অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
সেপ্টেম্বর মাসটি ব্যথা-বেদনা সচেতনতার মাস। প্রতিবছর কোটি কোটি মানুষের কত কত দিন বেদনার নীল যন্ত্রণায় কেটে যায়—কী দুর্ভোগ, কী কষ্ট! যাদের হয় তারা ছাড়া অন্য কেউ বোঝে না। গুরুতর ব্যথা যাদের, তাদের জন্য ব্যবহার করা হয় মরফিন—সেটা অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শে। জীবনের মান সমুন্নত রাখার জন্য এ ব্যবস্থা নিরাপদ।
দুর্ভাগ্যবশত অনেক মানুষকে ফেলে রাখা হয় দারুণ বেদনার যন্ত্রণায়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত এই মরফিন পাওয়া অত সহজ নয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপলব্ধির ব্যাপার আছে। মরফিনকে ব্যথা-বেদনার বিরুদ্ধে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে দেখা বাঞ্ছনীয়। একে মোকাবিলা করতে গিয়ে দেখতে হবে, এটি কার্যকর ও নিরাপদ কি না। ব্যবস্থাপত্র সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না। দারুণ বেদনায় ককিয়ে ওঠা মানুষ এর জন্য ফিরে পায় বাঁচার শক্তি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ব্যথা-বেদনার গুরুতর যন্ত্রণায় কেউ যেন উপশমের আওতা থেকে বাদ না পড়ে। বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের রয়েছে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া ক্রনিক ব্যথা। এর মধ্যে দেহের ব্যথা, মনের ব্যথা—সব আছে। এর পেছনে রহস্য কী?
হতে পারে বুড়ো আঙুল কিছুতে লেগে মচকে গেছে, নয়তো শরীরের কোনো পেশির ব্যথা আর না হলে ব্যথা আবেগের। ব্যথা কিন্তু সতর্কসংকেত। কী করে ব্যথা-বেদনার সংকেত বয়ে চলে শরীরে? এ কাজের জন্য বেশি অবদান যে সুপার হিরোর, তার নাম নিউরন। এর কাজ হলো, বেদনার উৎসস্থলের সংকেত মগজে বয়ে নিয়ে যাওয়া। হয়তো কোথাও পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তখন যে রিসেপটর বিপজ্জনক বেদনা সংকেত গ্রহণ করে, সেই গ্রাহক স্নায়ুর মাধ্যমে সেই উদ্দীপনা পাঠিয়ে দেয় মগজে। ক্ষতিকর উদ্দীপনা, রাসায়নিক পোড়া, দহন চাপ এমন সব বিপৎসংকেতে এরা সাড়া দেয়। আর শরীরকে তৎপর হতে বলে। এতে সেই বিপদ সামলানো যায় এবং আরও বিপদ যাতে না হয়, সেদিকেও সাবধান হওয়া যায়।
একবার বেদনার সংকেত মগজে পৌঁছালে, তখন শুরু হয় আসল জাদুর খেলা। মগজ একে গ্রহণ করে সেই বেদনাসংকেতের অন্তর্গত অর্থ উপলব্ধি করে তার তীব্রতা, অবস্থা এমনকি তার আবেগগত দিক বিবেচনা করে। এরপর প্রকৃত সাড়া দেওয়ার সংকেত পাঠায়; যেমন উত্তপ্ত কেটলি থেকে দ্রুত হাত সরিয়ে নেওয়া বা একটি কঠিন দিন অতিবাহিত করার পর উষ্ণ আলিঙ্গনে প্রিয়জনকে আবদ্ধ করার মাধ্যমে। মনে রাখা ভালো, ব্যথা-বেদনা কেবল দৈহিক নয়, হতে পারে আবেগগত। এর সঙ্গে জড়িত মনের ক্ষত দিতে পারে দেহে বেদনার অভিজ্ঞতা। আমাদের মগজের লিম্বিক সিস্টেম আবেগের কেন্দ্রভূমি। আবেগের নিয়ন্ত্রণ তার কাছে। এটি আবেগ সঞ্চারিত ব্যথাকে যেমন সামাল দিতে পারে, তেমনি তাকে বাড়িয়েও দিতে পারে।
ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এম্প্যাথেটিক বা সমমর্মিতাপূর্ণ মন্তব্য বা ব্যবহার বেদনা ভুলিয়ে দিতে পারে। আমরা যারা রোগী নিয়ে থাকি— চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এমনকি অফিসকর্মী, তাদের জন্য এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মনে ব্যথা দেওয়া বড় মন্দ কাজ। যিনি দিনের কঠিন সময় পার করছেন গভীর বেদনা সঙ্গে নিয়ে, তার প্রতি সহানুভূতি দেখানো খুব প্রয়োজন; বিশেষ করে যাদের আছে ক্রনিক ব্যথা-বেদনা। প্যালিয়েটিভ কেয়ারে এ হলো বড় শর্ত।
বিজ্ঞান বলে, ব্যথা-বেদনার একটি উদ্দেশ্য আছে। এটি আমাদের অভিভাবকের মতো শিক্ষা দেয় নিজের খেয়াল নেওয়ার জন্য। শরীরের উপযুক্ত সাড়া দেওয়ার তাগিদ দেয় এই বেদনা। পরেরবার আপনার বুড়ো আঙুল কোনো কিছুতে হোঁচট খেয়ে ব্যথা পেলে জানবেন, পরে হোঁচট খাওয়া থেকে বাঁচতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা জানাল আপনার মগজ।
আরেকটি কথা, ডায়াবেটিস রোগী, যাঁদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে নেই, তাঁদের স্নায়ু সাড়া দিতে অক্ষম হয়ে যায়। তাই আঙুলে হোঁচট খেলেও অনেক সময় তাঁরা বোঝেন না। আর তাই এতে সাড়া দেয় না। এভাবে একসময় আঘাত হয়ে যায় ক্ষত। সেখান থেকে হয় পচন। তারপর পা কেটে ফেলে দিতে হয়। তাই সব সময় রক্তে চিনির পরিমাণ রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সেপ্টেম্বর মাসটি ব্যথা-বেদনা সচেতনতার মাস। প্রতিবছর কোটি কোটি মানুষের কত কত দিন বেদনার নীল যন্ত্রণায় কেটে যায়—কী দুর্ভোগ, কী কষ্ট! যাদের হয় তারা ছাড়া অন্য কেউ বোঝে না। গুরুতর ব্যথা যাদের, তাদের জন্য ব্যবহার করা হয় মরফিন—সেটা অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শে। জীবনের মান সমুন্নত রাখার জন্য এ ব্যবস্থা নিরাপদ।
দুর্ভাগ্যবশত অনেক মানুষকে ফেলে রাখা হয় দারুণ বেদনার যন্ত্রণায়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত এই মরফিন পাওয়া অত সহজ নয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপলব্ধির ব্যাপার আছে। মরফিনকে ব্যথা-বেদনার বিরুদ্ধে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে দেখা বাঞ্ছনীয়। একে মোকাবিলা করতে গিয়ে দেখতে হবে, এটি কার্যকর ও নিরাপদ কি না। ব্যবস্থাপত্র সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না। দারুণ বেদনায় ককিয়ে ওঠা মানুষ এর জন্য ফিরে পায় বাঁচার শক্তি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ব্যথা-বেদনার গুরুতর যন্ত্রণায় কেউ যেন উপশমের আওতা থেকে বাদ না পড়ে। বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের রয়েছে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া ক্রনিক ব্যথা। এর মধ্যে দেহের ব্যথা, মনের ব্যথা—সব আছে। এর পেছনে রহস্য কী?
হতে পারে বুড়ো আঙুল কিছুতে লেগে মচকে গেছে, নয়তো শরীরের কোনো পেশির ব্যথা আর না হলে ব্যথা আবেগের। ব্যথা কিন্তু সতর্কসংকেত। কী করে ব্যথা-বেদনার সংকেত বয়ে চলে শরীরে? এ কাজের জন্য বেশি অবদান যে সুপার হিরোর, তার নাম নিউরন। এর কাজ হলো, বেদনার উৎসস্থলের সংকেত মগজে বয়ে নিয়ে যাওয়া। হয়তো কোথাও পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তখন যে রিসেপটর বিপজ্জনক বেদনা সংকেত গ্রহণ করে, সেই গ্রাহক স্নায়ুর মাধ্যমে সেই উদ্দীপনা পাঠিয়ে দেয় মগজে। ক্ষতিকর উদ্দীপনা, রাসায়নিক পোড়া, দহন চাপ এমন সব বিপৎসংকেতে এরা সাড়া দেয়। আর শরীরকে তৎপর হতে বলে। এতে সেই বিপদ সামলানো যায় এবং আরও বিপদ যাতে না হয়, সেদিকেও সাবধান হওয়া যায়।
একবার বেদনার সংকেত মগজে পৌঁছালে, তখন শুরু হয় আসল জাদুর খেলা। মগজ একে গ্রহণ করে সেই বেদনাসংকেতের অন্তর্গত অর্থ উপলব্ধি করে তার তীব্রতা, অবস্থা এমনকি তার আবেগগত দিক বিবেচনা করে। এরপর প্রকৃত সাড়া দেওয়ার সংকেত পাঠায়; যেমন উত্তপ্ত কেটলি থেকে দ্রুত হাত সরিয়ে নেওয়া বা একটি কঠিন দিন অতিবাহিত করার পর উষ্ণ আলিঙ্গনে প্রিয়জনকে আবদ্ধ করার মাধ্যমে। মনে রাখা ভালো, ব্যথা-বেদনা কেবল দৈহিক নয়, হতে পারে আবেগগত। এর সঙ্গে জড়িত মনের ক্ষত দিতে পারে দেহে বেদনার অভিজ্ঞতা। আমাদের মগজের লিম্বিক সিস্টেম আবেগের কেন্দ্রভূমি। আবেগের নিয়ন্ত্রণ তার কাছে। এটি আবেগ সঞ্চারিত ব্যথাকে যেমন সামাল দিতে পারে, তেমনি তাকে বাড়িয়েও দিতে পারে।
ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এম্প্যাথেটিক বা সমমর্মিতাপূর্ণ মন্তব্য বা ব্যবহার বেদনা ভুলিয়ে দিতে পারে। আমরা যারা রোগী নিয়ে থাকি— চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এমনকি অফিসকর্মী, তাদের জন্য এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মনে ব্যথা দেওয়া বড় মন্দ কাজ। যিনি দিনের কঠিন সময় পার করছেন গভীর বেদনা সঙ্গে নিয়ে, তার প্রতি সহানুভূতি দেখানো খুব প্রয়োজন; বিশেষ করে যাদের আছে ক্রনিক ব্যথা-বেদনা। প্যালিয়েটিভ কেয়ারে এ হলো বড় শর্ত।
বিজ্ঞান বলে, ব্যথা-বেদনার একটি উদ্দেশ্য আছে। এটি আমাদের অভিভাবকের মতো শিক্ষা দেয় নিজের খেয়াল নেওয়ার জন্য। শরীরের উপযুক্ত সাড়া দেওয়ার তাগিদ দেয় এই বেদনা। পরেরবার আপনার বুড়ো আঙুল কোনো কিছুতে হোঁচট খেয়ে ব্যথা পেলে জানবেন, পরে হোঁচট খাওয়া থেকে বাঁচতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা জানাল আপনার মগজ।
আরেকটি কথা, ডায়াবেটিস রোগী, যাঁদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে নেই, তাঁদের স্নায়ু সাড়া দিতে অক্ষম হয়ে যায়। তাই আঙুলে হোঁচট খেলেও অনেক সময় তাঁরা বোঝেন না। আর তাই এতে সাড়া দেয় না। এভাবে একসময় আঘাত হয়ে যায় ক্ষত। সেখান থেকে হয় পচন। তারপর পা কেটে ফেলে দিতে হয়। তাই সব সময় রক্তে চিনির পরিমাণ রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
শরীরের ব্যথায় কখনো ভোগেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজের এক গবেষণা বলছে, বিশ্বে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন শরীরে ব্যথার সমস্যায় ভুগছে। তাদের কারও গিরায় ব্যথা, কারও পেশিতে, আবার কেউ হাড়ের ব্যথায় আক্রান্ত। বাংলাদেশে ব্যথার সমস্যায় ভোগা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি।
৪ ঘণ্টা আগেদেশে গত এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক শিশুসহ (১৩) তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই সময়ে হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৩২৫ জন ডেঙ্গু রোগী।
৯ ঘণ্টা আগেহাইপোগ্লাইসিমিয়া বা রক্ত শর্করার স্বল্পতা হলো এমন একটি অবস্থা, যখন রক্তের শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। এ পরিমাণ হয় সাধারণত ৩ দশমিক ৯ মিলিমোলস পার লিটার বা ৭০ মিলি গ্রামস পার ডেসিলিটারের কম। এ সময় কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সেগুলো হলো—
১৯ ঘণ্টা আগেবর্ষাকাল এলেই বাড়ে সর্দি-কাশি, জ্বরের প্রকোপ। কিন্তু শুধু এসব নয়, এ সময়ে বাড়ছে হৃদ্রোগের সমস্যাও। আগের ধারণা ছিল, হৃদ্রোগ শহরের মানুষের সমস্যা। কিন্তু এখন গ্রামেও এতে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামীণ জীবন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আর মানসিক চাপের কারণে বাড়ছে এই ঝুঁকি।
২০ ঘণ্টা আগে