Ajker Patrika

দাঁতের ইনফেকশন থেকে হতে পারে হৃদ্‌রোগ

ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস নিশী
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক জীবনে আমরা সবাই বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে কম-বেশি সচেতন। ত্বক, চুল কিংবা পোশাকপরিচ্ছদের নিয়মিত যত্ন করি। কিন্তু দাঁত ও মুখগহ্বরের যত্নে সচেতনতার অভাব দেখা যায়। এই অবহেলা আমাদের জন্য ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে। শুধু দাঁতের ক্ষয় বা মাড়ির ব্যথাই নয়, দাঁতের ইনফেকশন থেকে সরাসরি হৃদ্‌রোগ পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

দাঁতের সংক্রমণ কীভাবে শুরু হয়

যদি নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করা হয়, তবে খাবারের কণা জমে মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিশে তৈরি করে ডেন্টাল প্ল্যাক। দীর্ঘদিন যত্ন না নিলে এই প্ল্যাক শক্ত হয়ে ডেন্টাল ক্যালকুলাসে পরিণত হয়। ক্যালকুলাস শুধু দাঁত ক্ষয় করে না, এ থেকে মাড়িতে প্রদাহ ও ইনফেকশন হতে পারে। ধীরে ধীরে এই ব্যাকটেরিয়া দাঁতের ভেতর ও আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুখগহ্বর সংক্রমণের উৎস হিসেবে পরিণত হয়।

দাঁত থেকে হৃৎপিণ্ডে সংক্রমণ

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মুখগহ্বরের এই ব্যাকটেরিয়া কখনো কখনো রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে শরীরের অন্য অঙ্গেও পৌঁছে যায়। বিশেষ করে মাড়ির ইনফেকশন থেকে রক্তে প্রবেশ করে সরাসরি হৃৎপিণ্ডে পৌঁছাতে পারে। এরা গিয়ে হৃৎপিণ্ডের ভেতরের আবরণে সংক্রমণ ঘটায়। ফলে হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ ও গঠনগত পরিবর্তন দেখা দেয়, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইনফেকটিভ অ্যান্ড কার্ডাইটিস নামে পরিচিত।

এই রোগকে হালকাভাবে নিলে ভুল হবে। চিকিৎসা না করালে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হার্টের ভাল্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। অনেক সময় এই রোগ জটিল হয়ে হার্টফেল এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

দাঁতের জীবাণু ও হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক

দাঁতের ইনফেকশন শুধু হৃৎপিণ্ডের ভাল্বকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না। মুখের ব্যাকটেরিয়া অনেক সময় রক্তনালিতে গিয়ে প্ল্যাক তৈরি করে। এর ফলে রক্তনালি সরু হয়ে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি।

ইনফেকশনের সাধারণ উপসর্গ

হৃৎপিণ্ডে সংক্রমণ হলে কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন

  • দীর্ঘস্থায়ী জ্বর
  • শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • দ্রুত হার্টবিট বা হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
  • বুকের ব্যথা

এগুলো দেখা দিলে অনেকেই সাধারণ অসুখ ভেবে অবহেলা করেন, কিন্তু এগুলো দাঁতের ইনফেকশন থেকে হওয়া গুরুতর হৃদ্‌রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।

চিকিৎসা ও করণীয়

এই অবস্থায় দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত ইন্ট্রাভেনাস অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে রোগ জটিল আকার ধারণ করলে হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব পরিবর্তনের জন্য সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পরও নিয়মিত ফলোআপ জরুরি, যাতে রোগ আবার ফিরে না আসে।

দাঁত পরিষ্কার রাখলেই ঝুঁকি কমবে

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের দাঁতে ময়লা জমে থাকে, দাঁতের ক্ষয় বা মাড়িতে ইনফেকশন থাকে, তাদের ক্ষেত্রে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। তাই দাঁতের যত্ন নেওয়া শুধু হাসি উজ্জ্বল রাখার জন্য নয়, হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো উপায়

  • দিনে অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করুন।
  • নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করুন।
  • মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বা দাঁতে ব্যথা হলে অবহেলা করবেন না।
  • মিষ্টি ও চিনিজাতীয় খাবার খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করুন।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মতোই দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে শুধু দাঁতের ব্যথা থেকে নয়, জীবনঘাতী হৃদ্‌রোগ থেকেও রক্ষা করতে পারে।

লেখক: ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি আলোক ডেন্টাল কেয়ার ইউনিট, মিরপুর-১০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক জলসীমায় গাজা অভিমুখী ৫০ নৌযান

সুপার ওভারে শ্রীলঙ্কাকে হারাল ভারত

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি: ইসলামী ব্যাংকের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা কাল

জুলাই যোদ্ধা মামুনুর রশীদকে অপহরণের ঘটনায় গুপ্ত মহলের কাঁচা নাটক ব্যর্থ হয়েছে: তারিকুল

যশোরের ভবদহ: উৎসবহীন পূজার আয়োজন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত