Ajker Patrika

অ্যাট্রোফিক রাইনাইটিসদীর্ঘস্থায়ী নাকের ক্ষয়রোগ

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

অ্যাট্রোফিক রাইনাইটিসের ফলে নাকের ভেতরের চামড়া (মিউকোসা) ও ভেতরের হাড়ের কাঠামো (টারবিনেট) নষ্ট হয়ে যায়। এটি সাধারণত ক্লেবশিয়েলা ওজানিয়া নামের জীবাণুর কারণে হয়। এই রোগে নাকের ভেতরের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শুকিয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে মরে যেতে থাকে। একই সঙ্গে নাকের দুই পাশে ঢাকনার মতো থাকা হাড়গুলো ক্ষয়ে ছোট হয়ে যায়। ফলে নাসারন্ধ্র অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়।

এর ফলে নাক সব সময় শুকিয়ে থাকে, ভেতরে শুকনা খোসা বা ক্রাস্ট জমে। ফলে নাক থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে। এই কারণে এটিকে অনেকে ‘নাক পচা রোগ’ বলে থাকে।

এই রোগের কারণ

সঠিক কারণ অনেক সময় অজানা থাকে। সম্ভাব্য কারণ হলো:

  • পারিবারিক বা বংশগত প্রবণতা।
  • হরমোনাল পরিবর্তন, বিশেষ করে কিশোরীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
  • ভিটামিন ‘এ’, আয়রন, প্রোটিনের ঘাটতি।
  • দীর্ঘস্থায়ী নাকের সংক্রমণ।
  • নাকের অস্ত্রোপচারের পর জটিলতা।

লক্ষণ

  • নাক শুকিয়ে যাওয়া।
  • নাকের ভেতরে সবুজ শক্ত খোসা জমা।
  • দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস। এই রোগে দুর্গন্ধ রোগী নিজে টের না-ও পেতে পারে। কিন্তু আশপাশের লোকজন বুঝতে পারে।
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
  • রোগীর ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া বা হারানো।

চিকিৎসকেরা যখন নাকের ভেতর পরীক্ষা করেন দেখা যায়, নাকের গহ্বর বেশ বড় এবং তাতে সবুজ আস্তরণ বা হালকা ধূসর রঙের বষ্টি বা ময়লায় পূর্ণ।

জটিলতা

  • স্থায়ী নাক বন্ধভাব।
  • ঘন ঘন সংক্রমণ। সবুজাভ ময়লা বের হওয়া।
  • মানসিক অস্বস্তি ও আত্মবিশ্বাসের অভাব।

চিকিৎসা

শুধু ওষুধে এই রোগ পুরোপুরি ভালো হবে, তা নিশ্চিত বলা যায় না। তবে চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে নাককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখা। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যা কয়েক বছর থাকার পর মধ্যবয়সে ভালো হতে পারে। অনেক সময় রোগী হতাশায় ভোগে। এ জন্য রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসার শুরুতে রোগীকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বোঝাতে হবে।

গ্লিসারিনের সঙ্গে ২৫ শতাংশ গ্লুকোজ মিশিয়ে প্রতিদিন পাঁচ ফোঁটা করে দুই নাকের ছিদ্রে দিনে তিন-চারবার দীর্ঘ মেয়াদে দেওয়া হয়। এই ২৫ শতাংশ গ্লুকোজ ইন গ্লিসারিন ব্যবহারের পর শেখানো নিয়মে নরমাল স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

  • অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে, ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হলে।
  • ভ্যাসলিন দিয়ে নাক আর্দ্র রাখা।
  • চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে অনেক দিন।
  • উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ফলে রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। প্রয়োজনে বিশেষ অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।

অ্যাট্রোফিক রাইনাইটিসে যেসব ওষুধ দেওয়া যাবে না

অ্যান্টিহিস্টামিন: এই রোগে নাকের ভেতর শুষ্ক হয়ে যায়, খোসা জমে। অ্যান্টিহিস্টামিন দিলে নাক আরও শুকিয়ে গিয়ে উপসর্গ খারাপ হবে।

ন্যাসাল ডিকনজেস্ট্যান্ট: জাইলোমেটাজলিন বা অক্সিমেটাজলিন হলো একধরনের নাকের ড্রপ, যা নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লির সংকোচন ঘটিয়ে অস্থায়ীভাবে নাক বন্ধভাব কমায়। কিন্তু অ্যাট্রোফিক রাইনাইটিসে শ্লেষ্মা ঝিল্লি আগেই অতিশয় পাতলা, শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে থাকে। ভ্যাসোকনস্ট্রিক্টর দিলে স্থানীয় রক্তসঞ্চালন আরও কমে গিয়ে শ্লেষ্মা ঝিল্লির ক্ষতি বাড়িয়ে দেবে। এতে নাকের শুষ্কতা, ক্রাস্ট তৈরি, দুর্গন্ধ ও আলসারেশন আরও বেড়ে যাবে।

প্রতিরোধ

  • নাক পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখা।
  • ঠান্ডা ও ধুলাবালু থেকে সুরক্ষা।
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস (আয়রন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার)।

লেখক: আবাসিক সার্জন (ইএনটি) সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক জলসীমায় গাজা অভিমুখী ৫০ নৌযান

সুপার ওভারে শ্রীলঙ্কাকে হারাল ভারত

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি: ইসলামী ব্যাংকের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা কাল

জুলাই যোদ্ধা মামুনুর রশীদকে অপহরণের ঘটনায় গুপ্ত মহলের কাঁচা নাটক ব্যর্থ হয়েছে: তারিকুল

যশোরের ভবদহ: উৎসবহীন পূজার আয়োজন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত