখে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সাফল্যের ওপর।
কিন্তু জরুরি অবস্থার সময়, যখন সব গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার পুরোপুরি লাগামছাড়া হয়ে পড়ে। সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর ছিল বন্ধ্যাকরণের নির্দিষ্ট কোটা পূরণের চাপ। কোটা পূরণ না করলে বেতন বন্ধ করে দেওয়া হতো, চাকরি হারানোর হুমকি দেওয়া হতো। এমনকি যারা রাজি হতো না, সেই সব গ্রামের পানি-সেচও বন্ধ করে দেওয়া হতো।
এই বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির বিরোধিতা যারা করেছিলেন, তাদের ওপরও নেমে এসেছিল নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা। সেই হামলার শিকার হয়েছিল উত্তাওয়ার গ্রামও। ওই গ্রামে মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ থাকতেন। সে সময় ভারতে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার অন্যদের তুলনায় বেশি ছিল। যে কারণে তাদের ওপর বিশেষ নজর পড়েছিল এই গণ-বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির আওতায়।
দীনুর বাড়ির পাশের গলিতে থাকতেন মোহাম্মদ নূর। তখন তিনি কেবল ১৩ বছরের কিশোর, বাবার কোলে বাড়ির সামনে খাটিয়ায় ঘুমাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ঘোড়ায় চড়ে কিছু পুলিশ সদস্যসহ নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে হানা দেয়। তাঁর বাবা দৌড়ে পাশের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যান, নূর ভয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে।
সে দিনের স্মৃতিচারণ করে নূর বলেন, ‘তারা দরজা-জানালা সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দেয়, যা সামনে পেয়েছে সবকিছু ধ্বংস করেছে। আমাদের দুর্ভোগ বাড়াতে, তারা আটা-চালে বালি মিশিয়ে দেয়। পরের চার দিন গ্রামের কোনো ঘরেই রান্না হয়নি।’ পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে স্থানীয় থানায় মারধর করে। তবে তখন তাঁর বয়স ১৫ বছরের কম হওয়ায়, বন্ধ্যাকরণের জন্য তাকে অযোগ্য বিবেচনা করে ছেড়ে দেয়।
গ্রামবাসীরা ওই রাতকে এখনো ‘ভয়ের রাত’ নামে স্মরণ করে। ওই রাত থেকেই জন্ম নেয় উত্তাওয়ারের স্থানীয় লোককথা, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র তৎকালীন গ্রামপ্রধান আব্দুর রহমান। এই বিষয়ে নূরের বন্ধু ৬৩ বছর বয়সী তাজাম্মুল বলেন, ‘গ্রামের বাইরের লোকেরা হয়তো তাঁর নাম ভুলে গেছে, কিন্তু আমরা কেউ ভুলিনি।’
তাজাম্মুল জানান, উত্তাওয়ারে অভিযান চালানোর আগে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এসে আব্দুর রহমানকে অনুরোধ করেন কিছু পুরুষকে তাদের হাতে তুলে দিতে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন, আমি কোনো পরিবারের সদস্যকে এই অবস্থায় দিতে পারব না।’ স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, আব্দুর রহমান তখন সরকারি কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ‘আমি আমার এলাকা থেকে একটা কুকুরও দেব না, আর তোমরা মানুষের দাবি করছ! সেটা কখনোই হবে না!’
তবে আব্দুর রহমানের এই দৃঢ় মনোভাবও শেষ পর্যন্ত তাঁর গ্রামকে বাঁচাতে পারেনি। পুলিশের অভিযান শেষে গ্রাম শোকের আবহে ডুবে গিয়েছিল। এই বিষয়ে নূর বলেন, ‘যারা পালিয়ে গিয়েছিল, বা যাদের পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ফেরেনি। উত্তাওয়ার যেন কবরস্থানে পরিণত হয়েছিল, নিস্তব্ধতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’
এরপরের বছরগুলোতে এই ঘটনার পরিণতি আরও বেশি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আশপাশের গ্রামের লোকেরা উত্তাওয়ারের ছেলেদের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতেন না। এমনকি যারা বন্ধ্যাকৃতও হয়নি তাদের সঙ্গেও নয়। কেউ কেউ বিদ্যমান বাগদানও ভেঙে দেয়। কাসিম নামে স্থানীয় এক সমাজকর্মী বলেন, ‘অনেকেই ওই মানসিক আঘাত থেকে আর কোনো দিনই বেরিয়ে আসতে পারেননি। দুশ্চিন্তা, ভীতি আর সামাজিক কলঙ্কে তারা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েন, অনেকের জীবন দ্রুতই শেষ হয়ে যায়।’
আজকের দিনে ভারতে কোনো জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি নেই। দেশের গড় প্রজনন হার এখন দুইয়ের কিছু বেশি। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, জরুরি অবস্থার সময় যে ভীতি আর দমন-পীড়নের পরিবেশ ছিল, সেটাই নতুন রূপে ফিরে এসেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে।
ভারতের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ৭৫ বছর বয়সী শিব বিশ্বনাথন মনে করেন, ‘জরুরি অবস্থার মাধ্যমে ভারতে কর্তৃত্ববাদ আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।’ ১৯৭৫ সালের ১২ জুন, এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয় যে, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের নির্বাচন জিততে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করেছেন। আদালত তাঁকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করে। মাত্র ১৩ দিন পর ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
বিশ্বনাথন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদকে স্বাভাবিক করে তোলার যে প্রক্রিয়া, সেটাই জরুরি অবস্থার জন্ম দিয়েছিল, কোনো অনুতাপ ছিল না। আসলে, জরুরি অবস্থাই আজকের ভারতের আরও অনেক “জরুরি অবস্থার” বীজ রোপণ করেছে। এটিই আধুনিক ভারতের কর্তৃত্ববাদী ভিত।’
ইন্দিরা গান্ধীর ভক্তরা তাঁকে কখনো হিন্দু দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করতেন। শব্দের খেলায় তাঁকে ভারতের সঙ্গেও এক করে দেখা হতো—ঠিক যেমন এখন নরেন্দ্র মোদীর সমর্থকেরা তাকে হিন্দু ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে তুলনা করেন। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি যখন বাড়তে থাকে, তখন দেশবাসীর বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে যায় বলে মনে করেন সমাজবিদ শিব বিশ্বনাথন। তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সির মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদ শাসনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল।’
বিশ্বনাথনের মতে, ১৯৭৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থার অবসান ঘটলেও, তার পর থেকেই ভারত ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত—প্রত্যেকেই কিছু না কিছু করে দেশটাকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যদিও বাইরের মুখে সবাই গণতন্ত্রের কথা বলেছেন।’
২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূচকে ভারতের গণতন্ত্রের অবস্থা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে। বিরোধী নেতাদের কারাবন্দী করা, সাংবাদিকদের হয়রানি এবং বাক্স্বাধীনতার ওপর নানা বিধিনিষেধ এর জন্য দায়ী।
ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সংগঠন ‘ফ্রি স্পিচ কালেকটিভের’ সহপ্রতিষ্ঠাতা গীতা শেঠু বলেন, জরুরি অবস্থার সময়ের সঙ্গে আজকের ভারতের মিল হলো মূলধারার সংবাদমাধ্যমের আত্মসমর্পণের জায়গাটিতে। তিনি বলেন, ‘তখন আইন করে নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, আর এখন আইনের অপব্যবহার করে সেটা করা হচ্ছে। তখনকার সেই ভয়, আত্মনিয়ন্ত্রণ—আজও বিদ্যমান, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলীর মতে, জরুরি অবস্থার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—যখন কোনো নেতৃত্ব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ক্ষমতাশালী হয়, তখন কীভাবে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। তবে জরুরি অবস্থার আরেকটি বড় শিক্ষা হলো—এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সফল আন্দোলন। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর কংগ্রেস দলকে হারিয়ে দিয়েছিল বিরোধীরা। তাদের নির্বাচনী প্রচারে সরকারের অমানবিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে গণ-বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি ছিল বড় ইস্যু।
আসিম আলী বলেন, ‘সত্তরের দশকের মতোই, এখন দেখার বিষয় হলো, মোদির পরে ভারতীয় গণতন্ত্র আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না।’
১৯৭৬ সালের নভেম্বরে দীনু যখন পুলিশের ভ্যানে বসেছিলেন, তখন তাঁর মনে শুধু তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সালিমার কথাই ঘুরছিল। সালিমা তখন বাড়িতে ছিলেন। দীনু বলেন, ‘অনেক পুরুষ, যাদের বিয়ে হয়নি বা সন্তান ছিল না, তারা পুলিশের কাছে অনুরোধ করছিলেন ছেড়ে দেওয়ার জন্য।’ কিন্তু দীনুর ১৪ জন বন্ধুর কাউকেই ছাড়া হয়নি। দীনু বলেন, ‘নাসবন্দি (বন্ধ্যাকরণ) এমন এক অভিশাপ, যা সেই সময় থেকে উত্তাওয়ার গ্রামের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।’
ধরে নিয়ে যাওয়ার ৮ দিন পর পুলিশ হেফাজতে দীনুকে পাশের শহর পালওয়ালের একটি বন্ধ্যাকরণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর অপারেশন করা হয়। এক মাস পর দীনু যখন অপারেশনের পর বাড়ি ফেরেন, তখন সালিমা তাদের একমাত্র সন্তানের জন্ম দেন। আজ দীনুর তিন নাতি ও বেশ কয়েকজন পৌত্র-প্রপৌত্র রয়েছে।
দীনু হেসে বলেন, ‘এই গ্রামকে আমরাই বাঁচিয়েছি। না হলে ইন্দিরা তো পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিতেন।’ ২০২৪ সালে সালিমা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মারা যান। দীনু এখনো বেঁচে আছেন এবং নিজের দীর্ঘজীবনের জন্য বেশ গর্বিত। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ঠাকুরদার সঙ্গে খেলেছি, এখন আমার প্রপৌত্রদের সঙ্গে খেলছি।’ প্লাস্টিকের কাপ থেকে ঠান্ডা সোডা পান করতে করতে দীনু বলেন, ‘সাত পুরুষ! এমন সৌভাগ্য কয় জনেরই বা হয়?’

সময়টা ১৯৭৬ সালের নভেম্বরের এক শীতের রাত। সবাই দৌড়ে পালাচ্ছিল। কেউ জঙ্গলের দিকে, কেউ আশপাশের গ্রামে, কেউ বা সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ে লুকিয়ে পড়ছিল কুয়োর ভেতর। তবে মোহাম্মদ দীনু ছিলেন স্থির। উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মেওয়াট অঞ্চলের উত্তাওয়ার গ্রামের বাসিন্দা তিনি। রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রাম। ১৯৭৬ সালের নভেম্বরের সেই ঠান্ডা রাতে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। তাদের ওপর নির্দেশ ছিল, গ্রামের সব প্রজননক্ষম বয়স্ক পুরুষকে মাঠে জমায়েত করতে হবে।
সে সময় ভারত দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষিত জাতীয় জরুরি অবস্থার ১৭ মাস পার হচ্ছিল। ওই সময়ে দেশের সব নাগরিক স্বাধীনতা কার্যত স্থগিত ছিল। হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচার ছাড়াই জেলে পাঠানো হয়েছিল। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ‘জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি।’
মোহাম্মদ দীনু এবং তাঁর আরও ১৪ জন বন্ধু এই কর্মসূচির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। পুলিশ তাঁদের জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় অব্যবস্থাপনা আর অযত্নে ভরা বন্ধ্যাকরণ শিবিরে। দীনুর চোখে এটি ছিল এক ধরনের ‘ত্যাগ’, যা নাকি গ্রামের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করেছে।
বর্তমানে ফিরে এসে ভাঙাচোরা একটি খাটে বসে ৯০ বছর বয়সী দীনু সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘সবাই যখন নিজেদের বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল, গ্রামের কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ বুঝেছিলেন, কেউ ধরা না পড়লে আরও বড় বিপদ আসবে। তাই গ্রামের কিছু পুরুষকে একত্র করে হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের ত্যাগের মাধ্যমে এই গ্রামকে বাঁচিয়েছি। চারপাশে দেখো, আজ গ্রামের প্রতিটি কোনায় আল্লাহর দেওয়া শিশুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।’
বিশ্বের ‘বৃহত্তম গণতন্ত্র’ বলে দাবি করা ভারত আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন যে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, সেই দিনের বার্ষিকী পালন করছে। আর উত্তাওয়ারে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের শিকার পুরুষদের মধ্যে এখন বেঁচে আছেন একমাত্র মোহাম্মদ দীনু।
১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলা জরুরি অবস্থার সময়, ভারতে ৮০ লাখের বেশি পুরুষকে জোরপূর্বক ভ্যাসেক্টমি বা বন্ধ্যাকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। শুধু ১৯৭৬ সালেই এই সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও সেই ক্ষত এখনো রয়ে গেছে উত্তাওয়ারে। ভারত স্বাধীনতার মাত্র পাঁচ বছর পর, ১৯৫২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তখন সরকার শুধু নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছিল দুই সন্তানের বেশি না নিতে।
কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে, যখন ভারতের নারীদের গড় সন্তানসংখ্যা ছিল নারীপ্রতি প্রায় ৬ জন, তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আরও কঠোর অবস্থান নিতে শুরু করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা মনে করা হতো। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ।
পাশ্চাত্যও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। বিশ্বব্যাংক ভারতের জন্য ৬৬ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির জন্য। যুক্তরাষ্ট্রও দুর্ভিক্ষে কাতর ভারতের জন্য খাদ্য সাহায্য নির্ভর করে রাখে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সাফল্যের ওপর।
কিন্তু জরুরি অবস্থার সময়, যখন সব গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার পুরোপুরি লাগামছাড়া হয়ে পড়ে। সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর ছিল বন্ধ্যাকরণের নির্দিষ্ট কোটা পূরণের চাপ। কোটা পূরণ না করলে বেতন বন্ধ করে দেওয়া হতো, চাকরি হারানোর হুমকি দেওয়া হতো। এমনকি যারা রাজি হতো না, সেই সব গ্রামের পানি-সেচও বন্ধ করে দেওয়া হতো।
এই বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির বিরোধিতা যারা করেছিলেন, তাদের ওপরও নেমে এসেছিল নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা। সেই হামলার শিকার হয়েছিল উত্তাওয়ার গ্রামও। ওই গ্রামে মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ থাকতেন। সে সময় ভারতে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার অন্যদের তুলনায় বেশি ছিল। যে কারণে তাদের ওপর বিশেষ নজর পড়েছিল এই গণ-বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির আওতায়।
দীনুর বাড়ির পাশের গলিতে থাকতেন মোহাম্মদ নূর। তখন তিনি কেবল ১৩ বছরের কিশোর, বাবার কোলে বাড়ির সামনে খাটিয়ায় ঘুমাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ঘোড়ায় চড়ে কিছু পুলিশ সদস্যসহ নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে হানা দেয়। তাঁর বাবা দৌড়ে পাশের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যান, নূর ভয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে।
সে দিনের স্মৃতিচারণ করে নূর বলেন, ‘তারা দরজা-জানালা সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দেয়, যা সামনে পেয়েছে সবকিছু ধ্বংস করেছে। আমাদের দুর্ভোগ বাড়াতে, তারা আটা-চালে বালি মিশিয়ে দেয়। পরের চার দিন গ্রামের কোনো ঘরেই রান্না হয়নি।’ পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে স্থানীয় থানায় মারধর করে। তবে তখন তাঁর বয়স ১৫ বছরের কম হওয়ায়, বন্ধ্যাকরণের জন্য তাকে অযোগ্য বিবেচনা করে ছেড়ে দেয়।
গ্রামবাসীরা ওই রাতকে এখনো ‘ভয়ের রাত’ নামে স্মরণ করে। ওই রাত থেকেই জন্ম নেয় উত্তাওয়ারের স্থানীয় লোককথা, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র তৎকালীন গ্রামপ্রধান আব্দুর রহমান। এই বিষয়ে নূরের বন্ধু ৬৩ বছর বয়সী তাজাম্মুল বলেন, ‘গ্রামের বাইরের লোকেরা হয়তো তাঁর নাম ভুলে গেছে, কিন্তু আমরা কেউ ভুলিনি।’
তাজাম্মুল জানান, উত্তাওয়ারে অভিযান চালানোর আগে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এসে আব্দুর রহমানকে অনুরোধ করেন কিছু পুরুষকে তাদের হাতে তুলে দিতে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন, আমি কোনো পরিবারের সদস্যকে এই অবস্থায় দিতে পারব না।’ স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, আব্দুর রহমান তখন সরকারি কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ‘আমি আমার এলাকা থেকে একটা কুকুরও দেব না, আর তোমরা মানুষের দাবি করছ! সেটা কখনোই হবে না!’
তবে আব্দুর রহমানের এই দৃঢ় মনোভাবও শেষ পর্যন্ত তাঁর গ্রামকে বাঁচাতে পারেনি। পুলিশের অভিযান শেষে গ্রাম শোকের আবহে ডুবে গিয়েছিল। এই বিষয়ে নূর বলেন, ‘যারা পালিয়ে গিয়েছিল, বা যাদের পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ফেরেনি। উত্তাওয়ার যেন কবরস্থানে পরিণত হয়েছিল, নিস্তব্ধতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’
এরপরের বছরগুলোতে এই ঘটনার পরিণতি আরও বেশি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আশপাশের গ্রামের লোকেরা উত্তাওয়ারের ছেলেদের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতেন না। এমনকি যারা বন্ধ্যাকৃতও হয়নি তাদের সঙ্গেও নয়। কেউ কেউ বিদ্যমান বাগদানও ভেঙে দেয়। কাসিম নামে স্থানীয় এক সমাজকর্মী বলেন, ‘অনেকেই ওই মানসিক আঘাত থেকে আর কোনো দিনই বেরিয়ে আসতে পারেননি। দুশ্চিন্তা, ভীতি আর সামাজিক কলঙ্কে তারা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েন, অনেকের জীবন দ্রুতই শেষ হয়ে যায়।’
আজকের দিনে ভারতে কোনো জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি নেই। দেশের গড় প্রজনন হার এখন দুইয়ের কিছু বেশি। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, জরুরি অবস্থার সময় যে ভীতি আর দমন-পীড়নের পরিবেশ ছিল, সেটাই নতুন রূপে ফিরে এসেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে।
ভারতের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ৭৫ বছর বয়সী শিব বিশ্বনাথন মনে করেন, ‘জরুরি অবস্থার মাধ্যমে ভারতে কর্তৃত্ববাদ আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।’ ১৯৭৫ সালের ১২ জুন, এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয় যে, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের নির্বাচন জিততে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করেছেন। আদালত তাঁকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করে। মাত্র ১৩ দিন পর ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
বিশ্বনাথন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদকে স্বাভাবিক করে তোলার যে প্রক্রিয়া, সেটাই জরুরি অবস্থার জন্ম দিয়েছিল, কোনো অনুতাপ ছিল না। আসলে, জরুরি অবস্থাই আজকের ভারতের আরও অনেক “জরুরি অবস্থার” বীজ রোপণ করেছে। এটিই আধুনিক ভারতের কর্তৃত্ববাদী ভিত।’
ইন্দিরা গান্ধীর ভক্তরা তাঁকে কখনো হিন্দু দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করতেন। শব্দের খেলায় তাঁকে ভারতের সঙ্গেও এক করে দেখা হতো—ঠিক যেমন এখন নরেন্দ্র মোদীর সমর্থকেরা তাকে হিন্দু ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে তুলনা করেন। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি যখন বাড়তে থাকে, তখন দেশবাসীর বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে যায় বলে মনে করেন সমাজবিদ শিব বিশ্বনাথন। তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সির মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদ শাসনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল।’
বিশ্বনাথনের মতে, ১৯৭৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থার অবসান ঘটলেও, তার পর থেকেই ভারত ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত—প্রত্যেকেই কিছু না কিছু করে দেশটাকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যদিও বাইরের মুখে সবাই গণতন্ত্রের কথা বলেছেন।’
২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূচকে ভারতের গণতন্ত্রের অবস্থা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে। বিরোধী নেতাদের কারাবন্দী করা, সাংবাদিকদের হয়রানি এবং বাক্স্বাধীনতার ওপর নানা বিধিনিষেধ এর জন্য দায়ী।
ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সংগঠন ‘ফ্রি স্পিচ কালেকটিভের’ সহপ্রতিষ্ঠাতা গীতা শেঠু বলেন, জরুরি অবস্থার সময়ের সঙ্গে আজকের ভারতের মিল হলো মূলধারার সংবাদমাধ্যমের আত্মসমর্পণের জায়গাটিতে। তিনি বলেন, ‘তখন আইন করে নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, আর এখন আইনের অপব্যবহার করে সেটা করা হচ্ছে। তখনকার সেই ভয়, আত্মনিয়ন্ত্রণ—আজও বিদ্যমান, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলীর মতে, জরুরি অবস্থার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—যখন কোনো নেতৃত্ব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ক্ষমতাশালী হয়, তখন কীভাবে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। তবে জরুরি অবস্থার আরেকটি বড় শিক্ষা হলো—এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সফল আন্দোলন। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর কংগ্রেস দলকে হারিয়ে দিয়েছিল বিরোধীরা। তাদের নির্বাচনী প্রচারে সরকারের অমানবিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে গণ-বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি ছিল বড় ইস্যু।
আসিম আলী বলেন, ‘সত্তরের দশকের মতোই, এখন দেখার বিষয় হলো, মোদির পরে ভারতীয় গণতন্ত্র আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না।’
১৯৭৬ সালের নভেম্বরে দীনু যখন পুলিশের ভ্যানে বসেছিলেন, তখন তাঁর মনে শুধু তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সালিমার কথাই ঘুরছিল। সালিমা তখন বাড়িতে ছিলেন। দীনু বলেন, ‘অনেক পুরুষ, যাদের বিয়ে হয়নি বা সন্তান ছিল না, তারা পুলিশের কাছে অনুরোধ করছিলেন ছেড়ে দেওয়ার জন্য।’ কিন্তু দীনুর ১৪ জন বন্ধুর কাউকেই ছাড়া হয়নি। দীনু বলেন, ‘নাসবন্দি (বন্ধ্যাকরণ) এমন এক অভিশাপ, যা সেই সময় থেকে উত্তাওয়ার গ্রামের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।’
ধরে নিয়ে যাওয়ার ৮ দিন পর পুলিশ হেফাজতে দীনুকে পাশের শহর পালওয়ালের একটি বন্ধ্যাকরণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর অপারেশন করা হয়। এক মাস পর দীনু যখন অপারেশনের পর বাড়ি ফেরেন, তখন সালিমা তাদের একমাত্র সন্তানের জন্ম দেন। আজ দীনুর তিন নাতি ও বেশ কয়েকজন পৌত্র-প্রপৌত্র রয়েছে।
দীনু হেসে বলেন, ‘এই গ্রামকে আমরাই বাঁচিয়েছি। না হলে ইন্দিরা তো পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিতেন।’ ২০২৪ সালে সালিমা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মারা যান। দীনু এখনো বেঁচে আছেন এবং নিজের দীর্ঘজীবনের জন্য বেশ গর্বিত। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ঠাকুরদার সঙ্গে খেলেছি, এখন আমার প্রপৌত্রদের সঙ্গে খেলছি।’ প্লাস্টিকের কাপ থেকে ঠান্ডা সোডা পান করতে করতে দীনু বলেন, ‘সাত পুরুষ! এমন সৌভাগ্য কয় জনেরই বা হয়?’
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সময়টা ১৯৭৬ সালের নভেম্বরের এক শীতের রাত। সবাই দৌড়ে পালাচ্ছিল। কেউ জঙ্গলের দিকে, কেউ আশপাশের গ্রামে, কেউ বা সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ে লুকিয়ে পড়ছিল কুয়োর ভেতর। তবে মোহাম্মদ দীনু ছিলেন স্থির। উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মেওয়াট অঞ্চলের উত্তাওয়ার গ্রামের বাসিন্দা তিনি। রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রাম। ১৯৭৬ সালের নভেম্বরের সেই ঠান্ডা রাতে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। তাদের ওপর নির্দেশ ছিল, গ্রামের সব প্রজননক্ষম বয়স্ক পুরুষকে মাঠে জমায়েত করতে হবে।
সে সময় ভারত দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষিত জাতীয় জরুরি অবস্থার ১৭ মাস পার হচ্ছিল। ওই সময়ে দেশের সব নাগরিক স্বাধীনতা কার্যত স্থগিত ছিল। হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচার ছাড়াই জেলে পাঠানো হয়েছিল। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ‘জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি।’
মোহাম্মদ দীনু এবং তাঁর আরও ১৪ জন বন্ধু এই কর্মসূচির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। পুলিশ তাঁদের জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় অব্যবস্থাপনা আর অযত্নে ভরা বন্ধ্যাকরণ শিবিরে। দীনুর চোখে এটি ছিল এক ধরনের ‘ত্যাগ’, যা নাকি গ্রামের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করেছে।
বর্তমানে ফিরে এসে ভাঙাচোরা একটি খাটে বসে ৯০ বছর বয়সী দীনু সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘সবাই যখন নিজেদের বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল, গ্রামের কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ বুঝেছিলেন, কেউ ধরা না পড়লে আরও বড় বিপদ আসবে। তাই গ্রামের কিছু পুরুষকে একত্র করে হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের ত্যাগের মাধ্যমে এই গ্রামকে বাঁচিয়েছি। চারপাশে দেখো, আজ গ্রামের প্রতিটি কোনায় আল্লাহর দেওয়া শিশুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।’
বিশ্বের ‘বৃহত্তম গণতন্ত্র’ বলে দাবি করা ভারত আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন যে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, সেই দিনের বার্ষিকী পালন করছে। আর উত্তাওয়ারে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের শিকার পুরুষদের মধ্যে এখন বেঁচে আছেন একমাত্র মোহাম্মদ দীনু।
১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলা জরুরি অবস্থার সময়, ভারতে ৮০ লাখের বেশি পুরুষকে জোরপূর্বক ভ্যাসেক্টমি বা বন্ধ্যাকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। শুধু ১৯৭৬ সালেই এই সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও সেই ক্ষত এখনো রয়ে গেছে উত্তাওয়ারে। ভারত স্বাধীনতার মাত্র পাঁচ বছর পর, ১৯৫২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তখন সরকার শুধু নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছিল দুই সন্তানের বেশি না নিতে।
কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে, যখন ভারতের নারীদের গড় সন্তানসংখ্যা ছিল নারীপ্রতি প্রায় ৬ জন, তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আরও কঠোর অবস্থান নিতে শুরু করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা মনে করা হতো। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ।
পাশ্চাত্যও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। বিশ্বব্যাংক ভারতের জন্য ৬৬ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির জন্য। যুক্তরাষ্ট্রও দুর্ভিক্ষে কাতর ভারতের জন্য খাদ্য সাহায্য নির্ভর করে রাখে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সাফল্যের ওপর।
কিন্তু জরুরি অবস্থার সময়, যখন সব গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার পুরোপুরি লাগামছাড়া হয়ে পড়ে। সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর ছিল বন্ধ্যাকরণের নির্দিষ্ট কোটা পূরণের চাপ। কোটা পূরণ না করলে বেতন বন্ধ করে দেওয়া হতো, চাকরি হারানোর হুমকি দেওয়া হতো। এমনকি যারা রাজি হতো না, সেই সব গ্রামের পানি-সেচও বন্ধ করে দেওয়া হতো।
এই বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির বিরোধিতা যারা করেছিলেন, তাদের ওপরও নেমে এসেছিল নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা। সেই হামলার শিকার হয়েছিল উত্তাওয়ার গ্রামও। ওই গ্রামে মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ থাকতেন। সে সময় ভারতে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার অন্যদের তুলনায় বেশি ছিল। যে কারণে তাদের ওপর বিশেষ নজর পড়েছিল এই গণ-বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির আওতায়।
দীনুর বাড়ির পাশের গলিতে থাকতেন মোহাম্মদ নূর। তখন তিনি কেবল ১৩ বছরের কিশোর, বাবার কোলে বাড়ির সামনে খাটিয়ায় ঘুমাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ঘোড়ায় চড়ে কিছু পুলিশ সদস্যসহ নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে হানা দেয়। তাঁর বাবা দৌড়ে পাশের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যান, নূর ভয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে।
সে দিনের স্মৃতিচারণ করে নূর বলেন, ‘তারা দরজা-জানালা সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দেয়, যা সামনে পেয়েছে সবকিছু ধ্বংস করেছে। আমাদের দুর্ভোগ বাড়াতে, তারা আটা-চালে বালি মিশিয়ে দেয়। পরের চার দিন গ্রামের কোনো ঘরেই রান্না হয়নি।’ পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে স্থানীয় থানায় মারধর করে। তবে তখন তাঁর বয়স ১৫ বছরের কম হওয়ায়, বন্ধ্যাকরণের জন্য তাকে অযোগ্য বিবেচনা করে ছেড়ে দেয়।
গ্রামবাসীরা ওই রাতকে এখনো ‘ভয়ের রাত’ নামে স্মরণ করে। ওই রাত থেকেই জন্ম নেয় উত্তাওয়ারের স্থানীয় লোককথা, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র তৎকালীন গ্রামপ্রধান আব্দুর রহমান। এই বিষয়ে নূরের বন্ধু ৬৩ বছর বয়সী তাজাম্মুল বলেন, ‘গ্রামের বাইরের লোকেরা হয়তো তাঁর নাম ভুলে গেছে, কিন্তু আমরা কেউ ভুলিনি।’
তাজাম্মুল জানান, উত্তাওয়ারে অভিযান চালানোর আগে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এসে আব্দুর রহমানকে অনুরোধ করেন কিছু পুরুষকে তাদের হাতে তুলে দিতে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন, আমি কোনো পরিবারের সদস্যকে এই অবস্থায় দিতে পারব না।’ স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, আব্দুর রহমান তখন সরকারি কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ‘আমি আমার এলাকা থেকে একটা কুকুরও দেব না, আর তোমরা মানুষের দাবি করছ! সেটা কখনোই হবে না!’
তবে আব্দুর রহমানের এই দৃঢ় মনোভাবও শেষ পর্যন্ত তাঁর গ্রামকে বাঁচাতে পারেনি। পুলিশের অভিযান শেষে গ্রাম শোকের আবহে ডুবে গিয়েছিল। এই বিষয়ে নূর বলেন, ‘যারা পালিয়ে গিয়েছিল, বা যাদের পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ফেরেনি। উত্তাওয়ার যেন কবরস্থানে পরিণত হয়েছিল, নিস্তব্ধতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’
এরপরের বছরগুলোতে এই ঘটনার পরিণতি আরও বেশি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আশপাশের গ্রামের লোকেরা উত্তাওয়ারের ছেলেদের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতেন না। এমনকি যারা বন্ধ্যাকৃতও হয়নি তাদের সঙ্গেও নয়। কেউ কেউ বিদ্যমান বাগদানও ভেঙে দেয়। কাসিম নামে স্থানীয় এক সমাজকর্মী বলেন, ‘অনেকেই ওই মানসিক আঘাত থেকে আর কোনো দিনই বেরিয়ে আসতে পারেননি। দুশ্চিন্তা, ভীতি আর সামাজিক কলঙ্কে তারা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েন, অনেকের জীবন দ্রুতই শেষ হয়ে যায়।’
আজকের দিনে ভারতে কোনো জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি নেই। দেশের গড় প্রজনন হার এখন দুইয়ের কিছু বেশি। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, জরুরি অবস্থার সময় যে ভীতি আর দমন-পীড়নের পরিবেশ ছিল, সেটাই নতুন রূপে ফিরে এসেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে।
ভারতের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ৭৫ বছর বয়সী শিব বিশ্বনাথন মনে করেন, ‘জরুরি অবস্থার মাধ্যমে ভারতে কর্তৃত্ববাদ আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।’ ১৯৭৫ সালের ১২ জুন, এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয় যে, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের নির্বাচন জিততে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করেছেন। আদালত তাঁকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করে। মাত্র ১৩ দিন পর ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
বিশ্বনাথন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদকে স্বাভাবিক করে তোলার যে প্রক্রিয়া, সেটাই জরুরি অবস্থার জন্ম দিয়েছিল, কোনো অনুতাপ ছিল না। আসলে, জরুরি অবস্থাই আজকের ভারতের আরও অনেক “জরুরি অবস্থার” বীজ রোপণ করেছে। এটিই আধুনিক ভারতের কর্তৃত্ববাদী ভিত।’
ইন্দিরা গান্ধীর ভক্তরা তাঁকে কখনো হিন্দু দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করতেন। শব্দের খেলায় তাঁকে ভারতের সঙ্গেও এক করে দেখা হতো—ঠিক যেমন এখন নরেন্দ্র মোদীর সমর্থকেরা তাকে হিন্দু ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে তুলনা করেন। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি যখন বাড়তে থাকে, তখন দেশবাসীর বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে যায় বলে মনে করেন সমাজবিদ শিব বিশ্বনাথন। তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সির মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদ শাসনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল।’
বিশ্বনাথনের মতে, ১৯৭৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থার অবসান ঘটলেও, তার পর থেকেই ভারত ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত—প্রত্যেকেই কিছু না কিছু করে দেশটাকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যদিও বাইরের মুখে সবাই গণতন্ত্রের কথা বলেছেন।’
২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূচকে ভারতের গণতন্ত্রের অবস্থা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে। বিরোধী নেতাদের কারাবন্দী করা, সাংবাদিকদের হয়রানি এবং বাক্স্বাধীনতার ওপর নানা বিধিনিষেধ এর জন্য দায়ী।
ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সংগঠন ‘ফ্রি স্পিচ কালেকটিভের’ সহপ্রতিষ্ঠাতা গীতা শেঠু বলেন, জরুরি অবস্থার সময়ের সঙ্গে আজকের ভারতের মিল হলো মূলধারার সংবাদমাধ্যমের আত্মসমর্পণের জায়গাটিতে। তিনি বলেন, ‘তখন আইন করে নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, আর এখন আইনের অপব্যবহার করে সেটা করা হচ্ছে। তখনকার সেই ভয়, আত্মনিয়ন্ত্রণ—আজও বিদ্যমান, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলীর মতে, জরুরি অবস্থার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—যখন কোনো নেতৃত্ব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ক্ষমতাশালী হয়, তখন কীভাবে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। তবে জরুরি অবস্থার আরেকটি বড় শিক্ষা হলো—এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সফল আন্দোলন। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর কংগ্রেস দলকে হারিয়ে দিয়েছিল বিরোধীরা। তাদের নির্বাচনী প্রচারে সরকারের অমানবিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে গণ-বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি ছিল বড় ইস্যু।
আসিম আলী বলেন, ‘সত্তরের দশকের মতোই, এখন দেখার বিষয় হলো, মোদির পরে ভারতীয় গণতন্ত্র আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না।’
১৯৭৬ সালের নভেম্বরে দীনু যখন পুলিশের ভ্যানে বসেছিলেন, তখন তাঁর মনে শুধু তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সালিমার কথাই ঘুরছিল। সালিমা তখন বাড়িতে ছিলেন। দীনু বলেন, ‘অনেক পুরুষ, যাদের বিয়ে হয়নি বা সন্তান ছিল না, তারা পুলিশের কাছে অনুরোধ করছিলেন ছেড়ে দেওয়ার জন্য।’ কিন্তু দীনুর ১৪ জন বন্ধুর কাউকেই ছাড়া হয়নি। দীনু বলেন, ‘নাসবন্দি (বন্ধ্যাকরণ) এমন এক অভিশাপ, যা সেই সময় থেকে উত্তাওয়ার গ্রামের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।’
ধরে নিয়ে যাওয়ার ৮ দিন পর পুলিশ হেফাজতে দীনুকে পাশের শহর পালওয়ালের একটি বন্ধ্যাকরণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর অপারেশন করা হয়। এক মাস পর দীনু যখন অপারেশনের পর বাড়ি ফেরেন, তখন সালিমা তাদের একমাত্র সন্তানের জন্ম দেন। আজ দীনুর তিন নাতি ও বেশ কয়েকজন পৌত্র-প্রপৌত্র রয়েছে।
দীনু হেসে বলেন, ‘এই গ্রামকে আমরাই বাঁচিয়েছি। না হলে ইন্দিরা তো পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিতেন।’ ২০২৪ সালে সালিমা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মারা যান। দীনু এখনো বেঁচে আছেন এবং নিজের দীর্ঘজীবনের জন্য বেশ গর্বিত। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ঠাকুরদার সঙ্গে খেলেছি, এখন আমার প্রপৌত্রদের সঙ্গে খেলছি।’ প্লাস্টিকের কাপ থেকে ঠান্ডা সোডা পান করতে করতে দীনু বলেন, ‘সাত পুরুষ! এমন সৌভাগ্য কয় জনেরই বা হয়?’

সময়টা ১৯৭৬ সালের নভেম্বরের এক শীতের রাত। সবাই দৌড়ে পালাচ্ছিল। কেউ জঙ্গলের দিকে, কেউ আশপাশের গ্রামে, কেউ বা সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ে লুকিয়ে পড়ছিল কুয়োর ভেতর। তবে মোহাম্মদ দীনু ছিলেন স্থির। উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মেওয়াট অঞ্চলের উত্তাওয়ার গ্রামের বাসিন্দা তিনি। রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রাম। ১৯৭৬ সালের নভেম্বরের সেই ঠান্ডা রাতে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। তাদের ওপর নির্দেশ ছিল, গ্রামের সব প্রজননক্ষম বয়স্ক পুরুষকে মাঠে জমায়েত করতে হবে।
সে সময় ভারত দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষিত জাতীয় জরুরি অবস্থার ১৭ মাস পার হচ্ছিল। ওই সময়ে দেশের সব নাগরিক স্বাধীনতা কার্যত স্থগিত ছিল। হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচার ছাড়াই জেলে পাঠানো হয়েছিল। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ‘জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি।’
মোহাম্মদ দীনু এবং তাঁর আরও ১৪ জন বন্ধু এই কর্মসূচির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। পুলিশ তাঁদের জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় অব্যবস্থাপনা আর অযত্নে ভরা বন্ধ্যাকরণ শিবিরে। দীনুর চোখে এটি ছিল এক ধরনের ‘ত্যাগ’, যা নাকি গ্রামের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করেছে।
বর্তমানে ফিরে এসে ভাঙাচোরা একটি খাটে বসে ৯০ বছর বয়সী দীনু সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘সবাই যখন নিজেদের বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল, গ্রামের কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ বুঝেছিলেন, কেউ ধরা না পড়লে আরও বড় বিপদ আসবে। তাই গ্রামের কিছু পুরুষকে একত্র করে হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের ত্যাগের মাধ্যমে এই গ্রামকে বাঁচিয়েছি। চারপাশে দেখো, আজ গ্রামের প্রতিটি কোনায় আল্লাহর দেওয়া শিশুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।’
বিশ্বের ‘বৃহত্তম গণতন্ত্র’ বলে দাবি করা ভারত আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন যে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, সেই দিনের বার্ষিকী পালন করছে। আর উত্তাওয়ারে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের শিকার পুরুষদের মধ্যে এখন বেঁচে আছেন একমাত্র মোহাম্মদ দীনু।
১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলা জরুরি অবস্থার সময়, ভারতে ৮০ লাখের বেশি পুরুষকে জোরপূর্বক ভ্যাসেক্টমি বা বন্ধ্যাকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। শুধু ১৯৭৬ সালেই এই সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও সেই ক্ষত এখনো রয়ে গেছে উত্তাওয়ারে। ভারত স্বাধীনতার মাত্র পাঁচ বছর পর, ১৯৫২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তখন সরকার শুধু নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছিল দুই সন্তানের বেশি না নিতে।
কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে, যখন ভারতের নারীদের গড় সন্তানসংখ্যা ছিল নারীপ্রতি প্রায় ৬ জন, তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আরও কঠোর অবস্থান নিতে শুরু করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা মনে করা হতো। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ।
পাশ্চাত্যও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। বিশ্বব্যাংক ভারতের জন্য ৬৬ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির জন্য। যুক্তরাষ্ট্রও দুর্ভিক্ষে কাতর ভারতের জন্য খাদ্য সাহায্য নির্ভর করে রাখে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সাফল্যের ওপর।
কিন্তু জরুরি অবস্থার সময়, যখন সব গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার পুরোপুরি লাগামছাড়া হয়ে পড়ে। সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর ছিল বন্ধ্যাকরণের নির্দিষ্ট কোটা পূরণের চাপ। কোটা পূরণ না করলে বেতন বন্ধ করে দেওয়া হতো, চাকরি হারানোর হুমকি দেওয়া হতো। এমনকি যারা রাজি হতো না, সেই সব গ্রামের পানি-সেচও বন্ধ করে দেওয়া হতো।
এই বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির বিরোধিতা যারা করেছিলেন, তাদের ওপরও নেমে এসেছিল নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা। সেই হামলার শিকার হয়েছিল উত্তাওয়ার গ্রামও। ওই গ্রামে মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ থাকতেন। সে সময় ভারতে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার অন্যদের তুলনায় বেশি ছিল। যে কারণে তাদের ওপর বিশেষ নজর পড়েছিল এই গণ-বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচির আওতায়।
দীনুর বাড়ির পাশের গলিতে থাকতেন মোহাম্মদ নূর। তখন তিনি কেবল ১৩ বছরের কিশোর, বাবার কোলে বাড়ির সামনে খাটিয়ায় ঘুমাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ঘোড়ায় চড়ে কিছু পুলিশ সদস্যসহ নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে হানা দেয়। তাঁর বাবা দৌড়ে পাশের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যান, নূর ভয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে।
সে দিনের স্মৃতিচারণ করে নূর বলেন, ‘তারা দরজা-জানালা সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দেয়, যা সামনে পেয়েছে সবকিছু ধ্বংস করেছে। আমাদের দুর্ভোগ বাড়াতে, তারা আটা-চালে বালি মিশিয়ে দেয়। পরের চার দিন গ্রামের কোনো ঘরেই রান্না হয়নি।’ পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে স্থানীয় থানায় মারধর করে। তবে তখন তাঁর বয়স ১৫ বছরের কম হওয়ায়, বন্ধ্যাকরণের জন্য তাকে অযোগ্য বিবেচনা করে ছেড়ে দেয়।
গ্রামবাসীরা ওই রাতকে এখনো ‘ভয়ের রাত’ নামে স্মরণ করে। ওই রাত থেকেই জন্ম নেয় উত্তাওয়ারের স্থানীয় লোককথা, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র তৎকালীন গ্রামপ্রধান আব্দুর রহমান। এই বিষয়ে নূরের বন্ধু ৬৩ বছর বয়সী তাজাম্মুল বলেন, ‘গ্রামের বাইরের লোকেরা হয়তো তাঁর নাম ভুলে গেছে, কিন্তু আমরা কেউ ভুলিনি।’
তাজাম্মুল জানান, উত্তাওয়ারে অভিযান চালানোর আগে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এসে আব্দুর রহমানকে অনুরোধ করেন কিছু পুরুষকে তাদের হাতে তুলে দিতে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন, আমি কোনো পরিবারের সদস্যকে এই অবস্থায় দিতে পারব না।’ স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, আব্দুর রহমান তখন সরকারি কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ‘আমি আমার এলাকা থেকে একটা কুকুরও দেব না, আর তোমরা মানুষের দাবি করছ! সেটা কখনোই হবে না!’
তবে আব্দুর রহমানের এই দৃঢ় মনোভাবও শেষ পর্যন্ত তাঁর গ্রামকে বাঁচাতে পারেনি। পুলিশের অভিযান শেষে গ্রাম শোকের আবহে ডুবে গিয়েছিল। এই বিষয়ে নূর বলেন, ‘যারা পালিয়ে গিয়েছিল, বা যাদের পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ফেরেনি। উত্তাওয়ার যেন কবরস্থানে পরিণত হয়েছিল, নিস্তব্ধতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’
এরপরের বছরগুলোতে এই ঘটনার পরিণতি আরও বেশি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আশপাশের গ্রামের লোকেরা উত্তাওয়ারের ছেলেদের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতেন না। এমনকি যারা বন্ধ্যাকৃতও হয়নি তাদের সঙ্গেও নয়। কেউ কেউ বিদ্যমান বাগদানও ভেঙে দেয়। কাসিম নামে স্থানীয় এক সমাজকর্মী বলেন, ‘অনেকেই ওই মানসিক আঘাত থেকে আর কোনো দিনই বেরিয়ে আসতে পারেননি। দুশ্চিন্তা, ভীতি আর সামাজিক কলঙ্কে তারা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েন, অনেকের জীবন দ্রুতই শেষ হয়ে যায়।’
আজকের দিনে ভারতে কোনো জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি নেই। দেশের গড় প্রজনন হার এখন দুইয়ের কিছু বেশি। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, জরুরি অবস্থার সময় যে ভীতি আর দমন-পীড়নের পরিবেশ ছিল, সেটাই নতুন রূপে ফিরে এসেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে।
ভারতের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ৭৫ বছর বয়সী শিব বিশ্বনাথন মনে করেন, ‘জরুরি অবস্থার মাধ্যমে ভারতে কর্তৃত্ববাদ আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।’ ১৯৭৫ সালের ১২ জুন, এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয় যে, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের নির্বাচন জিততে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করেছেন। আদালত তাঁকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করে। মাত্র ১৩ দিন পর ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
বিশ্বনাথন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদকে স্বাভাবিক করে তোলার যে প্রক্রিয়া, সেটাই জরুরি অবস্থার জন্ম দিয়েছিল, কোনো অনুতাপ ছিল না। আসলে, জরুরি অবস্থাই আজকের ভারতের আরও অনেক “জরুরি অবস্থার” বীজ রোপণ করেছে। এটিই আধুনিক ভারতের কর্তৃত্ববাদী ভিত।’
ইন্দিরা গান্ধীর ভক্তরা তাঁকে কখনো হিন্দু দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করতেন। শব্দের খেলায় তাঁকে ভারতের সঙ্গেও এক করে দেখা হতো—ঠিক যেমন এখন নরেন্দ্র মোদীর সমর্থকেরা তাকে হিন্দু ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে তুলনা করেন। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি যখন বাড়তে থাকে, তখন দেশবাসীর বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে যায় বলে মনে করেন সমাজবিদ শিব বিশ্বনাথন। তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সির মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদ শাসনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল।’
বিশ্বনাথনের মতে, ১৯৭৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থার অবসান ঘটলেও, তার পর থেকেই ভারত ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত—প্রত্যেকেই কিছু না কিছু করে দেশটাকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যদিও বাইরের মুখে সবাই গণতন্ত্রের কথা বলেছেন।’
২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূচকে ভারতের গণতন্ত্রের অবস্থা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে। বিরোধী নেতাদের কারাবন্দী করা, সাংবাদিকদের হয়রানি এবং বাক্স্বাধীনতার ওপর নানা বিধিনিষেধ এর জন্য দায়ী।
ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সংগঠন ‘ফ্রি স্পিচ কালেকটিভের’ সহপ্রতিষ্ঠাতা গীতা শেঠু বলেন, জরুরি অবস্থার সময়ের সঙ্গে আজকের ভারতের মিল হলো মূলধারার সংবাদমাধ্যমের আত্মসমর্পণের জায়গাটিতে। তিনি বলেন, ‘তখন আইন করে নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, আর এখন আইনের অপব্যবহার করে সেটা করা হচ্ছে। তখনকার সেই ভয়, আত্মনিয়ন্ত্রণ—আজও বিদ্যমান, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলীর মতে, জরুরি অবস্থার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—যখন কোনো নেতৃত্ব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ক্ষমতাশালী হয়, তখন কীভাবে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। তবে জরুরি অবস্থার আরেকটি বড় শিক্ষা হলো—এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সফল আন্দোলন। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর কংগ্রেস দলকে হারিয়ে দিয়েছিল বিরোধীরা। তাদের নির্বাচনী প্রচারে সরকারের অমানবিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে গণ-বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি ছিল বড় ইস্যু।
আসিম আলী বলেন, ‘সত্তরের দশকের মতোই, এখন দেখার বিষয় হলো, মোদির পরে ভারতীয় গণতন্ত্র আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না।’
১৯৭৬ সালের নভেম্বরে দীনু যখন পুলিশের ভ্যানে বসেছিলেন, তখন তাঁর মনে শুধু তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সালিমার কথাই ঘুরছিল। সালিমা তখন বাড়িতে ছিলেন। দীনু বলেন, ‘অনেক পুরুষ, যাদের বিয়ে হয়নি বা সন্তান ছিল না, তারা পুলিশের কাছে অনুরোধ করছিলেন ছেড়ে দেওয়ার জন্য।’ কিন্তু দীনুর ১৪ জন বন্ধুর কাউকেই ছাড়া হয়নি। দীনু বলেন, ‘নাসবন্দি (বন্ধ্যাকরণ) এমন এক অভিশাপ, যা সেই সময় থেকে উত্তাওয়ার গ্রামের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।’
ধরে নিয়ে যাওয়ার ৮ দিন পর পুলিশ হেফাজতে দীনুকে পাশের শহর পালওয়ালের একটি বন্ধ্যাকরণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর অপারেশন করা হয়। এক মাস পর দীনু যখন অপারেশনের পর বাড়ি ফেরেন, তখন সালিমা তাদের একমাত্র সন্তানের জন্ম দেন। আজ দীনুর তিন নাতি ও বেশ কয়েকজন পৌত্র-প্রপৌত্র রয়েছে।
দীনু হেসে বলেন, ‘এই গ্রামকে আমরাই বাঁচিয়েছি। না হলে ইন্দিরা তো পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিতেন।’ ২০২৪ সালে সালিমা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মারা যান। দীনু এখনো বেঁচে আছেন এবং নিজের দীর্ঘজীবনের জন্য বেশ গর্বিত। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ঠাকুরদার সঙ্গে খেলেছি, এখন আমার প্রপৌত্রদের সঙ্গে খেলছি।’ প্লাস্টিকের কাপ থেকে ঠান্ডা সোডা পান করতে করতে দীনু বলেন, ‘সাত পুরুষ! এমন সৌভাগ্য কয় জনেরই বা হয়?’

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৫ ঘণ্টা আগে
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
৬ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
৭ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।
বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।
বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।
ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?
তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।
অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।
বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।
বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।
ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?
তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।
অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলা জরুরি অবস্থার সময়, ভারতে ৮০ লাখের বেশি পুরুষকে জোরপূর্বক ভ্যাসেক্টমি বা বন্ধ্যাকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। শুধু ১৯৭৬ সালেই এই সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
২৫ জুন ২০২৫
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
৬ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
৭ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।
নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।
তবে বড়দিন উদ্যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।
রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।
নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।
তবে বড়দিন উদ্যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।
রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলা জরুরি অবস্থার সময়, ভারতে ৮০ লাখের বেশি পুরুষকে জোরপূর্বক ভ্যাসেক্টমি বা বন্ধ্যাকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। শুধু ১৯৭৬ সালেই এই সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
২৫ জুন ২০২৫
মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৫ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
৭ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।
পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’
তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’
একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।
দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।
এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।
পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’
তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’
একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।
দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।
এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলা জরুরি অবস্থার সময়, ভারতে ৮০ লাখের বেশি পুরুষকে জোরপূর্বক ভ্যাসেক্টমি বা বন্ধ্যাকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। শুধু ১৯৭৬ সালেই এই সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
২৫ জুন ২০২৫
মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৫ ঘণ্টা আগে
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
৬ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।
এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’
উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।
এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’
উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলা জরুরি অবস্থার সময়, ভারতে ৮০ লাখের বেশি পুরুষকে জোরপূর্বক ভ্যাসেক্টমি বা বন্ধ্যাকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। শুধু ১৯৭৬ সালেই এই সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
২৫ জুন ২০২৫
মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৫ ঘণ্টা আগে
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
৬ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
৭ ঘণ্টা আগে